‘বিনা নোটিশে’ সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) উচ্ছেদ অভিযানের প্রতিবাদে উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলার পেট্রোল পাম্পে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট চলছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলারস, ডিস্ট্রিবিউটরস, এজেন্টস অ্যান্ড পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী বিভাগীয় কমিটি ধর্মঘটের ঘোষণা দেয়।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টা থেকে ধর্মঘট শুরু হওয়ায় পেট্রোল পাম্প বন্ধ রয়েছে। অন্যান্য জেলার মতো পাবনা জেলাতেও ধর্মঘট চলছে। ফলে তেল না পেয়ে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন যানবাহন চালক ও ক্রেতারা।

সকালে বিভিন্ন তেল পাম্প ঘুরে দেখা যায়, অনেকে পেট্রোল পাম্প বন্ধ ঘোষণার বিষয়টি আগে জানতে পারেননি। যেকারণে পাম্পে তেল নিতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যান। অনেকে মোটরসাইকেল ঠেলে নিয়ে এসেও তেল পাননি। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তারা।

আরো পড়ুন:

ঢাকার প্রথম তেলের পাম্প

মোটরসাইকেল চালক আব্দুল হালিম জানান, তেল পাম্প বন্ধ তা তিনি জানেন না। এখন তেল নিতে এসে দেখেন পাম্প বন্ধ। এখন তো মহা মুশকিলে।

আরেক মোটরসাইকেল চালক সাইদুর রহমান জানান, মোটরসাইকেলের তেল শেষ হয়ে যাওয়ায় শহর থেকে ঠেলে নিয়ে এডওয়ার্ড কলেজের পাশে পাম্পে যান তেল নিতে। গিয়ে দেখেন তেল দেওয়া হচ্ছে না। তখন আবার গাড়ি ঠেলে নিয়ে বাসায় ফিরতে হয়েছে। 

লড়ি চালক মোকছেদ আলী জানান, গতরাতে গাড়ি নিয়ে শহরে এসেছেন। মালামাল নামিয়ে রাতে শহরে ছিলেন। সকালে জেনেছেন তেল পাম্প বন্ধ। এখন পাম্প না খেলা পর্যন্ত পাবনায় বসে থাকা ছাড়া আর উপায় নেই।

মেসার্স হাইওয়ে পেট্রোল সার্ভিসের ম্যানেজার সঞ্জয় কুণ্ডু জানান, মালিক পক্ষ ফোন করে সকাল ৮টা থেকে তেল পাম্প বন্ধ রাখতে বলেছেন। তাই তেল বিক্রি বন্ধ। কখন চালু হবে জানা নেই।

পাবনা পেট্রোলিয়ামের ম্যানেজার লিটন হোসেন জানান, নওগাঁতে সড়ক ও জনপদ বিভাগ উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে। সেখানে একটি পেট্রোল পাম্প নাকি ভেঙে দিয়েছে। তার প্রতিবাদে এই ধর্মঘট। তবে মালিক সমিতির সঙ্গে প্রশাসনের আলোচনার মাধ্যমে দ্রুতই সমাধান হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন। 

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলারস, ডিস্ট্রিবিউটরস, এজেন্টস অ্যান্ড পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অভিযোগ করেন, গত ৪ ফেব্রুয়ারি নওগাঁর সড়ক ও জনপথ বিভাগ পূর্ব ঘোষণা, নোটিশ বা আনুষ্ঠানিক চিঠি না দিয়ে আকস্মিক উচ্ছেদ অভিযান চালান। তাতে পেট্রোল পাম্প মালিকেরা ক্ষুব্ধ। এর প্রতিবাদে ধর্মঘটের কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। এতে একযোগে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলার পেট্রোল পাম্প বন্ধ রয়েছে।

ঢাকা/শাহীন/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঢ ক র প রথম ত ল র প ম প অবর ধ ল প ম প বন ধ

এছাড়াও পড়ুন:

দহন থেকে  জংলি

‘আমি নিয়মিত অনেক চিত্রনাট্য পাচ্ছি। নিয়মিত সেসব সিনেমা করলে প্রচুর টাকা কামাতে পারব। ফিন্যান্সিয়ালি জায়গাটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দর্শক আমাকে যেভাবে দেখতে চাচ্ছেন, তেমন গল্প পাচ্ছি না। দর্শক-প্রত্যাশার চেয়ে ভালো কিছু দিতে চাই। যখন সামগ্রিক চিন্তা করি, তখন ভাবতে হয় আমি কতটা আয় করলাম তার চেয়েও দর্শকের সামনে কীভাবে আসছি, সেটি মুখ্য। এটি একটি প্যাকেজ। মাঝে একটি-দুটি গল্প পছন্দ হয়। সেসব টিমের যে অবস্থা, বাজেট সামগ্রিকভাবে দেখতে গেলে ভালো গল্প তুলে আনা কঠিন হবে। তখন আমি না করে দিই। আমি চাইছি নিজের মতো করে কাজ করতে। জীবনে অনেক সিনেমা করতে হবে, এমন চিন্তা নেই। আমার মতো করে অল্প কিছু কাজ করে যেতে চাই।’ বলছিলেন সিয়াম আহমেদ।

গেল ঈদে মুক্তি পেয়েছে সিয়াম আহমেদ অভিনীত সিনেমা ‘জংলি’। যে সিনেমার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নায়কের আবেগ ও পরিশ্রমের দীর্ঘ গল্প। সিনেমাটি করতে একচুলও ছাড় দেননি সিয়াম। ফলাফল হিসেবে পেয়েছেন দর্শকের অবারিত ভালোবাসা। জংলি মুক্তির পর তাই গল্পটি হয়ে উঠেছে সবার। দর্শকরা হলে গিয়ে কেঁদেছেন, গল্পে বুঁদ হয়ে থেকেছেন। করেছেন সিয়াম ও তাঁর টিমের প্রশংসা। 

সিয়াম বললেন, ‘এ সিনেমায় আমি দীর্ঘ সময় দিয়েছি। সিনেমার জন্য চুলদাড়ি বড় করেছি। একটি সিনেমার জন্য আমার পাগলামি নিয়ে মা-বাবার মনে হয়তো প্রশ্ন ছিল, ছেলেটি চুল-দাড়ি বড় করে কী করছে? কী করেছি, এটি তো তাদের বোঝানো যায় না। তবে আমার আত্মবিশ্বাস ছিল, সিনেমাটি মুক্তির পরে গল্পটি তাদের টাচ করবে। কারণ, গল্পটিই এমন, এটি প্রথম যদি কাউকে টাচ করে, সেটি সন্তানের মা-বাবাদের। যে কারণে তাদের একসঙ্গে হলে নিয়ে কাছ থেকে অনুভূতি জানার চেষ্টা করেছি। এখন পর্যন্ত মা-বাবার কাছ থেকে সেরা ফিডব্যাক পেয়েছি। বাবা-মেয়ের গল্পটি দেখে তারা ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলেন। শুধু আমার বাবা-মা নন, অন্য মা-বাবাদের কাছেও গল্পটি নিজেদের হয়ে উঠেছে। তারা সিনেমাটি দেখে কেঁদেছেন। হল রিঅ্যাকশনের সেসব ভিডিও সবাই দেখেছেন। সব মিলিয়ে আমরা সফল। আমাদের জংলি সফল।’

মুক্তির পর থেকে ‘জংলি’ সিনেমার এগিয়ে যাওয়ার গ্রাফ দেখলে শুধু দর্শকের ভালোবাসায় সফল নয়, ব্যবসায়িকভাবেও সিনেমাটি যে সফল তার চিত্র বিদ্যমান। মাত্র ৮টি শো দিয়ে শুরু হওয়া সিনেমাটি ঈদের এতদিন পরও মাল্টিপ্লেক্সে ত্রিশটির মতো শো নিয়ে দাপিয়ে চলছে। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও জংলি হয়ে উঠেছে দর্শকদের সিনেমা।  

প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান টাইগার মিডিয়ার কর্ণধার জানিয়েছেন, জংলি প্রায় ছয় কোটির (গ্রস) ক্লাবে প্রবেশ করেছে। 

ঈদে মুক্তির পর থেকে ক্রমশ দর্শকপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘জংলি’। এমনকি, দেশের সিনেমাপ্রেমীদের মন জয় করে কানাডা, আমেরিকা ও ইউকে’র ৪০টি থিয়েটারে মুক্তি পেয়েছে ‘জংলি’। গত ২৫ এপ্রিল থেকে স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো-এর পরিবেশনায়, ঈদের সিনেমাগুলোর মধ্যে দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি থিয়েটারে একযোগে মুক্তি পেয়েছে এ সিনেমাটি। কানাডা ও আমেরিকার বক্স অফিসে প্রথম ৩ দিনের গ্রস ৩৫,০০০ ডলার আয় করে শুভসূচনা করেছে ‘জংলি’।

ঈদে আরও অনেক ছবি মুক্তি পেয়েছে। সেগুলোর মধ্যে জংলি বিশেষ হয়ে উঠেছে কেবল বাবা-মেয়ের গল্পের কারণে। সঙ্গে সিয়ামের নজরকাড়া অভিনয়। নৈঋতার পাখি হয়ে ওঠার দারুণ চেষ্টা। দিমিত্রি থে স্টোনহার্ট নামে এক মনীষী বলেছেন, ‘একজন বাবা বলেন না যে তিনি তোমাকে ভালোবাসেন; বরং তিনি দেখিয়ে দেন যে, তিনি তোমাকে ভালোবাসেন’ জংলি সিনেমায় সিয়াম সেটি বোঝাতে পেরেছেন। ফলে সিনেমাটি হয়ে উঠেছে সবার।

প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন– ‘পৃথিবীতে আসার সময় প্রতিটি মানুষই একটি করে আলাদিনের প্রদীপ নিয়ে আসে, কিন্তু খুব কম মানুষই সেই প্রদীপ থেকে ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগাতে পারে।’ 
সিয়াম তাঁর জীবনের সেই দৈত্যকে জাগাতে পেরেছেন। পেরেছেন বলেই হয়তো আজ তিনি সাধারণ সিয়াম থেকে নায়ক সিয়াম হয়ে উঠেছেন। সিয়ামের যাত্রাটা শুরু বেশ আগে হলেও পুরোপুরি শুরু হয় ‘দহন’ সিনেমার মাধ্যমে। রায়হান রাফী পরিচালিত এ সিনেমাটির মাধ্যমে সিয়াম নাটক থেকে পুরোপুরি চলচ্চিত্রের মানুষ হয়ে ওঠেন। সে যাত্রা এখনও চলছে। প্রথম সিনেমায় যে সিয়ামকে সবাই  দেখেছেন, জংলির সেই সিয়াম যেন আকাশ-পাতাল। তখন সিয়াম ছিলেন তরুণ, এই সিয়াম এখন বাবা। পর্দায় ও বাস্তবে দুই জায়গাতে দারুণ এক বাবা হয়ে উঠেছেন তিনি। নিজের অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়ে আগামী পরিকল্পনা কী? প্রশ্ন রাখলে নায়ক বলেন, ‘আমি নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে চাই। যারা আমার আগের কাজ দেখেছেন, তারা যেন বলেন, আগের কাজকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছি। আরেকজনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া কঠিন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ