৪৫ লাখ টাকা দিয়েও এলো মৃত্যুর খবর
Published: 24th, January 2025 GMT
দিনের পর দিন ছোট একটি কামরায় বন্দি রেখে মারধর করা হয়েছে। নানা কৌশলে আদায় করা হয়েছে মুক্তিপণের টাকা। এভাবেই কেটে গেছে তিনটি বছর। বাঁচার জন্য আকুতি ছিল ছেলেটার, কিন্তু বাঁচতে পারল না। দফায় দফায় ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়েও এলো তার মৃত্যুর খবর।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন মাদারীপুর সদর উপজেলার খোঁয়াজপুর ইউনিয়নের পখিরা গ্রামের নাজিম উদ্দিন মহাজন। তিনি রাকিব মহাজনের বাবা। বুধবার রাতে রাকিবের মৃত্যু সংবাদ পান তিনি। এরপর থেকে পরিবারে নেমে এসেছে শোকের মাতম।
রাকিবের মতো হাজারো যুবককে ইতালি পাঠানোর কথা বলে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে কোটি কোটি টাকা। গেল বছর লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে জেলার শতাধিক মানুষ মারা গেছেন। পাঁচ শতাধিক দালালের বিরুদ্ধে ২০০ মামলা হয়েছে। মামলায় জামিন পেয়ে তারা আবার দালালিতে যুক্ত হয়। ভয়ংকর এ দালাল চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান পুলিশ সুপার মো.
অভিযোগ থেকে জানা গেছে, টগবগে যুবক রাকিব মহাজন। তিন বছর আগে সদর উপজেলার পখিরা গ্রামের জাহাঙ্গীর মৃধা তাঁকে ইতালি পাঠানোর স্বপ্ন দেখায়। পরিচয় করিয়ে দেয় ভায়রা শরীয়তপুর সদর উপজেলার ধানুকা ইউনিয়নের ছোট বিনোদপুর গ্রামের সোহাগ মাতুব্বরের সঙ্গে। তাঁর সঙ্গে ২৭ লাখ টাকায় চুক্তি করে ২০ বছর বয়সে ইতালি যাবেন।
দালালের সঙ্গে লিবিয়ায় পাড়ি জমান রাকিব। সেখানে নিয়ে তাঁকে আটকে ফেলা হয়। কথিত গেমঘরে (টর্চার সেল) রেখে আরও টাকা আদায় করতে দিনের পর দিন নির্যাতন চালাতে থাকেন সোহাগ মাতুব্বর। পরে রাকিবের বাবা নাজিমউদ্দিন ধারদেনা করে আরও ৫ লাখ টাকা দেন সোহাগকে। তাতেও কাজ হয়নি। এভাবে দুই বছর চার মাস পেরিয়ে যায়। অসহ্য যন্ত্রণায় দিন পার করতে থাকেন রাকিব।
কৌশলে সোহাগের গেমঘর থেকে বেরিয়ে যান। পড়েন আরেক দালাল মাদারীপুর সদর উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়নের ব্রাম্বনদী গ্রামের মাজেদ খলিফার খপ্পরে। তাঁকেও গত ৮ মাস আগে ১৫ লাখ টাকা দেয় রাকিবের পরিবার। তিনিও টাকা নিয়ে আরও টাকার জন্য নির্যাতন চালান। এক পর্যায়ে রাকিব গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। লিবিয়ার একটি হাসপাতালে নেওয়ার পর তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর খবর দালাল মাজেদ খলিফাই রাকিবের পরিবারকে জানান। পরিবারের কাছে মৃতদেহের ছবি ও ভিডিও পাঠান।
রাকিবের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে পরিবারে চলছে শোকের মাতম। নির্মম নির্যাতনে জড়িত দালালদের উপযুক্ত বিচার দাবি করেন স্বজনরা।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দালাল জাহাঙ্গীর মৃধা। তিনি বলেন, ‘রাকিবকে বিদেশে পাঠিয়েছে সোহাগ। সে আমার ভায়রা হয়। তাই আমাকে জড়ানো হচ্ছে। অথচ আমি যে টাকা নিয়েছি, এ কথা কেউ প্রমাণ করতে পারবে না। লেনদেনের সময়ও ছিলাম না। রাকিব অসুস্থ হয়ে লিবিয়ায় মারা গেছে। সোহাগ বরং তার চিকিৎসা করেছে। এর বেশি কিছু আমি জানি না।’
এদিকে রাকিবের মৃত্যুর সংবাদ জানার পরে দালাল মাজেদ খলিফার পরিবার বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছে। এ কারণে তাদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
পুলিশ সুপার মো. সাইফুজ্জামান বলেন, এ বিষয়ে এখনও কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সদর উপজ ল র ম ত য র খবর পর ব র ন র পর
এছাড়াও পড়ুন:
প্রাক্তন স্ত্রী দেবশ্রীর সঙ্গে প্রেমের সিনেমা করতে চান প্রসেনজিৎ
ভারতীয় বাংলা সিনেমার তারকা জুটি প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জি ও দেবশ্রী রায়। পর্দায় এ জুটির রোমান্স দেখে মুগ্ধ হয়েছেন অসংখ্য ভক্ত। রুপালি পর্দার রোমান্স ব্যক্তিগত জীবনেও গড়ায়। ভালোবেসে দেবশ্রী রায়কে বিয়ে করেন প্রসেনজিৎ। কিন্তু কয়েক বছর পরই এ বিয়ে ভেঙে যায়। তারপর দুজনের পথ আলাদা হয়ে যায়।
সংসার ভাঙার পাশাপাশি দর্শক হারান রুপালি পর্দার জনপ্রিয় এই জুটিকে। এরপর আর কোনো সিনেমায় একসঙ্গে দেখা যায়নি তাদের। অবশেষে দূরত্ব কমিয়ে দেবশ্রীর সঙ্গে সিনেমা করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করলেন প্রসেনজিৎ।
আরো পড়ুন:
নিজেকে তৈরি করে খোলামেলা দৃশ্যে অভিনয় করব: স্বস্তিকা
ছেলের বন্ধুরা ‘দিদি’ বলে ডাকে: শ্রাবন্তী
কিছুদিন আগে ‘আমি যখন হেমা মালিনী’ সিনেমার প্রচারে চিরঞ্জিত চক্রবর্তী বলেছিলেন—“দেব-শুভশ্রী জুটির পর আমি চাই আবার প্রসেনজিৎ-দেবশ্রী জুটি ফিরুক, এই জুটিটা ফেরার অত্যন্ত প্রয়োজন।” ‘দেবী চৌধুরানী’ সিনেমার প্রচারে চিরঞ্জিতের এই বক্তব্য প্রসেনজিৎকে জানানো হয়।
এ বিষয়ে প্রসেনজিৎ বলেন, “আমি তো চাই দীপকদা একটা স্ক্রিপ্ট লিখুক আমাদের জন্য, আমার বহুদিনের ইচ্ছা ছিল এবং আমি অনেকবার দীপকদাকে বলেছি যে, আমি তোমার পরিচালনায় একটা কাজ করতে চাই। দীপকদা, আমাদের জন্য যদি পরিচালনা করেন তাহলে অবশ্যই আমি সিনেমা করতে চাই। আর আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে দেবশ্রীর সঙ্গে আবারো একটা পরিণত প্রেমের সিনেমা করতে চাই।”
তাহলে কী পুরোনো তিক্ততা ভুলে গেছেন প্রসেনজিৎ? জবাবে এই নায়ক বলেন, “আমার কারো সঙ্গে কোনো তিক্ততা নেই। যে আমার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলবে, আমি সব সময় তাদের জন্য আছি। আর কোনো তিক্ততা নিয়ে বাঁচতে চাই না, যে কটা দিন আছি সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক নিয়েই থাকতে চাই।”
এক সময় দেবশ্রীকে নিয়ে কথা বলতে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ বোধ করতেন না প্রসেনজিৎ। তবে অভিমান ভুলে কাজের ক্ষেত্রে আবার এক হওয়ার কথা বললেন তিনি। বর্তমানকে ভালোবেসে যেমন এগিয়ে যান, ঠিক তেমনই কি অতীতকেও আঁকড়ে বাঁচেন?
এ প্রশ্নের জবাবে প্রসেনজিৎ বলেন, “নিজের অতীতকে কখনো উপেক্ষা করা যায় না। মাঝেমাঝেই আমি আমার অতীতে ফিরে যাই; সেই সময়গুলোর জন্যই আজকের আমি। অতীত আমাকে অনেক ভালোবাসা, রাগ-দুঃখ-ক্ষোভ দিয়েছে। আমার ক্ষেত্রে যেটা অল্প কিন্তু তবু আছে সেটা হলো—ঘৃণা। সেটাও পেয়েছি, তবে অতীত যেমনই হোক না কেন, তাকে কখনো ফেলে দেওয়া যায় না। আমরা সবাই মাঝে মাঝে অতীতে ফিরে যাই।”
সময়ের সঙ্গে অনেক কিছু বদলে গেছে। বর্তমান প্রজন্মের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতেও দ্বিধাবোধ করেন না প্রসেনজিৎ।তার ভাষায়—“এই বদলগুলোকে মেনে না নিলে আমাকে পিছিয়ে পড়তে হবে। আমি প্রচুর বদল দেখেছি, তবে যেই সময় যেটা এসেছে, তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছি, এটাই তো করা উচিত। না হলে বর্তমান প্রজন্ম থেকে দূরে সরে যেতে হবে।”
ঢাকা/শান্ত