দ্রুত ছাত্র সংসদ নির্বাচন চায় ছাত্রদল
Published: 5th, February 2025 GMT
২ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশিত সোহরাব হাসানের ‘বিএনপি ও ছাত্রদল এমন বিপরীতমুখী অবস্থানে কেন?’ শীর্ষক কলামটি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এটি পড়ে মনে হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নীতিগত অবস্থান সম্পর্কে লেখক সম্যক অবগত নন এবং তাঁর নিবন্ধের উপসংহার অনুমাননির্ভর। এ বিষয়ে ছাত্রদলের অবস্থানটি আরও সুস্পষ্ট করা জরুরি বলে মনে করছি।
ছাত্রদল দ্রুত সময়ের মধ্যে ডাকসুসহ সব ছাত্র সংসদের নির্বাচন চায়। তবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন ও প্রার্থীদের মধ্যে সুযোগের সমতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কিছু সংস্কার অত্যাবশ্যক বলে মনে করে। প্রশাসনিক ও গঠনতান্ত্রিক সংস্কার ছাড়া ছাত্র সংসদ নির্বাচন অর্থবহ বা নিরপেক্ষ হবে না। ছাত্রদল দ্রুত সময়ের মধ্যে ওই সংস্কার নিশ্চিত করে নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছে। ছাত্রদলের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে ডাকসু ও জাকসুর ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট সংস্কার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) শুরু থেকেই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য ন্যূনতম সংস্কার নিশ্চিত করে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দাবি করেছে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রেও ছাত্রদল প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ও গঠনতান্ত্রিক সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিএনপি ও ছাত্রদলের অবস্থান সমান্তরাল ও সমচিন্তাপ্রসূত। এখানে জাতীয়তাবাদী দল ও ছাত্রদলের মূল ভাবনার মধ্যে কোনো বৈপরীত্য নেই। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি সবিস্তার রাষ্ট্রসংস্কারের আকাশচুম্বী পরিকল্পনার কথা বলেছে, যা জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করার কৌশল হতে পারে। অন্যদিকে একটি পক্ষ কোনো রকম প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার নিশ্চিত না করেই ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য অযাচিত তাড়াহুড়া করছে, যার ফলে ফ্যাসিস্ট দোসরদের পুনর্বাসনের পথ উন্মুক্ত হবে।
ছাত্রদল ছাত্র সংসদ নির্বাচন চায় না—এটি একটি বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচার বলে আমরা মনে করি। ফ্যাসিবাদের পতনের সময় থেকেই ছাত্রদল নানাবিধ অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের শিকার। জুলাই–আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে যে ৯ দফা দাবি ঘোষণা করা হয়, তাতে ৭ম দফায় দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে প্রমাণিত হয়েছে, এই দফাটি ছাত্রশিবিরের নেতাদের প্রেসক্রিপশনে ৯ দফায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এই দফাটি ছিল ছাত্রদলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের হাতিয়ার। আত্মপরিচয়ের সংকট থেকে ছাত্রশিবির ক্যাম্পাসগুলোতে গোপন তৎপরতার রাজনীতি এবং অনুপ্রবেশের সংস্কৃতির বিস্তার করেছে। ছাত্রদলের তুমুল জনপ্রিয়তা, সাংগঠনিক শক্তি এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক কাঠামোর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ভীত হয়ে গোপন তৎপরতা এবং অনুপ্রবেশের মাধ্যমে রাজনীতিতে অভ্যস্ত ছাত্রশিবির ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’ নামে ‘মব কালচার’ তৈরি করে ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করে।
উল্লেখ্য, গণ–অভ্যুত্থান চলাকালীন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন যে ৭ম দফাটি তাঁরা পরিবর্তন করবেন। অর্থাৎ দলীয় ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার দাবি করা হবে না। অধিকন্তু ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে মব সৃষ্টি করা, মব সৃষ্টি করে ছাত্রদলের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার ঘটনা ঘটেছে। ছাত্রদলের আদর্শিক ধারার অনুসারী হওয়ার কারণে বৈধ শিক্ষার্থী হওয়া সত্ত্বেও ছাত্রদলের অনেক কর্মীকে আবাসিক হলে সিট দেওয়া হয়নি। ফ্যাসিবাদের আমলে ছাত্রদলকে ক্যাম্পাস থেকে নির্মম নির্যাতন করে বারংবার বিতাড়িত করা হয়েছে। এখনো ছাত্রদলকে ‘সিস্টেমেটিক মার্জিনালাইজ’ করার অপকৌশল দৃশ্যমান। আমরা মনে করি, একটি নিরপেক্ষ ও অর্থবহ ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্রদলসহ সব ছাত্রসংগঠনের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত হবে।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল একটি অর্থবহ ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য ডাকসু গঠনতন্ত্রের পূর্ণাঙ্গ সংস্কার প্রস্তাব পেশ করেছে। এই সংস্কার প্রস্তাবে দায়সারা দাবি না তুলে ছাত্রদল গঠনতন্ত্রের সব খুঁটিনাটি ত্রুটি তুলে ধরে সেগুলো সংস্কার করার বিস্তারিত প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হলো শিক্ষক, প্রশাসক, অ্যালামনাই ও শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করে বর্তমান গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সভাপতি হিসেবে উপাচার্যের একক কর্তৃত্ব কমানোর ব্যবস্থা করা এবং ওই উপদেষ্টা পর্ষদের মাধ্যমে নিয়মিত নির্বাচন আয়োজন নিশ্চিত করার দায়িত্ব অর্পণ করা।
এ ছাড়া এই প্রস্তাবের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল উপাচার্য বরাবর একটি স্মারকলিপি দিয়ে দ্রুত ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কী কী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, সেই ব্যাপারগুলো তুলে ধরেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—ফ্যাসিস্টের দোসরদের নিয়ে গঠিত বর্তমান সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সিন্ডিকেট গঠন করা; হল, অনুষদ, বিভাগ, প্রশাসনিক দপ্তরসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সব প্রশাসনিক পদ থেকে ফ্যাসিবাদের দোসর শিক্ষকদের অপসারণ করা। তাঁদের অনেকেই ২০১৯ সালের কলঙ্কিত ডাকসু নির্বাচনে ভোট ডাকাতির সঙ্গে জড়িত।
জুলাই-আগস্টে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা শিক্ষার্থীদের ওপর নারকীয় হামলা করেছে। এ ছাড়া বিগত ১৭ বছরে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা অসংখ্য শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করেছে, আবু বকরকে হত্যা করেছে, ছাত্রদল-ছাত্র অধিকার পরিষদ-ছাত্র শক্তি-ছাত্র ইউনিয়ন-ছাত্র ফেডারেশনসহ বিরোধী মতের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে। কিন্তু সন্ত্রাসীদের বিচারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। গত কয়েক বছরে হামলায় নেতৃত্বদানকারী অনেকে এখনো হলে অবস্থান করছে। তাদের বিচারের আওতায় না এনেই ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করলে তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে, গোপনে বা নামে-বেনামে ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসন ঘটবে। কেউ কেউ ইতিমধ্যে বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্মে এবং ছাত্রশিবিরে যুক্ত হয়ে ক্যাম্পাসে প্রভাব বিস্তার করছে।
বিগত ২৯ অক্টোবর, ২০২৪ তারিখে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জাকসু নির্বাচন বিষয়ে ছাত্রসংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সাধারণ সভা আয়োজন করেছিল। ওই সভার আলোচনায় জাকসু নির্বাচনের পূর্বে কিছু জরুরি সংস্কারের দাবি উঠে আসে। দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি কর্তৃক রিপোর্ট প্রদানের পর প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল।
ছাত্রদল দাবি করেছে, নির্বাচনের পূর্বে কমিটিগুলোর সুপারিশ ও ছাত্রসংগঠনগুলোর দাবি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে। বিদ্যমান আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে সিন্ডিকেট পুনর্গঠন করতে হবে। জাকসু নির্বাচনের আগে গঠনতন্ত্র সংস্কার করার জন্য ‘গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটি’ গঠন করতে হবে। নির্বাচনের পূর্বে গত ১৭ বছর যারা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছিল, শুধু সেইসব ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে আলোচনাক্রমে জাকসুর গঠনতন্ত্র যুগোপযোগী করতে হবে। সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের মদদদাতা আওয়ামীপন্থী বহু শিক্ষক এখনো বহাল তবিয়তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বরত আছেন। নির্বাচনকে ফ্যাসিবাদের প্রভাবমুক্ত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে ১৫-১৭ জুলাই সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ওপর প্রত্যক্ষ প্রশাসনিক মদদে ছাত্রলীগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যে নৃশংস হামলা করেছিল, জাকসু নির্বাচনের পূর্বে সেসব নৃশংস কর্মকাণ্ডের প্রশাসন কর্তৃক প্রশাসনিক শাস্তি ও ফৌজদারি আইনের অধীনে বিচার নিশ্চিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
ডাকসু-জাকসু নির্বাচনের ক্ষেত্রে গঠনতান্ত্রিক এবং প্রশাসনিক সংস্কারের যে প্রস্তাব ছাত্রদল দিয়েছে, তা নিরপেক্ষ ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য অত্যাবশ্যক। এই ন্যূনতম সংস্কারগুলো না করে নির্বাচন আয়োজন করলে ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসন ঘটবে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্মের জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা ক্রমহ্রাসমান। তাই গণ-অভ্যুত্থানের একক কৃতিত্বের দাবিদার এই সংগঠনটি বিদ্যমান ফ্যাসিস্ট কাঠামোর মধ্যে তাড়াহুড়া করে নির্বাচন আয়োজন করতে তৎপর। আমরা মনে করি, এটি আত্মঘাতী পদক্ষেপ হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের নিজেদের পছন্দে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পদগুলোতে নিয়োগ দিয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এখনো পর্যন্ত ক্যাম্পাসের সন্ত্রাসীদের বিচার, প্রশাসনকে ফ্যাসিস্ট দোসরমুক্ত করা বা গঠনতন্ত্র সংশোধন করার বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখাতে পারেনি। বিচার ও সংস্কারের ক্ষেত্রে প্রশাসনের নির্লিপ্ততা, ধীরগতি এবং ক্ষেত্রবিশেষে অনাগ্রহের কারণেই ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে না। কিন্তু এই দায় ছাত্রদলের ওপর চাপানো কোনোভাবেই সমীচীন নয়।
লেখকের বক্তব্য: বিএনপি ও ছাত্রদল এমন বিপরীতমুখী অবস্থানে কেন?’ শিরোনামের লেখার এক স্থানে বলা হয়েছিল: ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির যে কমিটি গঠন করেছে, তার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাত্রলীগের ব্যানারে কাজ করেছেন আওয়ামী লীগের আমলে। পরে অনুসন্ধান করে জানা গেছে, ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সভাপতি নন, সাধারণ সম্পাদক এস এম ফরহাদ আওয়ামী লীগ আমলে ছাত্রলীগের পদধারী ছিলেন। শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদ্য বিদায়ী সভাপতি সাদিক কায়েম ছাত্রলীগের কোনো কমিটিতে ছিলেন না।
সাদিক কায়েম।
নাছির উদ্দীন নাছির
সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ন শ চ ত কর গঠনতন ত র ছ ত রদল দ ছ ত রদল র ও ছ ত রদল ন র জন য পদক ষ প অবস থ ন ত কর র র জন ত ব এনপ গঠন ক স গঠন র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
জিএম কাদেরের সাংগঠনিক কার্যক্রমে আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা
জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনায় দলটির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের ও তার যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে সাম্প্রতিক বহিস্কৃত দশ নেতাকে সপদে বহালের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
সাম্প্রতিক বহিস্কারাদেশ চ্যালেঞ্জ করে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন দলের অব্যাহতিপ্রাপ্ত নেতারা। মামলার শুনানি শেষে গত বুধবার ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ মো. নুরুল ইসলামের আদালত এ আদেশ দেন।
এ বিষয়ে বাদী পক্ষের আইনজীবী আব্দুল বারী বলেন, “পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত জিএম কাদের ও দলের যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমের সাংগঠনিক সব কার্যক্রম পরিচালনায় অস্থায়ীভাবে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জিএম কাদের যে ১০ নেতাকে অব্যাহতি দিয়েছেন তাদের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পদ-পদবি ফিরিয়ে দিতে আদেশ দেওয়া হয়েছে।”
আরো পড়ুন:
‘নিষিদ্ধ করা যাচ্ছে না বলে জিএম কাদেরবিহীন জাপা গঠনের চেষ্টা চলছে’
এই সরকারের সংস্কার কেউ গ্রহণ করছে না: জিএম কাদের
আদালতের আদেশে এখন থেকে জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু, দপ্তর সম্পাদক-২ এম এ রাজ্জাক খান, প্রেসিডিয়াম সদস্য সোলায়মান আলম শেঠ (চট্টগ্রাম), নাজমা আকতার (ফেনী), মো. জহিরুল ইসলাম জহির (টাঙ্গাইল), মোস্তফা আল মাহমুদ (জামালপুর), জসীম উদ্দিন (নেত্রকোনা) ও আরিফুর রহমান খান (গাজীপুর) সপদে বহাল থেকে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারবেন বলেও জানান তিনি।
মামলার আদেশে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, “এটি একটি ঐতিহাসিক রায়। এ রায় প্রমাণ করে দিয়েছে, আইন ও ন্যায়বিচার এখনো জীবিত। সত্যকে নিশ্চিহ্ন করা যায় না এবং দলীয় গঠনতন্ত্রকে পায়ের নিচে ফেলা যায় না। স্বৈরতন্ত্র, দলীয় কর্তৃত্ববাদ এবং অবৈধ ক্ষমতা দখলের রাজনীতির বিরুদ্ধে এটি একটি কঠোর বার্তা।”
তিনি বলেন, “জাতীয় পার্টি কখনোই একক ব্যক্তির মালিকানাধীন সংগঠন নয়। এটি দেশের লাখো মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম।আজ আদালতের রায়ে সেই প্ল্যাটফর্ম আবারও গণতন্ত্রের পথে ফিরেছে।”
“আমরা মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করি এবং দেশবাসী ও জাতীয় পার্টির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।”
এ রায়ে সত্যের জয় ও অসত্য-অহঙ্কারের পরাজয় হয়েছে মন্তব্য করে হাওলাদার বলেন, “এখন পার্টির সকল স্তরের নেতাকর্মীদের নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে পল্লীবন্ধু এরশাদের স্বপ্নের জাতীয় পার্টি গড়ে তুলব। আমাদের মধ্যে আর কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। আমরা সবাই প্রয়াত এরশাদের সৈনিক হিসেবে জাতীয় পার্টির জন্য নিবেদিত হয়ে একটি সাম্য প্রগতি ও মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করব।”
মামলার আদেশের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির বর্তমান মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, “আমরা আদালতের আদেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আগামী ৩ আগস্ট পর্যন্ত আদালত পার্টির চেয়ারম্যান ও যুগ্ম দপ্তর সম্পাদকের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন, আশা করি তারা সেটা মান্য করবেন। আমাদের বিশ্বাস, আমরা ন্যায়বিচার পাব। আমরা এ বিষয়টি আইনিভাবে মোকাবিলা করব।”
অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা পাওয়া দলটির যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম বলেন, “আমাকেও তারা আসামি করেছেন। আমি তো পার্টির চেয়ারম্যানের নির্দেশনা অনুযায়ী সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত প্রস্তুত করে পাঠিয়ে থাকি। মাত্র কয়েকদিনের জন্য অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে আশা করি আমরা আবারো সাংগঠনিক কার্যক্রমে ফিরতে পারব।”
কর্তৃত্ব ও নেতৃত্ব নিয়ে জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুসহ সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয় দলের বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের। একপর্যায়ে তারা দলের চেয়ারম্যানের নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জ করে গত ২৮ জুন দলের জাতীয় কাউন্সিলে জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে পৃথক প্যানেল দেওয়ার চেষ্টা করেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে দলীয় কাউন্সিল বাতিল করে দেন জিএম কাদের। এতে আনিস, হাওলাদারের সঙ্গে দ্বন্দ্ব বাড়ে জিএম কাদেরের। জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে ঘোষিত সময়ে কাউন্সিল ডাকার আহ্বান জানিয়ে একাধিক বিবৃতি দেন নেতারা। পাল্টা বিবৃতি ও জেলা নেতাদের ডেকে মতামত নিয়ে এমনকি তড়িঘড়ি করে প্রেসিডিয়ামের সভা ডেকে জিএম কাদের দল থেকে অব্যাহতি দেন এসব নেতাদের। দল থেকে অব্যাহতির ঘটনা মেনে নেননি সিনিয়র নেতারা। বরং তারা জিএম কাদেরের এমন সিদ্ধান্তকে অবৈধ আখ্যায়িত করে আলাদা দলীয় কার্যাক্রম চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এর মধ্যে দল ছেড়ে যাওয়া সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে একমঞ্চে হাজিরও করেন তারা। পাশাপাশি জিএম কাদেরের বহিস্কারাদেশ চ্যালেঞ্জ এবং তার দলীয় কার্যক্রম পরিচালনায় নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মামলা করেন। অবশেষে সেই মামলায় আদালত অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিয়ে নেতাদের সপদে ফিরিয়ে নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন।
এর আগে ২৮ জুন জিএম কাদের দলের গঠনতন্ত্রের ক্ষমতাবলে প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব পদ থেকে জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নুসহ ১০ নেতাকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং জাতীয় পার্টির নিজস্ব ওয়েবসাইট থেকেও তাদের নাম মুছে ফেলা হয়।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ