বাংলাদেশ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের আত্মপ্রকাশ
Published: 29th, January 2025 GMT
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে ধারণ করে আত্মপ্রকাশ হয়েছে সাংবাদিক ও সংবাদ কর্মীদের সংগঠন বাংলাদেশ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের। এ উপলক্ষে বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে সংগঠনের উদ্যোগে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান: গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, বিএফইউজের সিনিয়র সহকারী মহাসচিব বাছির জামাল, যুগান্তরের সিটি এডিটর মিজান মালিক।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন ৫ আগস্টকে দক্ষিণ এশিয়ার স্মরণীয় দিন। দিনটাকে স্মরণীয় করে রাখতে ৫ আগস্ট জাতীয় নির্বাচন দেওয়া যেতে পারে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিগত কয়েকবার আমরা সরকারে ছিলাম, বিরোধী দলে ছিলাম এবং আমরা ৪০ থেকে ৪৫ বছর নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি। তাই আমরা বুঝি, কতদিনে নির্বাচন দেওয়া সম্ভব। সেজন্য আমরা বলছি, নির্বাচনী আইন ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচন দিন। নির্বাচন দিতে কেন বিলম্ব হচ্ছে, সেটা জনগণকে জানাতে হবে। সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট পাওয়ার পর ১৫ দিন পার হয়ে গেছে; এখনো রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করেননি। আমি আশা করব, দ্রুত আলোচনা করে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ফ্যাসিবাদী দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বর্তমান সরকারকে সঠিক পথে নিয়ে আসার জন্য রাস্তায় আন্দোলন করতে হতে পারে। সরকারকে সঠিক পথে নিয়ে আসতে কিছু উদ্যোগ নেবে বিএনপি। এসময় গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের বিচার দাবি করেন তিনি।
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে পাহারা দিয়েছিলো রাজনৈতিক দলগুলো। কেউ এটা ভাববেন না যে, এই আন্দোলন ১০ থেকে ১৫ দিনে হয়ে সফল হয়েছে। এটা ঠিক নয়, বিগত ১৬ বছরের আন্দোলনের মাধ্যমে জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থান সফল হয়েছে।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি আপনাদের সাক্ষ্য দিচ্ছি, গত ১৬ বছরে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন গণমাধ্যমের অধিকারের জন্য, স্বাধীনতার জন্য আমরা দীর্ঘ আন্দোলন করেছি। ২০১৩ সালে ফ্যাসিবাদী সরকার গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নামে কালো আইনের খসড়া তৈরি করেছে। সেখান থেকে আমাদের আন্দোলনের শুরু হয়েছে। সেখানে আমাদের বক্তব্য সব গণমাধ্যম প্রকাশ এবং প্রচার করতে পারেনি। ৫ আগস্টের আগে ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে ৫৮ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছে তাদের পেটোয়া বাহিনীর হামলায়। জুলাই বিপ্লবে ৫ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে আমরা যে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা চেয়েছিলাম তার প্রাথমিক বিজয় এসেছে। বিগত ১৬ বছরে আমরা সাংবাদিকতা করতে পারিনি আপনারা সবাই সাক্ষী। হাসিনাকে দানবে পরিণত করার জন্য সাংবাদিকদের একটি বড় ভূমিকা ছিল। আমরা গণমাধ্যমের মালিকদের বলেছি, আমরা এই দেশে একটা গণমাধ্যমও যাতে বন্ধ না হয় সেই ব্যবস্থা করবো কিন্তু আপনাদের প্রতিষ্ঠানে ফ্যাসিবাদের দোসর আওয়ামী লীগকে দানবে পরিণত করেছে তাদের থাকতে দেয়া যাবেনা। কিন্তু আমরা দুঃখের সাথে দেখছি তারা একই জায়গায় রয়ে গেছে। যারা দালালি করেছে তারা দালাল, তারা সাংবাদিক নয়।
এ সময় বাংলাদেশ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ রায়হান বলেন, জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে ধারণ করে আগামীতে সবাই নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা করবে। এমনটাই প্রত্যাশা করে দেশের মানুষ। সেই উদ্যোগেই এই সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পার্থ সারথি দাস বলেন, গণমাধ্যম কর্মীরা কারো তাবেদারি করবে না, তারা সব সময় দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করবে। আজকের অনুষ্ঠানে সেই বার্তা আমরা সবার কাছে পৌঁছে দিতে চাই। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা জুলাই অভ্যুত্থানের স্মৃতিচারণ করেন।
বাংলাদেশ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক আল ইমরানের সঞ্চালনায় সভায় আরও অংশ নেন গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য আরিফুল ইসলাম, আবু হানিফসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ল হউদ দ ন আহম দ র সদস য র জন য সরক র আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।
‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’
গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।
বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’
গণজমায়েতে র্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।