শেখ হাসিনার যেকোনো রাজনৈতিক পদক্ষেপের জন্য ভারত দায়ী থাকবে: নাহিদ
Published: 5th, February 2025 GMT
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হলে ভারত দায়ী থাকবে।
নাহিদ বলেন, ‘ভারত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে এবং এর জন্য তাদের কাছে কিছু ব্যাখ্যা আছে। আমরা ভারতকে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দিতে বলেছি এবং এটি একটি কূটনৈতিক বিষয়। কিন্তু শেখ হাসিনা যদি সেখান থেকে রাজনীতি করার চেষ্টা করেন, ভারতে রাজনৈতিক সভা করেন, তাহলে এর জন্য ভারত সরকার দায়ী থাকবে।’
আজ বুধবার বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান মিলনায়তনে ‘সংবাদপত্রে জুলাই অভ্যুত্থান’ শীর্ষক একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অনন্য ঘটনা। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস সঠিকভাবে তুলে ধরার জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘সংবাদপত্রে জুলাই অভ্যুত্থান’ গ্রন্থটি ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক অভ্যুত্থানের একটি প্রামাণ্য দলিল। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংবাদপত্রের ভূমিকা অবিস্মরণীয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে কোনো কোনো পত্রিকা অভ্যুত্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে, যা দুঃখজনক।
উপদেষ্টা প্রকাশক ও প্রকাশনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বইটিতে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে গণমাধ্যমের ভূমিকা মূল্যায়ন করা হয়েছে।
নাহিদ বলেন, ‘আমরা, ছাত্র-জনতা, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে যেকোনো সম্ভাব্য নৈরাজ্যের জবাব দিতে রাজপথে থাকব।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রতিরোধ অব্যাহত রাখব। জনগণকে উদ্বিগ্ন করার এবং আমাদের ঐক্যে বিভেদ তৈরি করার চেষ্টা চলছে। আমরা সর্বাবস্থায় প্রস্তুত রয়েছি।’
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় বিতর্কিত ভূমিকা পালনকারী সংবাদপত্রের সম্পাদকদের তাদের ভূমিকা স্পষ্ট করার আহ্বান জানিয়ে নাহিদ বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংবাদপত্রগুলো ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয় ভূমিকাই পালন করেছে।
গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংবাদপত্রগুলোক নির্ধারিত সংবাদ প্রকাশ করতে বাধ্য করা হয়েছিল কিন্তু অনেক সংবাদপত্র ইচ্ছাকৃতভাবে ক্ষমতাসীন সরকারকে সমর্থন করার জন্য বয়ান তৈরি করেছিল।
নাহিদ বলেন, ‘যাদেরকে শাসকের ন্যারেটিভ প্রকাশ করতে বাধ্য করা হয়েছিল, তাদের জনগণের কাছে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করা উচিত, অন্যথায় তারা বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে।’
উপদেষ্টা দেশের কল্যাণের জন্য জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।
প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে কেউ তুলে ধরেছেন ছবির মাধ্যমে, আবার কেউ তুলে ধরেছেন গ্রাফিতি ও ভিডিওর মাধ্যমে। এছাড়া, জাতীয় দৈনিকগুলোও ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানকে তুলে ধরেছেন স্বমহিমায়।
২৫টি জাতীয় দৈনিক থেকে ২৪-এর গণঅভ্যুত্থান নিয়ে সংকলিত ‘সংবাদপত্রে জুলাই অভ্যুত্থান’ গ্রন্থের মাধ্যমে মুক্তিকামী মানুষের লড়াই সংগ্রামের অবদান অম্লান হয়ে থাকবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন- বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ, পিআইবি’র মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, আদর্শ প্রকাশনীর প্রকাশক মাহবুবুর রহমান, বইটির লেখক ও প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব আহমেদ ফয়েজ, লেখক ও সাংবাদিক সালাহ উদ্দিন শুভ্র প্রমুখ।
সূত্র: বাসস
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ ল ই গণঅভ য ত থ ন ন হ দ বল ন স ব দপত র উপদ ষ ট র জন ত র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে
বাংলাদেশে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এক বছরে ১৯ দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে দিয়ে দেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশের প্রতি আন্তর্জাতিক আস্থার প্রতিফলন দেখা গেছে।
বিশ্বব্যাংকের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সম্প্রতি যেসব দেশে গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে, সেসব দেশে পরবর্তী এক বছরে এফডিআই উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় ২০২২ সালের পর এফডিআই কমেছে ১৯.৪৯ শতাংশ, চিলিতে ২০১৯ সালের পর কমেছে ১৫.৬৮ শতাংশ, সুদানে ২০২১ সালের পর ২৭.৬০ শতাংশ, ইউক্রেনে ২০১৪ সালের পর ৮১.২১ শতাংশ, মিশরে ২০১১ সালের পর ১০৭.৫৫ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়ায় ১৯৯৮ সালের পর ১৫১.৪৯ শতাংশ কমেছে। এই ধারাবাহিক হ্রাসের মধ্যে বাংলাদেশে এফডিআইর ১৯.১৩ শতাংশ বৃদ্ধির চিত্র বিশেষভাবে নজরকাড়া।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেছেন, “বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গুণ হলো—শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অর্থনীতিকে পুনরায় চালু করার অদ্ভুত ক্ষমতা। এই পরিসংখ্যান তার দারুন একটা প্রতিফলন। সাধারণত, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যায়, কিন্তু আমরা উল্টা দেখছি। সঠিক নীতি নির্ধারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার আন্তরিকতা এবং প্রাইভেট সেক্টরের অদম্য স্পৃহা কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। আমরা সব সময় বিনিয়োগকারীদের সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। সব সমস্যার সমাধান হয়নি, তবে সদিচ্ছার কোনো ত্রুটি ছিল না। শিগগিই সারা বছরের একটি আমলনামা (রিপোর্ট কার্ড) প্রকাশ করা হবে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৪৮৮ দশমিক ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭০ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৩ সালে বিনিয়োগের পরিমাণ হয় ৯২৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার, তবে ২০২৪ সালে কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৬৭৬ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯২ দশমিক ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এই ধারা বজায় থাকা অত্যন্ত ইতিবাচক। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, দীর্ঘমেয়াদি নীতি সহায়তা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারবে বলে মনে করছেন তারা।
ঢাকা/নাজমুল/রফিক