কুমিল্লার তিতাসে উলুকান্দি থেকে কালাইগোবিন্দপুর সড়কের কাজ শুরু করে উধাও ঠিকাদার। নির্ধারিত সময়ের পর প্রায় দুই মাস অতিবাহিত হলেও পাকাকরণ শুরু হয়নি। যে কারণে দুর্ভোগে রয়েছেন চার গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ। বিশেষ করে উপজেলা সদর ও বাজারে যাতায়াত কষ্টকর হয়ে পড়েছে। প্রায় ৫ কিলোমিটার ঘুরে ওই চার গ্রামের লোকজনকে বাতাকান্দি বাজারে যাতায়াত করতে হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, মাছিমপুর-আসমানিয়া সড়কের বাতাকান্দি বাজারের পূর্বপাশে নির্মাণাধীন সেতুর পাস থেকে উলুকান্দি দক্ষিণপাড়া পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। এখানে প্রায় ১ হাজার ২০০ মিটার সড়ক পাকাকরণের জন্য বক্স কাটা হয়েছে। কিছু কিছু স্থানে ইটের খোয়ার স্তূপ দেখা যায়। বক্স কাটা রাস্তার মাঝে মাঝে ইটের স্তূপ থাকায় সড়কটি দিয়ে কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। রাস্তার অনেক জায়গায় আশপাশের বাড়ির ব্যবহৃত পানি জমে আছে। বৃষ্টির পানিতে অনেক জায়গা ভেঙে গেছে। বক্স কাটার পর ১০ ইঞ্চি পুরু করে বালু ফেলার কথা থাকলেও কোথাও তার অস্তিত্ব দেখা যায়নি।
উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের তথ্যমতে, বলরামপুর ইউনিয়নের উলুকান্দি থেকে কালাইগোবিন্দপুর সড়কের ১২ মিটার পাকাকরণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। কুমিল্লার মেসার্স জিরু ইনফিনিটিভ কোম্পানি ১ কোটি ২৫ লাখ ৯৪ হাজার ৮১৪ টাকায় কাজটি পায়। ২০২৩ সালের ২৮ নভেম্বর কার্যাদেশ দেওয়া হয়। যার মেয়াদ ছিল ২০২৪ সালের ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত।
উলুকান্দি গ্রামের হযরত আলী ও রাসেল আহমেদ জানান, রাস্তাটির সংস্কার কাজ বন্ধ থাকায় গাজীপুর বাসস্ট্যান্ড হয়ে প্রায় ৫ কিলোমিটার ঘুরে বাতাকান্দি বাজারে আসতে হয়। এতে অতিরিক্ত সময় ও টাকা ব্যয় হচ্ছে।
শ্রীনারায়ণকান্দির প্রবাসফেরত আব্দুল লতিফ বলেন, বাতাকান্দি বাজারে ভালো প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডাক্তার আছেন। রাস্তাটি বন্ধ থাকায় রোগীদের অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। মালপত্র পরিবহনের ক্ষেত্রে অতিক্তি টাকা ব্যয় হচ্ছে।
মেসার্স জিরু ইনফিনিটিভ কোম্পানির স্বত্বাধিকারী নজরুল ইসলাম শুভ বলেন, ‘এ রাস্তার ফান্ড (তহবিল) না থাকায় কাজটি করতে পারছি না। শুনেছি মন্ত্রণালয় থেকে দ্রুত ফান্ড ছাড় হবে। ফান্ড এলে আশা করি কাজটি শুরু করতে পারব।’
উপজেলা প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম জানান, মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য ঠিকাদার আবেদন করেছেন। শিডিউল অনুযায়ী ঠিকাদারকে অবশ্যই কাজ করতে হবে। কাজটি শুরুর প্রথম দিকে ফান্ডে সমস্যা ছিল। এখন কোনো সমস্যা নেই।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
শত্রুতার জেরে সাত গরুকে বিষ প্রয়োগের অভিযোগ, মারা গেছে ৩টি
গোপালগঞ্জে পূর্ব শত্রুতার জেরে খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে তিনটি গরু হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় আরো চারটি গরু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ফলে দুই কৃষক পরিবারের অন্তত পাঁচ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। গত শনিবার (১ নভেম্বর) মধ্যরাতে সদর উপজেলার সিংগারকুল পূর্বপাড়া গ্রামে ঘটনাটি ঘটে।
জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। কীভাবে গরুগুলো মারা গেছে তা খতিয়ে দেখতে নমুনা সংগ্রহ করেছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। পুলিশ বলছে, তারা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।
আরো পড়ুন:
নামাজরত বাবাকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ, ৩ পুলিশ আহত
গাইবান্ধায় ৩ জনকে পিটিয়ে হত্যা: মামলা দায়ের
এলাকাসাসী জানান, সিংগারকুল পূর্বপাড়া গ্রামের দুই ভাই মো. রাসুল গাজী ও হাসিব গাজী কৃষি কাজ করে সংসার চালান। তারা খামার করে কয়েকটি গরু লালন-পালন করছেন। শনিবার মধ্যরাত সাড়ে ১২টার দিকে গরুর গোঙানির শব্দ শুনে পাশের বাড়ির এক আত্মীয় ছুটে গিয়ে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন দুই ভাইকে। তারা স্থানীয় পশু চিকিৎসককে খবর দেন। সকাল হওয়ার আগেই তিনটি গরু মারা যায়। একই গোয়াল ঘরে থাকা একটি বড় ষাঁড়, একটি বাছুর ও অপর গোয়ালে থাকা দুটি ষাঁড় এখনো অসুস্থ।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক মো. রাসুল গাজী জানান, শত্রুতা করেই খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে তাদের গরুগুলোকে হত্যা করা হয়েছে। রাতেই টের পেয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেও বাঁচানো যায়নি গরুগুলো। দুই ভাইয়ের আরো চারটি গরু অসুস্থ রয়েছে। এতে তাদের অন্তত ৫-৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
তিনি জানান, এ ঘটনায় সদর থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। দ্রুত দোষীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
কারা তাদের গরু হত্যা করেছেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাসুল গাজী বলেন, “ঘর থেকে বের হয়ে কয়েকজনকে দৌঁড়ে যেতে দেখেছি। তাদের চেহারা দেখতে পারিনি। ফলে কাউকে চিনতে পারিনি।”
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক হাসিব গাজী বলেন, “কারো সঙ্গে আমাদের শত্রুতা থাকতেই পারে। এই অবলা পশুগুলো কার কী ক্ষতি করেছে। কোন অপরাধে এদের হত্যা করা হলো। আমরা সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।”
এলাকাবাসী মো. ইমদাদ শেখ বলেন, “গত শনিবার রাতে বৃষ্টি হয়। এই সুযোগে গরুগুলোকে বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমরা চাই দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।”
গোপালগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গোবিন্দ চন্দ্র সর্দার বলেন, “সিংগারকুল পূর্বপাড়া গ্রামে কয়েকটি গরুকে বিষ খাওয়ানো হয় এমন খবর পেয়ে সকালে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে যান। তিনি অসুস্থ গরুগুলোকে চিকিৎসা দেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পয়জনজনিত কারণেই গরুগুলো মারা গেছে। মারা যাওয়া গরুর নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলেই গরু তিনটির মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।”
গোপালগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহ আলম বলেন, “আমি ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে গিয়ে তদন্ত শুরু করি। মারা যাওয়া গোরুগুলোর নমুনা সংগ্রহ ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঢাকা/বাদল/মাসুদ