সুরমা নদীর বিভিন্ন ঘাটে কিছুতেই অবৈধ চাঁদাবাজি থামছে না। ছাতক থেকে সুনামগঞ্জ পর্যন্ত চলাচলকারী নৌযানে অবৈধ এবং অতিরিক্ত চাঁদা আদায়ের কারণে অতিষ্ঠ নৌযানের হাজার হাজার শ্রমিক-মালিক। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত চাঁদা বন্ধ ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে দেশব্যাপী নৌ ধর্মঘটের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।

নদীতে চলাচলকারী এসব নৌযানে চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে একাধিকবার আবেদন জানিয়েছেন নৌযান মালিকরা। এতে কোনো সুফল মিলছে না। এ নিয়ে নৌযান শ্রমিকদের মাঝে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।

বুধবার বিকেলে ছাতকের সুরমা নদীর তীরে নৌযান শ্রমিক নেতাদের উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচি আয়োজন করা হয়। এ সময় শ্রমিক নেতারা বলেন, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নৌপথে অতিরিক্ত এবং অবৈধ চাঁদাবাজি বন্ধ না হলে ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে নৌ ধর্মঘটের কর্মসূচি পালন করা হবে। 

২০১৬ সালে অবৈধ চাঁদাবাজদের হামলায় নৌযানের সুকানি আরজ মিয়া নিহত হন। চাঁদাবাজরা তাঁকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছিল। ওই ঘটনায় মামলা হলেও নদীতে অবৈধ চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি। চলন্ত নৌযান থেকে নিয়মিতই চলছে চাঁদা আদায়। ব্রিটিশ আমল থেকেই ছাতক ব্যবসায়িক এলাকা হিসেবে পরিচিত। এখানে বালু-পাথরের ব্যবসার জন্য প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শত শত কার্গো-জাহাজ ও ইঞ্জিনচালিত স্টিলবডি বাল্কহেড এসে সুরমা নদীতে অবস্থান করে। এসব নৌযান বালু-পাথর নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রওনা হলে ঘাটে ঘাটে নামে-বেনামে চলে চাঁদাবাজি।

শুধু তাই নয়, চাঁদা না দিলে ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নৌযানের মাস্টার, সুকানি ও স্টাফদের কাছ থেকে মোবাইল ফোনসেট, নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এসব অপরাধের বিষয়ে স্থানীয় নৌ পুলিশের সহায়তা চেয়েও তেমন কোনো সুফল মিলছে না। এ ছাড়া কার্গো-জাহাজ ও ইঞ্জিনচালিত স্টিলবডি বাল্কহেডগুলোকে একাধিক স্থানে চাঁদা দিতে হয়। ন্যূনতম ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করে এসব চক্র। 

বাংলাদেশ কার্গো-ট্রলার বল্কহেড শ্রমিক ইউনিয়নের ছাতক শাখার সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক এলেমান জানান, সুরমা নদীতে ঘাটে ঘাটে অবৈধভাবে চাঁদাবাজি চলছে। পুলিশের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করা হলেও লাভ হয়নি।

সংগঠনের জেলা সভাপতি হাবিবুর রহমান জানান, নৌপথে চাঁদাবাজি বন্ধে ১২ দফা দাবি উল্লেখ করে এরই মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরসহ জেলা প্রশাসন এবং বিভিন্ন থানায় চিঠিও দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এ বিষয়ে একাধিক বৈঠক ও আলোচনার পরেও উল্লিখিত সমস্যার কোনো সমাধান মেলেনি।

সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বেপারি জানান, নদীতে দুটি কারণে চাঁদাবাজি হচ্ছে। এর মধ্যে উপজেলাভিত্তিক ইজারাটা স্থলভাগে। সেটি নদীপথে দেওয়ার কারণে অবৈধ চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক ইজারা দেওয়ার ক্ষেত্রে অসম প্রতিযোগিতার কারণে নৌযান শ্রমিক-মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। 

বিআইডব্লিউটিএর ছাতকের ইজাদার তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে সোহাগ আহমদ জানান, নদীতে নিয়ম মতোই সরকার নির্ধারিত হারেই চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। কখনও নৌযান থেকে বাড়তি টাকা নেওয়া হয় না। অনেক সময় নিয়মের চেয়েও কম চাঁদা আদায় করা হয়।  

ছাতক নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) আনোয়ার হোসেন জানান, ছাতক অঞ্চলে কোনো অবৈধ চাঁদাবাজি নেই। কেউ অবৈধ চাঁদা আদায়ের অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ অব ধ চ এক ধ ক ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলন ‘এক নেতা এক পদ’ নীতির বাস্তবায়ন দাবি এক নেতার

কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে ২০ সেপ্টেম্বর। এ উপলক্ষে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। সভাপতি পদে লড়ছেন দুজন, সাধারণ সম্পাদক পদে চারজন। ইতিমধ্যে প্রতীক নিয়ে ভোটের প্রচারণায় নেমেছেন প্রার্থীরা।

সম্মেলনে সভাপতি পদপ্রার্থী ও বর্তমান জেলা বিএনপির সহসভাপতি রুহুল হোসাইন আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের খরমপট্টি এলাকার সমবায় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ‘এক নেতা এক পদ’ নীতি বাস্তবায়নের দাবি তোলেন। তিনি বলেন, দলীয় গঠনতন্ত্রের ১৫ ধারা বাস্তবায়ন না হওয়ায় নেতৃত্বের বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। এ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে তা কার্যকর করার সুযোগ এসেছে।

রুহুল হোসাইন বলেন, বিভিন্ন ইউনিটের কাউন্সিলরদের কাছ থেকে ইতিমধ্যে দলের ভেতরে নানা অনিয়ম, অগঠনতান্ত্রিক বিষয়গুলো আলোচনায় আসায় তা থেকে বের হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বর্তমান জেলা সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শরীফুল আলমের উদ্দেশে তিনি বলেন, সাত জেলার দায়িত্বে থাকা একজন কেন্দ্রীয় পদধারী নেতার একই সঙ্গে জেলা সভাপতির দায়িত্ব পালন করা অনিয়ম ও বিভক্তি তৈরি করছে। বলয়কেন্দ্রিক রাজনীতিতে অনেক বর্ষীয়ান ও সম্ভাবনাময় নেতারা অবজ্ঞার শিকার হয়েছেন।

জেলা বিএনপির সহসভাপতি আরও বলেন, সভাপতি পরিবর্তন হলে কিশোরগঞ্জে অনিয়ম কমবে। সদর থেকে সভাপতি নির্বাচিত হলে জেলার বিভিন্ন দাপ্তরিক কার্যক্রমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পৃক্ততা থাকবে। জেলা–উপজেলার নেতা-কর্মীরা নজরে থাকবেন। এতে অনিয়ম কম হবে, যা দলের ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।

জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শরীফুল আলম বলেন, দলীয় গঠনতন্ত্র মেনেই তিনি প্রার্থী হয়েছেন। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের আস্থা থাকার কারণেই একাধিক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। শুধু তিনি নন, আরও অনেক নেতা কেন্দ্রীয় পদে থেকেও জেলায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

জেলা বিএনপি জানিয়েছে, প্রায় ৯ বছর পর এবার জেলা বিএনপির সম্মেলন হতে যাচ্ছে। এ উপলক্ষে পুরাতন স্টেডিয়ামে মঞ্চ, প্যান্ডেলসহ শহরে শতাধিক তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি বক্তব্য দেবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। উদ্বোধন করবেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সম্মেলনে সভাপতি পদে লড়ছেন রুহুল হোসাইন (ছাতা) ও মো. শরীফুল আলম (আনারস)। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল (ফুটবল), মাজহারুল ইসলাম (রিকশা), শফিকুল আলম রাজন (মাছ) ও সাজ্জাদুল হক (গোলাপ ফুল)।

সম্পর্কিত নিবন্ধ