আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে সরকার শিগগির পদক্ষেপ নেবে: আসিফ মাহমুদ
Published: 8th, February 2025 GMT
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকার শিগগির পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি বলেন, বিচারিক প্রক্রিয়া ছাড়াও নির্বাহী আদেশে সরকার যে কোনো দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। তবে নিষিদ্ধের বিষয়ে লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক (আইনি কাঠামো) কী হবে, সরকার এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি।
রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসস গতকাল শুক্রবার তাদের ওয়েবসাইটে আসিফ মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে। এতে তিনি বলেছেন, ‘বিচারিক প্রক্রিয়ায় স্বাভাবিকভাবে জুলাই-আগস্টের গণহত্যার সঙ্গে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হওয়ার কথা। সে ক্ষেত্রে দলীয়ভাবে তাদের নিষিদ্ধ, নিবন্ধন বাতিল করাসহ যে কোনো ব্যবস্থা সরকার নিতে পারে। আমি আশ্বস্ত করতে চাই, বাংলাদেশের জনগণের চাওয়ার প্রতিফলন ঘটাতে সরকার এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।’
আসিফ মাহমুদ বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও এক ধরনের ‘ঐকমত্য’ হচ্ছে, এটি অত্যন্ত ইতিবাচক। মানুষ তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলটির অগণতান্ত্রিক, একগুঁয়েমি মনোভাব ও কার্যকলাপ মেনে নিতে পারেনি। এ জন্যই ৫ আগস্টের আগে ও পরে তাদের নিষিদ্ধ করার বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এমন ঐকমত্য হলে সরকারের জন্য যে কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সহজ হবে।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, সাধারণ মানুষ কিংবা রাজনৈতিক দল; যে বা যারাই হই না কেন, আমরা এ দেশের জনগণকে রিপ্রেজেন্ট করি। ফলে ৫ আগস্টের পরে জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা ও চাওয়া, সেগুলো প্রাধান্য দেওয়া আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। বিএনপির পক্ষ থেকেও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের যে দাবি উঠেছে, তাকে সাধুবাদ জানাতে চাই।’
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠন বিষয়ে সরকারের এ উপদেষ্টা বলেন, ‘৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পরে আমরা অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেছি। গণঅভ্যুত্থান যারা ঘটান, পরবর্তী প্রক্রিয়ার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা না থাকার কারণে আমরা অতীতে দেখেছি, অভ্যুত্থানের সব অর্জন নষ্ট হয়ে যায়। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পরেও মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এসব বিবেচনা করে যারা স্বৈরাচার হটানোর আন্দোলনে অগ্রভাগে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তারা একটি দল গঠনের চিন্তা করেছে। তা ছাড়া ৫ আগস্টের পর গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া অনেকেই কোনো রাজনৈতিক ব্যানারে যাননি।’
ছাত্রদের নতুন দলে সরকারের প্রতিনিধি থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আমাদের নীতিগত অবস্থান হলো– বর্তমান সরকারের ছাত্র প্রতিনিধি যারা আছেন, তাদের মধ্য থেকে কেউ যদি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ নেন, তাহলে তাঁর সরকারে থাকা ঠিক হবে না। কেউ সে প্রক্রিয়ার সঙ্গে গেলে অবশ্যই সরকার থেকে পদত্যাগ করে সেখানে যাবেন।’ ছাত্রদের দলে নিজের অংশগ্রহণ বিষয়ে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমি এখনও ভাবিনি। কিছু বিষয় পর্যালোচনা করছি। সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে সবাই জানতে পারবে।’
সরকার সংস্কারের পক্ষে; রাজনৈতিক দলগুলো চাইছে দ্রুত নির্বাচন। বিষয়টি সাংঘর্ষিক কিনা– উত্তরে তিনি বলেন, ‘না, মোটেই সাংঘর্ষিক নয়। এসব বিষয় পুরোটাই আমাদের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে। বর্তমান সরকার স্পষ্টই একটি ইতিবাচক রাজনৈতিক কাঠামো নির্মাণের দায়িত্ব নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। ৫ আগস্টের পরে মানুষের মধ্যে এ মনোভাবই ছিল, যে কোনো একটি রাজনৈতিক দলকে যদি ক্ষমতায় বসিয়ে দেওয়া হয়, তবে সেও আগের গতানুগতিক ধারায় কাজ করবে। তবে এসব বিষয়ে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি সরকারও হচ্ছে। কারণ, সমাজের প্রতিটি কাঠামোতেই স্বৈরাচারের দোসররা রয়ে গেছে।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘সংস্কার ছাড়া নির্বাচন করে আমরা যদি কোনো দলের হাতে ক্ষমতা তুলে দিই, তাদের জন্য সরকার পরিচালনা কঠিন হবে। এ কারণে ছয়টি সংস্কার কমিশনকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এগুলো শাসনতান্ত্রিক সংস্কার। বাকি সংস্কার জনস্বার্থমূলক। সেগুলোও সমান গুরুত্বপূর্ণ।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ গণঅভ য ত থ ন ৫ আগস ট র সরক র র আওয় ম ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে মামলা মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ মির্জা ফখরুলের
গণঅভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে মামলা মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিকালে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নে দলীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গণসংযোগের সময় দেওয়া বক্তব্যে এই আহ্বান রাখেন তিনি।
শেখ হাসিনার শাসন আমলে বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল। গুম, খুন, ভিত্তিহীন মামলা, লুটপাট, টাকা পাচার, বাকস্বাধীনতা হরণ ও ভোট চুরিসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি।
আরো পড়ুন:
জুলাই গণহত্যা: শেখ হাসিনাসহ ৪০৮ জনের বিরুদ্ধে আরেক মামলা
হাসিনা-রেহানাসহ ২২ জনের গ্রেপ্তার-সংক্রান্ত প্রতিবেদন ১২ মে
শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমাদের নেতাকর্মীদের গুম করা হয়েছে। লাখ লাখ নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে, তাদের ঘরে থাকতে দেননি আপনি। আমরা তো কোথাও পালিয়ে যাইনি। আদালতে মিথ্যা মামলা আইনের মাধ্যমে ফেইস (মোকাবিলা) করেছি। উকিল ধরে জামিন নিয়েছি। আপনি (শেখ হাসিনা) পালিয়ে আছেন কেন? আপনিও মামলা লড়েন। আপনি দেশে এসে দাড়ান না দেখি।”
জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা অনেকে মনে করেন শেখ হাসিনা আবারো দেশে ফিরে আসবেন। তিনি তো ১৫ বছর দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার বাবা শেখ মুজিবুর রহমান একজন বিখ্যাত মানুষ ছিলেন। তার তো দেশ থেকে পালানোর কথা ছিল না। তিনি পালালেন কেন? কারণ তিনি একজন ডাইনি ছিলেন। জনগণের ওপর এমন নির্যাতন করেছেন যে, তিনি পালাতে বাধ্য হয়েছেন। জনগণ যদি সেদিন তাকে পেত, তাহলে ছিঁড়ে খেত।”
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, “হাসিনা দেশে ফিরে রাজনীতি করলে আমাদের কিছু করতে হবে না, জনগণই তাকে দেখে নেবে।”
আওয়ামী লীগের শাসনামলের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “বিএনপির নেতাকর্মীরা যেন আওয়ামী লীগের মতো অন্যায় না করে; এতে মানুষ ভালোবাসবে না। দলের কোনো নেতাকর্মীরা অন্যায় করলে যেন জেলার নেতারা তাদের শক্ত হাতে দমন করেন; তারা যেন অন্যায়কারীদের পুলিশের হাতে তুলে দেন। তাই অপকর্ম বন্ধ করুন, না হলে আওয়ামী লীগের মতো অবস্থা হবে।”
ত্রোদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দৃষ্টি রেখে জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। মির্জা ফখরুলসহ দলটির শীর্ষ নেতারা সভা-সমাবেশ করছেন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা, না রাখা নিয়ে ব্যাপক মতপার্থক্য রয়েছে; সেই সঙ্গে আইনি ঝক্কিও সামনে আসছে।
গণহত্যার দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একাধিক মামলায় আসামি করা হয়েছে শেখ হাসিনাকে। এ ছাড়া কয়েক শত ফৌজদারি মামলায় তিনি আসামি। অনেক মামলায় তাকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। তবে ভারতের আশ্রয়ে থাকা শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর কোনো নিশ্চয়তা এখনো তৈরি হয়নি।
গণঅভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ছোট বোন রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। সেদেশে উচ্চনিরাপত্তা শৃঙ্খলে বসবাস করছেন বলে আন্তর্জাতিক সাংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়ে থাকে। সেখান থেকে দেশে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে অনলাইনে তার কথোপকথনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যা নিয়ে অস্বস্তির কথা ভারতকে জানিয়ে রেখে অন্তর্বর্তী সরকার।
ঢাকা/মঈনুদ্দীন/মাসুদ