সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধা কোটায় উত্তীর্ণ ১৯৩ জনের মধ্যে ১৪৪ জন সনদ জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে ৫৬ শতাংশ প্রার্থী আবেদনে ভুল তথ্য দিয়েছেন। তাদের ফল বাতিল হতে পারে। বাতিল হলে শূন্য আসনে মেধায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন। বাকি ৪৯ জনের সনদ আগামী রোববারের মধ্যে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

গত ১৯ জানুয়ারি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে শুরু হয় সমালোচনা। ভর্তি পরীক্ষায় কোটা বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এর পর মুক্তিযোদ্ধাসহ সংরক্ষিত আসনের প্রার্থীদের সনদ যাচাইয়ের ঘোষণা দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ২৭ থেকে ২৯ জানুয়ারি মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তান কোটায় উত্তীর্ণদের সনদ যাচাই করে অনেক আবেদনে ভুল তথ্য পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কোটায় উত্তীর্ণদের সনদ যাচাই টিমের এক সদস্য সমকালকে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের জমা পড়া সনদের মধ্যে ৫৬ শতাংশ ক্ষেত্রেই ভুল তথ্য পেয়েছি। ত্রুটিপূর্ণ ও ভুল তথ্য দিয়ে আবেদন করেছেন তারা। উত্তীর্ণ প্রায় ৮০ জনের সনদে ত্রুটি পাওয়া গেছে। মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নির্বাচিত প্রার্থীদের একটি অংশ অনুপস্থিত ছিল।’

এবার বিএমডিসির নীতিমালায় মেডিকেল ভর্তিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৫ শতাংশ করা হয়। গত বছর এই কোটা ছিল ২ শতাংশ। এবার কীভাবে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৫ শতাংশ হলো, সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছে না অধিদপ্তর। এবারের পরীক্ষার জন্য গত ২১ ডিসেম্বর বিএমডিসির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নীতিমালার ৯.

১.১ নম্বর অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে, ‘জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ২৩ জুলাই ২০২৪ তারিখের স্মারক অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য মোট আসনের ৫ শতাংশ সংরক্ষিত থাকিবে।’ মূলত শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধার কোটা ৫ শতাংশ করা হয়। মেডিকেলে ভর্তির ক্ষেত্রেও এর আলোকে কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের এক উপপরিচালক জানান, আবেদন যাচাইয়ের প্রথম দিন যারা এসেছেন, তাদের বেশির ভাগ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। গতকাল বুধবার আগতদের বেশির ভাগ ছিলেন মুক্তিযোদ্ধার নাতি। তবে অনেকে আসেননি। কারণ নাতি কোটায় ভর্তির সুযোগ থাকছে না। অনেকের বাবার বয়স মুক্তিযোদ্ধা চলাকালে সাড়ে ১২ বছরের কম ছিল। তাদের মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য করা হয়নি। 

২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রকাশিত ফলাফলে ৫ হাজার ৩৮০ পরীক্ষার্থী ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হন। এর মধ্যে ১৯৩ জন মুক্তিযোদ্ধার কোটায় ও ৩৪৮ জন পশ্চাৎপদ জাতিগোষ্ঠী কোটায় প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। 

তথ্য বিশ্লেষণে করে দেখা গেছে, ৯৪ শতাংশ সাধারণ আসনের বিপরীতে আবেদন পড়েছিল ১ লাখ ৩৩ হাজার ৩৭৪। পাস করেন ৫৯ হাজার ৫৫৪ জন। তাদের মধ্যে সরকারি মেডিকেলে ভর্তির জন্য মেধার ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন ৫ হাজার ৭২ জন। এদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের ৫ শতাংশ কোটা বা ২৬৯ আসনে আবেদন করেছিলেন ৬৮৬ জন। তাদের মধ্যে পাস করেন ১৯৩ জন। পাস নম্বর ৪০ পাননি ৪৯৩ জন। এ হিসাবে এখনও আসন ফাঁকা রয়েছে ৭৬টি, যা এ কোটার ২৮ শতাংশ। ধারণা করা হচ্ছে, পাস করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকের ভর্তি বাতিল হতে পারে।

ফলাফলের তথ্য বিশ্লেষণ করে আরও দেখা গেছে, পশ্চাৎপদ জাতিগোষ্ঠী (পার্বত্য জেলার উপজাতীয় এবং অউপজাতীয় প্রার্থী, অন্যান্য জেলার উপজাতীয় প্রার্থী) কোটায় দশমিক ৭২ শতাংশ বা ৩৯টি আসনের বিপরীতে আবেদন করেন ১ হাজার ২০১ জন। পাস করেন ৩৪৮ জন। অর্থাৎ প্রতি ৯ জনে একজন ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন।

এ বছর এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় পাস করেছেন ৬০ হাজার ৯৫ শিক্ষার্থী। পাসের হার ৪৫ দশমিক ৬২। ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজের ৫ হাজার ৩৮০টি আসনে এবং ৬৭টি অনুমোদিত বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ৬ হাজার ২৯৩টি আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক রুবীনা ইয়াসমীন গতকাল সমকালকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় উত্তীর্ণ ৪৯ জন সনদ জমা দিতে পারেননি। তাদের আগামী রোববার পর্যন্ত সনদ জমা দেওয়ার সময় বাড়ানো হয়েছে। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে সনদ জমা না দিলে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগামী রোববার এ বিষয়ে ভর্তি কমিটির বৈঠক হবে। এতে এই শিক্ষার্থীদের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম ড ক ল কল জ র জন য প স কর পর ক ষ র সনদ আসন র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে

সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় বাড়ছে। এ ব্যয় বহন করতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজেটে সরকারের সুদ পরিশোধ সংক্রান্ত পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, আগামী বছরগুলোতে সুদ ব্যয় ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে।

পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ১৫ ভাগ অর্থই সুদ খাতে খরচ করতে হচ্ছে এখন। এ পরিস্থিতিতে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতেই ব্যয় করতে হবে চার লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। পাঁচ অর্থবছরের ব্যবধানে সুদ ব্যয় বাড়ছে ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে শতাংশের হিসাবে বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় সবচেয়ে বেশি বাড়বে।

অর্থ বিভাগের করা ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি-২০২৫-২০২৬ থেকে ২০২৭-২০২৮’ এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হয়েছিল এক লাখ  ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় গেছে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা।

চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে (যা চলতি জুনের ৩০ তারিখে শেষ হয়ে যাবে) মূল বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় বরাদ্দ ছিল এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে এই সীমায় সুদ ব্যয় ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। ফলে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে এক লাখ ২১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ হিসাবের মধ্যে ছিল অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ব্যয় ৯৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বিদেশী ঋণের ২২ হাজার কোটি টাকা।

একইভাবে আগামী তিন অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়েরও একটি প্রক্ষেপণ করেছে অর্থ বিভাগ। এই হিসেবে দেখা যায় আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় হবে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা (অভ্যন্তরীণ এক লাখ কোটি টাকা , বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ২২ হাজার কোটি টাকা)। একইভাবে এর পরের অর্থবছর ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে একলাখ ৩৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা(অভ্যন্তরীণ এক লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের ২৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা) এবং ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয়ের  প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। 

অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে,  মোট সুদ ব্যয়ের সিংহভাগই অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে  ৯৯ হাজার ৬০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে এক লাখ ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা গিয়ে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু মোট বাজেটের অনুপাতে অভ্যন্তরীণ সুদ পরিশোধের হার ২০২৩ -২০২৪ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ২৯ শতাংশ থেকে কমে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশে হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ মোট সুদ ব্যয়ের তুলনায় কম, তবে এটি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ফলে এটি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৭-২০২৮ অর্থবছরে ২৭ হাজার ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত হতে পারে। মোট বাজেটের অনুপাতে বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধ এ সময়কালে ২ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।

বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের কার্যকর ব্যবস্থাপনা শুধু আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্যই নয়, বরং এটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রক্ষা, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা, আন্তর্জাতিক ঋণমান বজায় রাখা এবং ভবিষ্যতের উন্নয়ন সম্ভাবনা সুরক্ষিত রাখার জন্য অপরিহার্য।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খেলাপি ঋণ ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে
  • সুদ পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে
  • সংশোধিত সাইবার অধ্যাদেশও আন্তর্জাতিক মানের হয়নি
  • জার্মানির ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনা মূল্যে পড়াশোনা, জেনে নিন সব তথ্য
  • ২০২৪ সালে মেটার কাছে ৩৭৭১ অ্যাকাউন্টের তথ্য চেয়েছে সরকার
  • কয়েক দশকের ছায়াযুদ্ধ থেকে এবার প্রকাশ্য সংঘাতে ইরান-ইসরায়েল
  • তিন চ্যাম্পিয়ন দলসহ যেসব তারকাকে দেখা যাবে না ক্লাব বিশ্বকাপে
  • ৫ বছরে ঋণের স্থিতি বাড়বে ৫৩.৭৭ শতাংশ: অর্থবিভাগ