মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব নির্বাচিত হলেন পিট হেগসেথ
Published: 25th, January 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে পিট হেগসেথের নিয়োগ চূড়ান্ত করেছে মার্কিন সিনেট। গতকাল শুক্রবার সিনেটে অনুষ্ঠিত ভোটের মাধ্যমে তার নিয়োগ চূড়ান্ত হয়। সিনেটে হেগসেথের পক্ষে ও বিপক্ষে ৫০টি করে ভোট পড়ে।তাই ট্রাম্প মনোনীত এই ব্যক্তির নিয়োগ চূড়ান্ত হতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে।
সিনেটে ডেমোক্র্যাটরা তার ব্যাপক বিরোধিতা করেছেন তাদের মধ্যে কয়েকজন রিপাবলিকানও ছিলেন। ডেমোক্র্যাট ও স্বতন্ত্রদের পাশাপাশি হেগসেথের নিজ দল রিপাবলিকানের তিন সদস্যও তার বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। পক্ষে-বিপক্ষে সমান ভোট পড়ায় ফলাফল ঘোষণায় জটিলতা তৈরি হয়।
এমন পরিস্থিতিতে সিনেটে ভোট দিতে আসেন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স। জে ডি ভ্যান্স পক্ষে ভোট দেওয়ায় মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে হেগসেথের নিয়োগ চূড়ান্ত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজের সাবেক কর্মী হেগসেথ পেন্টাগনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এদিকে ডেমোক্র্যাট এবং কিছু রিপাবলিকান সেনেটর তার অভিজ্ঞতা এবং চরিত্র নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। আলাস্কার সেনেটর লিসা মুরকোভস্কি বলেন, 'তার অতীত আচরণ প্রমাণ করে যে তিনি সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য উপযুক্ত নন।'
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ভাইস প্রেসিডেন্টের টাইব্রেক ভোটে মন্ত্রিসভার কোনো সদস্যের নিয়োগ চূড়ান্ত হলো। প্রথম ঘটনাটিও ট্রাম্পের শাসনামলেই ঘটেছিল। ২০১৭ সালে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে তার মনোনীত শিক্ষামন্ত্রী বেটসি ডেভোসের নিয়োগ চূড়ান্ত করতে ভাইস প্রেসিডেন্টের ভোট লেগেছিল।
গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরপরই ট্রাম্প তার প্রশাসনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে পিট হেগসেথকে মনোনীত করেন। তবে তার বিরুদ্ধে কর্মক্ষেত্রে যৌন নিপীড়ন, অতিরিক্ত মদ পানসহ বিভিন্ন অভিযোগ প্রকাশ হতে থাকে। এ অবস্থায় তার মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে। তবে হেগসেথ বারবারই মদ পানসহ অসদাচরণের সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তিনি বলেছেন, নিয়োগ নিশ্চিত হলে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে কাজ করার সময় তিনি মাদক নেবেন না।
অন্যদিকে, ট্রাম্প এবং বেশিরভাগ রিপাবলিকান হেগসেথকে সমর্থন করেছেন। সিনেটররা যুক্তি দেখিয়েছেন, তিনি (হেগসেথ) বিশ্বাসঘাতকতা, অতীতে মদ পানের অভিযোগসহ ব্যক্তিগত ব্যর্থতাগুলো স্বীকার করেছেন। মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগনের যুদ্ধজয়ের মূল লক্ষ্যকে মনোযোগের কেন্দ্রে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে তিনিই সঠিক ব্যক্তি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক ষ মন ত র কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনে জোট গঠনে সতর্ক থাকার পরামর্শ হেফাজত আমিরের
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোট গঠনের ক্ষেত্রে সঙ্গে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী।
মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেছেন, আগামী নির্বাচনে এমন কোনো দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার চিন্তা করা যাবে না, যাদের ভ্রান্ত বিশ্বাস সম্পর্কে বুজুর্গানে দ্বীন ও পূর্বপুরুষেরা আগেই সতর্ক করেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘জাতীয় উলামা মাশায়েখ সম্মেলন ২০২৫’–এ লিখিত বক্তব্যে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী এ কথা বলেন। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের উদ্যোগে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন হেফাজত আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও অসুস্থ থাকায় তিনি কথা বলেননি। তাঁর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা তোফাজ্জল হক আজিজ।
ইসলামের মূলধারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এমন কোনো সিদ্ধান্ত না নিতে দলগুলোকে অনুরোধ জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে হেফাজত আমির বলেন, সহিহ আকিদার সব ইসলামি দলকে এক হওয়ার জন্য আগেও তিনি আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর আহ্বানে সাড়া দেওয়ার মতো তেমন পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, একদিকে যেমন ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকার ষড়যন্ত্র চলছে, অন্যদিকে তেমনি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে বহু রকম চক্রান্ত লক্ষ করা যাচ্ছে। গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশে এ রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, তা তিনি কল্পনাও করেননি।
অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্দেশ করে বাবুনগরী বলেন, ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস স্থাপনের চুক্তি দেশের স্বাধীনতার অখণ্ডতার জন্য এবং ধর্মীয় কৃষ্টির জন্য এক অশনিসংকেত। এ চুক্তির তীব্র নিন্দা জানিয়ে তা বাতিল করার দাবিও জানান তিনি।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা খলিল আহমদ কুরাইশী। দেশের সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, সামনে কালো তুফান দেখা যাচ্ছে। কালো তুফানের সঙ্গে মোলাকাত নয়, মোকাবিলা করতে হবে। জনগণকে ওলামাদের নেতৃত্ব কবুল করতে হবে। তখনই তুফানকে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, যারা ফ্যাসিবাদী আমলে পাখা দিয়ে নৌকাকে বাতাস করেছে, তাদের সঙ্গে কোনো ঐক্য হবে না। জুলাই আন্দোলন ছিল ভোটের অধিকার বাস্তবায়নের জন্য। সামনে নির্বাচন। সেই নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। সেই পাঁয়তারা রুখে দিতে হবে।
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ইসলামের বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আলেমদের মতামত উপেক্ষা করলে হাসিনার মতো পরিণতি হবে।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক। এ সময় আরও বক্তব্য দেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আলেম এবং ওলামারা।
১৫ দফা প্রস্তাবনা
সম্মেলনে জমিয়তে উলামায়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১৫ দফা প্রস্তাবনা পেশ করা হয়। প্রস্তাবনা পাঠ করেন সংগঠনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া।
১৫ দফার মধ্যে আছে—ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় স্থাপনের চুক্তি বাতিল করা, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা, জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক করা এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীতের শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিল করা, ঘোষিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা; নির্বাচনে কালোটাকা ও পেশিশক্তির মহড়া বন্ধ করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা; বিতর্কিত নারী কমিশনের সুপারিশ বাতিল ও শরিয়ার সীমারেখার আলোকে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।