হজরত আবু যার (রা.)–এর বরাতে একটি হাদিসে বলা হয়েছে, তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছ থেকে বর্ণনা করেন যে, ‘তিনি বলেছেন, আমি মক্কায় থাকা অবস্থায় আমার ঘরের ছাদ খুলে দেওয়া হলো। তারপর জিবরাইল (আ.) এসে আমার বক্ষ বিদীর্ণ করলেন। আর তা জমজমের পানি দিয়ে ধুলেন। এরপর হিকমত ও ইমানে ভর্তি একটি সোনার পাত্র নিয়ে এসে আমার বুকের মধ্যে ঢেলে দিয়ে বন্ধ করে দিলেন। অতঃপর হাত ধরে আমাকে দুনিয়ার আকাশের দিকে নিয়ে চললেন।
‘পরে যখন দুনিয়ার আকাশে আসলাম জিবরাইল (আ.
‘এরপর যখন আমাদের জন্য দুনিয়ার আসমান খুলে দেওয়া হলো, আর আমরা দুনিয়ার আসমানে প্রবেশ করলাম, তখন দেখি সেখানে একজন বসে আছেন যাঁর ডানে এবং বাঁয়ে অনেকগুলো মানুষের আকৃতি রয়েছে। তিনি ডানদিকে তাকালে হেসে উঠছেন, আর বাঁয়ে তাকালে কাঁদছেন। তিনি বললেন, স্বাগত, হে সৎ নবী ও সৎ সন্তান। আমি জিবরাইল (আ.) কে প্রশ্ন করলাম, এই ব্যক্তিটি কে? তিনি জবাব দিলেন, ইনি আদম (আ.)। তাঁর ডানে-বাঁয়ে রয়েছে তাঁর সন্তানদের রুহ। ডান দিকের লোকেরা জান্নাতি, বাঁ দিকের লোকেরা জাহান্নামি। তাই ডানে তাকালে তিনি হাসছেন, বাঁয়ে তাকালে কাঁদছেন।
এরপর জিবরাইল (আ.) আমাকে নিয়ে দ্বিতীয় আসমানে উঠলেন। তারপর এর রক্ষককে বললেন, দরজা খোলো। তখন এই রক্ষক প্রথম রক্ষকের মতোই প্রশ্ন করলেন। পরে দরজা খুলে দেওয়া হলো।’
আরও পড়ুনসুরা ইয়াসিনে এক কাঠমিস্ত্রির ঘটনা০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩আনাস (রা.) বলেন, ‘আবু যার (রা.) উল্লেখ করেন যে রাসুলুল্লাহ (সা.) আসমানগুলোতে আদম (আ.), ইদ্রিস (আ.), মুসা (আ.), ঈসা (আ.) ও ইব্রাহিম (আ.)-এর সাক্ষাৎ পান। তবে আবু যার (রা.) সেসব স্থান সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেননি। শুধু এটুকু উল্লেখ করেছেন যে তিনি আদম (আ.)-কে দুনিয়ার আকাশে ও ইব্রাহিম (আ.)-কে ষষ্ঠ আকাশে পেয়েছিলেন।’
আনাস (রা.) বলেন, ‘জিবরাইল (আ.) যখন মহানবী (সা.)-কে নিয়ে ইদ্রিস (আ.)-এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন ইদ্রিস (আ.) বলেন, বাহ্, ও ভাই, ও পুণ্যবান নবী। আমি (রাসুলুল্লাহ) বললাম, তিনি কে? জিবরাইল (আ.) বললেন ইনি হচ্ছেন ইদ্রিস (আ.)।
এরপর আমি মুসা (আ.)-এর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি বলেন, বাহ্, হে সৎ নবী ও পুণ্যবান ভাই। আমি বললাম, ইনি কে? জিবরাইল (আ.) বললেন, ইনি মুসা (আ.)।
আরও পড়ুনগাছের গুঁড়ি কেঁদেছিল, জুমার খুতবা শুনে ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩অতঃপর আমি ঈসা (আ.)-কে অতিক্রম করার সময় তিনি বললেন, বাহ্, হে সৎ নবী ও পুণ্যবান ভাই। আমি প্রশ্ন করলাম, তিনি কে? জিবরাইল (আ.) বললেন, তিনি ঈসা (আ.)। তারপর আমি ইব্রাহিম (আ.)-কে পেরিয়ে যাওয়ার সময় তিনি বললেন, বাহ্, হে পুণ্যবান নবী ও পুণ্যবান সন্তান। আমি বললাম, ইনি কে? জিবরাইল (আ.) বললেন, ইনি ইব্রাহিম (আ.)।’
ইবনে শিহাব বলেন, ইবনে হায্ম (রহ.) আমাকে বলেছেন যে ইবনে আব্বাস ও আবু হাব্বা আল-আনসারী উভয়েই বলতেন, ‘নবী (সা.) বলেছেন, এরপর আমাকে আরও ওপরে নিয়ে যাওয়া হলো। এমন একটি সমতল স্থানে নেওয়া হলো যেখানে আমি লেখার শব্দ শুনতে পেলাম।’
ইবনে হায্ম ও আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেছেন যে ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তারপর আল্লাহ আমার উম্মতের ওপর ৫০ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করে দিলেন। আমি সেটা নিয়ে ফিরে আসি। মুসা (আ.)-কে পার হওয়ার সময় তিনি বললেন, আল্লাহ আপনার উম্মতের ওপর কী ফরজ করেছেন? আমি বললাম, ৫০ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেছেন। তিনি বললেন, আপনি আপনার পালনকর্তার কাছে ফিরে যান, আপনার উম্মত তো এতটা পালন করতে পারবে না। আমি তখন ফিরে গেলাম। আল্লাহ তাআলা কিছুটা কমিয়ে দিলেন। আমি মুসা (আ.)-কে পার হওয়ার সময় বললাম, কিছুটা অংশ (আল্লাহ) কমিয়ে দিয়েছেন। তিনি বললেন, আপনি আবার আপনার রবের কাছে ফিরে যান। কারণ আপনার উম্মত এটুকুও আদায় করতে পারবে না। আমি ফিরে গেলাম।
আরও পড়ুনসুরা হাশরের ২২থেকে ২৪ আয়াতের ফজিলত১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩তখন আরও কিছু অংশ কমিয়ে দেওয়া হলো। আবারও মুসা (আ.)-এর কাছে গেলাম। এবারও তিনি বললেন, আপনি আবার আপনার প্রতিপালকের কাছে যান। কারণ আপনার উম্মত এও আদায় করতে পারবে না। তখন আমি আবার গেলাম। তখন আল্লাহ বললেন, এই পাঁচটিই (পূণ্যের হিসাবে) ৫০ (বলে গণ্য হবে)। আমার কথার কোনো রদবদল হয় না। আমি আবার মুসা (আ.)-এর কাছে গেলে তিনি আমাকে আবারও বললেন, আপনার প্রতিপালকের কাছে আরেকবার যান। আমি বললাম, আরেকবার আমার প্রতিপালকের কাছে যেতে আমি লজ্জাবোধ করছি। তখন জিবরাইল (আ.) আমাকে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। সে সময় সেটি নানা রঙে রঞ্জিত ছিল। আমি এর তাৎপর্য সম্পর্কে অবগত ছিলাম না।’
সহিহ বুখারি ৩৪৯
আরও পড়ুনবিবাহবিচ্ছেদে আল্লাহ যা মানতে বলেছেন সুরা তালাকে১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স প ট ম বর র সময় ত ন আল ল হ বল ছ ন বলল ন বলল ম ত রপর আসম ন
এছাড়াও পড়ুন:
রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।
এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।
অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’
অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’
এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।
আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।