আলোচিত সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসা‌নের দুর্নী‌তির কার‌ণে ফেঁসে গে‌লেন স্ত্রী নুসরাত জাহান। স্বামীর দুর্নী‌তির সহ‌যো‌গিতায় স্ত্রীর হেফাজ‌তে পাওয়া গে‌ছে ১৮ কো‌টি ৫৯ লাখ ৩১ হাজার ৩৫৮ টাকার অবৈধ সম্পদের তথ‌্য।

শুধু তাই নয়, স্ত্রীর চার ব‌্যাংক হিসা‌বে মি‌লে‌ছে প্রায় ২২২.৫০ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন। দুর্নী‌তি দমন ক‌মিশ‌নের তদ‌ন্তে তথ‌্য প্রমাণ উঠে আসায় নুসরাত জাহান ও তার স্বামী চাক‌রিচ‌্যুত সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসা‌নের বিরু‌দ্ধে আরও একটা মামলা ক‌রে‌ছে দুর্নী‌তি দমন ক‌মিশন।

এর আগে বিপুল অং‌কের অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ মা‌নিলন্ডা‌রিংয়ের অভিযোগে জিয়াউল আহসান ও স্ত্রী নুসরা‌তের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। বৃহস্প‌তিবার (২৩ জানুয়ারি) দুর্নীতি দমন কমিশন জেলা কার্যালয়য়ের (ঢাকা-১) ক‌মিশ‌নের সহকারী পরিচালক সৌরভ দাশ মামলা ক‌রেন। মামলা নম্বর ৭৭।

মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ১০৯ ধারা, মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২), ৪(৩) ধারা আনা হ‌য়ে‌ছে।

মামলার এজাহা‌রে বলা হয়, নুসরাত জাহান (স্বামী জিয়াউল আহসান) বিভিন্ন অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে দুর্নীতির মাধ্যমে নিজ নামে ১৮ কোটি ৫৯ লাখ ৩১ হাজার ৩৫৮ টাকার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জন ও তার স্বামী জিয়াউল আহসানের মাধ্যমে অধৈভাবে অর্জিত অর্থ গোপন ও তার নামে ৪টি সক্রিয় ব্যাংক হিসাবে প্রায় ২২২.

৫০ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন করে পরস্পর যোগসাজশে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তরপূর্বক দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা, দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ১০৯ ধারা ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২), ৪(৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণে বলা হয়, নুসরাত জাহান তার নিজ নামে ১৪,০৭,৪১,৭৭০ টাকার স্থাবর সম্পদ ও ৩,৬৩,২০,৫৬৭ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ মোট (১৪,০৭,৪১,৭৭০+ ৩,৬৩,২০,৫৬৭) ১৭,৭০,৬২,৩৩৭ টাকার সম্পদ অর্জন করে ভোগ দখলে রেখেছেন।

অনুসন্ধানে নুসরাত জাহানের ২০১৯-২০২০ করবর্ষ হতে ২০২৪-২০২৫ করবর্ষ পর্যন্ত আয়কর নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তার মোট আয়ের পরিমাণ ১৩,৩৭,১৯,৭২৪ টাকা, মোট ব্যয় ১,২৮,৮৫,০৩৫ টাকা, বিগত দিনের সঞ্চয় ৮,০০,০০০ টাকাসহ মোট বৈধ আয়ের উৎসের পরিমাণ ১২,১৬,৩৪,৬৮৯ টাকা। সর্বশেষ করবর্ষ শেষে ক্রমপুঞ্জি সঞ্চয় ১২,১৬,৩৪,৬৮৯ টাকা ও নীট সম্পদের পরিমাণ ১২,১৫,৩৫,৯৮৪ টাকা। নুসরাত জাহান ২০২৪-২০২৫ করবর্ষে সম্পত্তি অধিগ্রহণের ক্ষতি বাবদ প্রাপ্তি ১২,৩৯,৪৫,৩৫০ টাকা প্রদর্শন করলেও ভূমি অধিগ্রহণ শাখা, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ঢাকা অধিগ্রণের ক্ষতিপূরণ বাবদ মোট ৯টি এল.এ চেকের মাধ্যমে ১৭,৬৫,৯৫,৫২৬ টাকা দেন বলে অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয়।

সম্পত্তি অধিগ্রহণের ক্ষতি বাবদ প্রাপ্ত ও আয়কর রিটার্নে প্রদর্শিত ১২,৩৯,৪৫,৩৫০ টাকা নুসরাত জাহান কর্তৃক অর্জিত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জনে ব্যবহার হয়নি বিধায় এই আয়কে তার অর্জিত সম্পত্তির বিপরীতে বৈধ আয় হিসেবে মেনে নেওয়ার সুযোগ নেই। অনুসন্ধানে সংগৃহীত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা ও সরেজমিনে প্রদর্শন করে নুসরাত জাহানের নামে নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত কোন মৎস্য ও পোল্ট্রি খামারের বর্তমান অস্তিত্ব ও পূর্বে ছিল বলে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি বিধায় ২০১৯-২০২০ করবর্ষ হতে ২০২১-২০২২ করবর্ষ পর্যন্ত প্রদর্শিত ৬৫,৫৮,৩৬০ টাকা তার অর্জিত সম্পত্তির বিপরীতে বৈধ আয় হিসেবে মেনে নেওয়ার সুযোগ নেই।

নুসরাত জাহানের বিগত বছরের সঞ্চয় বাবদ প্রদর্শিত ৮,০০,০০০ সঠিক আছে বলে অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয়। নুসরাত জাহানের প্রকৃত আয়ের পরিমাণ ৩২,১৬,০১৪ টাকা বলে অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হয়। নুসরাত জাহানের বিগত বছরের সঞ্চয় ৮,০০,০০০ টাকাসহ নিট আয়ের পরিমাণ ৪০,১৬,০১৪টাকা। অনুসন্ধানকালে নুসরাত জাহানের অদ্যাবদি প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে ঋণ গ্রহণের সত্যতা পাওয়া না যাওয়ায় তা দায় হিসেবে গণ্য করা হয়নি। অনুসন্ধানকালে নুসরাত জাহান (৩,৬৩,২০,৫৬৭) = ১৭,৭০,৬২,৩৩৭ টাকার সম্পদ অর্জনপূর্বক ভোগ দখলে রেখেছেন মর্মে প্রতীয়মান হয়।

অনুসন্ধানে সংগৃহীত রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, নুসরাত জাহান ২০২০ হতে ৩১/১২/২৪ পর্যন্ত মোট ২৭,১০,৫৬,১৮৫ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করেন, যার কোনো ধারা বৈধ উৎস অনুসন্ধানকালে পাওয়া যায়নি।

নুসরাত জাহানের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৩৪.৬৭ কোটি টাকা জমা প্রদান করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। অনুসন্ধানে নুসরাত জাহানের নামে ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি, বনানী শাখায় বিভিন্ন সময়ে প্রায় ৪৪.০৪ কোটি টাকা উত্তোলনের প্রমাণ পাওয়া যায়। নুসরাত জাহানের নামে ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি, বনানী শাখায় ৯১,৭২,৯১৫ টাকা ও আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট এর ব্যাংক হিসাবে ৩৭,৮৫,৮৪৫ টাকাসহ মোট ১,২৯৫৮,৭৬০ টাকা স্থানান্তরের প্রমাণ পাওয়া যায়। জলসিঁড়ি আবাসন প্রকল্পের ট্রাস্ট ব্যাংক নামে হিসাব ও আর্মি ওয়েল-ফেয়ার ট্রাস্ট এর ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তরিত অর্থের প্রকৃত কারণ ও উৎস জানা যায়নি।

অনুসন্ধানকালে নুসরাত জাহান ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে স্থায়ী, চলতি ও সঞ্চয়ী হিসাবের সন্ধান পাওয়া যায়, যার মধ্যে বর্তমানে নুসরাত জাহানের নামে ৪টি ব্যাংক হিসাব সক্রিয় থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। সক্রিয় ব্যাংক হিসাবগুলোতে মোট উত্তোলনের পরিমাণ ১০৯,৬০,৬৭,৫১৪ টাকাসহ সর্বমোট প্রায় ২২২.৫০ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া যায়, যা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২), ৪(৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র পর ম ণ প রদর শ ট ক সহ গ রহণ দমন ক

এছাড়াও পড়ুন:

সরকারি হিসাবের চেয়ে করোনায় মৃত্যু ছিল বেশি

করোনা মহামারিকালে মৃত্যুর যে হিসাব স্বাস্থ্য বিভাগ প্রকাশ করেছিল, তা বাস্তব চিত্রের চেয়ে ভিন্ন ছিল। অন্তত দুটি গবেষণায় বিষয়টি আবারও সামনে এসেছে। এতে দেখা গেছে, সরকারি হিসাবের চেয়ে করোনায় মৃত্যু বেশি ছিল।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলা এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় করোনাকালে মৃত্যু নিয়ে পৃথক দুটি গবেষণা করেছেন। একটি ছিল গ্রামীণ এলাকা, অন্যটি শহর এলাকা।

বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ২০২০ সালের ৮ মার্চ। আর দেশে করোনায় প্রথম মৃত্যু হয় ওই বছরের ১৮ মার্চ। ১৩ জুন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে গত সাড়ে পাঁচ বছরে ২৯ হাজার ৫০২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার বারবার দাবি করেছে, সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ায় দেশে করোনায় মৃত্যু কম হয়েছে।

অনেকে রোগ লুকিয়ে রেখেছিলেন, মৃত্যুর ঘটনাও জানাজানি হতে দেননি। অনেক ক্ষেত্রে লোকচক্ষুর অগোচরে মরদেহ কবর দেওয়া হয়েছে। সরকারি হিসাবে আছে শুধু হাসপাতালে মৃত্যুর তথ্য। যাঁরা হাসপাতালে আসেননি, যাঁরা করোনার সব ধরনের উপসর্গ নিয়ে ভুগেছেন, তাঁদের মৃত্যু সরকারি পরিসংখ্যানে নেই।

যদিও মহামারিকালে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে করোনাকালে মৃত্যু অনেক বেশি ছিল। ২০২২ সালের ১০ মার্চ বাড়তি মৃত্যুর অনুমিত সংখ্যা প্রকাশ করেছিল চিকিৎসা ও জনস্বাস্থ্য সাময়িকী ল্যানসেট। এতে বলা হয়, করোনাকালে ২০২০ ও ২০২১ সালে বাংলাদেশে বাড়তি ৪ লাখ ১৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

একই বিষয়ে আরও দুটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। সীতাকুণ্ড এলাকায় করোনাকালে মৃত্যুবিষয়ক গবেষণাটি ২০২৪ সালে জার্নাল অব গ্লোবাল হেলথ–এ প্রকাশিত হয়েছে। আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার মৃত্যু নিয়ে গবেষণাটি এ বছর ছাপা হয়েছে। গবেষকেরা জানিয়েছেন, ঢাকা শহরে করোনাকালে মৃত্যু নিয়ে আরও একটি গবেষণাকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিজেদের গবেষণায় বলেছে, মৃত্যুর যে সংখ্যা বলা হয় সারা বিশ্বে কোভিডে মৃত্যু হয়েছে তার চেয়ে তিন গুণ বেশি। আইসিডিডিআরবির গবেষণাটি গুরুত্বপূর্ণ, এবং তারা সত্যের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করেছে। পরোক্ষ কারণে মৃত্যুর হিসাব সরকার দেয় না, তাই সংখ্যা কম থাকে, কম দেখায়।জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন

আইসিডিডিআরবির গবেষকেরা দাবি করছেন, সরকার যে সংখ্যা দিচ্ছে তা সঠিক নয়। মহামারি শুরুর সময় রোগ পরীক্ষার এবং চিকিৎসার সুযোগ কম ছিল। কোভিড–১৯–এ আক্রান্ত অনেকের মৃত্যু বাড়িতে হয়েছে, অনেকের রোগ শনাক্ত হয়নি, অনেক ঘটনা লিপিবদ্ধ হয়নি। অনেকে রোগ লুকিয়ে রেখেছিলেন, মৃত্যুর ঘটনাও জানাজানি হতে দেননি। অনেক ক্ষেত্রে লোকচক্ষুর অগোচরে মরদেহ কবর দেওয়া হয়েছে। সরকারি হিসাবে আছে শুধু হাসপাতালে মৃত্যুর তথ্য। যাঁরা হাসপাতালে আসেননি, যাঁরা করোনার সব ধরনের উপসর্গ নিয়ে ভুগেছেন, তাঁদের মৃত্যু সরকারি পরিসংখ্যানে নেই।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিজেদের গবেষণায় বলেছে, মৃত্যুর যে সংখ্যা বলা হয় সারা বিশ্বে কোভিডে মৃত্যু হয়েছে তার চেয়ে তিন গুণ বেশি। আইসিডিডিআরবির গবেষণাটি গুরুত্বপূর্ণ, এবং তারা সত্যের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করেছে। পরোক্ষ কারণে মৃত্যুর হিসাব সরকার দেয় না, তাই সংখ্যা কম থাকে, কম দেখায়।’

আমরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কারণে মৃত্যুর হিসাব বের করার চেষ্টা করেছি। আমরা দেখেছি মহামারির আনুষঙ্গিক কারণে মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারেননি, মানুষ হাসপাতালে যেতে ভয় পেয়েছেন, ঠিক সময়ে চিকিৎসা নেননি। এসব কারণে মৃত্যু বেড়েছে।আইসিডিডিআরবির মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগী বিজ্ঞানী আনীকা তাসনিম হোসেনসীতাকুণ্ডে করোনাকালে মৃত্যু

আইসিডিডিআরবির গবেষকেরা চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলায় করোনাকালে মৃত্যুর তথ্য সংগ্রহের কাজটি করেন ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে। গবেষক দলের সদস্যরা ২৫ হাজার ৬৬৯টি পরিবারের তথ্য সংগ্রহ করেন। গবেষকেরা মূলত ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সালে ওই সব পরিবারে কোন বয়সী কতজন মানুষ মারা গেছেন সেই তথ্য সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে ২০২০ সাল ছিল করোনার বছর।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৮ সালে সীতাকুণ্ডের ওই পরিবারগুলোতে ৪৯৩টি মৃত্যুর ঘটনা ছিল। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে ছিল ৪৯৪টি মৃত্যু। অর্থাৎ পরপর দুই বছর মৃত্যুর সংখ্যায় বিশেষ কোনো পার্থক্য নেই। মাত্র একটি মৃত্যু বেশি। পরিসংখ্যানের দিক থেকে তা তাৎপর্যপূর্ণ নয়।

কিন্তু মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যায় ২০২০ সালে। ওই বছর ওই সব পরিবারে ৭৬১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। আগের বছরের তুলনায় ২৬৭ জন বেশি। অর্থাৎ আগের দুই বছরের তুলনায় ২০২০ সালে ৫৪ শতাংশ মৃত্যু বেশি হয়েছিল সীতাকুণ্ডে।

২০২০ সালের শেষে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া তথ্যে বলা হয়েছিল, করোনায় সীতাকুণ্ডে মৃত্যু হয় ৮ জনের। আর করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যায় আরও ১৫ জন।

সীতাকুণ্ডের গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন আইসিডিডিআরবির মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগী বিজ্ঞানী আনীকা তাসনিম হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কারণে মৃত্যুর হিসাব বের করার চেষ্টা করেছি। আমরা দেখেছি মহামারির আনুষঙ্গিক কারণে মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারেননি, মানুষ হাসপাতালে যেতে ভয় পেয়েছেন, ঠিক সময়ে চিকিৎসা নেননি। এসব কারণে মৃত্যু বেড়েছে।’

কবরস্থানে বেশি মৃতদেহ

মৃত্যুর সংখ্যা জানার একটি সূত্র হচ্ছে কবরস্থান। হঠাৎ মৃত্যু বেড়ে গেলে চাপ পড়ে কবরস্থানে। এই বিবেচনা থেকে আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা করোনাকালে মৃত্যুর পরিস্থিতি জানার জন্য কবরস্থানের তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের উদ্যোগ নেন।

গবেষকেরা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ছয়টি কবরস্থানকে গবেষণার জন্য বেছে নেন। এগুলো হচ্ছে—উত্তরা সেক্টর ১২ কবরস্থান, উত্তরা সেক্টর ১৪ কবরস্থান, উত্তরা সেক্টর ৪ কবরস্থান, বনানী কবরস্থান, রায়েরবাজার কবরস্থান ও মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থান। এর মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো হচ্ছে বনানী কবরস্থান, এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৪ সালে। সবচেয়ে নতুন উত্তরা সেক্টর ১৪ কবরস্থান, এটি তৈরি হয় ২০১৯ সালে।

গবেষকেরা এই ছয়টি কবরস্থান থেকে ১ লাখ ২ হাজার ৭৫৪টি মৃত্যুর তথ্য নেন। এর মধ্যে ৩২ হাজার ১০৮টি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল ১৯৭৪ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে। বাকি ৭০ হাজার ৫৮৫টি মৃত্যু ছিল ২০০১ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে। গবেষকেরা তাঁদের গবেষণার জন্য ২০০১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ৭০ হাজার ৫৮৫টি মৃত্যুর তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৮-১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে ছয়টি কবরস্থানে ৬৯ শতাংশ বেশি কবর দেওয়া হয়েছিল। ২০২৩ সালে তা ছিল ৩১ শতাংশ বেশি।

স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় করোনা মহামারিকালে বাড়তি এই মৃত্যু করোনার কারণে হয়েছে বলে গবেষকেরা মনে করছেন। যদিও বাড়তি এই মৃত্যুর তথ্য সরকারি হিসাবে প্রতিফলিত হতে দেখা যায়নি।

দুটি গবেষণায় যুক্ত ছিলেন আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানী ও স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য আহমেদ এহসানূর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের গবেষণা দুটি ছিল ছোট পরিসরে, কিন্তু গবেষণা ফলাফল থেকে একধরনের তাগিদ অনুভব করা যায়। তা হচ্ছে, বাংলাদেশে জরুরি ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী মৃত্যুনিবন্ধন পদ্ধতি থাকা দরকার। প্রতিটি মৃত্যুর ঘটনা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি জরুরি প্রতিটি মৃত্যুর হিসাব থাকা। কোভিড–১৯ মহামারি অনিবন্ধিত মৃত্যুর এক করুণ উত্তরাধিকার রেখে গেছে। এখন সময় এসেছে প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যার মুখোমুখি হওয়ার।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সরকারি হিসাবের চেয়ে করোনায় মৃত্যু ছিল বেশি
  • কুষ্টিয়ায় করোনা শনাক্তের পিসিআর ল্যাবে চুরি, খোয়া গেছে ৪০ লাখ টাকার যন্ত্রাংশ
  • কুষ্টিয়ার একমাত্র পিসিআর ল্যাবের সব যন্ত্রাংশ চুরি