জ্ঞানেশ্বরীর আরাধনায় মেতেছেন শিক্ষার্থীরা
Published: 3rd, February 2025 GMT
‘ঔঁ জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচযুগ শোভিত মুক্তাহারে, বীণা রঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমোহস্তুতে’ এই মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে কুড়িগ্রামে বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজায় মেতেছেন সনাতন ধর্মের শিক্ষার্থীরা।
দিনটি বাঙালি হিন্দু সমাজে বসন্ত উৎসব হিসেবে পালিত হওয়ায় আবির রঙে ছেয়ে গেছে জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ।
সোমবার সকালে জেলা শহরের একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা যায়, সরস্বতী পূজা ঘিরে দরিদ্রদের মধ্যে বস্ত্রদান, সংগীত প্রতিযোগিতা, কবিতা পাঠ, প্রসাদ বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও বাসাবাড়িগুলোতেও পূজা হচ্ছে বিদ্যার দেবী সরস্বতীর।
সনাতন পঞ্জিকা মতে, এ বছর সরস্বতী পূজার তিথি ২ দিন পড়েছে। অনেকে গতকাল রোববার বিকেল থেকে মেতেছেন জ্ঞানেশ্বরীর আরাধনায়।
দেবী সরস্বতী বিদ্যা ও জ্ঞান দান করেন বলে তাকে জ্ঞানেশ্বরী, সংগীত ও কলা দান করেন বলে বাগ্বদেবী হিসেবেও পূজা করা হয়ে থাকে।
প্রতি বছর বাংলা বর্ষপঞ্জির মাঘ মাসের শুক্ল পঞ্চমী তিথিতে এ পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। সনাতন ধর্মের বিশ্বাসমতে, দেবী এই দিন পৃথিবীতে তার বাহন রাজহংসে চড়ে আসেন। ভক্তদের দান করেন জ্ঞান, সংগীত ও কলা বিদ্যা। শিক্ষার্থীরা বিশেষভাবে এই পূজার বিধি পালন করেন। প্রচলিত আছে, সরস্বতী পূজা না হওয়া পর্যন্ত কেউ কুল (বরই) খান না।
কুড়িগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী নন্দিতা দাস নিঝুম বলেন, মায়ের কাছে প্রার্থনা করলাম সবার অশুভ বুদ্ধির বিনাশ ঘটুক, উদয় হোক শুভ বুদ্ধির।
কুড়িগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী স্নেহা সরকার বলেন, আজ বিদ্যার দেবীর পূজাতে খুব সকালে স্নান করে হলুদ শাড়ি পরে আসছি। পূজা শেষে বছরের প্রথম বরই খেলাম। খুব ভালো লাগছে।
জেলা শহরের পুরোহিত নিতু গোস্বামী বলেন, সরস্বতী পূজার দিনটি শ্রীপঞ্চমীর দিন হিসেবেই খ্যাত। এইদিন উষালগ্ন থেকে সকালেই সরস্বতী পূজা সম্পন্ন করা হয়। যারা নতুন শিক্ষার্থী আছেন তারা মায়ের চরণে পুষ্পাঞ্জলি ও হাতেখড়ির মাধ্যমে পড়ালেখা শুরু করেন। আর যারা অধ্যয়নরত আছে, মায়ের কাছে বই-খাতা নিবেদন করায় আজ তাদের জন্য পড়ালেখা নিষিদ্ধ।
তিনি আরো বলেন, দিনটি বসন্ত পঞ্চমী হিসেবে বেশি পরিচিত। এদিন প্রকৃতির বিশেষ সামগ্রী প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে অভ্র-আবির, আমের মুকুল, দোয়াত-কলম, পলাশ ফুল ও যব বা গমের শিষ এবং বাসন্তী রঙের গাঁদা ফুল অন্যতম।
কুড়িগ্রাম পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্রী রবি বোস বলেন, এ বছর জেলায় ৫ হাজারের অধিক অস্থায়ী মণ্ডপ, মন্দির ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন কর ন
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমল ৭৫ পয়সা
রাজশাহীতে হিমাগারে আলু সংরক্ষণে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ সোমবার আলুচাষি, ব্যবসায়ী ও হিমাগারমালিকদের উপস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, হিমাগারে প্রতি কেজি আলু রাখার জন্য ভাড়া দিতে হবে ৫ টাকা ৫০ পয়সা। এর সঙ্গে যুক্ত হবে শ্রমিকের খরচ ৫০ পয়সা। সেই হিসাবে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমেছে ৭৫ পয়সা।
এর আগে গত মার্চে সরকার প্রতি কেজি আলু রাখার ভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর পর থেকে এ নিয়ে রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা বাড়তি ভাড়ায় আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। এ নিয়ে কয়েক দফা তাঁরা রাজপথে আন্দোলনও করেছেন। অন্যদিকে হিমাগারমালিকদের দাবি ছিল, প্রতি কেজি আলুর ভাড়া ৮ টাকা করা হোক।
রাজশাহী কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন এবং রাজশাহী জেলা আলুচাষি ও আলু ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজশাহীতে হিমাগার থেকে বাড়তি ভাড়া না দিলে আলু ছাড়া হবে না। এর প্রতিবাদে ঈদের পর নতুন করে আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা আন্দোলন করে আসছেন। তাঁদের দাবি, আলু রাখার খরচ আগের বছরের মতো চার টাকা করতে হবে। এ নিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তাঁরা। হিমাগার মালিকপক্ষ এ নিয়ে আলোচনায় বসার তাগিদ দিয়ে আসছিল।
এরই মধ্যে আলুচাষিনেতারা ১৪ জুন সেনাবাহিনীর কাছে এ নিয়ে একটি অভিযোগ দেন। পরে বিষয়টি আমলে নিয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আজ দুপুরে সভা ডাকা হয়। সভায় সব পক্ষের সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয় যে এ বছর সরকার নির্ধারিত প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সার বদলে ৫ টাকা ৫০ পয়সা ও শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা রাখা হবে। আর পেইড বুকিংয়ের ক্ষেত্রে শুধু শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে আলু রাখা চাষি ও ব্যবসায়ীদের। পরে বিকেলে ক্যান্টনমেন্টে হওয়া এই সিদ্ধান্ত প্রশাসনিকভাবে পাস করার জন্য রাজশাহী জেলা প্রশাসকের দপ্তরে সভা হয়।
সভায় আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি, হিমাগার মালিক সমিতি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি, পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামীকাল মঙ্গলবার রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে নতুন ভাড়ার বিজ্ঞপ্তি সব হিমাগারে প্রচার করা হবে।
এ ব্যাপারে সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এবার আলুর দাম কম। আবার এ নিয়ে দুই পক্ষের সংঘাতের আশঙ্কা ছিল। এ নিয়ে একটি অভিযোগ পান তাঁরা। পরে দুই পক্ষকে নিয়ে সভা হয়। সভায় সবার সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত বিকেলে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আরেকটি সভার মাধ্যমে পাস হয়েছে।
রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মিঠু আহমেদ বলেন, শুরু থেকেই তাঁরা বাড়তি ভাড়ার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। কয়েক দিন ধরে তাঁরা হিমাগার থেকে আলু নিতে পারছিলেন না। হিমাগারগুলোয় বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছিল। এ নিয়ে আন্দোলনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীকেও অবহিত করেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত একটি ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে।
রহমান সিডস স্টোরেজের ব্যবস্থাপক আবদুল হালিম বলেন, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি কেজি আলু রাখতে খরচ পড়বে ৫ টাকা ৫০ পয়সা আর শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা। এ ছাড়া যাঁরা আগে থেকেই টাকা দিয়ে অগ্রিম বুকিং দিয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে আলুর কেজিপ্রতি শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে।
রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, নতুন সিদ্ধান্ত সব হিমাগারমালিকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হবে।
আরও পড়ুনরাজশাহীতে হিমাগারে ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ-সমাবেশ১৫ জুন ২০২৫