Samakal:
2025-06-16@03:05:47 GMT

নেতারা না চেনায় ৪৮ কর্মী ছাঁটাই

Published: 10th, February 2025 GMT

নেতারা না চেনায় ৪৮ কর্মী ছাঁটাই

২০২৪ সালের ১৪ নভেম্বর। নগরের চকবাজারের কাঁচাবাজারে হাজির হন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তাঁকে ঘিরে ধরেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মী। চকবাজার ওয়ার্ডে কর্মরত পরিচ্ছন্নতাকর্মীরাও জড়ো হন। তাদের হাজিরা নেবেন স্বয়ং মেয়র। একে একে নাম ধরে ডাকছেন। সামনে এসে দাঁড়ান পরিচ্ছন্নতাকর্মী। মেয়র স্থানীয় বিএনপি নেতাদের কাছে জানতে চান, একে কাজ করতে দেখেছেন? কারও জন্য ‘হ্যাঁ’ বলছেন নেতাকর্মীরা, কারও বেলায় বলেছেন ‘না’।
তারা যাদের কাজের স্বীকৃতি দেননি, তাদের গত ৩০ জানুয়ারি চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশনের অফিস আদেশে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিতির কারণে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
শ্রমিকরা জানান, কর্মস্থলে অনুপস্থিতির কোনো সুযোগ নেই। সুপারভাইজারদের হাজিরার পাশাপাশি ওয়ার্ড কার্যালয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে হয়। তা ছাড়া তিন শিফটে কাজ করেন তারা। স্থানীয় বিএনপি নেতারা স্বাভাবিকভাবে তাদের চেনার কথা নয়। তাদের অভিযোগ, দুর্মূল্যের বাজারে হঠাৎ চাকরি চলে যাওয়ায় পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। চাকরিচ্যুতদের স্থলে বিএনপি নেতাদের ঘনিষ্ঠদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, ৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১১টির ৪৮ পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ২০১৬ সালে ডোর টু ডোর কর্মসূচির আওতায় তাদের নিয়োগ দিয়েছিলেন সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। গত ৩০ জানুয়ারি সিটি করপোরেশনের সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিনের সই করা অফিস আদেশে বলা হয়েছে, ‘মেয়র বিভিন্ন ওয়ার্ডের কার্যক্রম পরিদর্শনকালে ৪৮ জন ডোর টু ডোর অস্থায়ী শ্রমিককে কর্মস্থলে অনুপস্থিত পেয়েছেন। ৪৮ জন ডোর টু ডোর শ্রমিক দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিতির কারণে বেতন-ভাতাদি বন্ধ করাসহ সিটি করপোরেশনের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়ে ১৫ জানুয়ারি কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়।’ ১৬ জানুয়ারি থেকে বেতন-ভাতা বন্ধ করে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
৪৮ জনের মধ্যে ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডে সর্বোচ্চ ১৭ জন, ১৬ নম্বর চকবাজারে ৯ জন, ২০ নম্বর দেওয়ানবাজার ওয়ার্ডে ৬ জন, ৫ নম্বর মোহরা ওয়ার্ড ও ৩২ নম্বর আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডে তিনজন করে ছয়জন, ৭ নম্বর পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ড, ১৫ নম্বর বাগমনিরাম ওয়ার্ড, ১৯ নম্বর দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ড ও ২৬ নম্বর উত্তর হালিশহর ওয়ার্ডে ২ জন করে আটজন, ২১ নম্বর জামালখান ওয়ার্ড ও ৩৮ নম্বর দক্ষিণ মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডে একজন করে দুজন।
চকবাজার ওয়ার্ডের চাকরি হারানো পরিচ্ছন্নতাকর্মী হৃদয় দাশ বলেন, ‘মেয়র যেদিন আমাদের হাজিরা নেন, সেদিন আমার ও বাবার নাম জিজ্ঞেস করেছিলেন। আমি উত্তর দিয়েছি। এর মধ্যে মেয়রের সঙ্গে যারা ছিলেন তারা মেয়রকে বলেন, তারা আমাকে কাজ করতে দেখেননি। অথচ আমি ৩০ দিনই কাজ করি। গত ২২ নভেম্বর আমার মা মারা যান। সেদিনও আমি কাজ করেছি। প্রায় ১০ বছর ধরে কাজ করছি। একেক দিন একেক জায়গায় কাজ করি। তারা আমাদের চিনবেন কী করে? আমার বেতনের টাকায় পরিবার চলে। এভাবে চাকরি চলে গেলে পরিবার নিয়ে কোথায় যাব আমি?’ ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডের শ্রমিক মো.

দেলোয়ার বলেন, ‘মেয়র যেদিন হাজিরা নেন, সেদিন তাঁর সঙ্গে বিএনপি নেতারা ছিলেন। তারা বলেছেন, আমাকে দেখেননি। আমি কাজ করি কালামিয়া বাজারের অলিগলিতে, আমাকে বলিরহাটের লোকজন কীভাবে চিনবেন? তাদের একটি কথার কারণে প্রতিদিন কাজ করার পরও চাকরিটা হারাতে হচ্ছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনটি ওয়ার্ডের তিনজন সুপারভাইজার বলেন, ‘কোন ওয়ার্ডে কোন শ্রমিক ফাঁকি দেন, তা সুপারভাইজাররা ভালো জানবেন। বিএনপি নেতারা তো তা জানবেন না। সুপারভাইজারদের কাছ থেকে তথ্য না নেওয়ায় প্রকৃত শ্রমিকরা চাকরি হারিয়েছেন।’
গত বছরের ৫ নভেম্বর সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব নেন ডা. শাহাদাত হোসেন। ১০ নভেম্বর নগরের ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিদর্শনে যান। কালামিয়া বাজারে পৌঁছলে স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা তাকে ঘিরে ধরেন। ভিড়ের মধ্যে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের হাজিরা নেন মেয়র। একইভাবে ১৪ নভেম্বর চকবাজারের কাঁচাবাজারে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের হাজিরা নেন মেয়র। এ সময়ও তাঁকে ঘিরে ছিলেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। উপস্থিত নেতারা যাদের কাজের স্বীকৃতি দেননি তারা অব্যাহতি পেয়েছেন।
চকবাজার ওয়ার্ডের হাজিরার দিন উপস্থিত ছিলেন নগর যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এমদাদুল হক বাদশা। কীসের ভিত্তিতে শ্রমিকদের কাজের স্বীকৃতি দিয়েছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মেয়র স্থানীয় নেতাকর্মীদের জিজ্ঞেস করেছিলেন, কারা কাজ করেন আর কারা করেন না। বিএনপি নেতাকর্মীরা যাদের নিয়মিত কাজ করতে দেখেন, তাদের দেখেছেন বলে বলেছেন।’
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মেয়র পরিদর্শনে গিয়ে যাদের অনুপস্থিত পেয়েছেন, তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিএনপি নেতাদের স্বীকৃতি নয়, মেয়র রাজনৈতিক নেতা। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ আছে। উপস্থিত স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে জানতে চেয়েছেন, কোন পরিচ্ছন্নতাকর্মী কাজ করেন আর কে কাজ করেন না। যারা কাজ করেন না বলে জানিয়েছেন, তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স থ ন য় ব এনপ ন ত কর ম ত কর ম র ক জ কর ন চকব জ র ব কল য়

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনায় এক মাসে ১৩ লাশ উদ্ধার, বাড়ছে উদ্বেগ

বাড়িতে ঝগড়া চলছিল বড় ভাই ও ভাবির। ছোট ভাই এসে ঝগড়া থামানোর চেষ্টা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বড় ভাই ছোট ভাইয়ের মাথায় শাবল দিয়ে আঘাত করেন। মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ধারালো বঁটি দিয়ে ছোট ভাইকে হত্যা করেন। পরে বড় ভাই শহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৩০ মে, খুলনার কয়রা উপজেলার বাগালী ইউনিয়নের উলা গ্রামে।

এর আগে ২৭ মে কয়রার ইসলামপুর গ্রামের কয়রা নদীর চর থেকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় আবদুল মজিদ (৬২) নামের এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া ৮ জুন কয়রার কাছারিবাড়ি বাজার-সংলগ্ন পুকুর থেকে নমিতা (৪০) নামের এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়।

১০ জুন কয়রা সদরের গোবরা সড়কে এক ভ্যানচালকের সঙ্গে এক মোটরসাইকেলচালকের কথা-কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন অন্তত ১৫ জন। ঘটনায় ১২ জনকে আসামি করে থানায় মামলাও হয়েছে। এ ছাড়া কথা-কাটাকাটির জেরে কয়রার পল্লীমঙ্গল গ্রামে গত তিন দিনে কয়েক দফা মারামারি, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

অসন্তোষ-দ্বন্দ্বের জেরে কয়রা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় হত্যা–সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। ১০ মে থেকে ৯ জুন পর্যন্ত এক মাসে খুলনার ১০টি থানা এলাকায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাসহ ১৩টি লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে।

কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উপাদান কমে যাওয়ায় মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। মূল্যবোধ ও ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব ও ভালোবাসা কমে যাচ্ছে। এতে খুনখারাবি বাড়ছে। একসময় সমাজের একজনের ভালোতে সবাই আনন্দ পেতেন। নেতিবাচক দিকগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতেন। এখন সেই ব্যবস্থা উঠেই গেছে বলা যায়। পাশাপাশি রাজনৈতিক আধিপত্যের লড়াইয়ে প্রভাববলয় সৃষ্টি করতেও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।

৩ জুন খুলনা শহরে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে সবুজ হাওলাদার (৩০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। ৪ জুন খুলনা সদর থানার মতিয়াখালী খালের মধ্যে আটকে ছিল এক নারীর মরদেহ। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। ওই নারীর পরিচয় না পেয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুলে দাফন করা হয়। গত ৯ জুন বিকেলে রূপসা উপজেলার আঠারোবেকী নদীতে পাওয়া যায় অজ্ঞাতনামা যুবকের মরদেহ। মরদেহের শ্বাসনালিতে গভীর ক্ষতচিহ্ন ছিল। রূপসা নৌ পুলিশের ওসি আবুল খায়ের বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি হত্যাকাণ্ড।

এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রহস্য উদ্‌ঘাটন ও অপরাধী শনাক্তে দীর্ঘসূত্রতার কারণেই অপরাধ বেড়ে চলেছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরোর কয়রা উপজেলা শাখার সভাপতি তরিকুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে দোষীদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারলে অপরাধপ্রবণতা কমে আসবে। আইনি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে অপরাধ বেড়ে চলেছে।

কয়রা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুলী বিশ্বাস বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ছে, এটা ঠিক। তবে প্রতিটি ঘটনায় পুলিশও তাৎক্ষণিকভাবে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যে বিষয়গুলো পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধের মধ্য দিয়ে সমাধান করা যায়, সেখানে খুনাখুনি, অস্থিরতা, মামলা-হামলার মধ্য দিয়ে একধরনের বিভীষিকাময় পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে; যা সবার জন্যই অকল্যাণকর ও ভয়ানক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ