সান্তোসে আবেগী প্রত্যাবর্তন নেইমারের
Published: 1st, February 2025 GMT
অবশেষে ঘরে ফেরা হলো। এক অসাধারন প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখে শৈশবের ক্লাব সান্তোসে ফিরলেন নেইমার। ক্লাবটির মাঠ ভিলা বেলমিরোর জায়ান্ট স্ক্রিনে লিখা, ‘রাজপুত্র ফিরে এসেছে।’ সান্তোসের ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই ফুটবলারের ফেরার দিনে রাজকীয় আয়োজনের কমতি রাখেনি তারা।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি, ২০২৫) রাতে বিশ হাজারের বেশি সমর্থক উষ্ণ অভ্যর্থনায় নেইমারকে বরণ করে নেন সান্তোসে। এই সময় ফ্লাইড লাইট নিভিয়ে আতশবাজির আলোয় আকাশ আলোকিত করে দেয় ক্লাবটি। পুনর্মিলনটা ৩২ বছর বয়সী ফুটবলারের জন্য ছিল অত্যন্ত আবেগপূর্ণ। আপাতত ক্লাবটির সঙ্গে ছয় মাসের চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন নেইমারের, যা ভবিষ্যতে বাড়ানো হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন তিনি। টানেল অতিক্রম করে মূল মাঠে প্রবেশের সময় নেইমার চোখে জল ধরে রাখতে পারেননি।
আরো পড়ুন:
ম্যানসিটির সামনে রিয়াল: চ্যাম্পিয়নস লিগ প্লে-অফ
ইউরোপায় শীর্ষ আটে ম্যানচেস্টার ও টটেনহ্যাম
আবেগের সান্তোস ছেড়েই ২০১৩-১৪ মৌসুমে বার্সেলোনায় পাড়ি দিয়েছিলেন নেইমার। স্পেন ঘুরে রেকর্ড ২২২ মিলিয়ন ইউরোতে ফরাসি ক্লাব পিএসজিতে যোগ দেন এই ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার। এরপর লোভনীয় ১৫০ মিলিয়ন ইউরোর বাৎসরিক বেতনে সৌদি আরবের ক্লাব আল হিলালে যোগ দান করেন। সেখানে ইনজুরির কারণে মাত্র ৭ ম্যাচে মাঠে নামেন ৩২ বছর বয়সী তারকা।
তবে আকাশাচুম্বী বেতনের বিনিময়ে মাত্র ৭ ম্যাচ খেলেছেন, এরপরও নাকি মরুর বুকে অখুশী ছিলেন নেইমার! এই অসন্তষ্টিই তাকে ঘরে ফেরার সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাবিত করেছে। নেইমার মস্তিষ্কের আগে হৃদয়কে প্রাধান্য দেওয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, “কিছু সিদ্ধান্ত ‘ফুটবল যুক্তি’র সাথে সম্পর্কিত নয়।”
সংবাদ সম্মেলনে নেইমার আরও যোগ করেন, “আমি আল হিলালে ট্রেনিং সেশন আর উপভোগ করছিলাম না, এটি আমার মানসিকতার জন্য ঠিক ছিল না। ফিরে আসার সুযোগ পেয়েই আমি একটুও আর দ্বিধা করিনি। প্রথম দিনই আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম আমি ফিরতে চাই। আমি আমার বাবকে (এজেন্টও) বলেছিলাম এই ব্যাপারে কাজ করেছে।”
নেইমার সেই মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকতেই দর্শকেরা তাঁর পায়ে ড্রিবলিং দেখতে চেয়েছিলেন। উত্তরে নেইমার বলেছেন, ‘আমি খুবই সুখি। এখানে দারুণ সময় কেটেছে। সামনে তেমন সময় আরও আছে। (ড্রিবল করতে) সাহসের অভাব হবে না।’
নেইমারের চুক্তি নিয়ে সান্তোসের সহসভাপতি ফার্নান্দো বোনাভিদেস ক্যানাল স্পোরটিভিকে বলেছেন, “এই চুক্তিপত্র প্রাথমিকভাবে ছয় মাসের। কিন্তু তাকে ধরে রাখতে আমরা সব রকম চেষ্টাই করব। আমরা যেটা চাচ্ছি, সে যেন আগামী বিশ্বকাপ পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে থাকে।’
যদিও এখানে কথা থেকেই যায় যে, অসুখী মানুষ কিভাবে দেড় বছর আরেকটা ক্লাবে পার করে দেয়! তবে নেইমারের আনন্দের দিনে এসব চাঁচছোলা প্রশ্ন কেউ আর তুললেন না। তবে উঠে সেছে ২০২৬ বিশ্বকাপ প্রসঙ্গ। ব্রাজিলের জার্সিতে এটাই তার শেষ সুযোগ। সে জন্য দলে ফিরতে হবে আগে। দরকার ছিল নিয়মিত ম্যাচ খেলার। এই ব্যাপারে নেইমার বলেছেন, “আমি জাতীয় দলে ফিরতে চাই। অর্জনের জন্য এখনো একটি (বিশ্বকাপ) মিশন বাকি আছে, যেটা আমার শেষ সুযোগ বলে মনে করি। আমি এটার পেছনে ছুটব।”
সান্তোসের বয়সভিত্তিক দলে বেড়ে ওঠা নেইমার ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ক্লাবটির মূল দলে খেলেছিলেন। এরপর ইউরোপে ভ্রমণ শেষে সাড়ে ১১ বছর পর আবারও সান্তোসে ফিরে আসার মাধ্যমে যেন ক্যারিয়ারের একটি পূর্ণতা পেলেন তিনি। ইউরোপে বেশিরভাগ সময়ই চোটের সাথে লড়াই করেছেন, ফলে নিয়মিত মাঠে নামতে পারেননি। যদিও সান্তোস নিশ্চিত না আগের তেজ আর অবশিষ্ট আছে কিনা নেইমারের। তবুও ক্লাবের সমর্থকেরা তাদের প্রিয় ঘরের ছেলেকে আগের মতোই হৃদয় দিয়ে স্বাগত জানিয়েছেন। একমাত্র পার্থক্য, প্রথম দফায় তিনি ১১ নম্বর জার্সি পরতেন। আর এবার পরবেন ১০ নম্বর, সেই বিখ্যাত নম্বর যেটি ফুটবলের রাজা পেলে এই ক্লাবে খেলাকালীন পড়তেন।
ঢাকা/নাভিদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল ফ টবল
এছাড়াও পড়ুন:
কমিটি নেই, সবাই নেতা
কয়রা উপজেলা বিএনপির কমিটি নেই একযুগ। দীর্ঘদিন ধরে চলেছে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে। সেটিও ভেঙে দেওয়া হয়েছে ৪ মাস আগে। কমিটি না থাকায় দলের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা বাড়ছে। ভেঙে পড়ছে সাংগঠনিক শৃঙ্খলাও। কেউ কারও কথা শুনছেন না। অবস্থা এমন, যেন সবাই নেতা– অভিযোগ স্থানীয় নেতাকর্মীর।
কমিটি না থাকলেও উপজেলার একশ মিটারের মধ্যে পৃথক দুটি কার্যালয় রয়েছে। একটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক (বর্তমানে বহিষ্কৃত) নুরুল আমিন বাবুল। আরেকটি কার্যালয় চলছে খুলনা জেলা বিএনপির সদস্য এম এ হাসানের নেতৃত্বে। নেতৃত্বের এ দ্বন্দ্বের কারণে দীর্ঘদিন ধরে উপজেলায় সাংগঠনিক কার্যক্রমে গতি নেই। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ছাড়া অন্যান্য কর্মসূচিতে কার্যক্রমও সীমিত। এ অবস্থায় দ্রুত কমিটি দেওয়ার দাবি দলীয় নেতাকর্মীর।
পৃথক কার্যালয়ের বিষয়ে জেলা বিএনপির সদস্য এম এ হাসান বলেন, উপজেলায় একটি দলীয় কার্যালয় ছিল। পরে স্থানীয় একজন নেতা তাঁর অনুসারীদের নিয়ে আরেকটি কার্যালয় খুলেছেন; যা সংগঠনবিরোধী কাজ। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ওই নেতাকে বহিষ্কার করা হলেও এখন পর্যন্ত তিনি কার্যালয়টি বন্ধ করেননি।
দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মনজুর আলম বলেন, ৫ আগস্টের পর দুই নেতার বিরোধ স্পষ্ট হয়েছে। আগে দলে বিভক্তি থাকলেও আলাদা কার্যালয় ছিল না। এখন দুটি কার্যালয় থাকায় বিভ্রান্ত হচ্ছেন কর্মী-সমর্থকরা।
২০১৩ সাল পর্যন্ত উপজেলায় বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি ছিল। এরপর দুই দফায় আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। সর্বশেষ ২০২৩ সালের ২৪ মার্চ মোমরেজুল ইসলামকে আহ্বায়ক ও নুরুল আমিন বাবুলকে সদস্য সচিব করে আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয় জেলা বিএনপি। এরপর থেকে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের অনুসারীদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। গত ২১ সেপ্টেম্বর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে নুরুল আমিনকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। এ অবস্থায় চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি সম্মেলনের মাধ্যমে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু।
এদিকে কমিটি না থাকায় বেশির ভাগ নেতা স্বার্থের দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন। কয়েকজনের বিরুদ্ধে হাট, ঘাট, খাল দখলের অভিযোগ রয়েছে। সরকারি সুবিধায় হস্তক্ষেপেরও অভিযোগ আছে। এতে দলের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এ অবস্থায় দ্রুত কমিটি গঠন করা জরুরি বলে মনে করেন বিএনপির সাবেক নেতা আব্দুস সামাদ।
সাবেক আহ্বায়ক নুরুল আমিন বলেন, ভিত্তিহীন অভিযোগে আমাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। বর্তমানে দলীয় কোনো কার্যক্রমে অংশ নিতে পারছি না। আশা করছি খুব দ্রুতই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হবে। তখন গ্রহণযোগ্য কমিটি গঠনের চেষ্টা করব।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোমরেজুল ইসলাম বলেন, এ মুহূর্তে কয়রায় বিএনপির কোনো কমিটি নেই। কমিটি হলে দলীয় সব বিরোধ মিটে যাবে বলে আশা করছি।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু বলেন, কয়রায় কমিটি গঠনের জন্য জেলা বিএনপি থেকে ৫ সদস্যের সার্চ কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। ওই কমিটি নেতাকর্মীর বিরোধও নিষ্পত্তি করবে। দ্রুতই ঐক্যবদ্ধ একটি কমিটি উপহার দেওয়া হবে।