ডিরেক্টরস গিল্ড ও টেকনিশিয়ান ফেডারেশনের দ্বন্দ্বে টলিউডে ফের অচলাবস্থা। বন্ধ হয়ে গেছে শুটিং। পরিচালক জয়দীপ মুখার্জি, কৌশিক গাঙ্গুলির পর এবার টেকনিশিয়ান ফেডারেশনের কোপে পরিচালক শ্রীজিৎ রায়।
পরিচালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, শ্রীজিৎ রায় ফেডারেশনের বিরুদ্ধে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। আর সে কারণেই আর্ট সেটিং গিল্ডের টেকনিশিয়ানেরা পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে রাজি নন। যার ফলে, শ্রীজিৎ রায়ের নতুন টিভি সিরিয়ালের শুটিং শুরুর আগেই থমকে গিয়েছে। সৃষ্ট দ্বন্দ্বের সমাধান না হলে আগামীকাল থেকে সব সিরিয়ালের শুটিং বন্ধ হতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গত ২৭ জানুয়ারি শ্রীজিৎ রায়ের নতুন সিরিয়ালের সেট তৈরির কাজ শুরু হয়। কিন্তু প্রথম থেকেই সেটিং টিমের মধ্যে একটা চাপা অসন্তোষ দেখা যাচ্ছিল। তবে আচমকা সোমবার রাতে সেটের কিছু অংশ ভেঙে ফেলা হয়। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে এখন পর্যন্ত টেকনিশিয়ানদের কেউ কাজে যোগ দেননি। ফলে, পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে।
আরো পড়ুন:
টি-বয় থেকে ২৮০ কোটি টাকা পারিশ্রমিক নেওয়া অভিনেতা যশ
ওরা আমাকে মেরেই ফেলত: বিশ্বনাথ
পরিচালক শ্রীজিৎ রায়ের দাবি, “টেকনিশিয়ানদের একটাই বক্তব্য— ‘ক্ষমা চাইতে হবে পরিচালককে। তবেই কাজ শুরু হবে, নতুবা কাজ বন্ধ থাকবে।’ কিন্তু আমি কী এমন করেছি, যার জন্য ক্ষমা চাইতে হবে?”
অভিযোগকারীদের কাছে প্রমাণ চেয়েছেন শ্রীজিৎ রায়। এ তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ, আমি নাকি ফেডারেশন বিরোধী কথাবার্তা বলেছি। মাদার বডির বিরুদ্ধে কথা বলেছি। সেই কারণেই ওরা কাজ বন্ধ করেছে। আমি যে কথা বলেছি তার প্রমাণ চেয়েছি। গতকাল রাত পর্যন্ত কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি।”
পরিচালক শ্রীজিৎ একজন প্রযোজকও। সংকটে পড়ে ফেডারেশনকে মেইল করেন তিনি। এ বিষয়ে শ্রীজিৎ বলেন, “প্রযোজক হিসেবে আমি ফেডারেশনকে মেইল করে জানিয়েছি, কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মেইলটা কর্মবিরতির বিরুদ্ধেই করা হয়েছে। তারাও আমার মেইলের উত্তর দেয়নি। আমি জানিয়েছিলাম, এর যথাযথ বিচার করুন ও আমার সঙ্গে কাজটা করুন। ২৪ ঘণ্টা হতে চলল, সেই মেইলেরও উত্তর পাইনি।”
শুটিং বন্ধ থাকলে অর্থনৈতিকভাবে লোকসানের মুখে পড়বেন প্রযোজক শ্রীজিৎ। তার ভাষায়, “সেট বানাতে ২০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ করেছি। আমাকে দেখে বুঝতেই পারছেন আমি বিশাল মাপের মানুষ নই। ২০ লাখ টাকা চলে গেলে আমাকে পথে বসতে হবে। আমার পেটে টান পড়বে; সংসারে অসুবিধা হবে।”
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভে এসে নিজের সঙ্গে হওয়া অবিচার নিয়ে কথা বলেন শ্রীজিৎ। লাইভে ‘দাসানি ১’-এ সমবেত হওয়ার ডাক দেন পরিচালক। খবর পেয়েই স্টুডিও পাড়ায় ছুটে যান ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি সুব্রত সেন, সম্পাদক সুদেষ্ণা রায়। সংগঠনের কার্যকরী কমিটির সদস্য রাজ চক্রবর্তী, অনির্বাণ ভট্টাচার্য ও পরমব্রত চ্যাটার্জি প্রমুখ। সকলের মুখে একটাই প্রশ্ন— দোষ কোথায়? কী কারণে হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত? এই ঘটনা তো আগামীতে যে কারো সঙ্গে ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।
ডিরেক্টরস গিল্ডের সম্পাদক সুদেষ্ণা রায় বলেন, “প্রথমে কৌশিকের ওপর কোপ, পরে জয়দীপের ওপরে। এভাবে পরিচালকদের কাজ বিনা নোটিশে বন্ধ করে দেওয়ার কোনো মানে নেই। শ্রীজিতের অপরাধটা কী সেটা আমরা আগে জানতে চাই। যদি সত্যিই অপরাধ থাকে তাহলে আমরা প্রত্যেকে ক্ষমা চাইব। কথা বলে মিটমাট করতে চাই। তাই কালকের দিনটা পর্যন্ত অপেক্ষা করব, যদি কিছু সুরাহা হয়।”
সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়ে সংগঠনটির কার্যকরী কমিটির সদস্য অনির্বাণ ভট্টাচার্য বলেন, “এইভাবে হুটহাট কাজ বন্ধ হলে টেকনিশিয়ানদেরও ক্ষতি। তাদের পেট চলে কাজ করে। আমরা অভিযোগ করে অশান্তি করতে চাই না। আলোচনা করে একটা বোঝাপড়ায় আসতে চাই।”
কথার শুরুতে প্রশ্ন ছুড়ে দেন অভিনেতা-নির্মাতা পরমব্রত চ্যাটার্জি। তিনি বলেন, “একজন পরিচালক, প্রযোজক অনেক কষ্টে একটা বিনিয়োগ নিয়ে আসেন। ইন্ডাস্ট্রিতে একটা কাজ শুরু হয়। তাদের সঙ্গে যে এই বৈমাত্রেয় আচরণ, অপমানজনক আচরণের জবাব কে দেবে? এটা আমার প্রশ্ন।”
“শ্রীজিৎ রায় টিভি ইন্ডাস্ট্রিতে বড় নাম। কোনোটার পরিচালক, কোনোটার প্রযোজক শ্রীজিৎ নিজে। এসব কাজ ঘিরে তিনশ-চারশ লোকের রুজি রোজগার হয়। আজকে সে নতুন একটা সিরিয়াল শুরু করতে যাচ্ছে। তার সেট তৈরি হচ্ছে। একটি গিল্ডের লোকজনদের আসতে বারণ করে দেওয়া হয়েছে, তারা আসছেন না। প্রতিদিনের সেট ভাড়া, ফ্লোর ভাড়া নষ্ট হচ্ছে। এখানে ভেবে দেখা দরকার, এসবে লাভ বা ক্ষতিটা কার?” বলেন পরমব্রত।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির নির্দেশনা উল্লেখ করে সংগঠনটির কার্যকরী কমিটির সদস্য পরিচালক রাজ চক্রবর্তী বলেন, “আগেও মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, ‘অসুবিধা হলে আলোচনা করা উচিত। কাউকে নিষিদ্ধ, ব্ল্যাক লিস্টেড করা যাবে না।”
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র ক জ বন ধ
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা
রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।
এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”
আরো পড়ুন:
ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত
ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত
উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”
সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”
এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে।
ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।
ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।
ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।
ঢাকা/ফিরোজ