Samakal:
2025-11-03@23:31:23 GMT

গাজরে বদলেছে চাষিদের ভাগ্য

Published: 9th, February 2025 GMT

গাজরে বদলেছে চাষিদের ভাগ্য

বাবুল হোসেন মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার চর-আজিমপুরের কৃষক। চলতি বছর সাত বিঘা জমিতে গাজরের চাষ করেছেন। এতে তাঁর খরচ হয়েছে সাড়ে তিন লাখ টাকা। বিক্রি করেছেন সাত লাখ টাকায়। প্রতি বিঘা জমিতে গাজর চাষ করে তাঁর লাভ হয়েছে ৪০ হাজার টাকার মতো। এ উপজেলায় আবাদ হওয়া গাজরের সুনাম দেশজুড়ে। যে কারণে বাবুলের মতো অন্য চাষিরাও প্রতি মৌসুমে বিপুল অঙ্কের টাকা মুনাফা করছেন। 
উপজেলা কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, সিংগাইরে চলতি মৌসুমে গাজর চাষ হয়েছে ৯৫০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদিত গাজর বিক্রি হবে অন্তত ৫০ কোটি টাকার। তাদের দাবি, উপজেলায় উৎপাদিত গাজর দিয়ে দেশের চাহিদার ৪০ শতাংশই মেটানো যায়। এমনকি বেলে দোঁআশ মাটিতে উৎপন্ন এ সবজির কদর রয়েছে প্রবাসেও। 
সম্প্রতি কয়েক দিন ধরে উপজেলার কয়েকটি গ্রামের কৃষকের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তাদের ভাষ্য, দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই সিংগাইরের জয়মন্টপ এলাকায় শুরু হয়েছিল গাজর চাষ। লাভজনক ফসল হওয়ায় দিন দিন আবাদি জমি বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে জয়মন্টপ ইউনিয়নের দুর্গাপুর, চর দুর্গাপুর, ভাকুম, চর ভাকুম, পূর্ব ভাকুম, পশ্চিম ভাকুম গ্রামসহ উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে গাজরের চাষ। এসব গ্রামের পরিচিতি এখন গাজরের গ্রাম হিসেবেই।
এসব এলাকার গাজরের সুনাম দেশের নানা প্রান্তে। নোয়াখালী থেকে আসা সিদ্দিক মিয়া বলেন, ২৫ বছর ধরে তিনি গাজরের ব্যবসা করছেন। আগের ঢাকার কারওয়ান বাজার থেকে গাজর কিনে নোয়াখালী ও চট্টগ্রামে বিক্রি করতেন। ১০ বছর ধরে তিনি সরাসরি সিংগাইরে চলে আসেন। স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে গাজর কিনে নেন। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে পরিবহন ভাড়া ও শ্রমিকের মজুরি দিন দিন বাড়ছে জানিয়ে সিদ্দিক মিয়া বলেন, এতে লাভের পরিমাণ কমছে। অনেকে কারওয়ান বাজার থেকে বিদেশে রপ্তানি করেন। তাদের লাভের পরিমাণ অনেক বেশি।
ভাগ্যবদলের গল্প
চরদুর্গাপুরের কৃষক রহিম মিয়া গাজর চাষ করছেন দুই যুগ ধরে। নিজের জমির পাশাপাশি অন্যের জমিও ভাড়ায় নেন। এক সময় তাঁর সংসারে অভাব থাকলেও এখন দিন ঘুরেছে। চলতি মৌসুমেই তিনি ১ একর ৮০০ শতাংশ জমিতে চাষ করেছেন গাজরের। প্রতি বিঘায় (৩০ শতাংশ) তাঁর খরচ হয় ২৫ হাজার টাকা। ফলন ভালো হলে গাজর মেলে ২৫০-৩০০ মণের মতো। বাজারদর অনুযায়ী প্রতি বিঘার ফলন বিক্রি করেন ৬০-৮০ হাজার টাকা। 
রহিমের ভাষ্য, এলাকার অনেক কৃষকই তাঁর মতো গাজর চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এই সবজি চাষে সুবিধার পাশাপাশি বেশ কিছু অসুবিধাও রয়েছে। তাঁর চোখে এর মধ্যে অন্যতম হলো– বীজ বিপণনকারী সিন্ডিকেট। প্রতি বছর কোনো কারণ ছাড়াই এই সিন্ডিকেট বীজের দাম বাড়িয়ে দেয়। গত বছর কেজিপ্রতি বীজ কিনেছেন ১৫ হাজার ৮০০ টাকায়, এবার কিনতে হয়েছে ১৮ হাজার ৮০০ টাকায়। অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে গাজর পরিপক্ব হওয়ার আগেই নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া এক মণ গাজর মাঠ থেকে বাজারজাত করতে শ্রমিক ও পরিবহন খরচ হয় ১৪০ টাকা। হিমাগারে রাখলে ৮০ কেজি ওজনের এক বস্তা গাজরের জন্য গুনতে হয় এক হাজার টাকা। অপরদিকে চীন থেকেও গাজর আমদানি করেন অনেকে। আমদানি বন্ধ হলে কৃষকেরা আরও বেশি লাভবান হতেন। 
ভাকুম এলাকার কৃষক জয়নাল হোসেন বলেন, তারা আগে গাজর নিজেরাই বাজারজাত করতেন। কিন্তু ঝামেলা এড়াতে কয়েক বছর ধরে ক্ষেতেই ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন। চলতি বছর তিনি সাত বিঘা জমিতে গাজর আবাদ করেছেন। এতে সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার মতো। গাজর পরিপক্ব হওয়ার আগেই ক্ষেত ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন।
চাষ ও পরিষ্কার পদ্ধতি
সিংগাইরের বেলে দোঁআশ মাটিতে গাজর চাষ ভালো হয়। আশ্বিন-কার্তিক মাসে বীজ বপন করতে হয়। ৯০ দিনের মধ্যে পরিপক্ব হতে শুরু করে গাজর। ১২০ দিনের মধ্যে ক্ষেত থেকে না তুললে গাজর ফেটে নষ্ট হয়ে যায় বলে কৃষকেরা জানিয়েছেন।
মহিবুল্লা অন্য শ্রমিকদের সঙ্গে ক্ষেত থেকে তোলা গাজর পরিষ্কার করেন। তিনি বলেন, আগে একটি খোলা তৈরি করে কয়েকজন পা দিয়ে ঘষে ঘষে গাজর পরিষ্কার করতেন। চলতি বছর মেশিন দিয়ে গাজর পরিষ্কার করা হচ্ছে। পা দিয়ে যেখানে ৮০ কেজির ১২০ বস্তা গাজর পরিষ্কার করা যেত, একই পরিমাণ শ্রমিক মেশিনের সহায়তায় ৮০ কেজির ৩০০-৪০০ বস্তা পরিষ্কার করা যায়। 
সারা বছর অন্য কাজ করেন কৃষি শ্রমিক জমির উদ্দিন। জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত তাঁর ব্যস্ততা গাজর ঘিরে। জমি থেকে গাজর তোলা ও পরিষ্কারের কাজ করেন। তাঁর দলে আছেন ১০ জন। ৮০ কেজির এক বস্তা গাজর ধুয়ে পরিষ্কার করে বস্তাবন্দি করা পর্যন্ত তাদের মজুরি ১২০ টাকা। দিনে গড়ে ১০০-১১০ বস্তার কাজ করতে পারেন তারা। আয় রোজগার বছরের অন্য সময়ের চেয়ে ভালো। 
সিংগাইরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা দুলাল চন্দ্র সরকার বলেন, উপজেলায় গাজর আবাদের অধিকাংশ জমিই জয়মন্টপ ইউনিয়নে। প্রতিটি জমির মালিক শীতকালে গাজর চাষ করেন; এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখেন না। যাদের জমি নেই, তারা অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে চাষ করেন। এতে তাদের সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে। বিক্রি নিয়ে কৃষকদের চিন্তাও করতে হয় না। পাইকারেরা সরাসরি মাঠ থেকে কিনে নেন। কোনো কোনো কৃষক জমি থেকে না তুলেই বিক্রি করে দেন। 
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড.

রবীআহ নূর আহমেদ জানিয়েছেন, অক্টোবরের শেষের দিকে গাজরের আবাদ শুরু হয়। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে তোলা শুরু হয়, যা মার্চ পর্যন্ত চলে। গাজর পরিপক্ব হতে প্রায় তিন মাস সময় লাগে। গত বছর ৯৫০ হেক্টর জমিতে গাজরের আবাদ হয়েছিল। চলতি বছরে তা বেড়ে ৯৬০ হেক্টর হয়েছে। এর মধ্যে ৯৫০ হেক্টরই সিংগাইরের জমি। এ উপজেলায় উৎপাদিত গাজর দিয়ে দেশের চাহিদার ৪০ শতাংশ মেটানো সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। চলতি মৌসুমে উপজেলার কৃষকেরা ৫০ কোটি টাকার গাজর বিক্রি করতে পারবেন বলেও জানান। 
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র চ ষ কর উপজ ল য় উপজ ল র ৮০ ক জ কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।

সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ