Samakal:
2025-08-01@21:55:58 GMT

নেতারা না চেনায় ৪৮ কর্মী ছাঁটাই

Published: 10th, February 2025 GMT

নেতারা না চেনায় ৪৮ কর্মী ছাঁটাই

২০২৪ সালের ১৪ নভেম্বর। নগরের চকবাজারের কাঁচাবাজারে হাজির হন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তাঁকে ঘিরে ধরেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মী। চকবাজার ওয়ার্ডে কর্মরত পরিচ্ছন্নতাকর্মীরাও জড়ো হন। তাদের হাজিরা নেবেন স্বয়ং মেয়র। একে একে নাম ধরে ডাকছেন। সামনে এসে দাঁড়ান পরিচ্ছন্নতাকর্মী। মেয়র স্থানীয় বিএনপি নেতাদের কাছে জানতে চান, একে কাজ করতে দেখেছেন? কারও জন্য ‘হ্যাঁ’ বলছেন নেতাকর্মীরা, কারও বেলায় বলেছেন ‘না’।
তারা যাদের কাজের স্বীকৃতি দেননি, তাদের গত ৩০ জানুয়ারি চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশনের অফিস আদেশে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিতির কারণে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
শ্রমিকরা জানান, কর্মস্থলে অনুপস্থিতির কোনো সুযোগ নেই। সুপারভাইজারদের হাজিরার পাশাপাশি ওয়ার্ড কার্যালয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে হয়। তা ছাড়া তিন শিফটে কাজ করেন তারা। স্থানীয় বিএনপি নেতারা স্বাভাবিকভাবে তাদের চেনার কথা নয়। তাদের অভিযোগ, দুর্মূল্যের বাজারে হঠাৎ চাকরি চলে যাওয়ায় পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। চাকরিচ্যুতদের স্থলে বিএনপি নেতাদের ঘনিষ্ঠদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, ৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১১টির ৪৮ পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ২০১৬ সালে ডোর টু ডোর কর্মসূচির আওতায় তাদের নিয়োগ দিয়েছিলেন সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। গত ৩০ জানুয়ারি সিটি করপোরেশনের সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিনের সই করা অফিস আদেশে বলা হয়েছে, ‘মেয়র বিভিন্ন ওয়ার্ডের কার্যক্রম পরিদর্শনকালে ৪৮ জন ডোর টু ডোর অস্থায়ী শ্রমিককে কর্মস্থলে অনুপস্থিত পেয়েছেন। ৪৮ জন ডোর টু ডোর শ্রমিক দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিতির কারণে বেতন-ভাতাদি বন্ধ করাসহ সিটি করপোরেশনের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়ে ১৫ জানুয়ারি কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়।’ ১৬ জানুয়ারি থেকে বেতন-ভাতা বন্ধ করে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
৪৮ জনের মধ্যে ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডে সর্বোচ্চ ১৭ জন, ১৬ নম্বর চকবাজারে ৯ জন, ২০ নম্বর দেওয়ানবাজার ওয়ার্ডে ৬ জন, ৫ নম্বর মোহরা ওয়ার্ড ও ৩২ নম্বর আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডে তিনজন করে ছয়জন, ৭ নম্বর পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ড, ১৫ নম্বর বাগমনিরাম ওয়ার্ড, ১৯ নম্বর দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ড ও ২৬ নম্বর উত্তর হালিশহর ওয়ার্ডে ২ জন করে আটজন, ২১ নম্বর জামালখান ওয়ার্ড ও ৩৮ নম্বর দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডে একজন করে দুজন।
চকবাজার ওয়ার্ডের চাকরি হারানো পরিচ্ছন্নতাকর্মী হৃদয় দাশ বলেন, ‘মেয়র যেদিন আমাদের হাজিরা নেন, সেদিন আমার ও বাবার নাম জিজ্ঞেস করেছিলেন। আমি উত্তর দিয়েছি। এর মধ্যে মেয়রের সঙ্গে যারা ছিলেন তারা মেয়রকে বলেন, তারা আমাকে কাজ করতে দেখেননি। অথচ আমি ৩০ দিনই কাজ করি। গত ২২ নভেম্বর আমার মা মারা যান। সেদিনও আমি কাজ করেছি। প্রায় ১০ বছর ধরে কাজ করছি। একেক দিন একেক জায়গায় কাজ করি। তারা আমাদের চিনবেন কী করে? আমার বেতনের টাকায় পরিবার চলে। এভাবে চাকরি চলে গেলে পরিবার নিয়ে কোথায় যাব আমি?’ ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডের শ্রমিক মো.

দেলোয়ার বলেন, ‘মেয়র যেদিন হাজিরা নেন, সেদিন তাঁর সঙ্গে বিএনপি নেতারা ছিলেন। তারা বলেছেন, আমাকে দেখেননি। আমি কাজ করি কালামিয়া বাজারের অলিগলিতে, আমাকে বলিরহাটের লোকজন কীভাবে চিনবেন? তাদের একটি কথার কারণে প্রতিদিন কাজ করার পরও চাকরিটা হারাতে হচ্ছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনটি ওয়ার্ডের তিনজন সুপারভাইজার বলেন, ‘কোন ওয়ার্ডে কোন শ্রমিক ফাঁকি দেন, তা সুপারভাইজাররা ভালো জানবেন। বিএনপি নেতারা তো তা জানবেন না। সুপারভাইজারদের কাছ থেকে তথ্য না নেওয়ায় প্রকৃত শ্রমিকরা চাকরি হারিয়েছেন।’
গত বছরের ৫ নভেম্বর সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব নেন ডা. শাহাদাত হোসেন। ১০ নভেম্বর নগরের ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিদর্শনে যান। কালামিয়া বাজারে পৌঁছলে স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা তাকে ঘিরে ধরেন। ভিড়ের মধ্যে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের হাজিরা নেন মেয়র। একইভাবে ১৪ নভেম্বর চকবাজারের কাঁচাবাজারে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের হাজিরা নেন মেয়র। এ সময়ও তাঁকে ঘিরে ছিলেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। উপস্থিত নেতারা যাদের কাজের স্বীকৃতি দেননি তারা অব্যাহতি পেয়েছেন।
চকবাজার ওয়ার্ডের হাজিরার দিন উপস্থিত ছিলেন নগর যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এমদাদুল হক বাদশা। কীসের ভিত্তিতে শ্রমিকদের কাজের স্বীকৃতি দিয়েছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মেয়র স্থানীয় নেতাকর্মীদের জিজ্ঞেস করেছিলেন, কারা কাজ করেন আর কারা করেন না। বিএনপি নেতাকর্মীরা যাদের নিয়মিত কাজ করতে দেখেন, তাদের দেখেছেন বলে বলেছেন।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মেয়র পরিদর্শনে গিয়ে যাদের অনুপস্থিত পেয়েছেন, তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিএনপি নেতাদের স্বীকৃতি নয়, মেয়র রাজনৈতিক নেতা। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ আছে। উপস্থিত স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে জানতে চেয়েছেন, কোন পরিচ্ছন্নতাকর্মী কাজ করেন আর কে কাজ করেন না। যারা কাজ করেন না বলে জানিয়েছেন, তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স থ ন য় ব এনপ ন ত কর ম ত কর ম র ক জ কর ন চকব জ র ব কল য়

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ