প্রথম আলোয় সংবাদপ্রকাশ, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফি কমল ৫০০ টাকা
Published: 5th, February 2025 GMT
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ও ক্রেডিট ফি কমানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার সৈয়দ ছলিম মো. আবদুল কাদির প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘সেমিস্টার ভর্তির ক্ষেত্রে বিভাগীয় কম্পিউটার খাতের ফি পূর্বের প্রশাসন এক হাজার টাকা নির্ধারণ করেছিল। বর্তমান প্রশাসন তা থেকে পাঁচ শ টাকা হ্রাস করেছে।’
এর আগে গত ২৪ জানুয়ারি ‘শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে এক খাতেই ফি বেড়েছে ৭০০ টাকা, ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা’ শিরোনামে প্রথম আলো অনলাইনে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর এক সপ্তাহ পর ২ ফেব্রুয়ারি কম্পিউটার ফি খাতে ৫০০ টাকা কমাল কর্তৃপক্ষ। তবে সেমিস্টার ভর্তিতে কম্পিউটার খাতে ফি কমলেও অন্য খাতগুলোয় ফি অপরিবর্তিত রয়েছে বলে একাডেমিক কাউন্সিল সূত্রে জানা গেছে।
একই সূত্র থেকে জানা যায়, ২০২১-২২ থেকে শিক্ষাবর্ষে আগে সেমিস্টার ভর্তি ফি ছিল ৩ হাজর ৩৪৫ টাকা। কম্পিউটার ফি ৫০০ টাকা কমাতে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত বর্তমানে সেমিস্টার ভর্তি ফি দিতে হবে ২ হাজার ৮৪৫ টাকা।’
এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে শাবিপ্রবির জনসংযোগ দপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘শাবিপ্রবি সেমিস্টার ও ক্রেডিট ফি কমানো হয়েছে; এ ক্ষেত্রে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা চলমান সেমিস্টার থেকে কার্যকর হবে। গত রোববার একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ল্যাব ফি কমানো হয়েছে প্রতি ক্রেডিটে ১৫ টাকা। আগের সেমিস্টারে প্রতি ক্রেডিট ১৭৫ টাকা ছিল, বর্তমানে ১৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।’ তবে ওই শিক্ষাবর্ষের তত্ত্বীয় ফি অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
অন্যদিকে, ২০২২-২৩ এবং ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের (স্নাতক ও স্নাতকোত্তর) তত্ত্বীয় প্রতি ক্রেডিট ২০ টাকা কমানো হয়েছে। আগে তত্ত্বীয় কোর্সের প্রতি ক্রেডিট ফি ছিল ১৪০ টাকা; বর্তমানে তা ১২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ল্যাব প্রতি ক্রেডিটে ৪০ টাকা কমানো হয়েছে। আগে ল্যাবপ্রতি ক্রেডিট ২০০ টাকা ছিল; বর্তমানের ১৬০ টাকা করা হয়েছে।’
একই সঙ্গে ২০২১-২২, ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের সেমিস্টার ফি থেকে কম্পিউটার খাতে ৫০০ টাকা কমানো হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ‘বর্তমান নির্ধারিত ফি অনুসারে ২০২২-২৩ এবং ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের একজন শিক্ষার্থী তত্ত্বীয় সর্বোচ্চ ৩০ ক্রেডিট রেজিস্ট্রেশন করলে (সেমিস্টার ও ক্রেডিট ফির ক্ষেত্রে) আগের ফি থেকে এক হাজার এক শ টাকা কম প্রদান করতে হবে। এতে আগে চার হাজার দুই শ টাকার বদলে বর্তমানে তিন হাজার ছয় শ টাকা দিতে হবে।’ এ ছাড়া ইতোমধ্যে যে সব শিক্ষার্থী ফি জমা দিয়েছেন, রশিদ জমা সাপেক্ষে তাঁদের জমাকৃত অতিরিক্ত ফি পরবর্তী সেমিস্টারে সমন্বয় করা হবে বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।
আরও পড়ুনশাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা, প্রতি আসনে প্রার্থী ৫১ শিক্ষার্থী, পরীক্ষা ৫ কেন্দ্রে০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ৫০০ ট ক
এছাড়াও পড়ুন:
গবাদিপশু থেকে মানুষের শরীরে ‘তড়কা’ রোগ, প্রতিরোধে যা করবেন
অ্যানথ্রাক্স রোগটি‘তড়কা’ নামেই বহুল পরিচিত। গ্রীক শব্দ ‘অ্যানথ্রাকিস’ বা কয়লা থেকে উদ্ভূত এই নামটি হয়তো অনেকেই জানেন না। তবে এর ভয়াবহতা সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষ ঠিকই অবগত।
অ্যানথ্রাক্স নামের ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগটি শুধু বন্য বা গৃহপালিত পশুকে নয়, বরং মানুষের জীবনকেও ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে বারবার।
আরো পড়ুন:
১৬ দিন ধরে অচলাবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ বাকৃবি ছাত্রশিবিরের
দ্রুত অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চালুর দাবি বাকৃবি শিক্ষার্থীদের
সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণা বলছে, দেশের অ্যানথ্রাক্স পরিস্থিতি এখনো উদ্বেগজনক। সাধারণত গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়াকে আক্রান্ত করে এই ব্যাকটেরিয়া। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এই রোগে মারা গেছে অন্তত ১ হাজার গবাদিপশু। আর আক্রান্ত হয়েছে হাজার হাজার মানুষ।
সম্প্রতি রংপুরের পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্তের রিপোর্ট করেছেন অন্তত অর্ধশতাধিক মানুষ। এরইমধ্যে এ রোগের উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন দুইজন, যা নিশ্চিত করেছেন রংপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।
গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ১ হাজার ৫০০টিরও বেশি মানব অ্যানথ্রাক্স কেস রেকর্ড করা হয়েছে, যার সবগুলোই ছিল ত্বকের অ্যানথ্রাক্স। তবে ১৯৮০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ৬ হাজার ৩৫৪টি পশুর অ্যানথ্রাক্স কেস রেকর্ড করা হয়েছে, যার মধ্যে ৯৯৮টি পশুর মৃত্যু হয়েছে। সে হিসাবে মোট মৃত্যুর হার দাঁড়িয়েছে ১৫.৭ শতাংশে।
গবেষণার তথ্য মতে, বাংলাদেশে অ্যানথ্রাক্সের প্রথম প্রাদুর্ভাব দেখা যায় ১৯৮০ সালে। এরপর থেকে এটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বারবার ফিরে এসেছে। বিশেষ করে পাবনা, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও মেহেরপুর জেলাকে ‘অ্যানথ্রাক্স বেল্ট’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে এ রোগের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি।
বিশেষজ্ঞরা ময়মনসিংহ, পাবনা ও কুষ্টিয়া জেলাকে যথাক্রমে উচ্চ, মাঝারি ও নিম্ন-ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। গ্রীষ্ম ও বর্ষা মৌসুমে, বিশেষত এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়।
অ্যানথ্রাক্সের মূল কারণ হলো- ব্যাসিলাস অ্যানথ্রাসিস নামের একটি ব্যাকটেরিয়া, যা সাধারণত মৃত পশুর দেহে পাওয়া যায়। এটি এতই শক্তিশালী যে, জৈবিক অস্ত্র হিসেবেও এর ব্যবহারের খবর পাওয়া গেছে। এই ব্যাকটেরিয়া বাতাসে উড়ন্ত স্পোর তৈরি করতে পারে, যা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে।
অ্যানথ্রাক্স নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের স্নাতক রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট অর্ণব সাহা।
তিনি বলেন, “মানুষ তিনভাবে এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে— ত্বকের মাধ্যমে, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে এবং খাদ্যগ্রহণের মাধ্যমে। এর মধ্যে ত্বকের অ্যানথ্রাক্স সবচেয়ে বেশি দেখা যায় এবং এর সুপ্তিকাল সাধারণত দুই থেকে ছয়দিন।”
অন্যদিকে, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে সংক্রমিত অ্যানথ্রাক্সের সুপ্তিকাল গড়ে চারদিন, যা ১০-১১ দিন পর্যন্তও হতে পারে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, মোট আক্রান্তের ৯১.৩ শতাংশ মানুষই ত্বকের অ্যানথ্রাক্সে ভুগেছে, যেখানে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল এবং উভয় ধরনের সংক্রমণ ছিল যথাক্রমে ৬.৫২ শতাংশ ও ২.৬৬ শতাংশ।
ত্বকীয় অ্যানথ্রাক্সের ক্ষেত্রে চামড়ায় প্রথমে একটি চুলকানিযুক্ত লাল ফোঁড়া দেখা যায়, যা পরবর্তীতে কালো কেন্দ্রযুক্ত ব্যথাহীন ঘা হিসেবে প্রকাশ পায়। উলের কারখানায় কাজ করা শ্রমিকদের মধ্যে এই রোগ বেশি দেখা যাওয়ায় এটি ‘উল-সর্টার্স ডিজিজ’ নামেও পরিচিত।
সবচেয়ে মারাত্মক ধরণ হচ্ছে শ্বাস-প্রশ্বাসের অ্যানথ্রাক্স। ব্যাকটেরিয়ার স্পোর শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করলে ঠান্ডা, জ্বর ও কাশির মতো উপসর্গ দেখা যায়, যা দ্রুত শ্বাসকষ্ট, শক এবং উচ্চ মৃত্যুহারের দিকে নিয়ে যায়।
অর্ণব বলেন, “প্রাণীদের মধ্যে অ্যানথ্রাক্স হলে হঠাৎ মৃত্যু সবচেয়ে সাধারণ উপসর্গ। মৃত পশুর নাক, মুখ ও মলদ্বার থেকে কালচে, জমাট না বাঁধা রক্ত বের হয় এবং পেট ফুলে যায়।”
রোগটির প্রতিকার ও প্রতিরোধের বিষয়ে বাকৃবি মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. গোলজার হোসেন বলেন, “বাংলাদেশে অ্যানথ্রাক্সের সংক্রমণ ছড়ানোর অন্যতম কারণ হলো জনসচেতনতার অভাব। অসুস্থ পশু জবাই করে তার মাংস কম দামে বিক্রি করার একটি প্রবণতা আমাদের সমাজে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান। অনেক বিক্রেতা ও সাধারণ মানুষ জানেনই না যে, এই মাংস থেকে মানুষের শরীরেও রোগটি ছড়িয়ে পড়তে পারে।”
“পাশাপাশি, মৃত পশুর দেহ সঠিক উপায়ে অপসারণ না করে খোলা মাঠে, নদী, খাল বা বন্যার পানিতে ফেলে দেওয়া হয়। এর ফলে এই জীবাণু পরিবেশ ও পশুপালনের জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে, যা নতুন করে সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি করে,” যুক্ত করেন ড. গোলজার।
তিনি বলেন, “অ্যানথ্রাক্সের বিস্তার রোধে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণ এই রোগের বিস্তার রোধে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। তার মধ্যে অন্যতম- জনসচেতনতা বৃদ্ধি। পশু থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমণ প্রতিরোধে জনশিক্ষা ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাড়াতে হবে।”
তিনি আরো বলেন, “অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো গবাদি পশুর মধ্যে নিয়মিত এবং ব্যাপক হারে টিকাদান নিশ্চিত করা। সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত টিকাদান কর্মসূচিকে আরো শক্তিশালী করতে হবে, বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে। আমদানি করা ও জবাই করা পশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও কোয়ারেন্টাইন করা বাধ্যতামূলক করতে হবে।”
ড. গোলজার বলেন, “এছাড়া মৃত পশুর দেহ ও দূষিত পদার্থ সঠিকভাবে মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে হবে এবং অনুমোদিত মাংস বিক্রেতাদের মাধ্যমে এবং পশু চিকিৎসকের পরীক্ষা করা মাংস বিক্রি নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।”
ঢাকা/মেহেদী