Samakal:
2025-05-01@11:50:52 GMT

গাজরে বদলেছে চাষিদের ভাগ্য

Published: 9th, February 2025 GMT

গাজরে বদলেছে চাষিদের ভাগ্য

বাবুল হোসেন মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার চর-আজিমপুরের কৃষক। চলতি বছর সাত বিঘা জমিতে গাজরের চাষ করেছেন। এতে তাঁর খরচ হয়েছে সাড়ে তিন লাখ টাকা। বিক্রি করেছেন সাত লাখ টাকায়। প্রতি বিঘা জমিতে গাজর চাষ করে তাঁর লাভ হয়েছে ৪০ হাজার টাকার মতো। এ উপজেলায় আবাদ হওয়া গাজরের সুনাম দেশজুড়ে। যে কারণে বাবুলের মতো অন্য চাষিরাও প্রতি মৌসুমে বিপুল অঙ্কের টাকা মুনাফা করছেন। 
উপজেলা কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, সিংগাইরে চলতি মৌসুমে গাজর চাষ হয়েছে ৯৫০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদিত গাজর বিক্রি হবে অন্তত ৫০ কোটি টাকার। তাদের দাবি, উপজেলায় উৎপাদিত গাজর দিয়ে দেশের চাহিদার ৪০ শতাংশই মেটানো যায়। এমনকি বেলে দোঁআশ মাটিতে উৎপন্ন এ সবজির কদর রয়েছে প্রবাসেও। 
সম্প্রতি কয়েক দিন ধরে উপজেলার কয়েকটি গ্রামের কৃষকের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তাদের ভাষ্য, দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই সিংগাইরের জয়মন্টপ এলাকায় শুরু হয়েছিল গাজর চাষ। লাভজনক ফসল হওয়ায় দিন দিন আবাদি জমি বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে জয়মন্টপ ইউনিয়নের দুর্গাপুর, চর দুর্গাপুর, ভাকুম, চর ভাকুম, পূর্ব ভাকুম, পশ্চিম ভাকুম গ্রামসহ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে গাজরের চাষ। এসব গ্রামের পরিচিতি এখন গাজরের গ্রাম হিসেবেই।
এসব এলাকার গাজরের সুনাম দেশের নানা প্রান্তে। নোয়াখালী থেকে আসা সিদ্দিক মিয়া বলেন, ২৫ বছর ধরে তিনি গাজরের ব্যবসা করছেন। আগের ঢাকার কারওয়ান বাজার থেকে গাজর কিনে নোয়াখালী ও চট্টগ্রামে বিক্রি করতেন। ১০ বছর ধরে তিনি সরাসরি সিংগাইরে চলে আসেন। স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে গাজর কিনে নেন। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে পরিবহন ভাড়া ও শ্রমিকের মজুরি দিন দিন বাড়ছে জানিয়ে সিদ্দিক মিয়া বলেন, এতে লাভের পরিমাণ কমছে। অনেকে কারওয়ান বাজার থেকে বিদেশে রপ্তানি করেন। তাদের লাভের পরিমাণ অনেক বেশি।
ভাগ্যবদলের গল্প
চরদুর্গাপুরের কৃষক রহিম মিয়া গাজর চাষ করছেন দুই যুগ ধরে। নিজের জমির পাশাপাশি অন্যের জমিও ভাড়ায় নেন। এক সময় তাঁর সংসারে অভাব থাকলেও এখন দিন ঘুরেছে। চলতি মৌসুমেই তিনি ১ একর ৮০০ শতাংশ জমিতে চাষ করেছেন গাজরের। প্রতি বিঘায় (৩০ শতাংশ) তাঁর খরচ হয় ২৫ হাজার টাকা। ফলন ভালো হলে গাজর মেলে ২৫০-৩০০ মণের মতো। বাজারদর অনুযায়ী প্রতি বিঘার ফলন বিক্রি করেন ৬০-৮০ হাজার টাকা। 
রহিমের ভাষ্য, এলাকার অনেক কৃষকই তাঁর মতো গাজর চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এই সবজি চাষে সুবিধার পাশাপাশি বেশ কিছু অসুবিধাও রয়েছে। তাঁর চোখে এর মধ্যে অন্যতম হলো– বীজ বিপণনকারী সিন্ডিকেট। প্রতি বছর কোনো কারণ ছাড়াই এই সিন্ডিকেট বীজের দাম বাড়িয়ে দেয়। গত বছর কেজিপ্রতি বীজ কিনেছেন ১৫ হাজার ৮০০ টাকায়, এবার কিনতে হয়েছে ১৮ হাজার ৮০০ টাকায়। অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে গাজর পরিপক্ব হওয়ার আগেই নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া এক মণ গাজর মাঠ থেকে বাজারজাত করতে শ্রমিক ও পরিবহন খরচ হয় ১৪০ টাকা। হিমাগারে রাখলে ৮০ কেজি ওজনের এক বস্তা গাজরের জন্য গুনতে হয় এক হাজার টাকা। অপরদিকে চীন থেকেও গাজর আমদানি করেন অনেকে। আমদানি বন্ধ হলে কৃষকেরা আরও বেশি লাভবান হতেন। 
ভাকুম এলাকার কৃষক জয়নাল হোসেন বলেন, তারা আগে গাজর নিজেরাই বাজারজাত করতেন। কিন্তু ঝামেলা এড়াতে কয়েক বছর ধরে ক্ষেতেই ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন। চলতি বছর তিনি সাত বিঘা জমিতে গাজর আবাদ করেছেন। এতে সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার মতো। গাজর পরিপক্ব হওয়ার আগেই ক্ষেত ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন।
চাষ ও পরিষ্কার পদ্ধতি
সিংগাইরের বেলে দোঁআশ মাটিতে গাজর চাষ ভালো হয়। আশ্বিন-কার্তিক মাসে বীজ বপন করতে হয়। ৯০ দিনের মধ্যে পরিপক্ব হতে শুরু করে গাজর। ১২০ দিনের মধ্যে ক্ষেত থেকে না তুললে গাজর ফেটে নষ্ট হয়ে যায় বলে কৃষকেরা জানিয়েছেন।
মহিবুল্লা অন্য শ্রমিকদের সঙ্গে ক্ষেত থেকে তোলা গাজর পরিষ্কার করেন। তিনি বলেন, আগে একটি খোলা তৈরি করে কয়েকজন পা দিয়ে ঘষে ঘষে গাজর পরিষ্কার করতেন। চলতি বছর মেশিন দিয়ে গাজর পরিষ্কার করা হচ্ছে। পা দিয়ে যেখানে ৮০ কেজির ১২০ বস্তা গাজর পরিষ্কার করা যেত, একই পরিমাণ শ্রমিক মেশিনের সহায়তায় ৮০ কেজির ৩০০-৪০০ বস্তা পরিষ্কার করা যায়। 
সারা বছর অন্য কাজ করেন কৃষি শ্রমিক জমির উদ্দিন। জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত তাঁর ব্যস্ততা গাজর ঘিরে। জমি থেকে গাজর তোলা ও পরিষ্কারের কাজ করেন। তাঁর দলে আছেন ১০ জন। ৮০ কেজির এক বস্তা গাজর ধুয়ে পরিষ্কার করে বস্তাবন্দি করা পর্যন্ত তাদের মজুরি ১২০ টাকা। দিনে গড়ে ১০০-১১০ বস্তার কাজ করতে পারেন তারা। আয় রোজগার বছরের অন্য সময়ের চেয়ে ভালো। 
সিংগাইরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা দুলাল চন্দ্র সরকার বলেন, উপজেলায় গাজর আবাদের অধিকাংশ জমিই জয়মন্টপ ইউনিয়নে। প্রতিটি জমির মালিক শীতকালে গাজর চাষ করেন; এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখেন না। যাদের জমি নেই, তারা অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে চাষ করেন। এতে তাদের সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে। বিক্রি নিয়ে কৃষকদের চিন্তাও করতে হয় না। পাইকারেরা সরাসরি মাঠ থেকে কিনে নেন। কোনো কোনো কৃষক জমি থেকে না তুলেই বিক্রি করে দেন। 
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড.

রবীআহ নূর আহমেদ জানিয়েছেন, অক্টোবরের শেষের দিকে গাজরের আবাদ শুরু হয়। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে তোলা শুরু হয়, যা মার্চ পর্যন্ত চলে। গাজর পরিপক্ব হতে প্রায় তিন মাস সময় লাগে। গত বছর ৯৫০ হেক্টর জমিতে গাজরের আবাদ হয়েছিল। চলতি বছরে তা বেড়ে ৯৬০ হেক্টর হয়েছে। এর মধ্যে ৯৫০ হেক্টরই সিংগাইরের জমি। এ উপজেলায় উৎপাদিত গাজর দিয়ে দেশের চাহিদার ৪০ শতাংশ মেটানো সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। চলতি মৌসুমে উপজেলার কৃষকেরা ৫০ কোটি টাকার গাজর বিক্রি করতে পারবেন বলেও জানান। 
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র চ ষ কর উপজ ল য় উপজ ল র ৮০ ক জ কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

জিআই সনদ পেলো কিশোরগঞ্জের পনির ও রাতাবোরো ধান 

ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের সনদ পেয়েছে কিশোরগঞ্জের রাতাবোরো ধান ও জেলার ব্র্যান্ডিং পণ্য অষ্টগ্রামের পনির।

বুধবার (৩০ এপ্রিল) রাজধানী ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর আয়োজিত ‘বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবস ২০২৫’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ সনদ গ্রহণ করেন কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান।

অনুষ্ঠানে কিশোরগঞ্জের রাতাবোরো ধান ও পনিরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ২৪টি পণ্যকে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) নিবন্ধন সনদ দেওয়া হয়।

আরো পড়ুন:

হাওরে ধানের বাম্পার ফলন, দাম কমে যাওয়ায় চিন্তায় কৃষক

আজারবাইজানের সঙ্গে কানেক্টিভিটি বাড়াতে সম্মত প্রধান উপদেষ্টা

শিল্প সচিব মো. ওবায়দুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, বিশিষ্ট শিল্পী, অভিনেত্রী ও সঙ্গীত পরিচালক আরমিন মুসা ও বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও নওগাঁ জেলার বদলগাছি উপজেলার নাকফজলি আমচাষি সমবায় সমিতির লোকজন।

কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান জানান, কিশোরগঞ্জের রাতাবোরো ধান ও জেলার ব্র্যান্ডিং পণ্য অষ্টগ্রামের পনির ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) স্বীকৃতি এ জেলার কৃষি ও খাদ্যশিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। এতে স্থানীয় এ দুটি পণ্যের মান ও খ্যাতি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

ঢাকা/রুমন/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ