বিশ্ব সংগীতাঙ্গনের অন্যতম সম্মানসূচক পুরস্কার গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ডস। ৬৭তম আসরে ৯৪টি বিভাগে গ্র্যামির মনোনয়ন ঘোষণা করা হয়েছিল। গতকাল রাতে (বাংলাদেশ সময় ৩ ফেব্রুয়ারি) লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্রিপ্টোডটকম অ্যারেনায় বসেছিল এই আসরের অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠান।

গ্র্যামি মনোনয়নে রেকর্ড গড়েছেন বিয়ন্সে। সর্বোচ্চ ১১টি মনোনয়ন পেয়েছেন বিয়ন্সে। তাই সবার চোখ ছিল গায়িকার দিকেই। কিন্তু মূল পুরস্কার অনুষ্ঠানে বিয়ন্সেকে ছাড়িয়ে যান কেনড্রিক লামার। তাতে বিয়ন্সের রেকর্ড আটকায়নি। চলুন জেনে নিই, উল্লেখযোগ্য বিভাগে কারা পেলেন এবারের পুরস্কার—

অ্যালবাম অব দ্য ইয়ার: কাউবয় কার্টার (বিয়ন্সে)
রেকর্ড অব দ্য ইয়ার: নট লাইক আস (কেন্ড্রিক লামার)
সং অব দ্য ইয়ার: নট লাইক আস (কেন্ড্রিক লামার)

আরো পড়ুন:

গায়িকা-অভিনেত্রী মারিয়ান ফেইথফুল আর নেই

অভিবাসীদের নিয়ে ট্রাম্পের কঠোর অবস্থান: কাঁদলেন সেলেনা

বেস্ট পপ সলো পারফরম্যান্স: সাবরিনা কার্পেন্টার (এসপ্রেসো)
বেস্ট পপ গ্রুপ পারফরম্যান্স: লেডি গাগা ও ব্রুনো মার্স (ডাই উইথ আ স্মাইল)
বেস্ট পপ ভোকাল অ্যালবাম: শর্ট অ্যান্ড সুইট (সাবরিনা কার্পেন্টার)
বেস্ট নিউ আর্টিস্ট: চ্যাপেল রোয়ান

বেস্ট ড্যান্স: জাস্টিস অ্যান্ড টেম ইমপালা (নেভেরেন্ডার)  
বেস্ট পপ ড্যান্স রেকর্ডিং: ফোন ডাচ (চার্লি এক্সসিএক্স)
বেস্ট ড্যান্স/ইলেকট্রনিক মিউজিক অ্যালবাম: ব্রাট (চার্লি এক্সসিএক্স)

বেস্ট রক পারফরম্যান্স: দ্য বিটলস (নাউ অ্যান্ড দেন)
বেস্ট মেটাল পারফরম্যান্স: গোজিরা, মারিনা ভিত্তই, ভিক্টর লে মাসনে (মিয়া কুলপা)
বেস্ট রক সং: সেন্ট ভিনসেন্ট (ব্রোকেন ম্যান)
বেস্ট রক অ্যালবাম: দ্য রোলিং স্টোনস (হ্যাকনি ডায়মন্ডস)

বেস্ট র‌্যাপ পারফরম্যান্স: কেন্ড্রিক লামার (নট লাইক আস)
বেস্ট র‌্যাপ অ্যালবাম: অ্যালিগেটর বাইট নেভার হিল (দোয়েচি)
বেস্ট মেলডিক র‌্যাপ পারফরম্যান্স: র‍্যাপসোডি অ্যান্ড এরিকা বাদু (৩:এএম)

বেস্ট কান্ট্রি সং: ক্যাসি মাসগ্রেভস (আর্কিটেক্ট)
বেস্ট কান্ট্রি অ্যালবাম: কাউবয় কার্টার (বিয়ন্সে)

বেস্ট মিউজিক ভিডিও: নট লাইক আস (কেন্ড্রিক লামার)
বেস্ট মিউজিক ফিল্ম: আমেরিকান সিম্ফনি

 

তথ্যসূত্র: সিএনএন, বিবিসি, এবিসি

ঢাকা/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রফরম য ন স র কর ড

এছাড়াও পড়ুন:

লরা উলভার্ট: হিমালয়ের চূড়ায় এক নিঃসঙ্গ শেরপা

লরা উলভার্ট- দক্ষিণ আফ্রিকা নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। বয়স মাত্র ছাব্বিশ, কিন্তু মনের দৃঢ়তায় যেন পাহাড়। এবারের ২০২৫ নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন প্রোটিয়া আশার একমাত্র আলোকবর্তিকা। নিজের একক নৈপুণ্যে, এক অসম্ভব সাহসিকতায় দলকে টেনে তুলেছিলেন ফাইনালের মঞ্চে।

সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলে ফেলেছিলেন ১৬৯ রানের অনবদ্য ইনিংস। যেন একক নাটকের একমাত্র নায়িকা তিনি। আর ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন হিমালয়ের মতো দৃঢ় হয়ে। একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন অনবদ্যভাবে। শতরান ছুঁয়ে যখন আকাশে ছুড়লেন ব্যাট, তখন মনে হচ্ছিল, স্বপ্নের ট্রফি যেন হাতের নাগালেই। কিন্তু ক্রিকেটের নির্মম বাস্তবতা! উলভার্ট যখন সাজঘরে ফিরলেন, ঠিক তখনই প্রোটিয়া শিবিরে নেমে এল নীরবতা। জয় হাতছাড়া হলো নিঃশ্বাস দূরত্বে।

আরো পড়ুন:

আরব আমিরাতকে ৪৯ রানে গুঁড়িয়ে ইতিহাস গড়ল যুক্তরাষ্ট্র

মিতালিকে ছাড়িয়ে ইতিহাস গড়লেন মান্ধানা

চোখের কোণে জলের কণা তখনও ঝলমল করছিল। সেটা ঘামের ছিল, নাকি অপূর্ণতার অশ্রু, তা কেউ জানে না। কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল, হৃদয়ের গভীরে আগুন জ্বলছে। একটা স্বপ্নের দগ্ধ ছাই হয়ে যাওয়ার যন্ত্রণা।

তবুও এই ব্যর্থতার মাঝেই উলভার্টের জয় আছে। বিশ্বকাপে তিন ফাইনাল, টানা তিনবার! এবং প্রতিবারই দলের একমাত্র ভরসা ছিলেন তিনি। এবারের বিশ্বকাপে করেছেন ৯ ম্যাচে ৫৭১ রান, গড়ে ৭১.৩৭। যা নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ ইতিহাসে এক আসরে সর্বোচ্চ। এর আগে অ্যালিসা হিলির ৫০৯ রান ছিল শীর্ষে।

শুরুটা ছিল নিস্তরঙ্গ- প্রথম ম্যাচে মাত্র ৫, পরেরটিতে ১৪। কিন্তু ধীরে ধীরে আগুন জ্বলে উঠল তার ব্যাটে। ভারতের বিপক্ষে ৭০, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপরাজিত ৬০, পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯০, আর সেমিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬৯। প্রতিটি ইনিংস যেন নিজের সীমাকে ছাপিয়ে যাওয়া একেকটি যাত্রা।

তবে উলভার্টের কীর্তি শুধু এই বিশ্বকাপেই নয়। ২০২৩ ও ২০২৪ দুই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। প্রতিবারই দলকে তুলেছিলেন ফাইনালে। কিন্তু ভাগ্য যেন নিষ্ঠুরভাবে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তার দিক থেকে। তিনটি ফাইনাল, তিনটি পরাজয়।

তবু লরার গল্পটা হারের নয়- এ এক অনমনীয়তার গল্প, এক নিঃসঙ্গ অভিযাত্রার গল্প। যেমন শেরপা অক্সিজেনহীন উচ্চতায় পৌঁছে দেয় অন্যদের। কিন্তু নিজে ফিরে আসে নীরবে, তেমনি উলভার্টও দলের স্বপ্নগুলো কাঁধে তুলে বয়ে নিয়েছেন, একা।

ফাইনাল শেষে ভারতীয় খেলোয়াড়রাও যখন এগিয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন, তখন বোঝা গেল; এই হার, এই অশ্রু, এই নীরবতা- সবই সম্মানের প্রতীক।

রবিবার ফাইনাল শেষে লরা বলেছেন অনেক কথা। সেখানে হাতাশার কিছু পাওয়া যায়নি। পাওয়া গেছে প্রেরণা ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস।

“আমি মনে করি, ২০২৩ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের (নিউল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত) পর থেকেই আমাদের জন্য অনেক পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল। সেই সময় থেকেই ঘরোয়া পর্যায়ে কেন্দ্রীয় চুক্তির ব্যবস্থা চালু হয়। আমাদের দলের গভীরতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটা ছিল এক বিশাল পদক্ষেপ।”

“এরপরের (২০২৪ সালের) বিশ্বকাপটা আমাদের দলের নামটা বিশ্ব ক্রিকেটে আরও বড় করে তুলেছে, আমার তাই মনে হয়। এখন আমরা এমন একটি দল, যারা নিয়মিত ফাইনালে পৌঁছাচ্ছে। যেখানে আগে এটা একবারের সাফল্য বলেই ধরা হতো।”

“টানা তিনবার ফাইনালে উঠতে পারাটা সত্যিই গর্বের বিষয়। এটা প্রমাণ করে আমরা ঘরোয়া ক্রিকেটে এবং দলীয় কাঠামোয় সঠিক দিকেই এগোচ্ছি। ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের এই ফলেই আমরা এখানে পৌঁছেছি। আশা করি, আমরা এমন আরও ফাইনাল খেলতে থাকব… আর একদিন, হ্যাঁ, একদিন আমরা অবশ্যই একটা জিতব।”

টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্স নিয়ে উলভার্ট বলেন, “আমার মনে হয়, আমাদের এই আসরটা অসাধারণ কেটেছে। ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছানোই একটা বড় সাফল্য। আমরা পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দারুণ ক্রিকেট খেলেছি। এই বিষয়টা নিয়েই আমি সবচেয়ে বেশি গর্বিত।”

“একপর্যায়ে আমরা টানা পাঁচটা ম্যাচ জিতেছিলাম। যা আমাদের দলের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। দুই দলের মধ্যকার সিরিজগুলোতে আমরা সবসময় এই ধারাবাহিকতা পাই না। তাই বড় মঞ্চে, বড় টুর্নামেন্টে এমন পারফরম্যান্স দিতে পারাটা সত্যিই গর্বের। আমরা প্রমাণ করেছি, বড় আসরে দক্ষিণ আফ্রিকাও এখন বড় দল।” 

সত্যিই তাই। লরার নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকা এখন বড় দল। হয়তো একদিন, কোনো এক প্রভাতে, লরা উলভার্ট সেই অধরা ট্রফিটা ছুঁয়ে দেখবেন। কিন্তু আজকের দিনে, তিনি রয়েছেন বিশ্বকাপের হিমালয়ের চূড়ায়, এক নিঃসঙ্গ শেরপা হয়ে। যিনি নিজের কীর্তিতে চূড়ায় উঠেছেন।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • লরা উলভার্ট: হিমালয়ের চূড়ায় এক নিঃসঙ্গ শেরপা
  • অ্যালবামের গল্প বলবে ‘পেনোয়া’