যেখানে বসে জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা শাখায় বিচরণ করার কথা ছিল পাঠকের, সেটি এখন পুলিশ ও অপরাধীদের বিচরণ ক্ষেত্র। আড়াইহাজারের গণগ্রন্থাগারটি এখন পুলিশ স্টেশন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কবে নাগাদ এটি জ্ঞান আহরণের ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করা যাবে তা জানাতে পারেনি প্রশাসন।
আগামীকাল ৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস। ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো দিবসটি উদযাপন করা হয়। জনগণের পাঠাভ্যাস সৃষ্টির লক্ষ্যে ও সরকারি-বেসরকারি গ্রন্থাগারগুলোর কার্যক্রম গতিশীল করতে দিবসটি উদযাপন করা হয়ে থাকে। একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে গ্রন্থাগারের বিকল্প নেই। মেধা, মনন, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক এবং লালনপালনকারী হিসেবে গ্রন্থাগারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সর্বসাধারণের মধ্যে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে গ্রন্থাগারের গুরুত্ব বিবেচনায় নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলা সদরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে ২০২১ সালে নির্মাণ করা হয় গণগ্রন্থাগার।
জেলা পরিষদ সূত্র জানিয়েছে, জেলা পরিষদের অর্থায়নে দোতলা গ্রন্থাগার ভবনটিতে রয়েছে আধুনিক সব প্রকার সুযোগ-সুবিধা। পর্যাপ্ত এসি ছাড়াও আলো বাতাসের জন্য জানালা রাখা হয়েছে। ভেতরে খোলামেলা জায়গা থাকায় আরামদায়ক পরিবেশে পাঠকরা বই পড়তে পারতেন। অথচ জেলা পরিষদের অর্থায়নে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত গণগ্রন্থাগারটি চালু হওয়ার আগেই এখন ব্যবহৃত হচ্ছে পুলিশ স্টেশন হিসেবে।
এ উপজেলার জ্ঞানপিপাসু ও পাঠানুরাগীরা এমন সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, গণগ্রন্থাগারকে পুলিশ স্টেশন হিসেবে ব্যবহার করা সুবিবেচনাপ্রসুত কোনো কাজ হয়নি। এর জন্য অন্য কোনো ভবন বেছে নেওয়া যেত। তারা শিগগির গণগ্রন্থাগারটি সর্বসাধারণের চালু করার দাবি জানিয়েছেন।
আড়াইহাজার থানার ওসি এনায়েত হোসেন জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পর ৫ আগস্ট বিকেলে আড়াইহাজার থানায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার দুর্বৃত্ত হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় হামলাকারীরা থানার অস্ত্র ও গুরুত্বপূর্ণ মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। হামলাকারীদের ভয়ে পুলিশ সদস্যরা আত্মরক্ষার্থে থানা ছেড়ে পালিয়ে গেলে যে যেভাবে পেরেছে, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করে অস্ত্র ও মালপত্র লুট করে নিয়ে গেছে। থানা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ায় পুলিশি কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে অনুপযোগী হয়ে পড়ে। প্রথমে থানার কার্যক্রম অস্থায়ীভাবে গোপালদী তদন্ত কেন্দ্রে স্থানান্তরিত হলেও সেটি আড়াইহাজারের একেবারে সীমান্ত এলাকায় হওয়ায় সেখান থেকে গত ২২ আগস্ট উপজেলা সদরে গণগন্থাগারে অস্থায়ীভাবে থানার কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
সাংবাদিক, গবেষক ও প্রাবন্ধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন বাবুল বলেন, এ গণগ্রন্থাগারটি আড়াইহাজারের শিল্প-সাহিত্যমনা ব্যক্তিদের মধ্যে আশা জাগিয়েছিল। তাই দ্রুত গণগ্রন্থাগারটি চালু করে সর্বসাধারণের মধ্যে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
উপজেলার একমাত্র সরকারি নিবন্ধিত বেসরকারি গ্রন্থাগার ‘আলোর পথযাত্রী’ পাঠাগারটি গত বছরের ৫ আগস্ট রাতে দুর্বত্তদের হামলার শিকার হয়। দুর্বত্তরা পাঠাগারের কম্পিউটার, ল্যাপটপ, প্রিন্টার, কয়েক হাজার বই-পুস্তকসহ অন্যান্য মূল্যবান আসবাব নষ্ট করে।
আলোর পথযাত্রী পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক হাসনাত ভূইয়া জানান, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র থেকে সরবরাহ করা বই নিয়ে পাঠাগারটি গড়ে তোলা হয়েছিল। তা এখন ধ্বংসস্তূপ। তারা নতুন উদ্যোম নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন।
আড়াইহাজারের ইউএনও সাজ্জাত হোসেন জানান, পুলিশ স্টেশনের জন্য টেন্ডার হয়ে গেছে। দ্রুত কাজ শুরু হবে। কাজ শেষ হলে পুলিশ স্টেশন তাদের নিজস্ব জায়গায় স্থানান্তর করা হবে। কবে গণগ্রন্থাগারটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা যাবে সে ব্যপারে কোনো দিনক্ষণ তিনি জানাতে পারেননি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য উপজ ল সরক র ব যবহ
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।
গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।
সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।
ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’