রোগ নিয়ন্ত্রণ, টিকা, পুষ্টি কার্যক্রমসহ স্বাস্থ্যের ৩৮টি বড় উন্নয়ন কর্মসূচি সচলে বিকল্প ভাবছে সরকার। এক ছাতার নিচে সবক’টি কীভাবে কার্যকর করা যায়, তা নিয়ে আগামী সপ্তাহে বৈঠক ডেকেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বৈঠকে অংশীজনের মতামত নেওয়া হবে। এরপর চলতি মাসেই সরকার নতুন কর্মকৌশল প্রণয়ন করবে বলে সূত্র জানিয়েছে।

দেশের স্বাস্থ্য খাতের সিংহভাগ অবকাঠামো, রোগ প্রতিরোধ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হয় কৌশলগত পরিকল্পনার (ওপি) মাধ্যমে। পাঁচ বছর মেয়াদি সেক্টর কর্মসূচি প্রায় সাত মাস বন্ধ থাকায় পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে আছেন অনেকে। ১৯৯৮ সালে প্রথম সেক্টর কর্মসূচি শুরু হয়। বর্তমানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুটি বিভাগের আওতায় মোট ৩৮টি সেক্টর কর্মসূচি রয়েছে।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ সূত্র জানায়, গত বছর জুনে শেষ হয়েছে ‘চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচি (এইচপিএনএসপি)’। জুলাইয়ে ১ লাখ ৬ হাজার ১০০ কোটি টাকার পঞ্চম এইচপিএনএসপি শুরু হয়ে ২০২৯ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও অনুমোদন মেলেনি। এতে স্বাস্থ্যের সব উন্নয়ন ও রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে ভাটা পড়েছে। তবে সরকার চলমান কর্মসূচি দুই বছরের মধ্যে শেষ করে সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় খরচে সমন্বিত ব্যবস্থাপনায় একই কর্মসূচি চালানোর পরিকল্পনা করছে। এ জন্য নতুন পরিকল্পনার সফট ও হার্ডকপি আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পাঠানোর নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

গত ৬ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব শিরিন আকতারের সই করা এক চিঠিতে সেক্টর কর্মসূচির বিকল্প পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, পরিকল্পনা কমিশন থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা আছে, পঞ্চমটিকে সর্বশেষ সেক্টর কর্মসূচি ধরে একটি এক্সিট প্ল্যান অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এ জন্য একটি কমিটি করেছি, তারা কাজ করছে।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর ডা.

হালিমুর রশিদ বলেন, গত বছরের জুলাই থেকে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত দুই বছরের জন্য ওপি পরিচালনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সাত মাস চলে গেছে। বাকি এক বছর চার মাস ধরে এক্সিট পরিকল্পনা দিতে বলা হয়েছে। এরপর নতুন করে কর্মসূচি কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, সে পরিকল্পনাও দিতে হবে। যতটি সেক্টর কর্মসূচি আছে, সবাইকে পৃথকভাবে চলতি মাসের মধ্যে পরিকল্পনা দিতে বলা হয়েছে।

জনস্বাস্থ্যবিদদের সংগঠন পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট (ইলেক্ট) অধ্যাপক ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, নতুন কোনো কর্মসূচি নিতে হলে অন্তত দুই বছর আগে কার্যক্রম শুরু করতে হয়। সরকার চলমান ওপি বাস্তবায়ন করার পাশাপাশি নতুন কর্মকৌশল নিয়ে বিস্তর আলোচনা করতে পারে। সবার সম্মতি নিয়ে নতুন কর্মকৌশল নির্ধারণ করতে হবে।

জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘আগামী দু-তিন বছরের মধ্যে বড় ধরনের পরিবর্তনের মাধ্যমে পুরো ওপি থেকে বের হতে হবে। একই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্য সেক্টর কর্মসূচি নির্ধারণ করতে হবে। ইন্টিগ্রেটর হেলথকেয়ার ডেলিভারি সিস্টেমের আওতায় এক ছাতার নিচেই হবে সবকিছু।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বছর র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

আয় বেড়েছে ৩৫২ কোটি টাকা, তবু মুনাফা কমল ৯০ কোটি

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ কোম্পানি রেনাটার মুনাফা কমে গেছে। কোম্পানিটি চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই–মার্চ) মুনাফা করেছে ১৬৮ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের চেয়ে কোম্পানিটির মুনাফা কমেছে ৯০ কোটি টাকা বা ৩৫ শতাংশ। ২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে রেনাটা ২৫৮ কোটি টাকা মুনাফা করেছিল।

গতকাল বুধবার কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সভায় চলতি অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়। সেই প্রতিবেদন থেকে কোম্পানিটির মুনাফা কমে যাওয়ার এ তথ্য পাওয়া গেছে। যদিও এই সময়ে কোম্পানিটির ব্যবসা বেড়েছে।

আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, রেনাটা গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছররের মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে ৩ হাজার ১৩৩ কোটি টাকার ব্যবসা বা আয় করেছে। এই আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৫২ কোটি টাকা বা প্রায় ১৩ শতাংশ বেশি। ২০২৩–২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসে কোম্পানিটির তাদের ব্যবসা থেকে আয় করেছিল ২ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা। আয় যতটা বেড়েছে তার চেয়ে বেশি হারে বেড়েছে উৎপাদন খরচ। রেনাটার চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ৩ হাজার ১৩৩ কোটি টাকার ব্যবসা বা আয়ের বিপরীতে উৎপাদন খরচ হয়েছে ১ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা। তার আগের অর্থবছরের একই সময়ে ২ হাজার ৭৮১ কোটি টাকার আয়ের বিপরীতে কোম্পানিটির উৎপাদন খরচ ছিল ১ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির উৎপাদন খরচ বেড়েছে ৩১৪ টাকা বা ২১ শতাংশ।

এ ছাড়া কোম্পানির পণ্য বিক্রি, উৎপাদিত পণ্য সরবরাহ এবং ব্যাংকঋণের সুদ বাদ খরচও আগের বছরের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে রেনাটার পণ্য বিক্রি ও সরবরাহ বাবদ খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৩৪ কোটি টাকায়। আগের অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৭০৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে এই খাতে কোম্পানিটির খরচ বেড়েছে ১২৫ কোটি টাকা বা ১৮ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে রেনাটার সুদ বাবদ খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২৫ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৮০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে ঋণের সুদ বাবদ কোম্পানিটির খরচ বেড়েছে ৪৫ কোটি টাকা বা ৫৬ শতাংশের বেশি।

কোম্পানি–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পণ্য বিক্রি, সরবরাহ ও ঋণের সুদ বাবদ খরচ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে যাওয়ায় কোম্পানিটির মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ জন্য মুনাফা আগের বছরের চেয়ে কমে গেছে।

চলতি অর্থবছরের ৯ মাসের পাশাপাশি চলতি বছরের প্রথম তিন মাসের আয়–ব্যয়ের হিসাবও আলাদাভাবে প্রকাশ করেছে রেনাটা। তাতে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে কোম্পানিটি ১ হাজার ৬৫ কোটি টাকার ব্যবসা করে মুনাফা করেছে ৫৬ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে কোম্পানিটি ৯২১ কোটি টাকার ব্যবসা করে ৭২ কোটি টাকার মুনাফা করেছিল।

রেনাটা লিমিটেড শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত পুরোনো কোম্পানিগুলোর একটি। এটি ১৯৭৯ সালে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত হয়। সেই হিসাবে এটি শেয়ারবাজারে ৪৬ বছরের পুরোনো একটি কোম্পানি। ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানি হিসেবে এটি শেয়ারবাজারে ‘এ’ শ্রেণিভুক্ত। সর্বশেষ গত জুনে সমাপ্ত অর্থবছর শেষে কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের ৯২ শতাংশ বা শেয়ারপ্রতি ৯ টাকা ২০ পয়সা লভ্যাংশ দিয়েছে। ঢাকার বাজারে গতকাল দিন শেষে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ৪৯১ টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে কোম্পানিটি যে মুনাফা করেছে তাতে বাজারে এটির শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত বা পিই রেশিও দাঁড়িয়েছে ২৫–এ। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, শেয়ারবাজারে যে কোম্পানির পিই রেশিও যত কম সেই কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ তত বেশি লাভজনক বা কম ঝুঁকিপূর্ণ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ