ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের সাবেক মন্ত্রী তানাজি সাওয়ান্তের ছেলে ঋষিরাজ সাওয়ান্ত ও তাঁর দুই বন্ধুকে নিয়ে পুনে থেকে থাইল্যান্ডের ব্যাংককের উদ্দেশে উড়াল দিয়েছিল একটি চার্টার্ড ফ্লাইট। দ্রুতই উড়োজাহাজটি ঘুরিয়ে পুনেতে ফিরতে মাঝ আকাশে বার্তা পান পাইলটরা। শুরুতে তাঁরা ভেবেছিলেন, বার্তাটি ভুয়া। তবে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরে নিশ্চিত হন, বার্তা সত্য। এতে উড়োজাহাজটি পুনেতে ফিরিয়ে আনেন তাঁরা।

সংশ্লিষ্ট বিমান পরিবহন সংস্থার একজন নির্বাহী এসব তথ্য জানিয়েছেন।

ঘটনাটি গত সোমবারের। একটি বেসরকারি উড়োজাহাজ পরিবহন প্রতিষ্ঠানের চার্টার্ড ফ্লাইটটি ৩২ বছর বয়সী ঋষিরাজ সাওয়ান্ত ও তাঁর দুই বন্ধুকে নিয়ে এদিন রাত ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে পুনে বিমানবন্দরে ফেরত আসে।

প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী বলছেন, বার্তাটি যাচাই–বাছাই করার পরই উড়োজাহাজটিকে পুনেতে ফিরতে বলা হয়েছে।

ঋষিরাজ সাওয়ান্তকে অপহরণ করা হয়েছে বলে একটি মামলা করার পর তাঁদের নাটকীয়ভাবে মাঝ আকাশ থেকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সোমবার বিকেল চারটার দিকে পুনে পুলিশের কাছে অজ্ঞাত স্থান থেকে একটি ফোনকল আসে। বলা হয়, ঋষিরাজকে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা নিয়ে গেছেন। খবরটি শুনে ঋষিরাজের বাবা তানাজি পুলিশ স্টেশনে ছুটে যান এবং সহযোগিতা চান। পুলিশ তখন মামলা করে।

ঋষিরাজ ও তাঁর বন্ধুরা দাবি করেছেন, তাঁরা গোপনে ব্যবসায়িক কাজে থাইল্যান্ড যাচ্ছিলেন। তবে শিবসেনা নেতা তানাজি ও পরিবারের সদস্যরা তাঁদের এ ভ্রমণের তথ্য জানতেন না।

উড়োজাহাজ সংস্থাটির নির্বাহী বলেছেন, মাঝ আকাশ থেকে উড়োজাহাজটিকে ফিরিয়ে আনায় বেসামরিক উড়োজাহাজ চলাচল নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ডিজিসিএ তাঁর কোম্পানির প্রশংসা করেছে। নির্বাহীর ধারণা, কোনো যাত্রীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের হওয়ার পর মাঝ আকাশ থেকে উড়োজাহাজ ফিরিয়ে আনার ঘটনা এটাই প্রথম।

সাধারণত চিকিৎসা কিংবা কারিগরিসংক্রান্ত জরুরি পরিস্থিতিতে উড়োজাহাজের পথ ঘুরিয়ে নেওয়া হয়ে থাকে বলে উল্লেখ করেন এই কর্মকর্তা।

ফ্লাইটটিকে যখন পুনেতে ফিরতে বলা হয়, তখন এটি ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের পোর্ট ব্লেয়ারের (শ্রী বিজয়াপুরম) ওপর দিয়ে উড়ছিল। ঋষিরাজ সাওয়ান্ত ও তাঁর বন্ধুদের উড়োজাহাজ ঘুরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে সে সময় কিছু জানানো হয়নি। এর ব্যাখ্যায় উড়োজাহাজ সংস্থার নির্বাহী বলেন, ঋষিরাজ ও তাঁর বন্ধুরা বিষয়টি জানতে পারলে পাইলটদের সঙ্গে হট্টগোল শুরু করতে পারেন—এমন আশঙ্কা ছিল।  

উড়োজাহাজ ঘুরিয়ে দেওয়ার সময় যাত্রীদের সামনে থাকা স্ক্রিন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ জন্য উড়োজাহাজটি যে আবার পুনেতে ফিরছে, তা তাঁরা বুঝতে পারেননি। খাবার খেয়ে তাঁরা বিশ্রাম নিচ্ছিলেন।

নির্বাহী আরও বলেন, পুনে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড়োজাহাজটি অবতরণ করার পর ওই তিন যাত্রী অবাক হন এবং রেগে গিয়ে পাইলটদের বিভিন্ন প্রশ্ন করতে থাকেন। দায়িত্বে থাকা পাইলট তাঁদের বলেন, তাঁরা শুধু নির্দেশনা পালন করেছেন।

উড়োজাহাজটি অবতরণের পরপরই ভারতের কেন্দ্রীয় পুলিশ বাহিনী সিআইএসএফের সদস্যরা এর ভেতরে ঢুকে পড়েন এবং ওই তিনজনকে নামিয়ে আনেন।

ঋষিরাজ সাওয়ান্ত পরে পুলিশকে বলেছেন, পরিবারের সদস্যরা খেপে যেতে পারেন—এমন ভয়ে তিনি তাঁদের না জানিয়েই চার্টার্ড উড়োজাহাজে করে থাইল্যান্ডে যাচ্ছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

নুরাল পাগলার দরবার থেকে চুরি হওয়া জেনারেটর উদ্ধার, যুবক গ্রেপ্তার

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরাল পাগলার দরবার থেকে চুরি হওয়া একটি জেনারেটর উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় মো. মিজানুর রহমান (২৪) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়।

গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে মিজানুরকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও গোয়ালন্দ ঘাট থানা-পুলিশ। মিজানুরের বাড়ি রাজবাড়ী সদর উপজেলার লক্ষ্মীকোল সোনাকান্দর গ্রামে।

আরও পড়ুননিহতের বাবার মামলায় গ্রেপ্তার আরও ২, দেড় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির দাবি১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এ নিয়ে দুই মামলায় মোট ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. শরীফ আল রাজীব।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ৫ সেপ্টেম্বর গোয়ালন্দের নুরাল পাগলার দরবারে বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এ সময় মিজানুর রহমান জেনারেটর চুরি করে নিয়ে যাচ্ছেন—এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে মিজানুরকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়। মিজানুরকে দরবারে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, লাশ পোড়ানো ও হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁকে রাজবাড়ীর আদালতে সোপর্দ করার প্রস্তুতি চলছে।

আরও পড়ুননুরাল পাগলার দরবারে হামলায় হত্যা মামলা, মসজিদের ইমামসহ চারজন গ্রেপ্তার০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ওই দিন পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় উপপরিদর্শক (এসআই) সেলিম মোল্লা বাদী হয়ে প্রায় তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করে ৬ সেপ্টেম্বর মামলা করেন। এই মামলায় মোট ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদিকে দরবারে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, হত্যা ও কবর থেকে লাশ তুলে মহাসড়কে পুড়িয়ে ফেলার ঘটনায় নিহত ভক্ত রাসেল মোল্লার বাবা আজাদ মোল্লা বাদী হয়ে ৮ সেপ্টেম্বর মামলা করেন। ওই মামলায় সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় এখন পর্যন্ত মিজানুরসহ নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ