দেশে শিল্প খাতে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে। তবে শিল্প প্রতিষ্ঠান বাড়ার গতিতে বড় ধরনের পতন হয়েছে। ২০১৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়ে শিল্প প্রতিষ্ঠান বেড়েছে ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এর আগে ২০০৩ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বাড়ে ১০০ শতাংশ। অর্থাৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান হওয়ার প্রবৃদ্ধি ব্যাপক হারে কমেছে। এ ছাড়াও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানে শিল্প খাতের অংশ ক্রমশ কমে আসছে।  বাড়ছে সেবা খাতের অংশ।  

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ অর্থনৈতিক শুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৪-এর প্রাথমিক প্রতিবেদনটি গতকাল বুধবার প্রকাশ করা হয়। গত বছরের ১০ থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশ থেকে শুমারির তথ্য সংগ্রহ করা হয়। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে জানা এবং সে অনুযায়ী উন্নয়ন পরিকলল্পনা সাজাতে সহায়তা করতে বিবিএস প্রতি ১০ বছর পর অর্থনৈতিক শুমারি করে থাকে। 

প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, ৮৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, তারা বিনিয়োগের জন্য পুঁজির অভাবে ভুগছে। অথচ গত সরকারের সময় হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে গেছে অসাধু চক্র। কোথায় যে নিয়ে গেছে, তারও কোনো খবর নেই। 

বেক্সিমকোর উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, তাদের অনেক ব্যবসা-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। উদ্দেশ্য ছিল রাতারাতি বড় হওয়া। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেগুলো অচল হয়ে আছে, তার গরিব শ্রমিকরাই আন্দোলন করছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মূলধন কিছুই নেই। আছে শুধু ঋণ আর ঋণ। বেক্সিমকোর শ্রমিকরা তিন থেকে চার মাস মাঠে আছে। সরকার তাদের অর্থায়ন করছে। কিন্তু এ প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো পুঁজিই নেই।

তিনি বলেন, দেশে বৈষম্য কোন পর্যায়ে গেছে তার নিদারুণ চিত্র হলো, এত উদ্যোক্তা, এমনকি শহরের চেয়েও গ্রামে উদ্যোক্তা বেশি। কিন্তু সামান্য যে অর্থায়ন প্রয়োজন, সেটিও তারা পায় না। অথচ শহরে ভুঁইফোঁড়, রাতারাতি ধনী হওয়ার প্রতিষ্ঠান অগণিত। ব্যাংকের টাকা কীভাবে জলে গেছে, কেউ জানে না।

শিক্ষা খাত প্রসঙ্গে পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, এমপিওভুক্ত গরিব শিক্ষকদের নিজেদের সঞ্চয় একটা ফান্ডে থাকে। সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান শিক্ষকদের সঞ্চয়ের ছয় হাজার কোটি টাকা সম্পূর্ণ দেউলিয়া একটা ব্যাংকে রেখেছে। এ টাকা এখন তারা পাচ্ছে না। 

অর্থনৈতিক শুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ৮৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠান পুঁজির অভাবকে ব্যবসা পরিচালনার প্রধান সমস্যা বলে জানিয়েছে। ৩৪ শতাংশের বেশি প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, ঋণ পেতে সমস্যায় পড়তে হয়। প্রতিষ্ঠানগুলোর মতে, তৃতীয় বড় সমস্যাটি হচ্ছে অবকাঠামোর ঘাটতি। ১৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠান এ সমস্যার কথা বলেছে। এ ছাড়াও দক্ষ শ্রমিক ও কাঁচামালের অভাব, উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়া, পণ্য বাজারজাতকরণের অসুবিধা ইত্যাদি সমস্যার কথাও জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত ১০ বছরে গ্রাম ও শহর দুই জায়গাতেই অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে। ২০২৪ সালে দেশে মোট অর্থনৈতিক ইউনিট বা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক কোটি ১৮ লাখ ৭৭ হাজার ৩৬৪টি। ২০১৩ সালে যা ছিল ৭৮ লাখ ১৮ হাজার ৫৬৫টি। এ হিসাবে গত ১১ বছরে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪০ লাখ ৫৮ হাজার ৭৯৯টি বেড়েছে। 

২০২৪ সালে উৎপাদন বা শিল্প খাতে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৪১ হাজার ৪৪৬টি। মোট অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যা ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ। ২০১৩ সালে এ সংখ্যা ছিল ৯ লাখ ২ হাজার ৫৮৩টি, যা মোট অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের ১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। ২০০৩ সালে শিল্প প্রতিষ্ঠান ছিল ৪ লাখ ৫০ হাজার ৩৮৪টি। মোট অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের যা ১২ দশমিক ১৪ শতাংশ।  

শিল্পের তুলনায় সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অনেক বেশি হারে বাড়ছে। এ খাতে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৮ লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৬টি। মোট অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানই এখন ৯১ দশমিক ২৩ শতাংশ। এর আগে ২০১৩ সালের শুমারিতে সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৬৯ লাখ ১৫ হাজার ৯৮২। এটি তখনকার মোট অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের ৮৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ।  

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত মানুষের সংখ্যা ৩ কোটি ৭ লাখ ৬১ হাজার ৩৪। এর আগের জরিপে ছিল ২ কোটি ৪৫ লাখ ৮৫০ জন।

অর্থনৈতিক ইউনিটের মধ্যে গ্রামাঞ্চলে রয়েছে ৮৩ লাখ ৪৬ হাজার ১৬১টি, আর শহরাঞ্চলে ৩৫ লাখ ৩১ হাজার ২০৩টি। এর আগে ২০১৩ সালে গ্রামাঞ্চলে ছিল ৫৫ লাখ ৮৯ হাজার ১৯টি, শহরাঞ্চলে ২২ লাখ ২৯ হাজার ৫৪৬টি।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বৈষম্যহীন টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ সম্পর্কিত টাস্কফোর্সের সভাপতি ড. কেএস মুর্শিদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। এ ছাড়াও বক্তব্য দেন প্রকল্প পরিচালক এসএম শাকিল আখতার।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: দশম ক সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে

সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। এ ব্যয় বহন করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজেটে সরকারের সুদ পরিশোধ সংক্রান্ত পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, আগামী বছরগুলোতে সুদ ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে।

পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ১৫ ভাগ অর্থই সুদ খাতে খরচ করতে হচ্ছে এখন। এ পরিস্থিতিতে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতেই ব্যয় করতে হবে চার লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পাঁচ অর্থবছরের ব্যবধানে সুদ ব্যয় বাড়ছে ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে শতাংশের হিসাবে বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় সবচেয়ে বেশি বাড়বে।

অর্থ বিভাগের করা ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি-২০২৫-২০২৬ থেকে ২০২৭-২০২৮’ এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হয়েছিল এক লাখ  ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় গেছে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।

চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে (যা চলতি জুনের ৩০ তারিখে শেষ হয়ে যাবে) মূল বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় বরাদ্দ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই সীমায় সুদ ব্যয় ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে এক লাখ ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ হিসাবের মধ্যে ছিল অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ব্যয় ৯৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের ২২ হাজার কোটি টাকা।

একইভাবে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়েরও একটি প্রক্ষেপণ করেছে অর্থ বিভাগ। এই হিসেবে দেখা যায় আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হবে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা (অভ্যন্তরীণ এক লাখ কোটি টাকা , বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ২২ হাজার কোটি টাকা)। একইভাবে এর পরের অর্থবছর ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে একলাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা(অভ্যন্তরীণ এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের ২৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা) এবং ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়ের  প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। 

অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে,  মোট সুদ ব্যয়ের সিংহভাগই অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে  ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে এক লাখ ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা গিয়ে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু মোট বাজেটের অনুপাতে অভ্যন্তরীণ সুদ পরিশোধের হার ২০২৩ -২০২৪ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ২৯ শতাংশ থেকে কমে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশে হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ মোট সুদ ব্যয়ের তুলনায় কম, তবে এটি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ফলে এটি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ২৭ হাজার ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। মোট বাজেটের অনুপাতে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ এ সময়কালে ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।

বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের কার্যকর ব্যবস্থাপনা শুধু আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যই নয়, বরং এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রক্ষা, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক ঋণমান বজায় রাখা এবং ভবিষ্যতের উন্নয়ন সম্ভাবনা সুরক্ষিত রাখার জন্য অপরিহার্য।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খেলাপি ঋণ ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে
  • বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা টেস্ট পরিসংখ‌্যান
  • সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে
  • সংশোধিত সাইবার অধ্যাদেশও আন্তর্জাতিক মানের হয়নি
  • জার্মানির ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনা মূল্যে পড়াশোনা, জেনে নিন সব তথ্য
  • ২০২৪ সালে মেটার কাছে ৩৭৭১ অ্যাকাউন্টের তথ্য চেয়েছে সরকার
  • কয়েক দশকের ছায়াযুদ্ধ থেকে এবার প্রকাশ্য সংঘাতে ইরান-ইসরায়েল
  • তিন চ্যাম্পিয়ন দলসহ যেসব তারকাকে দেখা যাবে না ক্লাব বিশ্বকাপে
  • ৫ বছরে ঋণের স্থিতি বাড়বে ৫৩.৭৭ শতাংশ: অর্থবিভাগ