ডোনাল্ড ট্রাম্প ২.০ ও বাংলাদেশ ২.০
Published: 26th, January 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। গ্রেটেস্ট কামব্যাক হিসেবে পুনরায় ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পরই বৈশ্বিক রাজনীতি কেমন হবে, তা নিয়ে শুরু হয়েছে বিভিন্ন আলাপ। জলবায়ু পরিবর্তনসহ ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্য সংকট কেমন হবে, তা নিয়ে আলাপ চলছে। বাংলাদেশের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনরায় নির্বাচন নিয়ে সবাই বেশ আশাবাদী। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সরকার এবং বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ রয়েছে। এ সম্পর্কের কৌশলগত এবং অর্থনৈতিক গুরুত্ব অত্যন্ত ব্যাপক। বিশেষ করে প্রযুক্তি, শিক্ষা, মানবাধিকার, সাইবার সন্ত্রাস এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ক্ষেত্রে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলাদেশে প্রযুক্তিগত বিনিয়োগ এবং ব্যবসার সুযোগ গ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো যেতে পারে। বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি ও সফটওয়্যার শিল্প দ্রুত বিকাশ লাভ করছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাজার হতে পারে। বিশেষভাবে স্টারলিঙ্কসহ বিভিন্ন আধুনিক সেবা বাংলাদেশের বাজারে চালু করার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো ইন্টারনেট সেবা এবং ডিজিটাল টেকনোলজির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের পেপ্যাল অর্থ আদান-প্রদান সেবা চালুর আবেদন রয়েছে। পেপ্যাল চালু করা যেতে পারে দেশে।
যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা বাংলাদেশের জন্য এক শক্তিশালী সংযোগের সুযোগ তৈরি করে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম সরকারের সময়েও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রে ছিল উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার জন্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ট্রাম্প ২.০ সরকারের সময় দুই দেশের মধ্যে শিক্ষা ও গবেষণার সহযোগিতাকে আরও শক্তিশালী করার জন্য বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় কাজ করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে মানব পাচার প্রতিরোধে কার্যকরী সহযোগিতা তৈরি করা সম্ভব। বাংলাদেশে মানব পাচারের বিরুদ্ধে কাজ করছে অনেক আইন ও সংস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্রও এ সমস্যা মোকাবিলায় আন্তর্জাতিকভাবে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। এ বিষয়ে যৌথ কার্যক্রম বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বেশ আগের এক টিভি অনুষ্ঠানে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক নিয়ে আলাপ করতে দেখা যায়। তাঁর পরনে তখন বাংলাদেশের তৈরি শার্ট ছিল। বাংলাদেশ নামটি ট্রাম্পের কাছে নিশ্চয় পরিচিত। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বাংলাদেশ ভ্রমণের আহ্বান জানাতে পারেন। এর আগে আমরা দেখেছি, ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেন ভারত সফর করলেও বাংলাদেশে পা রাখেননি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বাংলাদেশ সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানাতে পারেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই সফর দুই দেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে সাহায্য করবে এবং একাধিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে আশা করা যায়। বাংলাদেশের নতুন সরকারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি। এ সম্পর্কের মাধ্যমে শুধু অর্থনৈতিক সহযোগিতা নয়, বরং নিরাপত্তা, শিক্ষা, পরিবেশ, মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে ব্যাপক উন্নয়ন সম্ভব। বিশেষ করে ইউএসএআইডি ফান্ডিং বন্ধের ঘোষণা আমরা দেখছি। এতে স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ অনেক খাত সংকটে পড়বে। সেখানেও করণীয় ঠিক করা দরকার।
জাহিদ হোসাইন খান: গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
zahid.pen@gmail.com
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র র জন য সরক র র সহয গ ত ন সরক র ন নয়ন
এছাড়াও পড়ুন:
জব্দ করা জাটকা এতিমখানায় বিতরণ, সেই মাছ লুট করলেন আড়তদারেরা
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় জব্দ করা ৭০ কেজি জাটকা দুটি মাদ্রাসা ও এতিমখানায় বিতরণ করা হয়েছিল। তবে সেই মাছ লুট করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন আড়তদারের বিরুদ্ধে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলার আমিরাবাদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিকেলে মৎস্য কার্যালয়ের উদ্যোগে পরিচালিত জাটকা রক্ষার অভিযানে আমিরাবাদ ও দশানী বাজার থেকে ৭০ কেজি জাটকা জব্দ করা হয়। অভিযান পরিচালনা করেন মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস। পরে আমিরাবাদ এলাকায় জব্দ করা জাটকা উপজেলার হাজীপুর ও ফরাজীকান্দি মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষক ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। স্থানীয় কিছু দুস্থ মানুষকেও কিছু জাটকা দেওয়া হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই জাটকা নিয়ে ওই দুই মাদ্রাসার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কমিটির লোকজন সন্ধ্যায় আমিরাবাদের বেড়িবাঁধ এলাকায় পৌঁছান। তখন আমিরাবাদ বাজারের মাছের আড়তদার আবুল প্রধান, আরিফ গাজী, সেরু প্রধানিয়া, দেলু বেপারীসহ আরও কয়েকজন তাঁদের পথরোধ করেন এবং জাটকাগুলো লুট করে নিয়ে যান।
হাজীপুর মাদ্রাসার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম ও ফরাজীকান্দি মাদ্রাসার শিক্ষক মো. আল আমিন অভিযোগ করেন, মাছের ওই আড়তদারেরা তাঁদের নানাভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে তাঁদের কাছ থেকে জাটকা লুট করে নিয়ে যান। বাধা দিয়েও কাজ হয়নি। বিষয়টি মৎস্য কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানিয়েছেন।
এ অভিযোগের বিষয়ে আবুল প্রধান, আরিফ গাজী ও সেরু প্রধানিয়ার মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়। তবে দেলু ব্যাপারী মুঠোফোনে বলেন, জাটকা লুট করা তাঁদের উচিত হয়নি। ওই জাটকা আজ (বৃহস্পতিবার) তাঁরা ফেরত দেবেন। এটি তাঁদের বড় ভুল হয়েছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস বলেন, বিষয়টি জানার পর ঘটনাস্থলে গিয়েছেন। জাটকা উদ্ধারে ব্যবস্থাপনা নেওয়া হচ্ছে।
ইউএনও মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর জাটকা উদ্ধারে তিনি থানার ওসি ও মৎস্য কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টির তদন্ত চলছে। এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এতিমদের জাটকা লুট হওয়ার বিষয়টি খুব দুঃখজনক।