চলে গেলেন দেশের প্রথম সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল (অব.) কে এম সফিউল্লাহ বীরউত্তম। রোববার সকালে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে এই বীর মুক্তিযোদ্ধা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ৯০ বছর বয়সী কে এম সফিউল্লাহ গড় বাঙালির তুলনায় বেশ দীর্ঘ জীবন পেয়েছেন বললে ভুল হবে না। কর্মেও তিনি ছিলেন গড় বাঙালির তুলনায়, এমনকি সমসাময়িক সেনা কর্মকর্তা বা মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকের তুলনায় দীর্ঘ।

তবুও বলতে হবে, অনেকটা নীরবে-নিভৃতেই জাতির ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ ঘটনা মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এ নায়ককে বিদায় নিতে হলো। মুক্তিযুদ্ধে কে এম সফিউল্লাহ ৩ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন, আমরা জানি। একই সঙ্গে তিনি স্বনামের আদ্যাক্ষর দিয়ে গঠিত ব্রিগেড ‘এস ফোর্স’-এর অধিনায়কও ছিলেন। 
মুক্তিযুদ্ধে আমাদের মাত্র তিনটি ব্রিগেড ছিল। বাকি দুটি ছিল ‘জেড ফোর্স’ ও ‘কে ফোর্স’, যেগুলো গঠিত হয় যথাক্রমে অন্য দুই বীর তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান ও মেজর খালেদ মোশাররফের নামে। তিন ব্রিগেড অধিনায়কই মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন পাকিস্তানি বাহিনীতে তাদের অধীন সেনাদের নিয়ে। সম্ভবত এ বিষয়টিই মুক্তিযুদ্ধে যোগদানকারী সমমর্যাদার আরও কয়েকজন বাঙালি সামরিক কর্মকর্তা থেকে তাদের স্বতন্ত্র করে তোলে।

এ কথাও বলতে হয়, মুক্তিযুদ্ধের তিন ব্রিগেডের নেতাদের মধ্যে জিয়াউর রহমান ও খালেদ মোশাররফকে আমাদের কুটিল সামরিক-বেসামরিক রাজনীতি বেশি দিন বাঁচতে দেয়নি। কে এম সফিউল্লাহ সৌভাগ্যক্রমে দীর্ঘায়ু পেলেও ওই একই কারণে তাঁকেও অন্তত জীবনের শেষাংশটা কাটাতে হয়েছে পাদপ্রদীপের আড়ালে।
কাজী মোহাম্মদ সফিউল্লাহ তথা কে এম সফিউল্লাহ জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ গ্রামে। ১৯৫৩ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করে তিনি ১৯৫৫ সালে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পদে নিযুক্ত হন। কমিশনপ্রাপ্তির পর ১৯৭০ সাল পর্যন্ত সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটে, স্টাফে এবং প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে তিনি কাজ করেন। একাত্তরের অগ্নিঝরা মার্চে তিনি ছিলেন জয়দেবপুর সেনানিবাসে; দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধীন সংশ্লিষ্ট ব্যাটালিয়নের সেকেন্ড-ইন কমান্ড হিসেবে। সেখান থেকেই প্রায় পুরো ব্যাটালিয়ন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সফিউল্লাহর একাধিক বই আছে। একটির নাম ‘বাংলাদেশ অ্যাট ওয়ার’– ইংরেজিতে লেখা। বাংলা অনুবাদে এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ’। বইটিতে তাঁর মুক্তিযুদ্ধে যোগদান নিযে যে বর্ণনা আছে, তা এক কথায় অসাধারণ। পড়তে গিয়ে যে কারও মনে হবে, তিনি যেন ১৯৭১ সালের সেই  মার্চে ফিরে গেছেন। 

গাজীপুরে সেই মার্চের ১৯ তারিখে সশস্ত্র পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে স্থানীয় শ্রমিক-জনতার রক্তক্ষয়ী প্রতিরোধের কথা আমরা জানি, যাকে বলা হয় বাঙালির প্রথম প্রতিরোধ। মনে রাখতে হবে– তখনও মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়নি। ফলে কে এম সফিউল্লাহদের পক্ষে বিদ্রোহ বা বিক্ষোভকারী জনতার ওপর গুলি চালাতে ব্রিগেড কমান্ডারের নির্দেশ অমান্য করাও ছিল অসম্ভব। আবার জনতার ক্ষোভের আগুন নিভে গেলে বাঙালি সেনারাই বিপদে পড়বেন– সেটাও মাথায় ছিল। পুরো পরিস্থিতি কে এম সফিউল্লাহ অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সামাল দেন। সফিউল্লাহরা অস্ত্র নিয়ে ২৮ মার্চ বিদ্রোহ করে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ হয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। 

সফিউল্লাহর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা অর্থাৎ ব্যাটালিয়ন কমান্ডারও বাঙালি ছিলেন। কিন্তু পরিবারের নিরাপত্তার অজুহাতে তিনি সঙ্গে যাননি। অথচ সফিউল্লাহ পরিবারের মায়া না করেই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। বইটি পড়লেই বোঝা যায়, মূলত মার্চের শুরু থেকেই তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন; বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের পর যা তাঁর কাছে পাখির চোখ হয়ে ওঠে।
যুদ্ধকালে সফিউল্লাহ এমনকি কখনও কখনও সম্মুখ যুদ্ধে শামিল হন। সেক্টর বা ব্রিগেড কমান্ডার হিসেবে নিরাপদ দূরত্ব থেকে যুদ্ধ পরিচালনার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও স্পষ্টত, প্রকৃতই তিনি দেশমাতৃকার মুক্তির বেদিতে জীবন উৎসর্গে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন। তিনি সম্ভবত সেই বিরল সেনা কর্মকর্তাদের একজন, যিনি একই সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে বাঙালির ১৯ মার্চের প্রথম প্রতিরোধ এবং ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণকালে প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছিলেন।

এটা ঠিক, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সময় তিনি সেনাপ্রধান ছিলেন, তাই বাঙালির ইতিহাসের অন্যতম বর্বরোচিত ওই ঘটনার দায় তিনি এড়াতে পারেন না। কিন্তু সেই সময় সেনাবাহিনীতে যে চরম বিশৃঙ্খলা ছিল, তা সফিউল্লাহর একার পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভবপর ছিল না। এখানে তৎকালীন রাজনৈতিক নেতৃত্বের সংশ্লিষ্টতা ছিল। এমনকি সেনাপ্রধানকে এড়িয়েও সেই রাজনৈতিক নেতৃত্ব সেনাবাহিনীর বিষয়ে অনেক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এক কথায় বলা যায়, পুরো সেনাবাহিনী যেমন সফিউল্লাহর একক নিয়ন্ত্রণে ছিল না, তেমনি মূলত রাজনৈতিক নেতৃত্বের কারণে তখন ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের সুযোগও ছিল।

এ ক্ষেত্রেও জেনারেল সফিউল্লাহর যে বৈশিষ্ট্য অনন্য তা হলো, ১৫ আগস্টের ঘটনায় নিজের ব্যর্থতা বরাবর অকপটে স্বীকার করে গেছেন। তদুপরি, নীতি ও নেতার প্রতি তাঁর আনুগত্য আমৃত্যু বহাল ছিল। মুক্তিযুদ্ধ ছিল তাঁর চিন্তা-চেতনায়। সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে এর নজির ছড়িয়ে আছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচিত হন সফিউল্লাহ। ক্ষমতাসীন দলের অন্য এমপিদের সঙ্গে তুলনা করলেও তাঁর অনন্যতা স্পষ্ট হয়।
দেশের প্রথম সেনাপ্রধান, সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধের এক অনন্য বীর হিসেবে কে এম সফিউল্লাহ হয়তো যোগ্য ফিউনারাল বা বিদায়ানুষ্ঠান পাননি; তবে একই কারণে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে তিনি যে স্মরিত হবেন– এ বিষয়ে আমি নিঃসন্দেহ।

সাইফুর রহমান তপন: সহকারী সম্পাদক, সমকাল

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কম ন ড র র রহম ন র প রথম র জন ত

এছাড়াও পড়ুন:

পুতিন এমন কিছু চান, যা তিনি কখনোই পাবেন না

ভ্লাদিমির পুতিন নিজেই বলেছেন, তিনি কোনো সাধারণ নেতা নন, সিংহাসনে আসীন একজন আইনজ্ঞ শাসক। শুরু থেকেই তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের পরিচিতির অংশ হিসেবে একসময় যে তিনি আইনশাস্ত্র পড়েছেন, সেটা ভুলে যাননি। গত মে মাসে একদল ব্যবসায়ীর সঙ্গে আলোচনার সময় তিনি তাঁদের বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত তো আমি আইনশাস্ত্রে ডিগ্রিধারী।’ সেই বৈঠকে ব্যবসায়ীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন, একটি শান্তিচুক্তি হলে পশ্চিমা প্রতিযোগীরা রাশিয়ায় ফিরে আসতে পারে। এর উত্তরে পুতিন আরও বলেন, ‘আপনারা যদি আমাকে চুক্তিপত্রটি দেন, তাহলে আমি উল্টেপাল্টে দেখে বলে দেব কী করতে হবে।’

আমরা সাধারণত স্বৈরাচার মানেই এমন একজনকে ভেবে নিই, যিনি আইনকানুনের তোয়াক্কা করেন না। এটা একদম সত্যি। কিন্তু পুতিনের মতো একজন একনায়কের কাছে আইনের লঙ্ঘনের চেয়ে বরং আইনের দোহাই দেওয়াটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, তিনি নিরাপত্তা বাহিনীর একটি সুশৃঙ্খল কাঠামো থেকে নির্দেশ মেনে চলতে চলতে প্রেসিডেন্টের আসন পর্যন্ত পৌঁছেছেন।

আজকের রাশিয়ায় রাজনৈতিক দমন-পীড়নের প্রতিটি নতুন ঢেউয়ের আগে নতুন কোনো আইন পাস হয় অথবা পুরোনো আইনে সংশোধন আনা হয়, যাতে আইন লঙ্ঘন না করেই আরও বেশি মানুষকে ‘আইনের আওতায়’ শাস্তি দেওয়া যায়।

একজন ব্যক্তির ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য আইনি ব্যবস্থাকে সীমাহীনভাবে ব্যবহার করে যাওয়ার ব্যাপারটা ঘটনাক্রমে একটি উচ্চতর বৈধতার দাবি করে। প্রকৃতপক্ষে পুতিনের সমগ্র রাজনৈতিক জীবনই কেটেছে এমন একটি বৈধতার উৎস খুঁজতে খুঁজতে, যেটা আইনের চেয়েও গভীর। নিজের কর্তৃত্ব প্রমাণের এটা একটা ব্যক্তিগত বাতিক। এটা বিজয়ের বাসনার মতোই একটি ব্যাপার। এটাই ইউক্রেন যুদ্ধে তাকে চালিত করেছে। এ যুদ্ধের লক্ষ্য হলো সামরিক বিজয়ের মাধ্যমে রাশিয়াকে আবার বিশ্বশক্তির অভিজাত ক্লাবে ফেরত নিয়ে যাওয়া। কিন্তু এ প্রত্যাবর্তন পশ্চিমা বিশ্বের স্বীকৃতি ছাড়া অসম্ভব। আর দিন দিন এ ধারণা পরিষ্কার হচ্ছে যে পুতিন সেই স্বীকৃতি হয়তো আর কখনোই পাবেন না।

পুতিনের রাজত্ব শুরুর বছরগুলোতে একটি কৌশল কাজ করেছিল। তিনি পশ্চিমা নেতাদের সঙ্গে সম্মেলনে অংশ নিতেন। দ্বিতীয় চেচেন যুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছিলেন। কিন্তু ২০১২ সালে তিনি যখন আবার প্রেসিডেন্ট পদে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন, তখন দেশজুড়ে বড় ধরনের প্রতিবাদ শুরু হয়। তখন থেকেই তিনি বিধ্বংসী পশ্চিমা প্রভাবের বিরুদ্ধে তথাকথিত রুশ ঐতিহ্যবাহী মূল্যবোধ রক্ষার লড়াই শুরু করেন।

এ দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনের অর্থ ছিল সরাসরি পশ্চিমের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়া, যার পরীক্ষাক্ষেত্র হয়ে ওঠে ইউক্রেন। ক্রিমিয়া দখলকে পুতিন একটি ঐতিহাসিক অবিচারের ‘সংশোধন’ বলে তুলে ধরেছিলেন। এর পরপরই পূর্ব ইউক্রেনে হস্তক্ষেপের ঘটনা ঘটে। ২০২২ সালে ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রার আগ্রাসন শুরু করেন। এটিকে তিনি চমকপ্রদ বিদ্যুৎ গতির আক্রমণ মনে করেছিলেন। এটা তার পশ্চিমাদের প্রতি বৈরিতাপূর্ণ নীতির চূড়ান্ত রূপ।

পুতিন এখন সেই একই দ্বিধার পড়েছেন। যতটা সম্ভব ভূখণ্ড দখল করে নেওয়া এবং দখল করা অঞ্চলের ওপর বৈধতা প্রতিষ্ঠা—এই দুয়ের মধ্যে কোন পথটি তিনি বেছে নেবেন। স্তালিনও একসময় দ্বিধায় থেকে শেষ পর্যন্ত যে পথ বেছে নিয়েছিলেন, পুতিনও সম্ভবত সেই পথেই হাঁটবেন।

এসব প্রচেষ্টা রাশিয়ার ভেতরে পুতিনের সমর্থন জয় করে নেওয়ার জন্য চোখে পড়ার মতো সফল ছিল। তবে একই সঙ্গে এগুলো রাশিয়া ও পশ্চিমের সম্পর্ক ভাঙার নয়; বরং তা নতুনভাবে গড়ে তোলার চেষ্টাও ছিল। এমনকি ক্রিমিয়া দখল ও পূর্ব ইউক্রেনে সংঘাতের পরও ক্রেমলিন আলোচনার পথ অনুসরণ করে গেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো মিনস্ক চুক্তি। এর লক্ষ্য ছিল কূটনৈতিক একঘরে অবস্থান থেকে বেরিয়ে এসে প্রধান শক্তিগুলোর সঙ্গে আলোচনার টেবিলে নিজের আসন পুনরুদ্ধার করা। সেই প্রচেষ্টাগুলো ব্যর্থ হয় এবং পুতিন আরও ঝুঁকি বাড়ানোর পথ বেছে নেন। এখন ক্রেমলিন কিছু মাত্রায় নমনীয়তা দেখাতে প্রস্তুত।

সব অনমনীয় কথাবার্তার পরও ক্রেমলিন এরই মধ্যে কিছু চরম অবস্থান থেকে সরে এসেছে। মার্চ মাসে পুতিন ইউক্রেনকে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে প্রদান কিংবা যেকোনো আলোচনা শুরুর পূর্বশর্ত হিসেবে ইউক্রেনের নির্বাচন দেওয়ার মতো ধারণাগুলো নিয়ে এসেছিলেন। মস্কো এখন আর জোর দিয়ে বলছে না যে ইউক্রেনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা অর্থহীন এবং যেকোনো প্রকৃত চুক্তির আগে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে হবে। রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা নিষিদ্ধকারী আইন বাতিলের জন্য ইউক্রেনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে দাবি তোলা হয়েছিল, সেখান থেকেও রাশিয়া নীরবে সরে এসেছে।

নিশ্চয়ই এ নতুন নমনীয়তারও একটা সীমা আছে। মস্কো এর মূল দাবিগুলো এখনো পরিত্যাগ করেনি। কারণ, গত তিন বছরে রাশিয়া এক যুদ্ধরত দেশে পরিণত হয়েছে। শত্রু হয়ে উঠেছে একপ্রকার পৌরাণিক শয়তান, সেনারা এখন নায়ক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এত বেশি মানুষ আর কোনো যুদ্ধে নিহত বা আহত হননি। যুদ্ধ-অর্থনীতি সচল হয়ে উঠেছে; ভিন্নমত গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এমনকি পুতিন নিজেও এখন প্রায়ই ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ না বলে সরাসরি ‘যুদ্ধ’ শব্দটি ব্যবহার করছেন। যুদ্ধ যত দীর্ঘ ও বিস্তৃত হয়, এর ফলাফল ততই বিশ্বাসযোগ্য ও জোরালো হতে হয়।

এখানেই আসে দর-কষাকষির বিষয়টি। ক্রেমলিন স্পষ্টতই দর–কষাকষির বিষয়টাকে এমন একটা হিসেবে দেখছে, যেন সেখানে তারা একটি বিজয় দাবি করতে পারে, যেটা তারা যুদ্ধক্ষেত্রে অর্জন করতে পারেনি। রাশিয়া কেন ইউক্রেনকে এমন সব এলাকা থেকেও সরে যাওয়ার দাবি তুলেছে, যেগুলোর ওপর দেশটির নিয়ন্ত্রণই নেই—এর ব্যাখ্যা এখান থেকে পাওয়া যায়। পুতিনের কাছে বিজয় মানে শুধু ভূখণ্ড দখল নয়। তাঁর কাছে বিজয় মানে, শর্ত চাপিয়ে দেওয়া, নতুন করে সীমান্ত আঁকা এবং সেই নতুন বাস্তবতার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়। এভাবেই পুতিন তাঁর কাঙ্ক্ষিত বৈধতা নিশ্চিত করতে পারেন।

পুতিনের এ অবস্থান বুঝতে পারাটা মোটেই কঠিন নয়। এমনকি ট্রাম্প প্রশাসনে থাকা পুতিনের প্রতি সবচেয়ে সহানুভূতিশীল ব্যক্তিরাও মনে করেন যে পুতিন অনেক বেশি দাবি করছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হতাশা স্পষ্টতই বাড়ছে। শান্তির জন্য তাঁর ৫০ দিনের সময়সীমা এখন কমে এসে ‘১০ বা ১২ দিনে’ দাঁড়িয়েছে, যা তাঁর ধৈর্য ফুরিয়ে আসারই প্রমাণ। অন্যদিকে ইউক্রেন যুদ্ধক্লান্তির লক্ষণ ও বেদনাদায়ক আপসের বিষয়টি বিবেচনা করা সত্ত্বেও এটা বিশ্বাস করার এমন কোনো কারণ নেই যে মস্কোর চূড়ান্ত শর্ত মেনে নেবে। এমনকি এর কিছু অংশে যদি ওয়াশিংটন সমর্থন দেয়, তারপরও সেটা নয়।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হতাশা স্পষ্টতই বাড়ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পুতিন এমন কিছু চান, যা তিনি কখনোই পাবেন না