দেশে মোট মৃত্যুর ১২ শতাংশ ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ সার্জারি, কেমোথেরাপি এবং রেডিওথেরাপির সংমিশ্রণে চিকিৎসা পেয়েছিলেন। ৭ দশমিক ৪ শতাংশ রোগী ক্যান্সার শনাক্ত হওয়ার পরে কোনো চিকিৎসা না নিয়েই মারা গেছেন। মৃত রোগীদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ফুসফুস, শ্বাসনালী ও পাকস্থলীর ক্যান্সার।

বাংলাদেশে জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সারের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের করা এক গবেষণায় এসব তথ্য জানা গেছে। আজ শনিবার বিএসএমইউ’র সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে এ গবেষণার  ফল প্রকাশ করা হয়। কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলায় ২০২৩ সালের জুলাই মাস থেকে এ গবেষণাটি পরিচালিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৪৬ হাজার ৬৩১টি পরিবারের দুই লক্ষাধিক অংশগ্রহণকারীকে এই গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪৮ দশমিক ৪ শতাংশ পুরুষ এবং ৫১ দশমিক ৬ শতাংশ নারী। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা এবং বিএসএমএমইউ এই গবেষণায় অর্থায়ন করেছে।

গবেষক দলের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা.

মো. খালেকুজ্জামান জানান, দেশে প্রতি লাখে ক্যান্সারের আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১০৬ জন। প্রতি বছর নতুন করে আক্রান্ত হয় লাখে ৫৩ জন। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ফুসফুস, লিভার ও শ্বাসনালীর ক্যান্সারের রোগীর সংখ্যা বেশি। গবেষণায় বলা হয়, দেশে ৩৮ ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় মানুষ। এর মধ্যে স্তন, মুখ, পাকস্থলী, শ্বাসনালী ও জরায়ুমুখ ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা বেশি। ক্যান্সার রোগীদের ৯২ দশমিক ৫ শতাংশ ১৮ থেকে ৭৫ বছর বয়সী। ১৮ বছরের কম বয়সী ক্যান্সার রোগী আছেন ২ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ৭৫ বছরের বেশি বয়সী ক্যান্সার রোগী আছেন ৫ দশমিক ১ শতাংশ।

গবেষণায় দেখা গেছে, আক্রান্তদের মধ্যে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশই স্তন ক্যান্সার রোগী। ঠোঁট ও মুখগহ্বর ক্যান্সার আক্রান্তের হার ৮ দশমিক ৪ শতাংশ, পাকস্থলী ক্যান্সার আক্রান্তের হার ৭ শতাংশ, স্বরযন্ত্র ক্যান্সার আক্রান্তের হার ৭ শতাংশ এবং জরায়ুমুখ আক্রান্তের হার ৫ দশমিক ১ শতাংশ। ফুসফুস, শ্বাসনালী ও পাকস্থলীর ক্যান্সারে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটে বলে জানানো হয়।

গবেষক খালেকুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে ক্যান্সারের সঠিক পরিস্থিতি জানার ব্যাপারে সীমাবদ্ধতা আছে। তাই জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বা বাংলাদেশি জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটি জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার নিবন্ধন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ক্যান্সারের পরিস্থিতি নির্ণয় করা জরুরি হয়ে পড়েছিল, এজন্যই এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, যেসব গবেষণা দেশের মানুষের কল্যাণে আসে। দেশের রোগীদের উপকার হবে, সেক্ষেত্রে সরকারের সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

বিএসএমএমইউর উপাচার্য শাহিনুল আলম বলেন, বাংলাদেশে জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি থেকে যে পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে, তা দেশের মানুষের ক্যান্সার প্রতিরোধ, প্রতিকার ও ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসায় বিরাট ভূমিকা রাখবে। একইসঙ্গে এই পরিসংখ্যান বাংলাদেশে ক্যান্সার নিয়ে গবেষণার বহুমুখী দ্বার উন্মোচন করেছে।

বিএসএমএমইউর উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাহরীন আখতার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক সৈয়দ জাকির হোসেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জনস খ য ভ ত ত ক ক য ন স র

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্ব ইজতেমা মার্চে 

প্রতিবছর জানুয়ারিতে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করা হলেও এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে তা পিছিয়ে মার্চ মাসে করা হবে।

সোমবার (৩ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ এ তথ্য জানিয়েছেন তাবলিগ জামাত বাংলাদেশ বা শুরায়ী নেজামের শীর্ষ নেতা মুফতি কেফায়েতুল্লাহ আজহারি।

আরো পড়ুন:

শেষ হলো দাওয়াতে ইসলামীর ইজতেমা

দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা শুরু 

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিগত বছরগুলোতে দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমা হলেও আগামী বছর এক পর্বে হবে। মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারী বা সাদপন্থিদের ইজতেমা আয়োজনের সুযোগ থাকবে না। 

মুফতি কেফায়েতুল্লাহ বলেছেন, “তাবলিগ জামাত বাংলাদেশ তাবলিগি এ মেহনতকে দ্বীনি মেহনত হিসেবে বিশ্বাস করে। দ্বীনি কাজের অংশ হিসেবে বর্তমান সরকারের অনুরোধ শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করে আমরা আগামী বিশ্ব ইজতেমা মার্চে আয়োজনের বিষয়ে একমত হয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি, এ সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে সরকারের প্রতি সহযোগিতার শামিল।”

বিশ্ব ইজতেমা সাদপন্থিরা আয়োজন করতে পারবেন কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “সরকারের কাছে তারা লিখিত দিয়ে গতবার শেষবারের মতো ইজতেমার আয়োজন করেছিল। সেক্ষেত্রে তাদের আর ইজতেমা করার সুযোগ নেই।”

বিশ্ব ইজতেমা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তিনটি অনুরোধ তুলে ধরা হয়।
১. আগামী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের আগেই ইজতেমার দিন-তারিখ ঘোষণা এবং সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম শুরু করার জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোকে অবহিত করা।

২. ইজতেমা যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা ময়দানকে অস্থায়ীভাবে কেপিআই (কি পয়েন্ট ইন্সটলেশন) ঘোষণা।

৩. ইজতেমায় আসা বিদেশি অতিথিদের সময়মতো উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে ভিসা সহজীকরণ-সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করা।

ঢাকা/রায়হান/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ