পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) গঠিত ‘অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি’ ১২টি বিষয়ের মধ্যে মাত্র চারটির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এতে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান, কমিশনার ও  দায়িত্বরত অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নাম উঠে এসেছে বলে জানা গেছে।

অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটিকে প্রাথমকিভাবে বেক্সিমকোর সুকুক বন্ডসহ ১২ কোম্পানির বিষয়ে তদন্ত করতে বলা হয়। এজন্য ৬০ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল। যে সময়ে কমিটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দিতে ব্যর্থ হয়। এরপরে কয়েক দফায় সময় বাড়ানো হলেও পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট জমা দিতে পারেনি। তবে ওই সময়ের মধ্যে আংশিক রিপোর্ট জমা দিয়েছে কমিটি। এরমধ্যে ৪টি বিষয়ে রিপোর্ট জমা দিয়েছে, যা এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

তবে তদন্ত কমিটি নিয়ে গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেছিলেন, “পুঁজিবাজারে আগের বিভিন্ন অনিয়ম, কারসাজি ও দুর্নীতি খুঁজে বের করতে নবগঠিত অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।”

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, গঠিত অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি বেক্সিমকো গ্রীন-সুকুক আল ইসতিসনা, আইএফআইসি গ্রানটিড শেরপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ড, বেস্ট হোল্ডিংস এবং কোয়েস্ট বিডিসি লিমিটেড (পূর্বে পদ্মা প্রিন্টার্স অ্যান্ড কালার লিমিটেড) নিয়ে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছে।

তদন্ত রিপোর্টে কোম্পানি চারটির অর্থ উত্তোলনের অনুমোদনকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এতে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান, সাবেক দুইজন কমিশনার এবং বিএসইসির ক্যাপিটাল রেইজিং বিভাগের কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার বিষয় উঠে এসেছে। এছাড়া, অন্যান্য বিভাগের কিছু নির্বাহী পরিচালকের দুর্নীতির বিষয় তদন্তে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

এদিকে, গঠিত অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি বিএসইসির দূর্নীতির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দূর্নীতি দমন মিশনে (দুদক) অধিকতর তদন্তের জন্য পদক্ষেপ নিতে সুপারিশ করেছে। এছাড়া, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতেও সুপারিশ করেছে। আর অভিযুক্ত কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছে পাঁচ সদস্যের পুঁজিবাজার অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অনুসন্ধান ও কমিটি চারটি রিপোর্ট দাখিল করেছে বেশ আগে। তবে বিএসইসির অনেক কর্মকর্তার দুর্নীতির তথ্য তদন্ত রিপোর্টে উঠে আসায়, বর্তমান কমিশন তা প্রকাশ করতে গড়িমসি করছে। এরইমধ্যে বিএসইসির সাবেক ও বর্তমান নয় জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। একইসঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত কাজও চলছে।

এ বিষয়ে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, “পাঁচ মাসের মধ্যেও যদি তদন্ত রিপোর্ট দিতে না পারে, তাহলে এমন কমিটির প্রয়োজনীয়তা দেখছি না। এমন তদন্ত কমিটি করার চাইতে, না করাই ভালো।”

এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) একজন পরিচালক বলেন, “তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে লুকোচুরি করার কিছু নেই। এ কমিশন নিজেদেরকে স্বচ্ছ বলে দাবি করে, তাই তাদের উচিত তদন্ত রিপোর্ট সবার উদ্দেশ্যে প্রকাশ করা।”

গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষা এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে যুক্তরাষ্ট্রের টেরা রিসোর্সেস ইন্টারন্যাশনালের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এবং কনসালটেন্ট ড.

জিয়া ইউ আহমেদকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি করে বিএসইসি। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- ফিনান্সিয়াল সেক্টর স্পেশালিস্ট ইয়াওয়ার সাইদ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মো. শফিকুর রহমান, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মো. জিশান হায়দার ও বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মো. আনোয়ারুল ইসলাম।

‘অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি’ যেসব বিষয় খতিয়ে দেখছে-

বেক্সিমকো গ্রিন-সুকুক আল ইসতিসনা ইস্যু সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়াদি অনুসন্ধান ও তদন্ত।

আইএফআইসি গ্রানটিড শেরপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ড ইস্যু সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়াদি অনুসন্ধান ও তদন্ত।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসির (সিএসই) স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার বা কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান এবিজি লিমিটেডের অনুমোদন বা মনোনয়ন, শেয়ার বরাদ্দকরণ বা শেয়ার অধিগ্রহণ ও মূল্য নির্ধারণ সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়াদি অনুসন্ধান ও তদন্ত।

বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড সংক্রান্ত আইপিও অনুমোদন ও ইস্যু সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়াদি অনুসন্ধান ও তদন্ত।

আল-আমিন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ সংক্রান্ত পুঁজিবাজারের যাবতীয় অনিয়ম ও কারসাজি, ব্লক মার্কেটে শেয়ার অধিগ্রহণসংক্রান্ত কারসাজি এবং ওটিসি থেকে এসএমই প্ল্যাটফর্মে স্থানান্তরের জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন থেকে আরোপিত শর্তসমূহ পরিপালনের হালনাগাদ তথ্যাদিসহ যাবতীয় বিষয়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত।

সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস লিমিটেড সংক্রান্ত পুঁজিবাজারে যাবতীয় অনিয়ম ও কারসাজি এবং ২০২০ সালে কোম্পানিটিকে ওভার-দ্য-কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেট থেকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান বোর্ডে পুনরায় তালিকাভুক্তকরণ সংক্রান্ত অনিয়ম এবং কোম্পানিটির শেয়ার মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিবর্গ ও প্রতিষ্ঠানসমূহের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও তদন্ত।

ফরচুন সুজ লিমিটেড সংক্রান্ত পুঁজিবাজারের যাবতীয় অনিয়ম ও কারসাজি, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে লভ্যাংশ বিতরণ সংক্রান্ত অনিয়ম এবং কোম্পানিটির শেয়ার মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ও প্রতিষ্ঠানসমূহের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান ও তদন্ত।

রিং শাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের প্রাইভেট ও পাবলিক অফারের মাধ্যমে মূলধন উত্তোলন ও বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন অতিরঞ্জিত করে বিক্রয় বেশি দেখানো এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর বা পাচার বিষয়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত।

একমি পেস্টিসাইডস লিমিটেড সংক্রান্ত পুঁজিবাজারের যাবতীয় অনিয়ম ও কারসাজি, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে লভ্যাংশ বিতরণ সংক্রান্ত অনিয়ম এবং আইপিও’র মাধ্যমে উত্তোলিত টাকা থেকে ন্যাশনাল ফাইন্যান্সের ঋণ পরিশোধের অনিয়মের বিষয়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত।

কোয়েস্ট বিডিসি লিমিটেড (পূর্বে পদ্মা প্রিন্টার্স অ্যান্ড কালারস লিমিটেড) সংক্রান্ত পুঁজিবাজারের যাবতীয় অনিয়ম ও কারসাজির বিষয়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত।

কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড সংক্রান্ত পুঁজিবাজারের যাবতীয় অনিয়ম ও কারসাজির বিষয়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত।

এমারেল্ড ওয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ার অধিগ্রহণ বা হস্তান্তর, মূল্য সংবেদনশীল তথ্য সরবরাহ, সেকেন্ডারি মার্কেটে অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি এবং এ-সংক্রান্ত পুঁজিবাজারের যাবতীয় অনিয়ম ও কারসাজির বিষয়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত।

ঢাকা/এনটি/ইভা 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এসইস র স ব ক তদন ত র প র ট কম ট র

এছাড়াও পড়ুন:

নারী স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে সময় বাড়াল বিএসইসি

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিটি কোম্পানিতে এক-পঞ্চমাংশ স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর মধ্যে কমপক্ষে একজন নারী স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে সময় বেধে দিয়েছিল বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে অনেক কোম্পানি ব্যর্থ হওয়ায় এবং ওইসব কোম্পানির আবেদনের আলোকে সময়সীমা বাড়িয়েছে বিএসইসি।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ইস্যু করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের ২৯ এপ্রিল প্রকাশিত গেজেটে এক বছর সময় দিয়ে গত ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিটি তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে কমপক্ষে এক জন করে নারী স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের জন্য সময়সীমা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অনেক কোম্পানি এ শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। ওইসব কোম্পানি থেকে সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে। যার আলোকে নারী স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিএসইসির কমিশনার হিসেবে সাইফুদ্দিনের যোগদান
  • নেগেটিভ ইক্যুইটি বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা জমা দেওয়ার সময় বাড়াল বিএসইসি
  • নারী স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে সময় বাড়াল বিএসইসি
  • সালমান, শিবলী ও সায়ান পুঁজিবাজারে ‘আজীবন অবাঞ্ছিত’
  • সালমানকে ১০০ কোটি, সায়ানকে ৫০ কোটি টাকা জরিমানা
  • বিএসইসির নতুন কমিশনার সাইফুদ্দিন
  • পুঁজিবাজারে বড়-মাঝারি বিনিয়োগকারী বেড়েছে : বিএসইসি
  • ‘পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্তিতে কাজ করছি’
  • বিএসইসি ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে কাজ করছে: ডিবিএ সভাপতি