তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হলে ভারত দায়ী থাকবে।

নাহিদ বলেন, ‘ভারত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে এবং এর জন্য তাদের কাছে কিছু ব্যাখ্যা আছে। আমরা ভারতকে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দিতে বলেছি এবং এটি একটি কূটনৈতিক বিষয়। কিন্তু শেখ হাসিনা যদি সেখান থেকে রাজনীতি করার চেষ্টা করেন, ভারতে রাজনৈতিক সভা করেন, তাহলে এর জন্য ভারত সরকার দায়ী থাকবে।’

আজ বুধবার বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান মিলনায়তনে ‘সংবাদপত্রে জুলাই অভ্যুত্থান’ শীর্ষক একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা এ কথা বলেন।

তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অনন্য ঘটনা। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস সঠিকভাবে তুলে ধরার জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘সংবাদপত্রে জুলাই অভ্যুত্থান’ গ্রন্থটি ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের একটি প্রামাণ্য দলিল। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংবাদপত্রের ভূমিকা অবিস্মরণীয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে কোনো কোনো পত্রিকা অভ্যুত্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে, যা দুঃখজনক।

উপদেষ্টা প্রকাশক ও প্রকাশনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বইটিতে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে গণমাধ্যমের ভূমিকা মূল্যায়ন করা হয়েছে। 

নাহিদ বলেন, ‘আমরা, ছাত্র-জনতা, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে যেকোনো সম্ভাব্য নৈরাজ্যের জবাব দিতে রাজপথে থাকব।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রতিরোধ অব্যাহত রাখব। জনগণকে উদ্বিগ্ন করার এবং আমাদের ঐক্যে বিভেদ তৈরি করার চেষ্টা চলছে। আমরা সর্বাবস্থায় প্রস্তুত রয়েছি।’
 
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় বিতর্কিত ভূমিকা পালনকারী সংবাদপত্রের সম্পাদকদের তাদের ভূমিকা স্পষ্ট করার আহ্বান জানিয়ে নাহিদ বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংবাদপত্রগুলো ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয় ভূমিকাই পালন করেছে।

গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংবাদপত্রগুলোক নির্ধারিত সংবাদ প্রকাশ করতে বাধ্য করা হয়েছিল কিন্তু অনেক সংবাদপত্র ইচ্ছাকৃতভাবে ক্ষমতাসীন সরকারকে সমর্থন করার জন্য বয়ান তৈরি করেছিল।

নাহিদ বলেন, ‘যাদেরকে শাসকের ন্যারেটিভ প্রকাশ করতে বাধ্য করা হয়েছিল, তাদের জনগণের কাছে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করা উচিত, অন্যথায় তারা বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে।’

উপদেষ্টা দেশের কল্যাণের জন্য জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।

প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে কেউ তুলে ধরেছেন ছবির মাধ্যমে, আবার কেউ তুলে ধরেছেন গ্রাফিতি ও ভিডিওর মাধ্যমে। এছাড়া, জাতীয় দৈনিকগুলোও ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানকে তুলে ধরেছেন স্বমহিমায়। 

২৫টি জাতীয় দৈনিক থেকে ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান নিয়ে সংকলিত ‘সংবাদপত্রে জুলাই অভ্যুত্থান’ গ্রন্থের মাধ্যমে মুক্তিকামী মানুষের লড়াই সংগ্রামের অবদান অম্লান হয়ে থাকবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন- বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ, পিআইবি’র মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, আদর্শ প্রকাশনীর প্রকাশক মাহবুবুর রহমান, বইটির লেখক ও প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব আহমেদ ফয়েজ, লেখক ও সাংবাদিক সালাহ উদ্দিন শুভ্র প্রমুখ।

সূত্র: বাসস

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ল ই গণঅভ য ত থ ন ন হ দ বল ন স ব দপত র উপদ ষ ট র জন ত র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় ওই চারজনের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বহিষ্কৃত সদস্যরা হলেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও তরফদার আবদুল মুকিত। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আদালতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমিতির নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নন। বৃহস্পতিবার ওই চার সদস্যকে বহিষ্কারের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানানো হবে।’

সমিতি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ কবির হোসেনের (জনি) কাছে ৩৫ লাখ টাকায় শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় জমি বিক্রি করেন ইমরান হাসান। জমি রেজিস্ট্রির আগে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সৈয়দ কবির হোসেন ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে তিনি আরও ১৭ লাখ টাকা দেন। বাকি ৮ লাখ টাকা চাইলে হুমকি দিতে থাকেন কবির হোসেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমরান হাসান আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।

সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কবির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

এ বিষয়ে আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে যে বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে অভিযুক্ত আমি নই। তারপরও আইনজীবী সমিতি আমার অভিভাবক; তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’

অন্যদিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন পাওনা টাকা আদায়ে আবদুর রাজ্জাককে মামলার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আটটি চেকের মামলা পরিচালনা করেন। এসব মামলার রায় ও আপিল বাদীর অনুকূলে যাওয়ার পর আটটি চেকের ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন আবদুর রাজ্জাক। এ টাকা জয়েন্ট ট্রেডিং কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। চলতি বছরের ৪ জুন তিনি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নগদায়ন করা যায়নি। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওহাব গত ২৮ জুলাই আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যশোর আইনজীবী সমিতি‌ বরাবর অভিযোগ করেন।

এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুর রাজ্জাককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় যশোর আইনজীবী সমিতি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবদুর রাজ্জাককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মামলা করতে টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে মামলা না করায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনজীবী তরফদার আবদুল মুকিতের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ