ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে অন্তর্বর্তী সরকার শিগগির পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি বলেন, বিচারিক প্রক্রিয়া ছাড়াও নির্বাহী আদেশে সরকার যে কোনো দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। তবে নিষিদ্ধের বিষয়ে লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক (আইনি কাঠামো) কী হবে, সরকার এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি।

রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসস গতকাল শুক্রবার তাদের ওয়েবসাইটে আসিফ মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে। এতে তিনি বলেছেন, ‘বিচারিক প্রক্রিয়ায় স্বাভাবিকভাবে জুলাই-আগস্টের গণহত্যার সঙ্গে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হওয়ার কথা। সে ক্ষেত্রে দলীয়ভাবে তাদের নিষিদ্ধ, নিবন্ধন বাতিল করাসহ যে কোনো ব্যবস্থা সরকার নিতে পারে। আমি আশ্বস্ত করতে চাই, বাংলাদেশের জনগণের চাওয়ার প্রতিফলন ঘটাতে সরকার এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।’

আসিফ মাহমুদ বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও এক ধরনের ‘ঐকমত্য’ হচ্ছে, এটি অত্যন্ত ইতিবাচক। মানুষ তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলটির অগণতান্ত্রিক, একগুঁয়েমি মনোভাব ও কার্যকলাপ মেনে নিতে পারেনি। এ জন্যই ৫ আগস্টের আগে ও পরে তাদের নিষিদ্ধ করার বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এমন ঐকমত্য হলে সরকারের জন্য যে কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সহজ হবে।

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, সাধারণ মানুষ কিংবা রাজনৈতিক দল; যে বা যারাই হই না কেন, আমরা এ দেশের জনগণকে রিপ্রেজেন্ট করি। ফলে ৫ আগস্টের পরে জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা ও চাওয়া, সেগুলো প্রাধান্য দেওয়া আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। বিএনপির পক্ষ থেকেও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের যে দাবি উঠেছে, তাকে সাধুবাদ জানাতে চাই।’

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠন বিষয়ে সরকারের এ উপদেষ্টা বলেন, ‘৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পরে আমরা অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেছি। গণঅভ্যুত্থান যারা ঘটান, পরবর্তী প্রক্রিয়ার সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা না থাকার কারণে আমরা অতীতে দেখেছি, অভ্যুত্থানের সব অর্জন নষ্ট হয়ে যায়। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পরেও মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এসব বিবেচনা করে যারা স্বৈরাচার হটানোর আন্দোলনে অগ্রভাগে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তারা একটি দল গঠনের চিন্তা করেছে। তা ছাড়া ৫ আগস্টের পর গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া অনেকেই কোনো রাজনৈতিক ব্যানারে যাননি।’

ছাত্রদের নতুন দলে সরকারের প্রতিনিধি থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে আমাদের নীতিগত অবস্থান হলো– বর্তমান সরকারের ছাত্র প্রতিনিধি যারা আছেন, তাদের মধ্য থেকে কেউ যদি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ নেন, তাহলে তাঁর সরকারে থাকা ঠিক হবে না। কেউ সে প্রক্রিয়ার সঙ্গে গেলে অবশ্যই সরকার থেকে পদত্যাগ করে সেখানে যাবেন।’ ছাত্রদের দলে নিজের অংশগ্রহণ বিষয়ে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমি এখনও ভাবিনি। কিছু বিষয় পর্যালোচনা করছি। সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে সবাই জানতে পারবে।’

সরকার সংস্কারের পক্ষে; রাজনৈতিক দলগুলো চাইছে দ্রুত নির্বাচন। বিষয়টি সাংঘর্ষিক কিনা– উত্তরে তিনি বলেন, ‘না, মোটেই সাংঘর্ষিক নয়। এসব বিষয় পুরোটাই আমাদের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে। বর্তমান সরকার স্পষ্টই একটি ইতিবাচক রাজনৈতিক কাঠামো নির্মাণের দায়িত্ব নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। ৫ আগস্টের পরে মানুষের মধ্যে এ মনোভাবই ছিল, যে কোনো একটি রাজনৈতিক দলকে যদি ক্ষমতায় বসিয়ে দেওয়া হয়, তবে সেও আগের গতানুগতিক ধারায় কাজ করবে। তবে এসব বিষয়ে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি সরকারও হচ্ছে। কারণ, সমাজের প্রতিটি কাঠামোতেই স্বৈরাচারের দোসররা রয়ে গেছে।’

উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘সংস্কার ছাড়া নির্বাচন করে আমরা যদি কোনো দলের হাতে ক্ষমতা তুলে দিই, তাদের জন্য সরকার পরিচালনা কঠিন হবে। এ কারণে ছয়টি সংস্কার কমিশনকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এগুলো শাসনতান্ত্রিক সংস্কার। বাকি সংস্কার জনস্বার্থমূলক। সেগুলোও সমান গুরুত্বপূর্ণ।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ গণঅভ য ত থ ন ৫ আগস ট র সরক র র আওয় ম ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

লন্ডনে ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠককে স্বাগত জানাল জেএসডি

লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের আলোচনা ও ঐকমত্যের সূচনাকে স্বাগত জানিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)। দলটি বলেছে, আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, জনগণ শুধু কথায় নয়, বাস্তবে সংস্কার ও বিচারের দৃশ্যমান অগ্রগতির পদক্ষেপ দেখতে চায়।

শুক্রবার জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন।

তারা বলেন, এই উচ্চপর্যায়ের সংলাপ দেশে রাজনৈতিক সমঝোতা ও জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থানের কাঙ্ক্ষিত অভিপ্রায় অনুযায়ী রাষ্ট্র সংস্কার, শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর এবং গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠার পথে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

বিবৃতিতে নেতারা বলেন, অধ্যাপক ইউনূস এবং তারেক রহমানের বৈঠক ও বিবৃতিতে আগামী বছরের পবিত্র রমজানের আগেই একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ এবং তার পূর্বশর্ত হিসেবে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার ও ফ্যাসিস্ট সরকারের বিচারের প্রক্রিয়ায় দৃশ্যমান অগ্রগতি অর্জনের ঘোষিত প্রত্যয়ে রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।

বিবৃতিতে বলা হয়, গণমানুষের রক্তস্নাত গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম দাবি- গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য কাঠামোগত মৌলিক সংস্কার এবং গণহত্যাকারী ফ্যাসিবাদী শক্তির বিচারের ব্যবস্থা। এই বিষয় দুটির দৃশ্যমান অগ্রগতিই কেবল একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ভিত্তি রচনা করতে পারে।

রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি সমাজের শ্রমজীবী, কর্মজীবী ও পেশাজীবীদের মতামত, আকাঙ্ক্ষা ও অংশগ্রহণে রাষ্ট্রীয় রাজনীতির মৌলিক সংস্কারের লক্ষ্যে দ্রুত ‘জাতীয় সনদ’ প্রণয়নের আহ্বান জানায় জেএসডি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নাগরিক সমাজ শাসকদের পক্ষে থাকে কেন?
  • আবু সাঈদ হত্যা: এক মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ ট্রাইব্যুনালের
  • রংপুরে আবু সাঈদ হত্যা: এক মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ ট্রাইব্যুনালের
  • গণঅভ্যুত্থানে আহত সামিউলের দিন কাটছে অনিশ্চয়তায়
  • লন্ডনে ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠককে স্বাগত জানাল জেএসডি