সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের ওপর বিএনপি নেতাকর্মীর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত তিন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বর্ধিত ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে। 

আহতদের মধ্যে এটিএন নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জাবেদ আখতারের অবস্থা গুরুতর। তাঁকে বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

তিন দশকের বেশি সময় আগে পাবনার ঈশ্বরদীতে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে গুলি ও বোমা হামলার অভিযোগে করা মামলার রায় গতকাল দুপুরে ঘোষণা করা হয়। এ উপলক্ষে বিএনপি নেতাকর্মীরা আদালত ও আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত ছিলেন। রায়ের পর হাইকোর্টের বর্ধিত ভবনের সামনে গণমাধ্যমকর্মীরা মামলার সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের বক্তব্য নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন।

এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিবসহ দলটির পাবনা জেলার নেতাকর্মীরাও সেখানে উপস্থিত হন। এক পর্যায়ে এক যুবক সংবাদ ব্রিফিংয়ের জন্য সংরক্ষিত ডায়াসের সামনে চলে আসেন। এ নিয়ে ওই যুবক সাংবাদিকদের সঙ্গে তর্কে জড়ান। মুহূর্তের মধ্যে বিএনপির নেতাকর্মীরা সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন এবং কিল-ঘুসি ও লাথি মারেন। এতে কয়েকজন আহত হন।

বিএনপির আইন সম্পাদক কায়সার কামাল ও চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস পরিস্থিতি শান্ত করেন। কায়সার কামাল মারধরের শিকার জাবেদ আখতারকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির অ্যাম্বুলেন্সে কাকরাইলের ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে পাঠান। এরপর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকরা ব্রিফিং বর্জন করে হাইকোর্ট বিভাগের বর্ধিত ভবনের সামনে ব্রিফিংস্থলে বসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি

সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ল রিপোর্টার্স ফোরামের (এলআরএফ) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাসান জাবেদ ও সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মিশন।  বিবৃতিতে তারা বলেন, সাংবাদিকদের ওপর হামলা কোনোভাবে কাম্য নয়। জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।

জাবেদ আখতারের বিষয়ে বলা হয়, তাঁকে রক্ষা করতে গিয়ে সংগঠনের সদস্য জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আজিজুল ইসলাম পান্নু, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক হাসান জাবেদসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। হামলাকারীরা টেলিভিশনের মাইক্রোফোনও ভাঙচুর করেছে। আহত তিন সাংবাদিক এলআরএফের সদস্য। তাদের মধ্যে জাবেদ আখতার সংগঠনের প্রশিক্ষণ ও কল্যাণ সম্পাদক। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ব দ আখত র ন ত কর ম র র স মন ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ