আকাশপথে যাত্রীদের স্বার্থ রক্ষায় উড়োজাহাজের টিকিটের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি প্রতিরোধে ১০টি নির্দেশনা জারি করেছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। আজ মঙ্গলবার মন্ত্রণালয় এ–সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করে। নির্দেশনাগুলো হলো—

১. অনতিবিলম্বে গ্রুপ-টিকিট বুকিংসহ যেকোনো টিকিট সংরক্ষণের ক্ষেত্রে যাত্রীর নাম, পাসপোর্ট নম্বর এবং পাসপোর্টের ফটোকপি বাধ্যতামূলকভাবে সংযুক্ত করতে হবে। বুকিংয়ের তিন দিনের মধ্যে নির্দিষ্ট যাত্রীর নামে টিকিট ইস্যু না হলে ৭২ ঘণ্টা পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা বাতিল হয়ে যাবে।

২.

এ পরিপত্র জারির তারিখ পর্যন্ত গ্রুপ-বুকিংয়ের মাধ্যমে এয়ারলাইনস/ট্রাভেল এজেন্সি যে টিকিট ব্লক করেছে, সেগুলো আগামী সাত দিনের মধ্যে যাত্রীর নাম, পাসপোর্ট নম্বর, পাসপোর্ট কপিসহ বিক্রি নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনস স্বয়ংক্রিয়ভাবে টিকিট বাতিল করবে।

৩. গ্রুপ-বুকিংয়ের ক্ষেত্রে বিক্রির সঙ্গে সঙ্গেই টিকিটের প্রকৃত মূল্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে জানাতে হবে এবং তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।

৪. সব ধরনের এয়ার টিকিট অনলাইনে বিক্রির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে এবং টিকিটের মূল্য অনলাইনে ও টিকিটের গায়ে উল্লেখ থাকতে হবে।

আরও পড়ুনউড়োজাহাজের টিকিটের দাম বাড়ানোর সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে তদন্ত কমিটি গঠন০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

৫. এয়ারলাইনস ও ট্রাভেল এজেন্সিগুলো ১৯৮৪ সালের বেসামরিক বিমান চলাচল বিধিমালা অনুযায়ী ট্যারিফ ফিলিংয়ের নিয়ম মেনে চলবে এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) অনুমোদিত ট্যারিফ ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে।

৬. কোনো এয়ারলাইনস কিংবা ট্রাভেল এজেন্সি বেবিচকের অনুমোদিত ভাড়ার বাইরে অতিরিক্ত দামে টিকিট বিক্রি করতে পারবে না। ট্রাভেল এজেন্সিগুলো বাধ্যতামূলকভাবে যাত্রীকে এয়ারলাইনস থেকে নির্ধারিত মূল্যের টিকিট ও বিক্রির রসিদ দেবে।

৭. প্রয়োজন না থাকলেও অতিরিক্ত টিকিট মজুত করে অন্য এজেন্টের মাধ্যমে বিক্রির কারণে যদি টিকিটের দাম বাড়ে, তাহলে সংশ্লিষ্ট ট্রাভেল এজেন্সির নিবন্ধন সনদ স্থগিত বা বাতিল করা হবে।

৮. বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনাকারী এয়ারলাইনস ও ট্রাভেল এজেন্সিগুলো বিদেশগামী শ্রমিকদের জন্য বিশেষ বিমান ভাড়ার ব্যবস্থা করবে।

৯. মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়াসহ প্রবাসী কর্মীদের টিকিট ভাড়া কমানোর লক্ষ্যে আগামী সাত দিনের মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসসহ সব এয়ারলাইনস ও বোর্ড অব এয়ারলাইনস রিপ্রেজেন্টেটিভস (বিএআর) প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

১০. ২০১৩ সালের বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) আইনের আওতায় অনিবন্ধিত ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে টিকিট বিক্রি বন্ধ করতে হবে।

এই নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুনএকই দূরত্ব, তবু কলকাতার চেয়ে ঢাকা থেকে উড়োজাহাজের টিকিটের দাম দ্বিগুণ০৭ এপ্রিল ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত করত

এছাড়াও পড়ুন:

‘ভোল পাল্টে’ সক্রিয় কিশোর গ্যাং, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে এখন ভোল পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিড়েছে তারা।

সম্প্রতি এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৩ এপ্রিল তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এরপর গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় তরুণ। ওই তরুণেরা রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় মিছিল-সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করে আসছেন। ফলে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কিশোরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল চর আবাবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দারের হাতে। তাঁরা এসব কিশোরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কিশোরেরা ভোল পাল্টে বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসব তরুণকে নতুন করে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রহিম ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাঁর পদপদবি নেই।

জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় আবদুর রহিমকেও আসামি করা হয়। মামলার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি—এমন অভিযোগ প্রায় করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’

ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দার বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিইনি। তারা (কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা) আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতা-কর্মী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নেতা-কর্মীর অপকর্মের দায় দল নেবে না।

জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে সাব্বির হোসেন, জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ৮–১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা করেছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।

জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ফেরাতে না পারলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। কেউ যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ