যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে টার্গেট করা হচ্ছে দাবি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার তিনি এ-সংক্রান্ত একটি নির্বাহী আদেশে সই করেন। আদেশে হুমকি দেওয়া হয়, যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েলসহ তার মিত্রদের বিরুদ্ধে যারা তদন্ত করবেন, তাদের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসন বাস্তবিক ও শক্ত পদক্ষেপ নেবে। এ ধরনের তদন্ত জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি।
গতকাল শুক্রবার দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এ ধরনের বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অত্যন্ত বিরল। গাজায় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের অভিযোগে গত নভেম্বরে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তাঁর সরকারের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আইসিসি। এ সিদ্ধান্তকে বিশ্বব্যাপী স্বাগত জানানো হলেও কড়া সমালোচনা করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল।
ট্রাম্প তাঁর আদেশে বলেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আদালতের আদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রকে কেন্দ্র করে এর প্রারম্ভিক তদন্ত ভয়ানক নজির স্থাপন করেছে। এর সঙ্গে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এতে তাদের অপমানিত হওয়া বা আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে। এটা করার কোনো আইনি বৈধতা আইসিসির নেই। তিনি আইসিসির বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারেরও অভিযোগ তোলেন।
ট্রাম্প প্রশাসন যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তার মধ্যে আছে– আইসিসি যুক্তরাষ্ট্রে কোনো সম্পদ ক্রয় করতে পারবে না, আদালতের কোনো কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্য দেশটিতে প্রবেশ করতে পারবেন না।
বিবিসির প্রতিবেদন জানায়, নির্বাহী আদেশে এ নিষেধাজ্ঞার নিন্দা জানিয়েছেন নেদারল্যান্ডসের হেগের আদালত। শুক্রবার এক বিবৃতিতে আইসিসি বলেছেন, তারা তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে দৃঢ়ভাবে আছেন। ট্রাম্পের এ ধরনের আদেশ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। বিবৃতিতে বিশ্বব্যাপী ন্যায়বিচার চালিয়ে যাওয়া ও লাখ লাখ নির্দোষ ভুক্তভোগীর আশা হয়ে থাকার অঙ্গীকারও পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। এর আগে ইউক্রেন আগ্রাসনের জন্য রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও রোহিঙ্গা নিপীড়নের দায়ে মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আইসিসি। যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের ১২০টি দেশ এর সদস্য হলেও যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েল সেখানে নেই।
প্রশ্ন উঠছে, ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞায় কতটুকু ক্ষতির মুখে পড়বে আইসিসি। আদালতের সাবেক কর্মকর্তা এরিক উইট ব্রাসেলস থেকে আলজাজিরাকে বলেন, এটা নির্ভর করছে সদস্য দেশগুলোর ওপর। তাদের অবশ্যই আইসিসির সমর্থনে এগিয়ে আসতে হবে। আইসিসি দুর্বল হলে কেবল ফিলিস্তিনিই নয়, ইউক্রেন, সুদান, আফগানিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কার্যক্রম চালানো কঠিন হবে।
জার্মানি বলেছে, ট্রাম্প নিষেধাজ্ঞা দিলেও তারা আইসিসিকে সমর্থন দিয়ে যাবে। আর ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান বলেছেন, কোনো ধরনের বাধা ছাড়া আইসিসিকে অবশ্যই বিশ্বব্যাপী দায়মুক্তির বিরুদ্ধে কাজ করতে দিতে হবে। সামাজিক মাধ্যম এক্সে তিনি লেখেন, আন্তর্জাতিক অপরাধের জবাবদিহির নিশ্চয়তা দেন এ আদালত। ইউরোপ সব সময় ন্যায়বিচার ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের পাশে থাকবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ল ব নন ইসর য় ল আইস স ইসর য় ল ধরন র আইস স
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলে ইরানের নতুন হামলায় নিহত বেড়ে ৫, আহত ২৯
ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে অন্তত চার জায়গায় হামলা চালিয়েছে ইরান। এ হামলায় তিনজন নিহত হয় বলে জানায় জেরুজালেম পোস্ট। বিবিসি আরও দুইজন নিহতের খবর দেয়। এরপর আরেকজনের ফলে নতুন হামলায় ইসরায়েলে নিহত বেড়ে পাঁচজনে পৌঁছাল।
আজ সোমবার আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের অ্যাম্বুলেন্স ও ব্লাড ব্যাংক সংস্থাগুলো বলছে, এসব হামলায় ২৯ জন আহত হয়েছেন।
বিবিসির খবরে বলা হয়, ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম জানান, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী, একজন পুরুষ।
এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে হামলায় একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়াও বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়াও সেখান আরও তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।
এর আগে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছিল, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।
আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।
সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।
ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।
সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’
তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।
এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।