জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে তৎকালীন সরকারের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এতটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে যে, অতি বড় সমর্থকও রাজনীতিতে দলটির শিগগিরই প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পাওয়ার বিষয়ে আশা হারিয়ে ফেলেছিলেন। জনপরিসরে হিসাব শুরু হয়েছিল, ১৯৭৫ সালের বিপর্যয় কাটিয়ে পুরো ছন্দে ফিরতে দলটির অন্তত ছয় বছর লেগেছিল; পুনরায় ক্ষমতায় আসতে লেগেছিল ২১ বছর। এ দফায় দলটিকে আগেরবারের চেয়ে অনেক বেশি কাঠখড় পোড়াতে হবে।

অন্তত কয়েক মাস আগ পর্যন্ত এসব ভাবনা কোনো বাতুলতা ছিল না। শিক্ষার্থী-জনতার ওই অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগের প্রাণভোমরা বলে বিবেচিত শেখ হাসিনাই কেবল দেশ ছেড়ে চলে যাননি; দলটির প্রায় সর্বস্তরের নেতা দেশের ভেতর-বাইরে আত্মগোপন করেন। নেতাকর্মীর প্রধান প্রেরণাস্থল বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরের বাসভবন, যা মুক্তিযুদ্ধের আবেগ ধারণ করে এমন মানুষের কাছে বিশেষ শ্রদ্ধার জায়গা হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়, যা ১৯৭৫ সালেও ঘটেনি। দেশের কোথাও দলীয় কার্যালয় অক্ষত নেই। অনেক নেতাকর্মীর ব্যবসায়িক কার্যালয়, এমনকি বাড়িঘরও হামলা থেকে রেহাই পায়নি। দেশের ভেতরে থাকা বহু আওয়ামী লীগ নেতা এখন কারাবন্দি; বিভিন্ন মামলায় তাদের বিচার চলছে। 

সর্বোপরি, জুলাই-আগস্টের আন্দোলন থামাতে তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক বিভিন্ন কৌশলও ব্যর্থ হয়, যদিও অতীতে সেটা বেশ কার্যকর হয়েছিল। এতে অনেকেরই মধ্যে এ ধারণা ছড়িয়ে পড়ে, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আওয়ামী ন্যারেটিভ বা বয়ান ভেঙে পড়েছে। রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠার জন্য গ্রহণযোগ্য আদর্শের সঙ্গে রাজনৈতিক বয়ান খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই বলা হলো, নতুন বয়ান তৈরি করতে না পারলে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন।

কিন্তু যখন সেই গণঅভ্যুত্থানের ছয় মাস পূর্তি হচ্ছে, তখন কি আগামী ২৩ জুন প্লাটিনাম জয়ন্তী উদযাপন করতে যাওয়া দলটির ভবিষ্যৎ সত্যিই অন্ধকারাচ্ছন্ন মনে হচ্ছে? গত ছয় মাসে দৃশ্যপটে অনুপস্থিত আওয়ামী লীগই কি অনেকাংশে জাতীয় রাজনীতির গতিবিধি ঠিক করেনি? গণঅভ্যুত্থানের মুখ বলে যারা অন্তত আগস্ট-সেপ্টেম্বরজুড়ে বিপুল জনসমর্থনে ভাসলেন, সেই ছাত্রনেতারাও শুরু থেকে আজ অবধি সর্বত্র ‘ফ্যাসিবাদ’ খুঁজে বেড়াচ্ছেন। আর বহু প্রত্যাশা ও প্রতিশ্রুতির বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও ৮ আগস্ট শপথ নেওয়ার পর থেকেই মূলত একই পথে হাঁটছে। যেখানে গণঅভ্যুত্থানের বিজয়কে টেকসই করার স্বার্থেই তাদের অগ্রাধিকার তালিকায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি শীর্ষে থাকার কথা ছিল, সেখানে তারা ফ্যাসিবাদ নির্মূলের নামে যেন আওয়ামী লীগের ছায়ার সঙ্গেই যুদ্ধ করছে।

লক্ষণীয়, ছাত্রনেতাদের পাশাপাশি সরকার ক্ষমতায় এসেই ১৫ আগস্টে শোক পালন ঠেকাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। তারপর এলো রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ, বাহাত্তরের সংবিধানকে ‘মুজিববাদী সংবিধান’ আখ্যা দিয়ে ছুড়ে ফেলার ঘোষণা, জুলাই ঘোষণাপত্র ইত্যাদি। এই সময়ে ছাত্র, শ্রমিক ও বিভিন্ন পেশাজীবী গোষ্ঠীর যৌক্তিক আন্দোলনকেও ‘ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসন’ ট্যাগ দেওয়া হলো। অস্বীকার করা যাবে, এ ধরনের প্রতিটি পদক্ষেপ আওয়ামী লীগের জন্য পরিসর তৈরি করে দেয়নি?
গণঅভ্যুত্থানের পরপর বলা হলো, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আওয়ামী লীগ এতদিন ‘ব্যবসা’ করেছে এবং তা এবার ‘চিরতরে’ বন্ধ করে দেওয়া হবে। বিগত শাসক দলের বিরুদ্ধে এহেন অভিযোগ বায়বীয় তো নয়ই, জনগণের মধ্যেও এর বিশ্বাসযোগ্যতা কম ছিল না। কিন্তু কথিত ‘রিসেট’ বাটন চাপার নামে গত ছয় মাসে যা হলো তাতে আর যাই হোক, আওয়ামী লীগের ওই মুক্তিযুদ্ধ ব্যবসা বন্ধ হওয়ার কোনো কারণ ছিল না। বরং উল্টো মুক্তিযুদ্ধের ওপর দলটির ‘কপিরাইট’ আরও পোক্ত হয়েছে।

এমনকি মুক্তিযুদ্ধের ধারাবাহিকতায় প্রণীত বাহাত্তরের সংবিধানের মূলনীতি পরিবর্তন বিষয়ে সরকার, সংস্কার কমিশন ও ছাত্রনেতাদের অবস্থান জনপরিসরে এমন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে যে, বামপন্থিদের পাশাপাশি বিএনপিও এর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে বাধ্য হয়। স্মরণ করা যেতে পারে, বিএনপির সর্বোচ্চ পরিষদ জাতীয় স্থায়ী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ নেতা মির্জা আব্বাসকেও বলতে শোনা যায়, বাহাত্তরের সংবিধান ছুড়ে ফেলার কথা শুনলে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। এমনকি ছাত্রনেতারা যখন বলতে থাকেন যে, বিএনপি নেতাদের কণ্ঠে তারা আওয়ামী লীগের সুর শুনতে পাচ্ছেন, তখনও জন্মের পর থেকেই মধ্যডানপন্থি রাজনীতির ধারক দলটি মুক্তিযুদ্ধ প্রশ্নে তার ওই অবস্থান ধরে রেখেছে।

৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সুরক্ষা ও অধিকার প্রশ্নে সরকারের অবস্থানও প্রকারান্তরে আওয়ামী লীগকে সুবিধা দিয়েছে। উভয় গোষ্ঠীর মধ্যেই বিগত সরকারের সময়ে উল্লেখযোগ্য বঞ্চনাবোধ ছিল। বিশেষত, বিগত ১৫ বছরে সংঘটিত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর পরিচালিত হামলাগুলোর কোনোটার বিচার না হওয়া তাদের ক্ষুব্ধ করেছিল। সাঁওতাল, গারোসহ সমতলের বিভিন্ন আদিবাসীদের ভূমি-বসতি দখলের পাশাপাশি পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় সব আদিবাসীর মধ্যেও ওই সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক অসন্তোষ ছিল। সম্ভবত এ কারণেই এসব সম্প্রদায়ের সদস্যরাও গণঅভ্যুত্থানে লক্ষণীয় মাত্রায় অংশগ্রহণ করেছিল। কিন্তু এখন এসব সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যেও গণঅভ্যুত্থানের প্রাপ্তি নিয়ে প্রশ্ন জাগলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

আমার ধারণা, বর্তমান সরকারের প্রতি বিভিন্ন পক্ষের হতাশা ছাত্রনেতাদের মতো সরকারও ভালোভাবে টের পাচ্ছেন। এ কারণেই তারা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী তো বটেই, এমনকি দলটির প্রতি সামান্য সহমর্মিতা প্রকাশকারী যে কারও বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের হুমকি দিয়ে চলেছেন। বিস্ময়কর হলেও সত্য, মতপ্রকাশের অবাধ অধিকার নিশ্চিত করার আশ্বাস দানকারীদের কেউ কেউ এখন রীতিমতো সংবাদ সম্মেলন করে সংবাদকর্মীদের কখন কী করতে হবে, সে ব্যাপারে নসিহত করছেন। সে নসিহত না মানলে কী পরিণতি ভোগ করতে হবে, সেটাও বলে দিচ্ছেন। সংবাদমাধ্যমকে শত্রু বানিয়ে কে কবে এ দেশে জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পেরেছে?

প্রশ্ন হতে পারে, মাঠে একেবারে নেতৃত্ববিহীন আওয়ামী লীগ শিগগিরই কতটা প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পেতে পারে? প্রশ্নটার সরাসরি উত্তর দেওয়ার সময় এখনও হয়নি। এটাও সত্য, বিগত সময়ে সরকার ও দলের নেতৃত্বে যারা ছিলেন তাদের প্রায় সবারই বিরুদ্ধে জনমনে যেমন, তেমনি আওয়ামী লীগের তৃণমূলেও ক্ষোভ ব্যাপক। বিগত সময়ে নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরা ‘সুবিধাবাদীদের’ চাপে দলের মধ্যে হয় একঘরে ছিলেন, নয় দল থেকে প্রায় বিতাড়িত ছিলেন। সেই যন্ত্রণা মাত্র ছয় মাসেই সম্পূর্ণ ভুলে যাওয়া তাদের পক্ষে দুরূহ। ফলে পূর্ণ শক্তি নিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষে এখনই মাঠে নামা সম্ভব নয়। তবে অন্তর্বর্তী সরকার ও শিক্ষার্থীরা রাজনীতির চালে যত ভুল করবেন, ততই আওয়ামী লীগের জন্য এ দেশের রাজনীতির নিয়মেই সমর্থন জড়ো হতে থাকবে। এ সময়ে কার্যত বিরোধীদলও তো তারাই। দ্রুত নির্বাচন প্রশ্নে অভ্যুত্থানকারীরা যেভাবে বহুধাবিভক্ত হয়ে পড়ছেন, বিশেষত নির্বাচন যখন তাদের প্রধান দল বিএনপির কাছে দ্রুত নিজের অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্নের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে, তাও এ ক্ষেত্রে অন্যতম বিবেচ্য বিষয়।

সাইফুর রহমান তপন: সহকারী সম্পাদক, সমকাল 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ গণঅভ য ত থ ন র র জন ত র সরক র র ন আওয় ম ছয় ম স ব এনপ আগস ট দলট র ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

সংস্কারের একাল-সেকাল

ওয়ান-ইলেভেনকালে জরুরি অবস্থার গর্ভে জন্ম নেওয়া সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায়ও দেশের রাজনৈতিক দলগুলোতে ‘সংস্কারের জিগির’ তোলা হয়েছিল। সে সংস্কারের মূল লক্ষ্যবস্তু ছিলেন দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক নেত্রী খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা, যা ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ হিসেবে চিহ্নিত।

দল দুটির যেসব নেতা ওই তৎপরতার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন, পরবর্তী সময়ে তারা ‘সংস্কারপন্থি’ হিসেবে কালো তালিকাভুক্ত হন। এক পর্যায়ে ‘সংস্কারপন্থি’ শব্দটিই রাজনৈতিক গালিতে পরিণত হয়।  

সময়ের বিবর্তনে অনেক কিছুরই পরিবর্তন ঘটে। ২০০৭ সালের নিন্দিত ‘সংস্কার’ ২০২৪ সালে এসে নন্দিত ‘সংস্কার’ হয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার বলছে, লন্ডভন্ড নির্বাচন ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে আর যাতে কোনো দল সরকারে গিয়ে আওয়ামী লীগের মতো ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠতে না পারে, সে জন্য রাষ্ট্রব্যবস্থার ‘প্রয়োজনীয়’ সংস্কার শেষে নির্বাচন দেওয়া হবে। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের দাবিতে দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন জানায় এবং এ জন্য পর্যাপ্ত সময় ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিয়ে আসছে। 

ধারণা ছিল, অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধানকে গণমুখী করা এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে অধিকতর শক্তিশালী করতে বিধিবিধান পরিবর্তনের মধ্যেই সংস্কার কার্যক্রম সীমিত রাখবে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অস্ত্রোপচার করে রাষ্ট্রের আকার-আকৃতি, চেহারা-সুরত পাল্টে দেওয়ার এক মহাযজ্ঞের সূচনা করেছে। গঠন করেছে ছোট-বড় ১১টি সংস্কার কমিশন: সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন, পুলিশ, জনপ্রশাসন, গণমাধ্যম, স্বাস্থ্য খাত, শ্রম, নারীবিষয়ক, স্থানীয় সরকার এবং গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন। আবার এসব বিষয়ে যাতে ‘জাতীয় ঐকমত্য’ প্রতিষ্ঠিত হয় সে জন্য গঠন করা হয় ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’।

সন্দেহ নেই, জাতীয় স্বার্থে দেশের সব রাজনৈতিক দল ও নাগরিকদের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা জরুরি। সাধারণত প্রয়োজনের নিরিখে সে ঐক্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে। যেমন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার প্রয়োজনে। এবারও দেশকে আক্ষরিক অর্থে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হলে এমনিতেই জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। সে জন্য আলাদা কমিশন গঠন করার প্রয়োজন কেন হলো, বোধগম্য নয়।

গঠিত ১১টি কমিশনের বেশ কয়েকটি তাদের সুপারিশ জমা দিয়েছে সরকারের কাছে। সেসব প্রস্তাব নিয়ে এখন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে। প্রস্তাবগুলোর কিছু বিষয়ে সবাই একমত হলেও অধিকাংশ বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে। বিশেষত একই ব্যক্তি দু’বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না বা একই ব্যক্তি দলীয় প্রধান, প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা না হওয়ার যে প্রস্তাব সংস্কার কমিশন করেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অনেকেই বলছেন, এসব সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর হাত-পায়ে বেড়ি পরিয়ে দেওয়ার চেষ্টার শামিল। কেননা, একটি দল সরকারে গেলে সরকারপ্রধান, সংসদ নেতা ও দলীয় প্রধান কে হবেন বা থাকবেন, সেটা সংশ্লিষ্ট দলের গঠনতান্ত্রিক বিষয়। রাষ্ট্র সেখানে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। তা ছাড়া নির্বাচন কমিশন প্রণীত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ দ্বারা রাজনৈতিক দলগুলো এখন নিয়ন্ত্রিত। নতুন করে রাজনৈতিক বিধিবিধান গণতন্ত্র বিকাশে প্রতিবন্ধক হয়ে উঠতে পারে। 

এদিকে গত ১৯ এপ্রিল নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন যে রিপোর্ট প্রধান উপদেষ্টা বরাবর পেশ করেছে, তা নিয়ে আপত্তি তুলেছে কয়েকটি সংগঠন। ১৫টি মূল বিষয়সহ ৪৩৩টি প্রস্তাবনার একটিতে জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর জন্য মোট আসন ৬০০ করে ৩০০ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। নারীদের জন্য সংসদে আসন সংরক্ষিত রাখার সুপারিশকে ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মূল চেতনার সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক মনে করছেন অনেকে। কেননা, সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বিলোপের দাবিতে গড়ে ওঠা ছাত্র আন্দোলনই পরবর্তী সময়ে রূপ নিয়েছিল গণঅভ্যুত্থানে।

এটা বলা অসমীচীন নয়, ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে, সর্বস্তরে কোটা পদ্ধতিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। সে প্রত্যাখ্যাত কোটা পদ্ধতি পুনর্বহালের সুপারিশ নারী কমিশন কেন করল, বোধগম্য নয়। তা ছাড়া এ ধরনের কোটা নারীদের জন্য অবমাননাকর নয় কি? জাতীয় সংসদে নারীদের কোটায় আবদ্ধ রাখার অর্থ তাদের অনগ্রসর হিসেবে চিহ্নিত করা। অথচ আমাদের দেশের নারীরা এখন রাষ্ট্র ও সমাজের নানা ক্ষেত্রে পুরুষের সঙ্গে পাল্লা দিতে সক্ষম।

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে আমাদের গ্রামের মাথার বাস স্টপেজকে কেন্দ্র করে একটি ছোট্ট বাজার গড়ে উঠেছে। সেখানে আজিমের চায়ের দোকানে প্রায়ই আড্ডা জমে। ঢাকা থেকে গেলে আমিও অংশীজন হই। সেদিনও সে আড্ডায় অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার নিয়ে কথা হচ্ছিল। কবে সংস্কার শেষ হবে, কবে নির্বাচন হবে– তা নিয়ে একেকজন তাদের জ্ঞানগর্ভ অভিমত ব্যক্ত করছিলেন। এরই মধ্যে কলেজপড়ুয়া এক কিশোর ফোড়ন কেটে বলল, এর পর হয়তো সরকার ‘জাতিসংঘ সংস্কার কমিশন’ গঠন করে বলবে, নির্বাচন ওই সংস্কারের পর। ছেলেটির কথায় হাসির ফোয়ারা ছুটল আসরে। কারও কারও কাপ থেকে ছলকে পড়ে গেল কিছুটা চা।

মহিউদ্দিন খান মোহন: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক   

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘একদিন দেখি পশুরমতো ঘরের কোণে বসে কাঁপছে ববি’
  • সংস্কারের একাল-সেকাল
  • বিশ্বনেতাদের সতর্ক দৃষ্টির সামনেই ঘটছে গণহত্যা
  • প্রত্যন্ত গ্রামে ক্লিনিক খুলে ‘এমবিবিএস ডাক্তার’ পরিচয়ে চিকিৎসা, এক বছরের কারাদণ্ড
  • ‘শি জিনপিং ফোন করেছিলেন’ ট্রাম্পের এমন দাবি প্রত্যাখ্যান চীনের
  • শি জিনপিং ফোন করেছিলেন, ট্রাম্পের এমন দাবি প্রত্যাখ্যান চীনের
  • গণঅভ্যুত্থানের তরুণ নেতৃত্ব ও রাজনীতিতে প্রাণপ্রবাহ
  • জুলাই বিপ্লবী মেয়েরা আজ নিরাপদ বোধ করছে না: ফরহাদ মজহার
  • আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় জড়িত দুজন শনাক্ত  
  • ভুলে সীমানায় পা, বিএসএফ সদস্যকে আটক করল পাকিস্তান