ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধে চীনের লাভ-ক্ষতি
Published: 6th, February 2025 GMT
দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতেই আগ্রাসী ডোনাল্ড ট্রাম্প। মেক্সিকো ও কানাডা থেকে আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ, কানাডিয়ান জ্বালানির ওপর ১০ শতাংশ এবং চীনা পণ্যের ওপর নতুন শুল্কসহ তাঁর ব্যাপক শুল্ক বৃদ্ধি আক্রমণাত্মক অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদের দিকে মার্কিন পরিবর্তনকে জোরালোভাবে তুলে ধরে।
তিনি ইইউর বিরুদ্ধে আসন্ন শুল্ক আরোপের ইঙ্গিত দিয়েছেন, যা বিশ্ববাজারে আরও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধে চীন উপকৃত হতে পারে। গত সপ্তাহে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো ফিরিয়ে দেওয়া অভিবাসীদের প্রতি আচরণের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। তার পরই ট্রাম্প কলম্বিয়ার রপ্তানির ওপর শুল্ক আরোপ করেন। ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন এবং সরকারি কর্মকর্তাদের যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ সীমিত করেন। ক্ষমতাধর রাষ্ট্র হিসেবে এই পদক্ষেপ ওয়াশিংটনের দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশাল পরিবর্তন, যা আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। হোয়াইট হাউস যদি একে প্রয়োজনীয় দৃঢ় অবস্থান হিসেবে দেখে, এর প্রভাব দেখার অপেক্ষায় থাকতে হবে।
ঐতিহাসিকভাবে ওয়াশিংটনের সঙ্গে যুক্ত কোনো দেশ যদি আকস্মিক অর্থনৈতিক শাস্তির মুখোমুখি হয়, তাহলে অন্যরা তাদের জোটে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করতে পারে। আর বেইজিং লাতিন আমেরিকায় তার ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ব্যস্ততার সঙ্গে বিষয়গুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। কয়েক বছর ধরে চীন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নেতৃত্বের বিকল্প হিসেবে নিজেদের অবস্থান তৈরি করেছে। এর বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগের দুয়ার খুলেছে, যা পশ্চিমা ঋণ ও সাহায্যের চেয়ে কম রাজনৈতিক শর্ত দিয়ে অবকাঠামোগত তহবিল সরবরাহ করে।
শুধু লাতিন আমেরিকাতেই বেইজিংয়ের বাণিজ্য ও আর্থিক সম্পর্ক যথেষ্ট প্রসারিত হয়েছে। এখন ট্রাম্প শুল্ক হুমকি ও অর্থনৈতিক চাপ পুনরায় চালু করছেন। এতে একটি স্থির বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে চীনের ভূমিকা আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। এই পরিবর্তন সম্পূর্ণরূপে অর্থনৈতিক নয়। ওয়াশিংটন দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক চুক্তির ধারাবাহিকতা ও আনুগত্যের জন্য তার খ্যাতির ওপর নির্ভর করে আসছে।
এমনকি ট্রাম্প যখন তাঁর প্রথম মেয়াদে বিশ্ববাণিজ্য ব্যাহত করেছিলেন, তখনও ডব্লিউটিওর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো স্থিতিশীলতার কথা বলেছিল। এখন একতরফা অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ওপর নতুন করে মনোযোগ দিয়ে কিছু দেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যের ওপর তাদের নির্ভরতার পুনর্মূল্যায়ন করতে পারে।
ডেনমার্ক ও পানামা নিয়ে ট্রাম্পের আগ্রহ দেখা দিয়েছে। এতে বিষয়টি আরও অন্তর্দৃষ্টির খোরাক দেয়। ট্রাম্পের গ্রিনল্যান্ড কেনার ইচ্ছা ও হুমকি এবং পানামা খাল নিয়ে উদ্বেগ থেকে কীভাবে অর্থনৈতিক সুবিধা ক্রমবর্ধমানভাবে ভূরাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, তা স্পষ্ট করে। বেইজিং ইতোমধ্যে উভয় দেশে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব গড়ে তুলেছে। যদি ওয়াশিংটনের সঙ্গে দেশ দুটির উত্তেজনা বাড়তে থাকে, তবে চীন লাভবান হতে পারে।
মেক্সিকো ও কানাডা দেশ দুটি আমেরিকার সবচেয়ে কাছের ব্যবসায়িক অংশীদার। ট্রাম্প ২৫ শতাংশ শুল্ক অনুসরণ করছেন, যার প্রভাব উত্তর আমেরিকার বাইরেও প্রসারিত হবে। এটি এনএফটিএ ও এর উত্তরসূরি ইউএসএমসিএর অধীনে কয়েক দশকের অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তিকরণে বাধা সৃষ্টি করবে। চীন সক্রিয়ভাবে বিশ্বব্যাপী তার বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিস্তৃতি করছে, যা দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা অনুসন্ধান এবং সরকারগুলোর জন্য আরও আকর্ষণীয় অংশীদার হয়ে উঠতে পারে।
নিশ্চিতভাবে বলা যায়, এর কোনোটিই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনের দিকে সহজে স্থানান্তরের নিশ্চয়তা দেয় না। অনেক দেশ বেইজিংয়ের বিনিয়োগ কৌশল সম্পর্কে সতর্ক রয়েছে, বিশেষ করে যেগুলো ঋণ ও আধিপত্যবিষয়ক উদ্বেগের কারণে সমস্যায় পতিত। তবে ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি তুলনা করলে চীনকে আরও অনুমানযোগ্য করে তোলে। ওয়াশিংটনের বিপরীতে বেইজিং বাণিজ্য বা ঘন ঘন শুল্ক বৃদ্ধিতে রাজনৈতিক শর্ত জুড়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকছে। নীতি গ্রহণে অনিশ্চয়তায় সতর্ক রয়েছে এমন দেশগুলোর জন্য সেই ভবিষ্যদ্বাণী তাৎপর্যপূর্ণ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এই পদ্ধতির ঝুঁকি উল্লেখ করার মতো। ইতোমধ্যে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো দিন দিন চীনকে প্রধান অর্থনৈতিক অংশীদার হিসেবে দেখে। যদি ট্রাম্পের নীতি দেশুগুলোকে বেইজিংয়ের দিকে আরও ঠেলে দেয়, তবে ওয়াশিংটন কেবল বাণিজ্য বিপর্যয়ই নয়; বরং তার আঞ্চলিক প্রভাবের দুর্বলতার মুখোমুখি হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্ররা যত বেশি তাদের অবস্থান সম্পর্কে অনিশ্চিত বোধ করবে, তত বেশি তাদের বিকল্প অংশীদারিত্ব অন্বেষণ করার সম্ভাবনা বেশি। চীনকে লাভবান হওয়ার জন্য আগ্রাসী পদক্ষেপ নিতে হবে না; এটি কেবল একটি স্থিতিশীল বিকল্প পথ সরবরাহে প্রয়োজন হতে পারে।
ট্রাম্প যেহেতু তাঁর অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি জোরদার করে চলেছেন, বড় প্রশ্নটি এখনও তোলা হয়নি। এই নীতিগুলো কি যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান শক্তিশালী করবে, নাকি তারা চীনের মতো প্রতিযোগীদের জন্য জায়গা করে নিতে খোলা মাঠ তৈরি করবে?
নাইজেল গ্রিন: লেখক; এশিয়া টাইমস থেকে ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অবস থ ন র ওপর ন র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশের সঙ্গে ভবিষ্যৎমুখী সম্পর্ক চায় ভারত: প্রণয় ভার্মা
বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সংবেদনশীলতার ভিত্তিতে একটি স্থিতিশীল, ইতিবাচক, গঠনমূলক, ভবিষ্যৎমুখী সম্পর্ক চায় ভারত। যেখানে দুই দেশ পারস্পরিকভাবে লাভজনক সম্পর্ক বজায় রাখতে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবে। আর দুই দেশের জনগণই হবে অংশীদারত্বের অংশীজন।
গত সোমবার ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজে ২০২৫ সালে এনডিসি কোর্সে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেন। ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
ভারতীয় হাইকমিশনার তাঁর বক্তৃতায় ভারতের পররাষ্ট্রনীতি ও উন্নয়ন কৌশল তুলে ধরেন। বিশেষ করে বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা, বৈশ্বিক শাসনকাঠামোর সংস্কার এবং বৈশ্বিক দক্ষিণের স্বার্থ রক্ষায় ভারতের ক্রমবর্ধমান সম্পৃক্ততার পাশাপাশি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই ও দ্রুত জাতীয় উন্নয়নের লক্ষ্যে ভারতের প্রচেষ্টার বিষয়গুলো উল্লেখ করেন।
তিনি ভারতের পররাষ্ট্রনীতির অগ্রাধিকার—‘প্রতিবেশী প্রথমে’, ‘পূর্বমুখী নীতি’, ‘মহাসাগর নীতি’ এবং ভারতের ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় রূপকল্পের আওতায় ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন।
প্রণয় ভার্মা বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা এবং ভৌগোলিক ঘনিষ্ঠতা আরও জোরদার করা উচিত। যাতে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সক্ষমতা ও ভবিষ্যৎ আকাঙ্ক্ষাকে এমন সব সুযোগে পরিণত করবে, যা পারস্পরিকভাবে লাভজনক সহযোগিতা নিশ্চিত করবে।
ভারতীয় হাইকমিশনার আরও বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দুটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনীতির দেশ হিসেবে ভারত ও বাংলাদেশ বিমসটেক কাঠামোর আওতায় আঞ্চলিক সংহতির গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তি। বিমসটেকের সদর দপ্তর ঢাকায় অবস্থিত এবং এটি দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে প্রবৃদ্ধির সুযোগগুলোর বাস্তবায়নে সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করে।