Samakal:
2025-09-18@07:09:47 GMT

কেন ঢাবি ও সাত কলেজ সংঘর্ষ

Published: 27th, January 2025 GMT

কেন ঢাবি ও সাত কলেজ সংঘর্ষ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থী ও ঢাবি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। রোববার রাত ১১টার দিকে নীলক্ষেত মোড়-সংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের সামনে এ ঘটনা শুরু হয়। 

রণক্ষেত্রে পরিণত হয় নীলক্ষেত ও নিউমার্কেট এলাকা। মুহুর্মুহু সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপে মধ্যরাতে কেঁপে ওঠে আশপাশ। সারা রাত উভয় পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে ছিল। থেমে থেমে চলছিল ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। এতে অন্তত ৬ জন আহত হয়েছেন।

ঘটনাস্থলে দেখা যায়, লাঠিসোটা ও রড হাতে নিয়ে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজের সামনে অবস্থান করছেন। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নীলক্ষেত, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট এলাকায় জড়ো হয়ে আছেন। সড়কের কয়েকটি স্থানে টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। মধ্যরাতে ইডেন কলেজের কয়েকশ ছাত্রী সড়কে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন।

ঢাবি ও সাত কলেজ সংঘর্ষ কেন

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, রোববার বিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় অযৌক্তিক কোটা পদ্ধতি বাতিলসহ পাঁচ দফা দাবির অগ্রগতি জানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মামুন আহমেদের সঙ্গে কথা বলতে যান সাত কলেজের এক দল শিক্ষার্থী। এ সময় কয়েকজন হুড়মুড় করে তাঁর কার্যালয়ে ঢুকে পড়েন। এতে মেজাজ হারিয়ে ফেলেন অধ্যাপক মামুন। 

এ সময়ের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাওয়া যায়। এতে দেখা যায়, মামুন আহমেদ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলছেন, ‘আমি তোমাদের বলেছি দুইজন আসতে; কেন বলেছি? আমি তোমাদের কথা শুনব। বাট তুমি দলবল নিয়ে আমার রুমে ঢুকেছো।’

অন্যপাশে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘দুইজন তো সব কথা বলতে পারবে না।’ তখন অধ্যাপক মামুন বলেন, ‘কেন বলতে পারবে না? তোমার বক্তব্য প্রতিনিধি হিসেবে বলবা।’ শিক্ষার্থী বলেন, ‘ওরা মানবে না স্যার।’ তখন অধ্যাপক মামুন বলেন, ‘মানবে না, দ্যাটস নট মাই বিজনেস।’ তখন এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আপনি এত অ্যাগ্রেসিভ হয়ে যাচ্ছেন কেন?’ তখন অধ্যাপক মামুন বলেন, ‘অ্যাগ্রেসিভ হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।’ তখন ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘আপনি যেভাবে অ্যাগ্রেসিভ হয়ে গেলেন, এটা কিন্তু গ্রহণযোগ্য আচরণ নয়।’ তখন অধ্যাপক মামুন বলেন, ‘অবশ্যই এটা গ্রহণযোগ্য আচরণ। প্লিজ সরি, তোমার কথা শুনব না। তোমার কথা বারবার শোনার জন্য এখানে বসিনি।’

অধ্যাপক মামুনের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ হন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। প্রতিবাদে তারা সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঢাকা কলেজের সামনে জড়ো হন। পরে অশোভন আচরণের অভিযোগ তুলে অধ্যাপক মামুনকে প্রকাশ্যে শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে তারা সায়েন্স ল্যাব, টেকনিক্যাল মোড় ও তাঁতীবাজার সড়ক অবরোধ করেন। এতে সায়েন্স ল্যাব, নীলক্ষেত মোড়, এলিফ্যান্ট রোড, পুরান ঢাকাসহ রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

সংঘর্ষের শুরু যেভাবে

শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের পাঁচ দফা দাবি মেনে নিতে হবে এবং উপ-উপাচার্যকে তাঁর আচরণের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। রাত ১০টার পর সায়েন্স ল্যাব ছেড়ে মিছিল নিয়ে অধ্যাপক মামুনের বাসভবন ঘেরাওয়ের উদ্দেশ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের দিকে এগোতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। সাড়ে ১০টার দিকে তারা নীলক্ষেত মোড়-সংলগ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের সামনে পৌঁছান। এক পর্যায়ে তারা উপ-উপাচার্যের বাসভবন অভিমুখে রওনা হওয়ার ঘোষণা দেন। এ খবর পেয়ে স্যার এএফ রহমান হলের সামনে লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে পুলিশ তোরণের এক দিকের সড়কে ব্যারিকেড দেয়। বেশ কিছু সময় ধরে দু’পক্ষের ‘ভুয়া’ ‘ভুয়া’ স্লোগান চলে। 

এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবদুল কাদের, হাসিব আল ইসলাম, সহ-সমন্বয়ক মোবাশ্বিরুজ্জামান তাদের থামানোর চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মানবপ্রাচীর ভেঙে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেন। ধাওয়া খেয়ে তারা কলেজের দিকে চলে যান। এর মধ্যে নীলক্ষেত থেকে পুনরায় কলেজের দিকে ফিরে যান ঢাবি শিক্ষার্থীরা। পুলিশ নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নিয়ে উভয় পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করে। 

কিছুক্ষণ পর ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা পুনরায় এগিয়ে আসেন। তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ পিছু হটে। এর পর তারা দৌড়ে তোরণ পর্যন্ত ঢাবি শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেন। আবার ঢাবি শিক্ষার্থীরা তাদের ধাওয়া দিয়ে নীলক্ষেত মোড়ে নিয়ে যান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েকটি সাউন্ড গ্রেনেডের বিস্ফোরণ ঘটায়। এর মধ্যে দু’পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে। সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হয়। পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলতে থাকে। রাত ১২টার পর পুলিশ মাঝে অবস্থান নিয়ে সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার গ্যাসের শেল ছোড়ে। এর পরও দু’পক্ষের শিক্ষার্থীরা দুই দিকে অবস্থান নেন। দফায় দফায় চলতে থাকে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। গাউছিয়া থেকে ঢাকা কলেজ পর্যন্ত সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। 

রাত সাড়ে ১২টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ঘটনাস্থলে যান। তিনি দু’পক্ষের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা হাসনাতের উদ্দেশে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিতে থাকেন। সেখানে তাঁর উপস্থিতিতে দু’পক্ষ হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। উত্তেজনা আরও বাড়তে থাকে। তোপের মুখে ঢাবি ক্যাম্পাসে ফিরে যান হাসনাত।

রাত সোয়া ১২টার দিকে ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা বেরিয়ে এসে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের পক্ষে অবস্থান নেন। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবদুল কাদের দু’পক্ষকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানাতে থাকেন। এর মধ্যে কয়েক শিক্ষার্থী তাদের মারতে উদ্যত হন।

ইডেন কলেজ শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অন্যায়ভাবে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে। তাই আমরা আমাদের ভাইদের সহযোগিতার জন্য বের হয়েছি।’ এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীর দেখা যায়, তারা ইডেন শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করছেন।

এদিকে ঢাবির সহকারী প্রক্টর রফিকুল ইসলাম বারবার শিক্ষার্থীদের থামানোর চেষ্টা করেন। রাত পৌনে ১টার দিকে তিনি ক্যাম্পাসে ফিরে যান।

সোহেল মাহমুদ নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা কোনো আন্দোলন করতে আসিনি। সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা যাতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা করতে না পারে, সে জন্য নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নিয়েছি।’

ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা আমাদের দাবি নিয়ে শান্তভাবে সেখানে গিয়েছি। কিন্তু ঢাবি শিক্ষার্থীরা না বুঝে আমাদের ওপর হামলা করেছে। পুলিশ তাদের পক্ষ নিয়ে আমাদের ধাওয়া দিয়েছে।’

এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিউমার্কেট, নীলক্ষেত ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দুই শতাধিক পুলিশ সদস্য এবং চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। রাত আড়াইটা পর্যন্ত দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পাঁচ দাবি হলো– ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকেই সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় অযৌক্তিক কোটা পদ্ধতি বাতিল করতে হবে; সাত কলেজের শ্রেণিকক্ষের ধারণক্ষমতার বাইরে শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে না; শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে হবে; সাত কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় নেগেটিভ মার্ক যুক্ত করতে হবে; সাত কলেজের ভর্তি ফির স্বচ্ছতা নিশ্চিতে মন্ত্রণালয় গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে ঢাবি ব্যতীত নতুন একটি অ্যাকাউন্টে ভর্তি ফির টাকা জমা রাখতে হবে।

সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর টিমের ফোকাল পারসন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান বলেন, একজন শিক্ষক কখনও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এমন আচরণ করতে পারেন না। অধ্যাপক মামুনের কক্ষে গেলে এমনভাবে চিৎকার করেছেন, মেয়েরা ভয়ে কান্না করে দিয়েছে। তাঁকে অবশ্যই শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি আমাদের কাছে এসে ক্ষমা না চাইবেন, ততক্ষণ আন্দোলন চলবে।

সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার সময় ঘটে যাওয়া ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাতে উদ্ভূত পরিস্থিতি ‘দুঃখজনক’ বলে বার্তা দিয়েছেন অধ্যাপক মামুন আহমেদ। মধ্যরাতে এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘এতে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। আমি বিশ্বাস করি, সুষ্ঠু পরিবেশে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে এই ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটবে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে উত্তেজনার সূত্রপাত, তা প্রশমনের জন্য সব পক্ষকে ধৈর্য ধরার জন্য আমি আন্তরিক আহ্বান জানাচ্ছি।’

এদিকে সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। রাতে ঢাবির প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোমবারের সব ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। আজ ৭ কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। আশা করি, সব পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির শান্তিপূর্ণ সমাধান হবে।

অধ্যক্ষ ও বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে ইউজিসির বৈঠক

ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজকে স্বতন্ত্র কাঠামো প্রদানের লক্ষ্যে কলেজগুলোর অধ্যক্ষ ও বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। গতকাল সকালে কমিশনের অডিটোরিয়ামে কলেজগুলোর অধ্যক্ষ এবং দুপুরে বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে এ বৈঠক হয়। বৈঠকে নেতৃত্ব দেন কমিশনের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজিম উদ্দিন খান।

ইউজিসি সূত্রে জানা যায়, বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ এবং অধ্যাপকদের সঙ্গে আলোচনা করে। এতে কলেজগুলোকে স্বতন্ত্র কাঠামো প্রদানের ক্ষেত্রে কী ধরনের সমস্যা রয়েছে, কী ধরনের পরিকল্পনা নেওয়া প্রয়োজন, সেসব নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় বিভিন্ন সমস্যা, সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন বিভাগের প্রধান ও অধ্যাপক। একই সঙ্গে সমস্যা নিরসনেও অধ্যাপকরা বিভিন্ন পরামর্শ তুলে ধরেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইউজ স স ত কল জ র শ ক ষ র থ দ র স ত কল জ র শ ক ষ র থ র এক শ ক ষ র থ অবস থ ন ন ন আহম দ পর ক ষ র জন য র স মন স ঘর ষ এ সময় ১২ট র

এছাড়াও পড়ুন:

ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের

ভোলা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাইফুল্লাহ আরিফকে (৩০) হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তাঁর বাবা বশির উদ্দিন (মাস্টার) এই অভিযোগ করেন।

এ সময় বশির উদ্দিন বলেন, পুলিশ দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ার কোনো সুযোগ নেই; সেখানে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক।

এর আগে গত শনিবার পুলিশ সুপার শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক তদন্তের তথ্য অনুযায়ী অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে সাইফুল্লাহ আরিফ মারা গেছেন।

সাইফুল্লাহ আরিফ ভোলা পৌরসভার কালীবাড়ি রোডে নবী মসজিদ গলি এলাকার বশির উদ্দিনের ছেলে। গত ৩১ আগস্ট ভোরে নিজ বাড়ির সামনে থেকে সাইফুল্লাহ আরিফের লাশ উদ্ধার করা হয়।

আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে দুর্ঘটনায় নয়, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এর কিছু প্রমাণ আছে। আরিফের শরীরে একাধিক কাটা ও ভাঙা জখম ছিল, এমনকি হাতের রগ কাটা ছিল। পুলিশের দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুর সুযোগ নেই, কারণ, ছাদে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশ সুপার আমার ছেলেকে নেশাগ্রস্ত আখ্যা দিলেও তাঁর কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া পুলিশ কীভাবে এমন কথা বলতে পারে। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

বশির উদ্দিন আরও বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফ কোনো ধরনের মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সে ছাত্রলীগের সহসভাপতি হলেও কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করেনি। হত্যাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ সত্য গোপন করছে। সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে মামলাটি সিআইডি বা পিবিআইয়ের কাছে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বশির উদ্দিন বলেন, তাঁর ছেলের সঙ্গে অনেকের বিরোধ ছিল। তবে জমিজমার বিরোধ ও মাদক ব্যবসার বিরোধ নিয়ে তাঁর ছেলে খুন হয়নি। এগুলোর সঙ্গে সে জড়িত ছিল না।

শনিবার পুলিশ শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফের মৃত্যুর রহস্য উদ্‌ঘাটনে প্রাথমিক তদন্ত শেষে জানা যায়, তিনি অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন। ৩০ আগস্ট দিবাগত রাত অনুমান ১২টা ১৫ মিনিটে রাতের খাবার শেষে সাইফুল্লাহসহ পরিবারের সবাই নিজ নিজ ঘরে ঘুমাতে যান। ভোর ৫টা ১০ মিনিটে ফজরের নামাজের জন্য বের হওয়ার সময় তাঁর বাবা বশির উদ্দীন (৭০) বাড়ির সামনে গেটের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলের মরদেহ দেখতে পান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। সুরতহালে দেখা যায়, আরিফের মাথা ও হাতে গুরুতর আঘাত ছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, আরিফ দীর্ঘদিন ধরে নেশায় আসক্ত ছিলেন এবং হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রায়ই ছাদে যেতেন। ঘটনার দিন রাতেও তিনি ছাদে ওঠেন এবং অসতর্কতাবশত রেলিংবিহীন অংশ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়ে মারা যান।

পরিবারের অভিযোগ সম্পর্কে আজ দুপুরে পুলিশ সুপার শরীফুল হক মুঠোফোনে বলেন, ‘ওই ঘটনায় তদন্ত চলমান। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক তদন্তের কথা জানানো হয়েছে। তদন্তে তথ্য সংযোগ-বিয়োগের সুযোগ রয়েছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতি আগ্রহের কারণ কী, প্রশ্ন টিআইবির
  • মুসলিম পরিবারে শিশুর নিরাপত্তা
  • পুরোপুরি বিলুপ্তির পর উগান্ডায় আবার ফিরল গন্ডার
  • ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের