দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুতেই আগ্রাসী ডোনাল্ড ট্রাম্প। মেক্সিকো ও কানাডা থেকে আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ, কানাডিয়ান জ্বালানির ওপর ১০ শতাংশ এবং চীনা পণ্যের ওপর নতুন শুল্কসহ তাঁর ব্যাপক শুল্ক বৃদ্ধি আক্রমণাত্মক অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদের দিকে মার্কিন পরিবর্তনকে জোরালোভাবে তুলে ধরে।

তিনি ইইউর বিরুদ্ধে আসন্ন শুল্ক আরোপের ইঙ্গিত দিয়েছেন, যা বিশ্ববাজারে আরও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধে চীন উপকৃত হতে পারে। গত সপ্তাহে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো ফিরিয়ে দেওয়া অভিবাসীদের প্রতি আচরণের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। তার পরই ট্রাম্প কলম্বিয়ার রপ্তানির ওপর শুল্ক আরোপ করেন। ব্যাংকের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন এবং সরকারি কর্মকর্তাদের যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ সীমিত করেন। ক্ষমতাধর রাষ্ট্র হিসেবে এই পদক্ষেপ ওয়াশিংটনের দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশাল পরিবর্তন, যা আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। হোয়াইট হাউস যদি একে প্রয়োজনীয় দৃঢ় অবস্থান হিসেবে দেখে, এর প্রভাব দেখার অপেক্ষায় থাকতে হবে। 

ঐতিহাসিকভাবে ওয়াশিংটনের সঙ্গে যুক্ত কোনো দেশ যদি আকস্মিক অর্থনৈতিক শাস্তির মুখোমুখি হয়, তাহলে অন্যরা তাদের জোটে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করতে পারে। আর বেইজিং লাতিন আমেরিকায় তার ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ব্যস্ততার সঙ্গে বিষয়গুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। কয়েক বছর ধরে চীন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নেতৃত্বের বিকল্প হিসেবে নিজেদের অবস্থান তৈরি করেছে। এর বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগের দুয়ার খুলেছে, যা পশ্চিমা ঋণ ও সাহায্যের চেয়ে কম রাজনৈতিক শর্ত দিয়ে অবকাঠামোগত তহবিল সরবরাহ করে।

শুধু লাতিন আমেরিকাতেই বেইজিংয়ের বাণিজ্য ও আর্থিক সম্পর্ক যথেষ্ট প্রসারিত হয়েছে। এখন ট্রাম্প শুল্ক হুমকি ও অর্থনৈতিক চাপ পুনরায় চালু করছেন। এতে একটি স্থির বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে চীনের ভূমিকা আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। এই পরিবর্তন সম্পূর্ণরূপে অর্থনৈতিক নয়। ওয়াশিংটন দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক চুক্তির ধারাবাহিকতা ও আনুগত্যের জন্য তার খ্যাতির ওপর নির্ভর করে আসছে।

এমনকি ট্রাম্প যখন তাঁর প্রথম মেয়াদে বিশ্ববাণিজ্য ব্যাহত করেছিলেন, তখনও ডব্লিউটিওর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো স্থিতিশীলতার কথা বলেছিল। এখন একতরফা অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ওপর নতুন করে মনোযোগ দিয়ে কিছু দেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যের ওপর তাদের নির্ভরতার পুনর্মূল্যায়ন করতে পারে।

ডেনমার্ক ও পানামা নিয়ে ট্রাম্পের আগ্রহ দেখা দিয়েছে। এতে বিষয়টি আরও অন্তর্দৃষ্টির খোরাক দেয়। ট্রাম্পের গ্রিনল্যান্ড কেনার ইচ্ছা ও হুমকি এবং পানামা খাল নিয়ে উদ্বেগ থেকে কীভাবে অর্থনৈতিক সুবিধা ক্রমবর্ধমানভাবে ভূরাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, তা স্পষ্ট করে। বেইজিং ইতোমধ্যে উভয় দেশে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব গড়ে তুলেছে। যদি ওয়াশিংটনের সঙ্গে দেশ দুটির উত্তেজনা বাড়তে থাকে, তবে চীন লাভবান হতে পারে। 

মেক্সিকো ও কানাডা দেশ দুটি আমেরিকার সবচেয়ে কাছের ব্যবসায়িক অংশীদার। ট্রাম্প ২৫ শতাংশ শুল্ক অনুসরণ করছেন, যার প্রভাব উত্তর আমেরিকার বাইরেও প্রসারিত হবে। এটি এনএফটিএ ও এর উত্তরসূরি ইউএসএমসিএর অধীনে কয়েক দশকের অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তিকরণে বাধা সৃষ্টি করবে। চীন সক্রিয়ভাবে বিশ্বব্যাপী তার বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিস্তৃতি করছে, যা দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা অনুসন্ধান এবং সরকারগুলোর জন্য আরও আকর্ষণীয় অংশীদার হয়ে উঠতে পারে।

নিশ্চিতভাবে বলা যায়, এর কোনোটিই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনের দিকে সহজে স্থানান্তরের নিশ্চয়তা দেয় না। অনেক দেশ বেইজিংয়ের বিনিয়োগ কৌশল সম্পর্কে সতর্ক রয়েছে, বিশেষ করে যেগুলো ঋণ ও আধিপত্যবিষয়ক উদ্বেগের কারণে সমস্যায় পতিত। তবে ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি তুলনা করলে চীনকে আরও অনুমানযোগ্য করে তোলে। ওয়াশিংটনের বিপরীতে বেইজিং বাণিজ্য বা ঘন ঘন শুল্ক বৃদ্ধিতে রাজনৈতিক শর্ত জুড়ে দেওয়া থেকে বিরত থাকছে। নীতি গ্রহণে অনিশ্চয়তায় সতর্ক রয়েছে এমন দেশগুলোর জন্য সেই ভবিষ্যদ্বাণী তাৎপর্যপূর্ণ। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এই পদ্ধতির ঝুঁকি উল্লেখ করার মতো। ইতোমধ্যে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো দিন দিন চীনকে প্রধান অর্থনৈতিক অংশীদার হিসেবে দেখে। যদি ট্রাম্পের নীতি দেশুগুলোকে বেইজিংয়ের দিকে আরও ঠেলে দেয়, তবে ওয়াশিংটন কেবল বাণিজ্য বিপর্যয়ই নয়; বরং তার আঞ্চলিক প্রভাবের দুর্বলতার মুখোমুখি হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্ররা যত বেশি তাদের অবস্থান সম্পর্কে অনিশ্চিত বোধ করবে, তত বেশি তাদের বিকল্প অংশীদারিত্ব অন্বেষণ করার সম্ভাবনা বেশি। চীনকে লাভবান হওয়ার জন্য আগ্রাসী পদক্ষেপ নিতে হবে না; এটি কেবল একটি স্থিতিশীল বিকল্প পথ সরবরাহে প্রয়োজন হতে পারে।

ট্রাম্প যেহেতু তাঁর অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি জোরদার করে চলেছেন, বড় প্রশ্নটি এখনও তোলা হয়নি। এই নীতিগুলো কি যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান শক্তিশালী করবে, নাকি তারা চীনের মতো প্রতিযোগীদের জন্য জায়গা করে নিতে খোলা মাঠ তৈরি করবে?

নাইজেল গ্রিন: লেখক; এশিয়া টাইমস থেকে ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অবস থ ন র ওপর ন র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ

গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক নিন্দার মধ্যে, ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি আটকাতে মার্কিন সিনেটে তোলা একটি বিল পাস হতে ব্যর্থ হয়েছে।

ব্যর্থ হলেও, বুধবারের ভোটে দেখা গেছে, মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরোধিতা জোরদার হয়ে উঠেছে। 

আজ বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর প্রচেষ্টায় এবারের ভোটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক ডেমোক্র্যাট যোগ দিয়েছেন। 

ইসরায়েলের কাছে ২০ হাজার স্বয়ংক্রিয় অ্যাসল্ট রাইফেল বিক্রি বন্ধ করার প্রস্তাবের পক্ষে ২৭ জন ডেমোক্র্যাট ভোট দিয়েছেন, আর ৬৭৫ মিলিয়ন ডলারের বোমার চালান বন্ধ করার পক্ষে ২৪ জন ভোট দিয়েছেন। 

অন্যদিকে, ভোটদারকারী সব রিপাবলিকান সিনেটররা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। 

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির দুটি চুক্তি আটকে দিতে প্রস্তাবগুলো সিনেটে আনেন ভার্মন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি প্রগতিশীল ঘরানার স্বতন্ত্র সিনেটর।

ভোটের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে স্যান্ডার্স বলেন, “ওয়াশিংটন ইসরায়েলের ‘বর্ণবাদী সরকার’কে এমন অস্ত্র সরবরাহ করা চালিয়ে যেতে পারে না, যা নিরীহ মানুষদের হত্যা করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।”

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে একজন ‘জঘন্য মিথ্যাবাদী’ হিসেবে উল্লেখ করে স্যান্ডার্স ‘এক্স’ পোস্টে আরো বলেন, “গাজায় শিশুরা না খেয়ে মারা যাচ্ছে।”

প্রথমবারের মতো স্যান্ডার্সের প্রস্তাবকে সমর্থনকারী আইন প্রণেতাদের মধ্যে, ওয়াশিংটন রাজ্যের সিনেটর প্যাটি মারে বলেছেন, প্রস্তাবগুলো ‘নিখুঁত’ না হলেও, তিনি গাজার নিষ্পাপ শিশুদের অব্যাহত দুর্ভোগকে সমর্থন করতে পারেন না।

মারে এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও আমি প্রস্তাবের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিচ্ছি এই বার্তা দিতে: নেতানিয়াহু সরকার এই কৌশল চালিয়ে যেতে পারবে না।”

তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করেছেন। আমরা গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ করছি- সীমান্তের ওপারে যখন প্রচুর পরিমাণে সাহায্য ও সরবরাহ পড়ে আছে, তখন শিশু এবং পরিবারগুলোর অনাহার বা রোগে মারা যাওয়া উচিত নয়।”

মার্কিন জনগণের মধ্যে গাজা যুদ্ধের বিরোধিতা ক্রমবর্ধমান হওয়ার পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন নিয়ে ব্যাপক আকারে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।

মঙ্গলবার প্রকাশিত গ্যালাপের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, তারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সমর্থন করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৪২ শতাংশ আমেরিকান ইসরায়েলের অভিযান সমর্থন করেছিলেন।

গ্যালাপের মতে, পরিচয় প্রকাশ করে মাত্র ৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছেন যে তারা ইসরায়েলের অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যেখানে ৭১ শতাংশ রিপাবলিকান বলেছেন জানিয়েছেন যে, তারা ইসরায়েলি পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ