Samakal:
2025-05-01@03:10:09 GMT

সম্পর্ক বদলে দেওয়া যুদ্ধ

Published: 7th, February 2025 GMT

সম্পর্ক বদলে দেওয়া যুদ্ধ

যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ার্স হামলার মধ্য দিয়ে জন্ম নিয়েছিল ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ ন্যারেটিভ। ২০০১ সালের ওই ঘটনার পর বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে চলে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত। এসব সংঘাতের ধারাবাহিকতায় আসে ২০২৪ সাল। বছরটির শুরুতেই একে বলা হচ্ছিল ভোটের বছর।

বিশ্বে এক বছরে ৮০টির বেশি দেশে নির্বাচন হয়েছে। পাল্টে যায় অনেক ছক, হিসাবনিকাশ। গত বছর সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের আকস্মিক পতন, রাশিয়ার পক্ষে লড়াই করতে শুরু করে উত্তর কোরীয় সেনারা, ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মিসাইল ইউক্রেনে পাঠানো এবং রাশিয়ার ওপর হামলা, ইরানের মিসাইল রাশিয়ায় পাঠানো। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রে সজ্জিত ইসরায়েলের বিমান হামলা লেবানন ও গাজায়, ইয়েমেনের মিসাইল ইসরায়েলের দিকে নিক্ষেপ– এসব সংঘর্ঘ একটি জটিল পরিস্থিতি তৈরি করেছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, বিশ্বের যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কি আরও বেশি দেশ একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যাচ্ছে? চলমান সংঘাতগুলোর সমষ্টিগত রূপ আসলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কি না, তা নিয়ে মতপার্থক্য আছে। তবে এটি পরিষ্কার, বিশ্বের অনেক সংঘাতের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক রয়েছে। তাহলে এই সংযোগগুলো কীভাবে গঠিত হচ্ছে? এর উত্তর আছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক ফ্যাক্টরের মধ্যে। সেগুলোর দিকে তাকানো যেতে পারে।

ইউক্রেনে উত্তর কোরিয়ার সৈন্য মোতায়েন: নতুন সংকটের ইঙ্গিত

ধারণা করা হচ্ছে, উত্তর কোরিয়া ১০ থেকে ১২ হাজার সৈন্য পাঠিয়েছে রাশিয়ায়। প্রায় এক ডিভিশনের সমান ওই যোদ্ধারা এরই মধ্যে রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেনে লড়াই করছে। শুধু উত্তর কোরিয়া নয়, ইরানও সহায়তা করছে রাশিয়াকে মিসাইল ও স্বল্পমূল্যের ড্রোন দিয়ে। এসব সহায়তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ইউরোপ, আমেরিকা ও খোদ ইউক্রেন। কারণ, পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে সহায়তা করলেও সেই সহায়তা যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের পূর্ণ মাত্রায় কাজে লাগছে না। ইউক্রেনের যুদ্ধ আক্ষরিক অর্থেই এখন শুধু দুই দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। একাধিক দেশ পরোক্ষভাবে এতে জড়িয়ে একটি আন্তর্জাতিক যুদ্ধের রূপ দিয়েছে। বেলারুশ সহায়তা করছে রাশিয়াকে। এ নিয়ে বিবিসির ইউক্রেন বিশেষজ্ঞ ভিটালি শেভচেঙ্কো বলেন, “আমরা এখানে দুটি ভিন্ন কৌশলের মধ্যে অসমতা দেখছি। পশ্চিমা দেশগুলো সতর্কতা ও নিয়ন্ত্রণনীতি অনুসরণ করছে, যা ইউক্রেনের কর্মকাণ্ডে সীমাবদ্ধতা তৈরি করেছে। মস্কো এই যুদ্ধের বিস্তার নিয়ে ততটা চিন্তিত নয়, বরং তারা এটিকে আরও বাড়ানোর পক্ষে।”

মধ্যপ্রাচ্যে নতুন সমীকরণ

মধ্যপ্রাচ্যের জটিলতা এতটাই বেশি যে, ইউক্রেন যুদ্ধ তুলনামূলকভাবে সহজ মনে হতে পারে। অঞ্চলটিতে একাধিক সংঘাত চলছে। এর মধ্যে কিছু সক্রিয়, কিছু চাপা, কিন্তু সবই একই সময়ে বিদ্যমান। একটি বিষয় পরিষ্কার করা জরুরি, বিশ্ব গণমাধ্যমে যেভাবে মধ্যপ্রাচ্যের চিত্র উপস্থাপিত হয়, বাস্তবতা ততটা সংঘাতময় নয়। মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ অঞ্চলে বর্তমানে যুদ্ধ নেই। সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব এবং মিসরের মতো দেশে স্বাভাবিক জীবন চলছে, যুদ্ধের কোনো সরাসরি প্রভাব সেখানে নেই। এমনকি ইরাক ও ইরানের মতো দেশেও, যেখানে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সংঘাত হয়েছে, সেখানকার অধিকাংশ মানুষের জীবন এখন শান্তিপূর্ণ।

নতুন শাসকের অধীনে সিরিয়া

সিরিয়ায় রাতারাতি সরকারের পতন হবে, তা কেউই আগাম অনুমান করতে পারেনি। না সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ, না তেহরান, মস্কো বা দক্ষিণ বৈরুত, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও। মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে ইসলামপন্থি বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) একের পর এক শহর দখল করেছে। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্য এ গোষ্ঠীকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার ঘাঁটি থেকে বেরিয়ে এসে তারা দ্রুত এলাকা দখল করেছে। এখন তারাই সিরিয়ার নতুন শাসক। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত আন্তর্জাতিক রাজনীতির নানা দিক। হামাসের নেতৃত্বে দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলার অন্যতম প্রভাব হলো– ইরানের আঞ্চলিক মিত্রদের ওপর বড় ধাক্কা। আসাদের মিত্র রাশিয়া এখন ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যস্ত, হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের সঙ্গে স্বল্প সময়ের যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইরান দেখেছে কীভাবে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান সহজেই তার আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে। ফলে আসাদের মিত্ররা তাকে সহায়তা করতে পারেনি বা করতে চায়নি। অন্যদিকে, বিদ্রোহীদের সমর্থনকারী তুরস্ক এই পরিস্থিতি নিজের সুবিধার জন্য কাজে লাগিয়েছে।

বিরামহীন সংঘাতের নাম গাজা

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালায়। এতে প্রায় ১২০০ ইসরায়েলি নিহত ও আড়াইশ জনকে জিম্মি করা হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল ১৫ মাস ধরে গাজায় হামলা চালিয়ে ৪৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে। সম্প্রতি কয়েকটি দেশের মধ্যস্থতায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হয়েছে। ইসরায়েল দাবি করছে, তাদের হামলায় হামাস অনেকাংশে দুর্বল হয়ে গেছে। যুদ্ধবিরতির পর হামাস যেভাবে ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দিচ্ছে, তা দেখে অনেক আন্তর্জাতিক সাংবাদিকই মানতে নারাজ যে হামাস শেষ হয়ে গেছে। গাজা এখন সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত। অঞ্চলটির প্রায় ২৪ লাখ মানুষের সংখ্যাগরিষ্ঠই এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে। এদের বেশির ভাগই তাঁবুতে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে বসবাস করছে। গরমে সাপ, বিষধর পোকামাকড় ও চর্মরোগে আক্রান্ত এবং শীতে আবহাওয়ার চাপে কষ্ট পাচ্ছে।

ইরান ও তার ছায়াসঙ্গীরা

ইরান মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন মিত্র বা ‘প্রক্সি’ মিলিশিয়া বাহিনীকে সমর্থন করে। তাদের টাকা, অস্ত্র এবং প্রশিক্ষণ দেয় ইরানের কুদস ফোর্সের মাধ্যমে। এসব মিলিশিয়া বাহিনী ইসরায়েলের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন এবং ইরান এদের ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ হিসেবে দেখে। লেবাননে বহু বছর ধরেই শক্তিশালী অবস্থানে হিজবুল্লাহ। ইরান এই গোষ্ঠীকে অর্থ ও অস্ত্র সহায়তা দিয়ে আসছে। ২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর হিজবুল্লাহ ইসরায়েলে হামলা চালালে যুদ্ধের মোড় ঘুরে যায়। ইসরায়েলও হিজবুল্লাহর ওপর হামলা করে। এক পর্যায়ে হিজবুল্লাহকে পরাজয় মেনে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করতে হয় ইসরায়েলের সঙ্গে।

আফ্রিকা: মস্কোর পেছনের উঠান

ইরান তার প্রধান মিত্র সিরিয়া হারালেও, লিবিয়ার খলিফা হাফতার এখন রাশিয়ার বড় মিত্র। রাশিয়া লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগরে তার প্রভাব বিস্তার করতে চায় এবং সেখানে ভাড়াটে সৈন্যদের কাজকর্ম চালাচ্ছে। রাশিয়ার ভাড়াটে সৈন্য গোষ্ঠী, যা আগে ওয়াগনার নামে পরিচিত ছিল, এখন ‘আফ্রিকা কর্পস’ নামে পরিচিত। বাহিনীটি সাহেল অঞ্চলের দেশগুলোতে পশ্চিমা বাহিনীকে সরিয়ে ফেলেছে। 

পরিণতি

২০২৪ সালের বাস্তবতা দেখাচ্ছে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ন্যারেটিভ ক্রমশ ভেঙে পড়েছে। বরঞ্চ যেসব দেশ বা গোষ্ঠীগুলোকে সন্ত্রাসী তকমা দিয়ে বৈশ্বিক পর্যায়ে গোলযোগ বাধিয়ে রাখা হয়েছিল, সেসব দেশ বা গোষ্ঠীর সঙ্গেই এখন নতুন করে মিত্রতা করছে অনেক দেশ। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ট্রাম্প প্রশাসনকেও তাই যুদ্ধাস্ত্র বেচার ধান্দা বাদ দিয়ে বাণিজ্যের মাধ্যমে মোড়লগিরি বজায় রাখার দিকে মনোযোগ দিতে দেখা যাচ্ছে। কাল যে ছিল শত্রু, আজ সে মিত্র হয়ে যাচ্ছে। তবে নতুন শত্রুও সৃষ্টি করেছে।

সূত্র: বিবিসি

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইউক র ন পর স থ ত ইসর য় ল ইউক র ন ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

ছয় কোটি শ্রমিক রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার বাইরে

দেশের মোট শ্রমিকের ৮৪ দশমিক ১ শতাংশের কোনো দায়দায়িত্ব নেয় না রাষ্ট্র । শ্রমিক হিসেবে তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই। কোনো রকম আইনি ও সামাজিক সুরক্ষা নেই। কর্মস্থলের পরিচয়পত্র নেই। কাজের ক্ষেত্রে অন্যায়ের শিকার হলে তাদের শ্রম আদালতে মামলা করার সুযোগও নেই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী,  অপ্রাতিষ্ঠানিক এই শ্রমিকের সংখ্যা ৫ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার।

বিশালসংখ্যক শ্রমিকের প্রতি রাষ্ট্রের এ রকম অবহেলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সরকারের গঠিত শ্রম সংস্কার কমিশন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গত ২১ এপ্রিল পেশ করা কমিশনের ২৫ সুপারিশের মধ্যে প্রথমে প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সব শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা ও স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। 

দেশের শ্রম খাতের দুর্বলতা চিহ্নিত করা এবং শ্রমিকের অধিকার ও জীবনমান উন্নয়নে সুপারিশ প্রণয়নের উদ্দেশ্যে গঠিত ১৯ সদস্যের কমিশনপ্রধান ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ। জানতে চাইলে গতকাল তিনি সমকালকে বলেন, ‘আমরা সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছি। শ্রম আইনে অন্য সব শ্রমিকের মতো একই অধিকার এবং সুযোগসুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি ক্ষেত্রবিশেষে তাদের বাড়তি সুবিধা দেওয়ার কথা বলেছি। সামাজিক সুরক্ষার আওতায় তাদের জন্য ভাতার কথা বলেছি। প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকের জন্য এ সুবিধার সুপারিশ করা হয়নি। কারণ, তারা চাকরি শেষে কমবেশি কিছু আর্থিক সুবিধা পান।’ 

কমিশনের এ সব সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে নিয়মিত নজরদারি রাখার কথাও জানান তিনি। 

এ বাস্তবতায় আজ বৃহস্পতিবার মহান শ্রমিক দিবস পালন করা হচ্ছে। আজ সরকারি ছুটি থাকবে। এ দিনও কাজ করতে হবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দিবসটি পালনের বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’। 

বিবিএসের গত নভেম্বরে প্রকাশিত সর্বশেষ জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে কর্মক্ষম জনসংখ্যা ১২ কোটি ৬ লাখ ২০ হাজার। তাদের মধ্যে শ্রমশক্তি ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার। মোট শ্রমশক্তির ৮৪ দশমিক ১ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে। 

দেশে শ্রমশক্তি বলতে ১৫ বছরের বেশি বয়সের মানুষের মধ্যে যারা কর্মে নিয়োজিত এবং বেকার জনগোষ্ঠীর সমষ্টিকে বোঝায়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা–আইএলওর মানদণ্ড অনুযায়ী, যারা সাত দিনে কমপক্ষে ১ ঘণ্টার বেতন, মজুরি বা মুনাফার বিনিময় অথবা পরিবারের নিজস্ব ভোগের জন্য পণ্য উৎপাদনের কাজ করেছেন জরিপে তাদের কর্মে নিয়োজিত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আবার যারা কর্মক্ষম কিন্তু কোনো কাজে নিয়োজিত নন, নির্দিষ্ট সময়ে কাজ খুঁজে বেড়ান এবং ওই সময়ে কাজের সুযোগ পেলে সে কাজ করতে প্রস্তুত তাদের বেকার বলা হয়েছে। এ হিসাবে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৪ লাখ ৬০ হাজার। 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক কারা 

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা–আইএলওর আন্তর্জাতিক শ্রম পরিসংখ্যানবিদের সম্মেলন ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অব লেবার স্ট্যাটিসিয়ান্স–আইসিএলসির সংজ্ঞা অনুযায়ী, বেসরকারি অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি বা খানামালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, যেগুলোর আইনি সত্তা নেই, পরিপূর্ণ হিসাব নেই, উৎপাদনের হিসাব দিতে হয় না এবং বেসরকারি ও অনিবন্ধিত–এরকম খাতকে অনানুষ্ঠানিক খাত এবং এ খাতের শ্রমিকদের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক বলা হয়। 

মূলত কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক বেশি। কৃষিতে ৯৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক। শিল্প খাতে ৮২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের বড় অংশই গ্রামে থাকেন। 

বিবিএস বলছে, গ্রামের মোট শ্রমিকের ৮৭ দশমিক ৪ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। সংখ্যায় তারা ৪ কোটি ৬১ লাখ ১০ হাজার। শহরের শ্রমিকদের এ হার কিছুটা কম। ৭৪ দশমিক ৫ শতাংশ। সংখ্যায় এক কোটি ৩৫ লাখ ৭০ হাজার। নারী শ্রমিকদের ৯৫ দশমিক ৭ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করে থাকেন।

শ্রম আইনে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকেও অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ কমিশনের 

শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে প্রাতিষ্ঠানিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক, কৃষি, গৃহশ্রমিক, অভিবাসী, স্বনিয়োজিত শ্রমিকসহ সব শ্রমিকের জন্য শ্রম আইনে সুরক্ষা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে শ্রমিকদের কাজের স্বীকৃতি, পরিচয়পত্র, নিরবচ্ছিন্ন কাজ এবং আয়ের নিশ্চয়তা, মর্যাদাকর শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। এতে আরও বলা হয়, এসব শ্রমিকের জন্য রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা হিসেবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সব অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থেকে প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলাদা অফিস অথবা ডেস্ক স্থাপন করতে হবে। শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা এবং কল্যাণে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের সব ধরনের তথ্য নিয়ে তথ্যভান্ডার করা, পরিচয়পত্র দেওয়া এবং অবসর ভাতা চালুসহ বেশ কিছু সুপারিশ করে কমিশন। 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের প্রবীণ শ্রমিকদের জন্য অসরকালীন ভাতার সুপারিশ 

রাষ্ট্রের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের আওতায় বিভিন্ন সুবিধা পেয়ে থাকেন প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা। অবসরের পরও কিছু সুবিধা পান তারা। তবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা সারা জীবন খাটুনির পর প্রবীণ বয়সে আরও কষ্টে থাকেন। কারণ সামান্যতম কোনো সুবিধা পান না তারা। এ বিবেচনা থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জন্য অসরকালীন ভাতা বা তাদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনার সুপারিশ করেছে কমিশন। তাদের অবসরের বয়সসীমা ৬০ বছর নির্ধারণের কথা বলা হয় এতে। দরিদ্র বেকার শ্রমিকদের বয়স্কভাতা এবং তাদের প্রতিদিনের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও অন্যান্য চাহিদা বিবেচনায় বয়স্কভাতার পরিমাণ নির্ধারণের কথা বলেছে কমিশন। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের পেশা ও খাত অনুযায়ী সংগঠিত হওয়া, প্রতিনিধিত্ব করা ও নিয়োগকারী, তাদের সমিতি করার সুযোগ দেওয়ার কথাও বলা হয় কমিশনের সুপারিশে। 

প্রাতিষ্ঠানিকের ৫৫ খাতেও ন্যূনতম মজুরি নেই 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের চেয়ে কিছুটা ভালো হলেও প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের অবস্থাও খুব বেশি ভালো নয়। এখনও অনেক শিল্প খাতকে ন্যূনতম মজুরি কাঠামোর আওতায় আনা হয়নি। মালিকপক্ষ যা দেয়, তা মেনে নিয়ে কাজ করেন শ্রমিকরা। এরকম অন্তত ৫৫টি খাতে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়নি। 

শ্রম মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের স্বীকৃত শিল্প আছে ১০২টি। 

টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের মজুরি বোর্ড হয় সর্বশেষ ১৯৮৩ সালে। অর্থাৎ, গত তিন যুগ ধরে একই মজুরি চলছে এ খাতে। জানতে চাইলে সরকারের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সচিব রাইসা ইসলাম গতকাল সমকালকে বলেন, ন্যূনতম মজুরি কাঠামোতে বর্তমানে ৪৭টি শিল্প রয়েছে। নতুন করে দুটি শিল্পকে ন্যূনতম মজুরির আওতায় আনা হবে। আরও ২০ শিল্পকে এর আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি জানান, পেট্রোল পাম্পের শ্রমিকদের মজুরি পুনঃনির্ধারণে বোর্ড গঠন হয়েছে। মালিক পক্ষ এ-সংক্রান্ত সভায় আসছে না। এ অবস্থায় করণীয় জানতে শ্রম মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চেয়েছে মজুরি বোর্ড। 

টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পে তিন যুগ ধরে একই মজুরির বিষয়ে জানতে চাইলে রাইসা ইসলাম বলেন, টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের আর অস্তিত্ব নেই। খাতটি হয়তো বিলুপ্ত ঘোষণা করা হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ