স্থায়ী ক্যাম্পাস না থাকা নিয়ে যা ভাবছেন শিক্ষার্থীরা
Published: 28th, January 2025 GMT
বিশ্ববিদ্যালয় উন্মুক্ত জ্ঞান চর্চার এমন একটি জায়গা, যেখানে জ্ঞান চর্চার পাশাপাশি জ্ঞানের উৎপত্তিও ঘটে থাকে। শিক্ষার্থীরা নিরাপদ, নিঃসংকোচে, আনন্দ, উচ্ছ্বাসে বিচরণ করে ক্যাম্পাসে। কিন্তু ক্যাম্পাসবিহীন বিশ্ববিদ্যালয় জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ, উৎকণ্ঠা আর অস্থিতিশীল।
দেশের ক্যাম্পাসবিহীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় (রবি) অন্যতম। যা ভারতের শান্তি নিকেতন ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে ২০১৭ সালে দেশের ৪০তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে। বিশ্ববিদ্যালয়টি ইতোমধ্যে অষ্টম বর্ষ শেষ করে নবম বর্ষে পদার্পণ করলেও মেলেনি স্থায়ী অবকাঠামোর দেখা। দীর্ঘ ৮ বছরেও স্থায়ী ক্যাম্পাস না হওয়ার কারণ, স্থায়ী ক্যাম্পাসের প্রয়োজনীয়তাসহ নানা বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করেছেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
সরকারের উদাসীনতায় শিক্ষকদেরও বসার জায়গা নেই
২০১৮ সালে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছি প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী হয়ে। ২০২৪ পেরিয়ে ২০২৫ চলে এসেছে, কিন্তু এখনো ক্যাম্পাসের আলোকচ্ছটাও দেখিনি। এর কারণ, বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় পর্যায়ের প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাব ও সরকারের উদাসীনতা। একটি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের পর সর্বপ্রথম দায়িত্ব হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ ক্যাম্পাস করে দেওয়া।
শ্রেণিকক্ষ সংকট, গ্রুপ স্টাডির জন্য জায়গা না থাকা, লাইব্রেরি-ল্যাব-ক্যান্টিনের মধ্যে মহাদেশ সমান দূরত্ব, সম্মেলন কক্ষ রুম না থাকা, হল না থাকাসহ হাজারো সমস্যায় জর্জরিত আমাদের শিক্ষাজীবন। শিক্ষাকে মানব কল্যাণের উপযোগী করার একটি মাধ্যম হচ্ছে গবেষণা। কিন্তু গবেষণার মতো মহৎ কাজটিও ব্যাহত হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ ক্যাম্পাসের অভাবে। শিক্ষক আছেন, তাদের বসার জন্যও পর্যাপ্ত জায়গা নেই এ ক্যাম্পাসে।
(লেখক: মোমিনা রহমান মালা, প্রথম ব্যাচ, অর্থনীতি বিভাগ)
বিশ্ববিদ্যালয়ের এ বেহাল দশা সত্যিই লজ্জার
ক্যাম্পাস একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরুদণ্ড। যদি মেরুদণ্ডই না থাকে, তাহলে সেই বিশ্ববিদ্যালয় কেমন করে চলে একবার ভাবুন তো? রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পরেও কিছু বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যাদের নিজস্ব ক্যাম্পাস আছে। কিন্তু বিশ্ব কবির নামে প্রতিষ্ঠিত একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ রকম বেহাল দশা সত্যিই লজ্জাজনক।
এতো কষ্ট করে চান্স পাওয়ার পরও যদি শিক্ষার্থীদের আবাসনের সুযোগ-সুবিধা না পায়, তাহলে তাদের হতাশার সীমা থাকে না। আবাসন সংকট, খাবারের সমস্যা, প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা, নিরাপত্তা, মানসিক স্বাস্থ্য, আর্থিক সমস্যা, চিত্তবিনোদনের সুযোগ না থাকা ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সমস্যা প্রতিনিয়ত মোকাবিলা করতে হয় ক্যাস্পাসের অভাবে।
(লেখক: হাফিজুল ইসলাম, পঞ্চম ব্যাচ, বাংলা বিভাগ)
৮ বছর পরও দৃষ্টিগ্রাহ্য কিছু হয়নি
প্রশাসন বারবার শুধু আমাদের আশ্বাসই জানিয়ে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৮ বছর পরও কোন স্থায়ী ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার বিষয়ে দৃষ্টিগ্রাহ্য এখনো কিছু করতে পারেনি। হল না থাকায় আবাসন সংকটের পাশাপাশি মহিলা কলেজ ও কমিউনিটি সেন্টারে ক্লাস চলায় আমরা একাডেমিকভাবেও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। আমাদের শ্রেণিকক্ষের তীব্র সংকট রয়েছে। আমরা চাই দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্যাম্পাস হোক।
(লেখক: মোহাম্মদ নাসরুল ইসলাম, তৃতীয় ব্যাচ, অর্থনীতি বিভাগ)
শ্রেণিকক্ষ না থাকলেও প্রশাসনের থাকার জায়গা পর্যাপ্ত
দীর্ঘ ৮ বছরেও ক্যাম্পাসের ভূমি অধিগ্রহণ শেষ হয়নি। এর প্রধান কারণ হিসেবে আমি মনে করি, প্রশাসনের উদাসীনতা ও নিজেদের পকেট ভারি করার প্রবণতা। শিক্ষার্থীদের ক্লাস করার জায়গা না থাকলেও অভাব নেই প্রশাসনের থাকার জায়গার। প্রশাসন দুটি উন্নত মানের ভবন ভাড়া করে তাদের বিলাসী জীবনযাপন করছে। কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে পরিমান অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে, তা দিয়ে ছোট একটি ক্যাম্পাস নির্মাণ সম্ভব।
বিগত উপাচার্যদের আমলে ক্যাম্পাস নির্মাণের কোনো কার্যক্রম না থাকলেও নিজেদের বিলাসিতার কমতি ছিল না। শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাম্পাস কিংবা আবাসন ব্যবস্থা না থাকলেও তাদের ছিল বিলাসবহুল জীবন-যাপন। আমি মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাবে ক্যাম্পাসের কোন কার্যক্রম এখনো দৃশ্যমান হয়নি।
আবাসন ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষার্থীদের নিজেদের খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ছে নিজেদের পড়ালেখার খরচ বহন করতে না পেরে। হাজারো স্বপ্ন নিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে ফিরে যেতে হচ্ছে শূন্য হাতে। ক্যাম্পাস নির্মাণের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ থাকা উচিত বলে আমি মনে করি।
(লেখক: রাকিব মাহমুদ, দ্বিতীয় ব্যাচ, ম্যানেজমেন্ট বিভাগ)
আমাদের শিক্ষার পরিবেশ নেই
স্থায়ী ক্যাম্পাস শিক্ষার মান, গবেষণা, প্রশাসনিক সুবিধা, সামাজিক কার্যক্রম ও অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনকেই সমৃদ্ধ করে না, বরং একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতি, স্থিতিশীলতা ও ভবিষ্যৎ উন্নয়ন নিশ্চিত করে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে দীর্ঘ ৮ বছর ধরে ভাড়ায় নেওয়া দুটি কলেজের বিল্ডিং, একটি কমিউনিটি সেন্টারে ক্লাস করতে হচ্ছে।
ফলে আমাদের একটি সুশৃঙ্খল ও একাগ্র শিক্ষার পরিবেশ নেই। আমাদের শারীরিক, মানসিক ও সৃজনশীল বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আবাসন সুবিধা না থাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে হয়, যা প্রচুর ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য। এছাড়াও প্রশাসনিক কার্যক্রম বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে রয়েছে, যা সমন্বয় ও কার্যক্রম পরিচালনায় সমস্যার সৃষ্টি করছে।
স্থায়ী ক্যাম্পাস বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ। ক্যাম্পাস তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয় তার ভবিষ্যতের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারে এবং এটি শিক্ষার্থীদের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণের উপযুক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়। তাই যত দ্রুত সম্ভব বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা হওয়া প্রয়োজন।
(লেখক: রওজাতুল জান্নাত রুকাইয়া, পঞ্চম ব্যাচ, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ)
দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসনের কারণে নির্মাণ হয়নি ক্যাম্পাস
দীর্ঘ ৮ বছরেও স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ করতে পারেনি, এর প্রধান কারণ হলো দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসন। ক্যাম্পাস না থাকায় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের মুক্ত পরিবেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি ক্যাম্পাসে বাস্তব জীবনের চলার পথে অনেক শিক্ষণীয় বিষয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের জ্ঞানচর্চার পাশাপাশি শারীরিক ও মানুষিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য খেলাধুলার কোন বিকল্প হয় না, আর তার জন্য চাই খেলার মাঠ এবং প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশ। আর এসব চাহিদা একমাত্র পূর্ণাঙ্গ ক্যাম্পাসের মাধ্যমেই পাওয়া সম্ভব।
(লেখক: মো.
ঢাকা/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ র ঘ ৮ বছর র জন য থ কল ও পর ব শ সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।
গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।
সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।
ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’