চাঁদাবাজির অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর উত্তরা পশ্চিম থানায় হামলা
Published: 4th, February 2025 GMT
চাঁদাবাজির অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় হামলা করেছেন একদল লোক। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এই ব্যক্তিরা থানায় হামলার পাশাপাশি একজন পুলিশ সদস্যকে মারধর করেছেন বলে স্থানীয় একটি সূত্র জানিয়েছে।
তবে পুলিশ এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চাঁদাবাজির অভিযোগে যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র বলে নিজেদের পরিচয় দিয়েছেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের খবরে কিছু লোক থানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিকেলে উত্তরার গাউসুল আজম অ্যাভিনিউ থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগে তিনজনকে আটক করে পুলিশ। তাঁদের বিরুদ্ধে উত্তরা পূর্ব থানায় চাঁদাবাজির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল। আর অভিযানটি চালানো হয় উত্তরা পূর্ব ও পশ্চিম থানা-পুলিশের সমন্বয়ে। তাঁদের গ্রেপ্তার করার পর উত্তরা পূর্ব থানায় নেওয়া হয়। পরে কিছু লোক উত্তরা পূর্ব থানায় গিয়ে হট্টগোল করেন। পাশাপাশি উত্তরা পশ্চিম থানায় হামলা করা হয়।
যাঁরা থানায় গিয়ে হামলা ও হট্টগোল করেন, তাঁদের শান্ত করতে পুলিশের উত্তরা অঞ্চলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠক করেছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বাঞ্ছারামপুরে হত্যার দায়ে তিনজনের মৃত্যুদণ্ড
প্রায় পাঁচ বছর আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় সাইদুর রহমান নামের এক ব্যক্তিকে হত্যার দায়ে তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক আয়েশা আক্তার এ রায় দেন।
নিহত সাইদুর উপজেলার মানিকপুর ইউনিয়নের বাহেরচর উত্তরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন উপজেলার বাহেরচর পশ্চিমপাড়া গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে রাসেল মিয়া (৩০), একই গ্রামের আবদুল খালেক মিয়ার ছেলে রিপন মিয়া (৩৩) ও চর শিবপুর গ্রামের কাজল মিয়া (৫০)। এ ছাড়া প্রত্যেক আসামিকে ৫০ হাজার টাকার করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রায় ঘোষণার সময় রিপন ও কাজল আদালতে উপস্থিত ছিলেন। অন্য আসামি রাসেল পলাতক রয়েছেন। আদালত তাঁর বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, নিহত সাইদুর ও তিন আসামি রিপন, কাজল ও রাসেল একসঙ্গে চলাফেরা করতেন। কাজল পেশায় রিকশাচালক এবং রিপন ও রাসেল ভাঙারি ব্যবসা করতেন। সাইদুর উপজেলার কড়ইকান্দি ফেরিঘাটে ফলের ব্যবসা করতেন। সাইদুরসহ বাকি তিন আসামি একসঙ্গে মাদক সেবনসহ জুয়া খেলতেন। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসের কয়েক মাস আগে জুয়া খেলার সময় সাইদুর আসামি রিপন ও কাজলের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ধার নেন। কিছুদিন পর রিপন ও কাজল ধার নেওয়া টাকা পরিশোধ করতে সাইদুরকে বলেন। সাইদুর টাকা পরিশোধের একাধিক তারিখ দেন। সাইদুর ও রাসেলের মধ্যে সুসম্পর্ক ছিল। টাকা উদ্ধারের জন্য রিপন ও কাজল সে সময় রাসেলের শরাণাপন্ন হন। টাকা পরিশোধের কথা বললে সাইদুরের সঙ্গে রাসেলের কথা–কাটাকাটি হয়। এতে কাজল ও রিপন নিহত সাইদুরের উপর ক্ষিপ্ত হন। ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বেলা আড়াইটার দিকে রিপন ও কাজল নিহত সাইদুরকে কড়ইকান্দি ফেরিঘাটে ডেকে নিয়ে টাকা পরিশোধ করতে চাপ দেন। সেখানে রাসেলও উপস্থিত হয়। টাকা পরিশোধ করতে না পারায় আসামিদের সঙ্গে নিহত সাইদুরের ঝগড়া হয়। ২৯ সেপ্টেম্বর টাকা পরিশোধ করবে বলে সাইদুর তাঁদের আশ্বস্ত করেন। কিন্তু টাকা পরিশোধ করতে না পারায় ২৯ সেপ্টেম্বর বেলা আড়াইটার দিকে উপজেলার কড়ইকান্দি ফেরিঘাটে দক্ষিণপাশের বাড়িতে বসে সাইদুরকে হত্যার পরিকল্পনা করেন রিপন, রাসেল ও কাজল। ২০১৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১০টায় সাইদুলকে কৌশলে ডেকে মেঘনপারের বাহেরচর গ্রামের মেঘনা নদীর তীরের এক জমিতে নিয়ে যান। একপর্যায়ে তারকাটা উঠানো রডের কাউয়াল দিয়ে সাইদুরকে প্রথমে ঘাড়ে এবং পরে পর্যায়ক্রমে গলায় ও ঘাড়ে আঘাত করে ও অবশেষে গলায় চেপে ধরে হত্যা করেন। পরে তাঁর লাশ মেঘনা নদীতে ফেলে দেন তাঁরা। ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টার দিকে উপজেলার বাহেরচর লঞ্চঘাটের মেঘনা নদীর পাড়ে সাইদুরের ক্ষতবিক্ষত ও গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তিনজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন বাঞ্ছারামপুর থানার তৎকালীন ওসি মোহাম্মদ সালাউদ্দিন চৌধুরী। ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এই মামলায় তিনজনের মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত।
উপজেলার মানিকপুর ইউনিয়নের বাহেরচর দক্ষিণপাড়া গ্রামের বাসিন্দা লোকমান মিয়া বাদী হয়ে রাসেলকে আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। নিহত সাইদুর সম্পর্কে লোকমানের স্ত্রীর বড় ভাই।
আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটার (পিপি) ফখর উদ্দিন আহমেদ খান বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।