‘পান্থকুঞ্জে ৫০ দিন’ পার্ক রক্ষায় নাগরিক-সাংস্কৃতিক সমাবেশ
Published: 31st, January 2025 GMT
রাজধানীর হাতিরঝিল জলাধার ও পান্থকুঞ্জ পার্ক ধ্বংস করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের সংযোগ সড়ক বাতিলের দাবিতে আন্দোলনের ৫০তম দিনে নাগরিক ও সাংস্কৃতিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেল ৩টায় পান্থকুঞ্জে এ সমাবেশ আয়োজন করে বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন নারী অধিকারকর্মী শিরীন পারভীন হক। বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক আমিরুল রাজিবের সঞ্চালনায় নাগরিক সমাবেশে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান।
সমাবেশে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের সদস্য জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ তাহির জামান প্রিয়র মা শামসি আরা জামান, লেখক ও গবেষক কল্লোল মোস্তফা, বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক ড.
বক্তারা বলেন, “এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্যে পান্থকুঞ্জ পার্কের প্রায় ৪০ প্রজাতির দুই হাজার গাছ ধ্বংস করা হয়েছে। এক্সপ্রেসওয়ের একটি র্যাম্প পান্থকুঞ্জ পার্ক হয়ে কারওয়ানবাজার গোলচত্বরের দিকে নামানো হবে এবং আরেকটি সংযোগ সড়ক পান্থকুঞ্জ পার্ক হয়ে পলাশী পর্যন্ত যাবে। এতে এসব এলাকার সামগ্রিক পরিবেশ বিনষ্টের পাশাপাশি প্রকল্পের আশেপাশের এলাকায় যানজট বাড়াবে।”
অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, “আধুনিক নগর পরিকল্পনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফ্লাইওভার ভেঙে এখন হাঁটার রাস্তা তৈরি করা হলেও বাংলাদেশ উল্টোপথে হাঁটছে। প্রস্তাবিত এক্সপ্রেসওয়ের ১৯টি র্যাম্প শহরের যানজট সমস্যা কোনোভাবেই কমাবে না বরং মোড়ে মোড়ে যানজট আরও বাড়াবে।”
লেখক ও গবেষক কল্লোল মোস্তফা বলেন, “বিগত সরকারের আমলে যেসব পিপিপি প্রজেক্ট হয়েছে সেগুলো আসলে "পাবলিক মানি টু প্রাইভেট পকেট’ প্রজেক্ট। এই অর্থনৈতিক মডেলের বিরোধিতা এই সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টা বিভিন্ন সময়ে করেছেন। এখন ক্ষমতায় এসে তারা যদি এসব পরিবেশ বিধ্বংসী ও জনবিরোধী প্রকল্প চালু রাখেন তাহলে বুঝতে হবে যে তারা আগের সরকারের লুণ্ঠনমূলক অর্থনৈতিক মডেল গ্রহণ করেছেন।”
বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. শায়ের গফুর বলেন, “এ ধরনের প্রকল্পে যেসব দেশীয় পরামর্শক পেশাজীবী কাজ করছেন, তাদের পরিচয় জনগণের সামনে উন্মুক্ত করতে হবে।”
গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব বলেন, “ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে নেওয়া এসব প্রকল্প পুনর্বিবেচনা না করে বর্তমান সরকার জুলাই অভ্যুত্থানের অঙ্গীকারের সঙ্গে বেইমানি করছে।”
বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি অধ্যাপক ড. আবু সাঈদ এম আহমেদ বলেন, “এই প্রকল্পের পরিবেশ সমীক্ষাসহ অন্যান্য প্রতিবেদন যারা প্রস্তুত করেছে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার প্রয়োজন।”
সমাবেশ শেষে বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের আয়োজনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। অনুষ্ঠানে গান পরিবেশনা করেন ফারাহ দিবা তাসনিম, ছোট পরশ দেওয়ান, তেঁতুলতলা সহযাত্রী সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, মুয়ীয মাহফুজ, বেতাল, তানভীর আনজুম ধ্রুব, গঞ্জে ফেরেশতা, নাঈম উল হাসান, আকিল আশরাফ, কেপি রাজিব, দ্য রোভার, কর্ণফুলী থেকে মিসিসিপি, আরব রায়হান ও আকাশ গায়েন।
ঢাকা/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রকল প র সরক র র পর ব শ
এছাড়াও পড়ুন:
মাঝরাতে সরকারি কর্মকাণ্ড কতটা স্বাভাবিক
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের রাতের কর্মকাণ্ড নিয়ে বোধকরি একটা মহাকাব্য লিখে ফেলা সম্ভব। তাঁরা যেভাবে গভীর কিংবা শেষ রাতে নানা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, ফেসবুকে বার্তা দিচ্ছেন; তাতে তো মনে হচ্ছে সরকারের কর্তা-ব্যক্তিরা দিনে কাজ না করে রাতেই মনে হয় বেশি কাজ করেন! কয়েকটা উদাহরণ বরং দেওয়া যাক।
মাস কয়েক আগে যখন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক ভাবে খারাপ হয়ে গেল, আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রাত তিনটার সময় সংবাদ সম্মেলন ডাকলেন! বাংলাদেশের ইতিহাসে রাত তিনটার সময় আর কোনো মন্ত্রী এ ধরনের সম্মেলনের আয়োজন করেছেন কি না, আমার অন্তত জানা নেই। আমরা সবাই ভাবলাম, তিনি হয়তো বড় কোনো ঘোষণা দেবেন। এরপর কী দেখলাম?
তিনি খুব সাধারণভাবে বললেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকার নিজেদের উদ্যোগকে কঠিন ও শক্তিশালী করার চেষ্টা করবে।
সপ্তাহখানেক আগে হঠাৎ আকাশ থেকে একটি যুদ্ধবিমান ঢাকা শহরের উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল বিল্ডিংয়ে ভেঙে পড়ল। আগুনে দগ্ধ শিশুরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে নিজেরা উঠে এসে হাঁটছে; এমন দৃশ্যও আমাদের দেখতে হয়েছে। যে দৃশ্য দেখলে যে কেউ হয়তো ট্রমায় চলে যাবে। ওই স্কুলের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা হয়তো সরাসরি সেই দৃশ্য দেখেছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই চলতে থাকে—এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া সময়ের দাবি ছিল। এ সিদ্ধান্ত সরকার দিনের বেলাতেই নিতে পারত। অথচ আমরা কী দেখলাম?
সরকারের পক্ষ থেকে রাত তিনটার দিকে ফেসবুকে এসে ঘোষণা করা হলো, পরের দিনের এইচএসসি পরীক্ষা পেছানো হয়েছে।
যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।দিন দু-এক আগে এ সরকারকেই যাঁরা চাকরি দিয়েছেন, এ কথা বলছি কারণ, সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলেছিলেন, ‘ছাত্ররা আমার নিয়োগকর্তা’—সেই ছাত্রদের সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা গভীর রাতে ফেসবুক এসে লাইভ করেন প্রায় আড়াই ঘণ্টা।
এই আড়াই ঘণ্টার লাইভে মূল যে বক্তব্য তিনি তুলে ধরেছেন, সারমর্ম করলে দাঁড়ায়: বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্ম মানি মেকিং মেশিনে পরিণত হয়েছে এবং অনেকেই এর সঙ্গে জড়িত। তিনি এটাও বলেছেন, এই সংগঠনের সব সিদ্ধান্ত হেয়ার রোড থেকে আসে। অর্থাৎ উপদেষ্টারা যেখানে থাকেন।
এদিকে সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম একটা ফেসবুক পোস্ট করেছেন। যদিও ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তিনি বেশ কয়েকবার এডিট করেছেন। তবে প্রথমে যা লিখেছেন, সেটা হচ্ছে, নতুন একটি দলের মহারথীদের কয়েকজন দুর্নীতিতে জড়িত। এ ছাড়া তিনি এটাও বলেছেন, একটা সার্কেলের সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত!
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে তাঁদের কেন প্রশ্রয় দেওয়া হলো? আপনারা যদি জানেনই কিছু মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত। তাহলে সরকারের অংশ হিসেবে আপনাদের তো দায়িত্ব তাঁদের আইনের আওতায় আনা। সেটা না করে ফেসবুকে পোস্ট করতে হচ্ছে কেন? তা–ও আবার রাত তিনটায়!
এই সরকার কি মাঝরাতের ফেসবুকীয় সরকারে পরিণত হয়েছে? পরীক্ষা পেছানোর মতো সিদ্ধান্ত যখন মাঝরাতে নিতে হয়, সংবাদ সম্মেলন যখন রাত তিনটায় করতে হয়, তখন তো প্রশ্ন জাগতেই পারে। কারণ এটা তো স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়।
যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।
রাষ্ট্র যদি ভালো না থাকে তবে তার মাত্রা কতটুকু, সেটা নির্ণয় এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।
আমিনুল ইসলাম প্রভাষক, এস্তোনিয়ান এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইউনিভার্সিটি
[email protected]