জমশের আলির বয়স ৭৫। এক সময় কৃষি কাজ করে সংসার চালালেও বয়সের ভারে এখন আর পারেন না। বছর খানেক আগে ডান হাতের ব্যথায় সংসারের টুকটাক কাজ করাও তার জন্য কষ্টসাধ্য। টাকা পয়সার ঘাটতি থাকায় হাতের উন্নত চিকিৎসা করাতে পারেননি। তবে স্থানীয় এক চিকিৎসকের পরামর্শে কিছু ওষুধ খেয়েছেন। সাময়িক ব্যথা নিরাময় হলেও হাতের ব্যথার অসহ্য যন্ত্রণা তাকে তাড়া করে বেড়ায়। তবে মানিকগঞ্জে সিআরপি আয়োজিত মেডিকেল ক্যাম্পে চিকিৎসকের পরামর্শে থেরাপি নিয়ে হাতের ব্যথার যন্ত্রণা কমেছে জমশের আলির। এই ক্যাম্পে বিনামূল্যে পেয়েছেন চিকিৎসা সেবা। 

জমশের আলির মতো ৬৭ বছরের সহিতন বেগমও মেডিকেল ক্যাম্পে এসেছেন। তবে তার শারীরিক কোনো সমস্যা নেই। দীর্ঘদিন ভুগছেন মানসিক সমস্যায়। এইখানে মানসিক সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে এই খবর শুনে এসেছেন সাইকোলজিস্টের কাছে। তাকে চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট সেলিনা আক্তার কণা বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে সহিতন বেগম পারিবারিক সমস্যায় মানসিকভাবে ভুগছেন। তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে। তার মতো অনেক রোগীই ক্যাম্পে আসছেন। একেকজনের সমস্যা একেক রকম। প্রাথমিকভাবে তাদের সাথে কাউন্সিলিং করা হচ্ছে।” 

সহিতন বেগম বলেন, “ম্যালা দিন ধইরা একটা ঝামেলা নিয়া ম্যালা যন্ত্রণায় আছিলাম। ওনার লগে কথা কওনের পর একটু শান্তি পাইলাম। আরো আগে জানলে ডাক্তারের কাছে আরো আগেই যাইতাম।” 

কাশেম মিয়া বলেন, “মাজার ব্যথায় ভুগতাছি। তাই এইহানে ডাক্তারের কাছে আইছি। ওনাগো চিকিৎসা অনেক ভালো। থেরাপিও ভালো, ট্যাহা লাগে না।” 

শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে দিনব্যাপী মানিকগঞ্জের দক্ষিণ উয়িয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সিআরপি আয়োজিত মেডিকেল ক্যাম্পে এমন প্রায় দুইশ রোগীদের বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। ইআইএইচআরপিডি প্রকল্পের আওতায় ‘প্রতিবন্ধীতা সনাক্তকরণ’ এই ক্যাম্পে প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসা সেবাসহ দেওয়া হচ্ছে বিশেষসেবা। এ ক্যাম্পে পরামর্শ দিচ্ছেন সিআরপি থেকে আগত ডাক্তার, ফিজিওথেরাপিষ্ট, অকুপেশনাল থেরাপিষ্ট, স্পিচ ও ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিষ্ট এবং ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিষ্ট। 

মেডিকেল ক্যাম্পে ইআইএইচআরপিডি প্রকল্পের ব্যবস্থাপক রহমতুল বারী, সিআরপি মানিকগঞ্জ শাখার ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্র ব্যবস্থাপক মো.

মাহবুবুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ মাছুদুল হক, অ্যাডভোকেট মো. শাহজাহান, সমাজসেবক আইউব আলী উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/চন্দন/ইমন

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম ন কগঞ জ সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।

সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ