বিপিএলে ফিক্সিং প্রমাণিত হলে কঠোর শাস্তি: বিসিবি সভাপতি
Published: 1st, February 2025 GMT
চলমান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) নিয়ে উঠেছে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগ। অন্তত আটটি ম্যাচ সন্দেহের তালিকায় রয়েছে, যা নিয়ে তদন্তে নামছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) দুর্নীতি দমন ইউনিট (আকসু)। বিষয়টি নিয়ে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, যদি ফিক্সিংয়ের প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে জড়িত ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এবারের বিপিএলে বেশ কিছু অস্বাভাবিক ঘটনা দেখা গেছে। অনেক বল হয়েছে ওভারস্টেপ, কেউ কেউ প্রায় এক ফুট দূরে পা ফেলে বল করেছেন। এমনকি পিচের বাইরেও বল ফেলতে দেখা গেছে কয়েকবার। খেলোয়াড় বাছাই প্রক্রিয়াতেও অস্বাভাবিকতা ছিল বলে মনে করছে আকসু।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের তথ্যমতে, অন্তত ১০ জন ক্রিকেটার ও চারটি ফ্র্যাঞ্চাইজিকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এই ১০ জনের মধ্যে ছয়জন বাংলাদেশ জাতীয় দলের, দুইজন বয়সভিত্তিক পর্যায়ের এবং দুইজন বিদেশি ক্রিকেটার। সন্দেহের তালিকায় থাকা ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর মধ্যে দুর্বার রাজশাহী ও ঢাকা ক্যাপিটালসের নাম শীর্ষে রয়েছে। রাজশাহী ও ঢাকার বিরুদ্ধে ১২টি, সিলেট স্ট্রাইকার্সের ছয়টি এবং চিটাগং কিংসের দুটি সন্দেহজনক কর্মকাণ্ড শনাক্ত করা হয়েছে।
যে আটটি ম্যাচ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে, সেগুলো হলো- ফরচুন বরিশাল বনাম দুর্বার রাজশাহী (৬ জানুয়ারি), রংপুর রাইডার্স বনাম ঢাকা ক্যাপিটালস (৭ জানুয়ারি), ঢাকা ক্যাপিটালস বনাম সিলেট স্ট্রাইকার্স (১০ জানুয়ারি), দুর্বার রাজশাহী বনাম ঢাকা ক্যাপিটালস (১২ জানুয়ারি), চিটাগং কিংস বনাম সিলেট স্ট্রাইকার্স (১৩ জানুয়ারি), ফরচুন বরিশাল বনাম খুলনা টাইগার্স (২২ জানুয়ারি), ঢাকা ক্যাপিটালস বনাম সিলেট স্ট্রাইকার্স (২২ জানুয়ারি), দুর্বার রাজশাহী বনাম রংপুর রাইডার্স (২৩ জানুয়ারি)।
বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ বিষয়টি নিয়ে সতর্ক মন্তব্য করেছেন। ক্রিকবাজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়। নির্দিষ্ট নিয়ম মেনেই তদন্ত হবে।’ তবে তিনি নিশ্চিত করেছেন, কেউ দোষী প্রমাণিত হলে কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘পুরো তালিকা তৈরি হয়েছে, ঘটনা নোট করা হয়েছে। তদন্ত শেষে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। আর আমি যদি নিজে কিছু পাই, তাহলে তাদের জীবন কঠিন হয়ে যাবে। আমি কাউকে ছাড় দেব না। এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, যা ভবিষ্যতে উদাহরণ হয়ে থাকবে।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব প এল ফ র ক আহম দ ক য প ট লস স বন ম তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
নীতি সুদহার কমাল ফেডারেল রিজার্ভ, কী প্রভাব পড়তে পারে বিশ্ব অর্থনীতিতে
অবশেষে সুদের হার কমিয়েছে ফেডারেল রিজার্ভ। গত বছরের ডিসেম্বর মাসের পর এই প্রথম সুদহার কমাল ফেডারেল রিজার্ভ। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে দুর্বলতার লক্ষণ, আফ্রো-আমেরিকানদের মধ্যে উচ্চ বেকারত্ব, কর্মঘণ্টা কমে যাওয়া ও নতুন চাকরি সৃষ্টির গতি কমে যাওয়ায় ফেড এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট কমিয়ে ৪ থেকে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়ার পর ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেন, অক্টোবর ও ডিসেম্বর মাসে সুদহার আরও কমতে পারে। তিনি বলেন, শ্রমবাজারের ক্রমবর্ধমান দুর্বলতা এখন তাঁর ও সহকর্মী নীতিনির্ধারকদের প্রধান উদ্বেগ। খবর রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অনেক দিন ধরেই ব্যাপক হারে সুদ কমানোর দাবি তুলছিলেন। তাঁর বক্তব্য, এতে অর্থনীতি চাঙা হবে। তবে ফেডের এ সিদ্ধান্ত তাঁর প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম। ফেডের পর্ষদে নতুন গভর্নর স্টিফেন মিরান ছিলেন একমাত্র ভিন্নমতাবলম্বী। তিনি ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট হারে সুদহার কমানোর পক্ষে ছিলেন। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে আরও বড় কাটছাঁটের ইঙ্গিত দিয়েছেন।
সুদের হার নির্ধারণে রাজনৈতিক প্রভাবের প্রশ্ন সব সময়ই তোলা হয়। ট্রাম্প সম্প্রতি ফেডের এক গভর্নর লিসা কুককে সরানোর চেষ্টা করেছিলেন। যদিও কুক আদালতের লড়াইয়ে আপাতত নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন এবং বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি হোয়াইট হাউসের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান মিরানকে ফেডের পর্ষদে বসান।
শ্রমবাজারে দুর্বলতাপাওয়েল বলেন, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বেকারত্ব বাড়ছে, তরুণেরা আরও ভঙ্গুর হয়ে পড়ছেন। সামগ্রিকভাবে চাকরি সৃষ্টির গতি খুবই কম। শ্রমবাজারকে আর দুর্বল হতে দেওয়া যাবে না।
পাওয়েল আরও সতর্ক করেন, নতুন চাকরির সংখ্যা এখন বেকারত্বের হার স্থিতিশীল রাখার জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে সামান্য ছাঁটাইও বেকারত্ব বাড়িয়ে দিতে পারে।
মূল্যস্ফীতি বনাম কর্মসংস্থানমূল্যস্ফীতি এখনো লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। আশঙ্কা করা হচ্ছে বছরের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতির হার ৩ শতাংশে উঠবে, যেখানে ফেডের লক্ষ্যমাত্রা হলো ২ শতাংশ। কিন্তু ফেড মনে করছে, কর্মসংস্থানের ঝুঁকি এখন বেশি গুরুত্ব পাওয়ার মতো বিষয়।
ফেডের নতুন পূর্বাভাসে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা বাড়িয়ে ১ দশমিক ৬ শতাংশ করা হতে পারে বলা হয়েছে। বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ৫ শতাংশেই স্থির থাকবে বলে তারা অনুমান করছে।
রাজনৈতিক টানাপোড়েনএ সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক নাটকও কম ছিল না। ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ নিয়ে সমালোচনা থাকলেও ফেডের পর্ষদের অন্য দুই ট্রাম্প-মনোনীত গভর্নর মিশেল বোম্যান ও ক্রিস্টোফার ওয়ালার শেষ পর্যন্ত মূল সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হয়েছেন। ওয়ালার বরাবরই শ্রমবাজারকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলে আসছেন।
পাওয়েল অবশ্য পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, ‘আমাদের সংস্কৃতির মূল বিষয় হলো তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত। আজকের বৈঠকে সুদহার ব্যাপক হারে কমানোর বিষয়ে বিপুল সমর্থন ছিল না।’
বাজারের প্রতিক্রিয়াসুদহার কমানোর ঘোষণার পর ওয়াল স্ট্রিটে প্রথমে শেয়ারের দাম বাড়লেও পরে ওঠানামা করে। শেষমেশ মিশ্র পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিন শেষ হয়। ডলার কিছুটা শক্তিশালী হয়েছে ঠিক, কিন্তু ট্রেজারি বন্ডের সুদ প্রায় অপরিবর্তিত। বাজার এখন প্রায় নিশ্চিত, অক্টোবরের বৈঠকেও সুদ কমানো হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, ফেডের সাম্প্রতিক নীতি পরিবর্তনের মানে হলো তারা এখন ধীরে ধীরে ‘নিরপক্ষে’ অবস্থানের দিকে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি সাময়িকভাবে কিছুটা বাড়লেও ২০২৬ সালের মধ্যে স্থিতিশীল হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নীতিসুদ কীকেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সুদহারে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে স্বল্প সময়ের জন্য ঋণ দেয়, সেটাই নীতি সুদহার। ইংরেজিতে একে বলে রেপো রেট। রেপোর বাংলা হচ্ছে পুনঃক্রয় চুক্তি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে এটি পরিচিত। অর্থনীতিতে নগদ তারল্যের জোগান দিতে বা অন্যভাবে বলতে গেলে ব্যাংকগুলোর জরুরি প্রয়োজনে অর্থ সরবরাহ করতে মুদ্রানীতির এ হাতিয়ার ব্যবহার করা হয়। বিশ্বের সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ হাতিয়ার ব্যবহার করে।
কোভিডের পর রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। তখন ফেডারেল রিজার্ভ বাজারে মুদ্রার চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করতে দফায় দফায় নীতি সুদহার বৃদ্ধি করে। ফলে নীতি সুদহার গত দুই দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ২৫ থেকে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশে উঠে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদহারের প্রভাববিশ্ব অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতিসুদের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। ফেডের নীতিসুদের হার বাড়লে ট্রেজারি বন্ডের দাম কমে এবং সুদহার কমলে ট্রেজারি বন্ডের দাম বাড়ে। এর কারণ হলো বাজারে নতুন ও অধিক সুদের বন্ড আসার পর পুরোনো বন্ডের কুপন (সুদ) কম মনে হয়, ফলে পুরোনো বন্ডের দাম কমে যায়। আবার যখন সুদের হার কমে, তখন নতুন বন্ডের কুপন কম হওয়ায় পুরোনো বন্ডের উচ্চ কুপনযুক্ত সুদ বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, ফলে পুরোনো বন্ডের দাম বেড়ে যায়।
নীতিসুদ কমলেও একই প্রক্রিয়া ঘটে, তবে বিপরীতভাবে। সুদের হার কমলে নতুন বন্ডের কুপনও কমে যায়। এতে আগের উচ্চ সুদের কুপনযুক্ত বন্ডগুলো বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। বিনিয়োগকারীরা এই পুরোনো বন্ডগুলো কিনতে আগ্রহী হন, ফলে সেগুলোর দাম বেড়ে যায়। বিনিয়োগকারীরা তখন তুলনামূলক ঝুঁকিপূর্ণ বাজারেও বিনিয়োগ আগ্রহী হন। এতে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগপ্রবাহ বাড়ে এবং ডলারের চাপ কিছুটা কমে।
সে কারণে বাজার নীতি সুদহারের দিকে তাকিয়ে থাকে, সুদ কমলে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়।