Samakal:
2025-08-02@01:02:51 GMT

শব্দদূষণ বিধিমালাতেই গলদ!

Published: 8th, February 2025 GMT

শব্দদূষণ বিধিমালাতেই গলদ!

শহর-গ্রাম সর্বত্র শব্দদূষণে মানুষ অতিষ্ঠ। শব্দদূষণের বড় কারণ দীর্ঘক্ষণ উচ্চ স্বরে মাইক চলা। একটি মাইকে ১০০ ডেসিবেলের বেশি শব্দ তৈরি হয়। অথচ মানুষের জন্য এর সহনীয় মাত্রা ৪৫ ডেসিবেল। এর চেয়ে অধিক মাত্রার শব্দ মানুষের শ্রবণশক্তি কমিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি শরীরের রক্তচাপ বৃদ্ধি ও হৃদযন্ত্রের কম্পন বাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া শব্দদূষণের কারণে হজম শক্তি কমে; মাংসপেশির খিঁচুনি হয় এবং শিশুদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবমতে, শব্দদূষণজনিত কারণে অনেক মানুষের প্রাণহানি ঘটে, যা ম্যালেরিয়া ও এইডসে মৃত্যুর চেয়ে বেশে। এ তো গেল স্বাস্থ্যগত ক্ষতির কথা। মাইকের অধিক শব্দের কারণে বাসাবাড়ির শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটে; বয়োজ্যেষ্ঠদের ঘুম বিঘ্নিত হয়। শীতের সময় ধর্মীয় কাজে তথা ওয়াজ-মাহফিলের নামে রাতভর মাইক বাজানোর প্রচলন আমরা দেখছি। এতে নানাবিধ সমস্যা তৈরি হয়। এমনকি বাসাবাড়িতে অবস্থানকারীদের ইবাদতেও বিঘ্ন ঘটে। রাস্তায় পণ্যের বিজ্ঞাপন, মিছিল-মিটিং, সমাবেশ, নির্বাচনী প্রচারকাজ এবং বিভিন্ন দিবসে পাড়া-মহল্লায় উচ্চস্বরে গান বাজানোর মাধ্যমেও শব্দদূষণ হয়ে থাকে। এগুলো নিয়ন্ত্রণে শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬-এর অধীন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ক্ষমতা দেওয়া আছে। কর্তৃপক্ষ সে ক্ষমতা  প্রয়োগের মাধ্যমে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কিন্তু স্বয়ং এই বিধিমালাই ধর্মীয় কাজে মাইকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে বাধা হয়ে আছে। কারণ সেখানে ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে এর বাইরে রাখা হয়েছে।

যদিও মাইক ব্যবহার করে ধর্মীয় কাজ করার চেয়ে নীরবে ধর্মীয় আচার পালনের মাধ্যমে অধিক পুণ্য হাসিল করা যায়। ইসলামে ফরজ ইবাদতে সবচেয়ে পুণ্য লাভ করা যায়। অথচ এগুলো পালনে কোনো ক্ষতিকর শব্দের সৃষ্টি হয় না। মসজিদে নামাজ আদায়কালে শুধু ইমাম সাহেব মুখে কোরআন তেলাওয়াত করেন; সেটাও আবার পাঁচ ওয়াক্তের মধ্যে তিন ওয়াক্তে। বাড়িতে নামাজ পড়লেও কোনো শব্দের সৃষ্টি হয় না। রোজা পালনে কোনো শব্দ নেই। জাকাত প্রদানেও নেই। হজে শুধু বছরে একবার নির্দিষ্ট দেশে নির্দিষ্ট স্থানে উপস্থিত লোকেরা মুখে ‘লাব্বাইক’ উচ্চারণ করেন; তাতে পরিবেশ দূষণ করার মতো শব্দ সৃষ্টি হয় না। 

শব্দদূষণের সম্ভাব্য সব উৎস বন্ধ করা দরকার। আমাদের শব্দদূষণ আইন আছে বটে, কিন্তু এর প্রয়োগ কতটা আছে? নববর্ষেও সরকারের পক্ষ থেকে আতশবাজি বন্ধের মাধ্যমে শব্দদূষণ না করার অনুরোধ জানানো হয়ে থাকে। বাস্তবে রাজধানীতে যেই শব্দদূষণ দেখা যায়, তা দুঃখজনক। শব্দদূষণ আইনের প্রয়োগ জরুরি। তার আগে আইনটি বাস্তবতার আলোকে সংশোধন করা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে চব্বিশের জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী অনেক কিছুই সংস্কার করার কাজে মনোনিবেশ করেছে অন্তবর্তী সরকার। আশা করি, শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালার আলোচিত ধারায় সংশোধন আনা করা যেতে পারে। আইন সংশোধন যদি সম্ভব নাও হয়, কিছু নীতিমালা প্রণীত হলেও করা দরকার, যা ধর্মীয় কাজে মাইক ব্যবহারের নির্দেশিকা হিসেবে কাজে লাগতে পারে। 

শেষে এসে ইংরেজি সাহিত্যের সেই বাঘ শিকারের গল্পের কথা বলা যাক। জনৈক ব্যক্তি তার প্রভাব প্রতিপত্তি প্রদর্শনের জন্য বাঘ শিকারের ইচ্ছা পোষণ করেন। দিনক্ষণ দেখে তিনি একদিন বনে গেলেন। গাছের তলায় ছাগল বেঁধে মাচায় অপেক্ষা করছেন। একসময় ছাগল খেতে বাঘ এলে লোকটা গুলি ছুড়লেন। বাঘ মারা গেল কিন্তু বাঘের গায়ে কোনো রক্ত বা গুলির চিহ্ন নেই। পোস্টমর্টেম করে জানা গেল, গুলিতে নয়; গুলির শব্দে বাঘটি মারা গেছে। সেই বাঘের মতো আমরাও অদৃশ্য উচ্চশব্দের ‘আঘাতে’ মারা যাচ্ছি না তো? 

হোসেন আল-আমিন:
অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

১১ নাটক নিয়ে শিল্পকলায় চলছে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ নাট্যোৎসব’

জুলাই আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত ১১ দলের ১১টি নতুন প্রযোজনা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমিতে চলছে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ নাট্যোৎসব’। জাতীয় নাট্যশালায় গত ৩১ জুলাই শুরু হওয়া এই নাট্যোৎসব চলবে ৮ আগস্ট পর্যন্ত। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে আয়োজিত এ উৎসবে নাট্যরূপে উঠে আসছে ইতিহাস, আন্দোলন ও সময়ের গল্প।
উৎসবের দ্বিতীয় দিন গতকাল শুক্রবার জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় ‘শুভঙ্কর হাত ধরতে চেয়েছিল’। তীরন্দাজ রেপার্টরি প্রযোজিত নাটকটির রচনা ও নির্দেশনায় দীপক সুমন। গতকালই ছিল এ নাটকের উদ্বোধনী প্রদর্শনী। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মঞ্চস্থ নতুন এ নাটক নিয়ে আলোচনা হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে উল্লেখযোগ্য দর্শকের উপস্থিতি ছিল। দর্শকদের অনেকেই বলছেন, এই নাটকে যেন এক নাগরিকের নির্জনতা, এক প্রেমিকের না-পাওয়া, এক বিপ্লবীর বিষণ্নতা আর এক সাধারণ মানুষের অসহায়তা একসূত্রে বাঁধা পড়েছে।

জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে শুক্রবার ‘শুভঙ্কর হাত ধরতে চেয়েছিল’ নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন ছিল। ছবি:শিল্পকলা একাডেমি

সম্পর্কিত নিবন্ধ