চাঁদাবাজি বন্ধ না হলে নৌ ধর্মঘটের হুমকি
Published: 7th, February 2025 GMT
সুরমা নদীর বিভিন্ন ঘাটে কিছুতেই অবৈধ চাঁদাবাজি থামছে না। ছাতক থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত চলাচলকারী নৌযানে অবৈধ এবং অতিরিক্ত চাঁদা আদায়ের কারণে অতিষ্ঠ নৌযানের হাজার হাজার শ্রমিক-মালিক। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত চাঁদা বন্ধ ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে দেশব্যাপী নৌ ধর্মঘটের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
নদীতে চলাচলকারী এসব নৌযানে চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে একাধিকবার আবেদন জানিয়েছেন নৌযান মালিকরা। এতে কোনো সুফল মিলছে না। এ নিয়ে নৌযান শ্রমিকদের মাঝে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।
বুধবার বিকেলে ছাতকের সুরমা নদীর তীরে নৌযান শ্রমিক নেতাদের উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচি আয়োজন করা হয়। এ সময় শ্রমিক নেতারা বলেন, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নৌপথে অতিরিক্ত এবং অবৈধ চাঁদাবাজি বন্ধ না হলে ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে নৌ ধর্মঘটের কর্মসূচি পালন করা হবে।
২০১৬ সালে অবৈধ চাঁদাবাজদের হামলায় নৌযানের সুকানি আরজ মিয়া নিহত হন। চাঁদাবাজরা তাঁকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছিল। ওই ঘটনায় মামলা হলেও নদীতে অবৈধ চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি। চলন্ত নৌযান থেকে নিয়মিতই চলছে চাঁদা আদায়। ব্রিটিশ আমল থেকেই ছাতক ব্যবসায়িক এলাকা হিসেবে পরিচিত। এখানে বালু-পাথরের ব্যবসার জন্য প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শত শত কার্গো-জাহাজ ও ইঞ্জিনচালিত স্টিলবডি বাল্কহেড এসে সুরমা নদীতে অবস্থান করে। এসব নৌযান বালু-পাথর নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রওনা হলে ঘাটে ঘাটে নামে-বেনামে চলে চাঁদাবাজি।
শুধু তাই নয়, চাঁদা না দিলে ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নৌযানের মাস্টার, সুকানি ও স্টাফদের কাছ থেকে মোবাইল ফোনসেট, নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এসব অপরাধের বিষয়ে স্থানীয় নৌ পুলিশের সহায়তা চেয়েও তেমন কোনো সুফল মিলছে না। এ ছাড়া কার্গো-জাহাজ ও ইঞ্জিনচালিত স্টিলবডি বাল্কহেডগুলোকে একাধিক স্থানে চাঁদা দিতে হয়। ন্যূনতম ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করে এসব চক্র।
বাংলাদেশ কার্গো-ট্রলার বল্কহেড শ্রমিক ইউনিয়নের ছাতক শাখার সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক এলেমান জানান, সুরমা নদীতে ঘাটে ঘাটে অবৈধভাবে চাঁদাবাজি চলছে। পুলিশের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করা হলেও লাভ হয়নি।
সংগঠনের জেলা সভাপতি হাবিবুর রহমান জানান, নৌপথে চাঁদাবাজি বন্ধে ১২ দফা দাবি উল্লেখ করে এরই মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরসহ জেলা প্রশাসন এবং বিভিন্ন থানায় চিঠিও দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এ বিষয়ে একাধিক বৈঠক ও আলোচনার পরেও উল্লিখিত সমস্যার কোনো সমাধান মেলেনি।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বেপারি জানান, নদীতে দুটি কারণে চাঁদাবাজি হচ্ছে। এর মধ্যে উপজেলাভিত্তিক ইজারাটা স্থলভাগে। সেটি নদীপথে দেওয়ার কারণে অবৈধ চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক ইজারা দেওয়ার ক্ষেত্রে অসম প্রতিযোগিতার কারণে নৌযান শ্রমিক-মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
বিআইডব্লিউটিএর ছাতকের ইজাদার তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে সোহাগ আহমদ জানান, নদীতে নিয়ম মতোই সরকার নির্ধারিত হারেই চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। কখনও নৌযান থেকে বাড়তি টাকা নেওয়া হয় না। অনেক সময় নিয়মের চেয়েও কম চাঁদা আদায় করা হয়।
ছাতক নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) আনোয়ার হোসেন জানান, ছাতক অঞ্চলে কোনো অবৈধ চাঁদাবাজি নেই। কেউ অবৈধ চাঁদা আদায়ের অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ অব ধ চ এক ধ ক ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
শেষ হলো বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র যৌথ সামরিক মহড়া ‘টাইগার শার্ক’
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ সামরিক মহড়া ‘টাইগার শার্ক’ সফলভাবে শেষ করেছে। আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও সহযোগিতা বৃদ্ধি, পারস্পরিক সমন্বয় এবং দুই দেশের সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে পরিচালিত এই মহড়ার মাধ্যমে দুই পক্ষের প্রতিরক্ষা অংশীদারত্ব জোরদার হয়েছে।
শনিবার ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের দীর্ঘস্থায়ী অঙ্গীকারের প্রতিফলন টাইগার শার্ক মহড়া। এই মহড়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কমান্ড এবং বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা একসঙ্গে চিকিৎসা প্রশিক্ষণ, টহল, লক্ষ্যভেদ অনুশীলন, সাঁতার, ডুবসাঁতার এবং ক্লোজ কোয়ার্টারস কমব্যাটসহ বিভিন্ন সমন্বিত প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশ নেন।
যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স (ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত) ট্রেসি জ্যাকবসন বলেন, ‘এই যৌথ সামরিক মহড়া নিরাপদ, শক্তিশালী ও আরও সমৃদ্ধ ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরের প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতিকে পুনর্ব্যক্ত করে। এটি যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অংশীদারত্বেরও প্রতীক।’
কৌশলগত প্রশিক্ষণের পাশাপাশি টাইগার শার্কে অন্তর্ভুক্ত ছিল বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞদের বিনিময়, যৌথ পরিকল্পনা সেশন এবং কৃত্রিম অনুশীলন পরিবেশে প্রশিক্ষণ। এসব কার্যক্রম ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমন্বিত কৌশল গঠনে সহায়তা করা।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কমান্ড হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাচীনতম ও বৃহত্তম যুদ্ধ কমান্ড, যা ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরের অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কার্যক্রম তদারকি করে এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করে।