নাসুম আহমেদকে দলে নেওয়ার আলোচনাটা প্রথম ওয়ানডের প্রথম ইনিংসের পরপরই নাকি হয়ে গিয়েছিল। টি-টোয়েন্টি সিরিজে তিনি থাকবেনই। বাকি দুই ওয়ানডের জন‌্য মিরপুরের পাতা ফাঁদের অন‌্যতম সেরা অস্ত্র হিসেবে নাসুমকেই বিবেচনা করা হচ্ছে। এজন‌্য সিলেট থেকে উড়িয়ে ঢাকায় আনা হয় বাঁহাতি স্পিনারকে। তবে তাকে একাদশে রাখা হবে কিনা তা নিশ্চিত করেননি স্পিন বোলিং কোচ মুশতাক আহমেদ, ‘‘আগামীকাল দেড়টায় দেখতে পারবেন।’’

মঙ্গলবার দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশ এক পেসার নিয়ে নামলে অবাক হওয়ার থাকবে না। মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে সৌম‌্য সরকারকে দ্বিতীয় পেসার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। বাকি সব স্পিন অস্ত্র।

আরো পড়ুন:

বাংলাদেশের অনুশীলনে কেন ‘মঙ্গুজ ব‌্যাট’?

শান মাসুদের ব্যাটে প্রথম দিন এগিয়ে পাকিস্তান

প্রথম ওয়ানডেতেই চূড়ান্ত ধারনা পাওয়া হয়ে গেছে পরের দুই ম‌্যাচে কী অপেক্ষা করছে। মিরপুরে আগামীকাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও বাংলাদেশ দ্বিতীয় ওয়ানডে। স্পিন দূর্গে বাংলাদেশের অপেক্ষা সিরিজ জয়ের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সিরিজে ফেরার।

দুই দলের জন‌্য ‘ওপেন বুক এক্সাম’। মুখোমুখি দুই শিবিরই জানে, ২২ গজে তাদেরকে স্পিনে পরীক্ষা দিতে হবে। ব‌্যাটসম‌্যানরা রীতিমত হিমশিম খাবেন ধরেই নিয়েছেন। আর স্পিনারদের মুখে ফুটবে হাসি।

বাংলাদেশ অপেক্ষা করছে সিরিজ জয়ের। মুশতাক আহমেদের বিশ্বাস, নিজেদের ওপর বিশ্বাস রাখতে পারলেই জয় ধরা দেবে সহজে, ‘‘কোচ হিসেবে আমরা ছেলেদের নিজেদের উপর বিশ্বাস রাখতে সাহায্য করার চেষ্টা করি। বিশ্বাস সবকিছুর মূল। আমার বিশ্বাস দুর্বল হলে খেলোয়াড়রা তা গ্রহণ করবে না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হলো মেজাজ এবং বিশ্বাসের বিষয়। বাংলাদেশের খুবই প্রতিভাবান খেলোয়াড় আছে, এবং তারা যেকোনো দলকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। আমাদের এই বিশ্বাস রাখতে হবে।’’

২০২৪ সালের পর বাংলাদেশ কোনো ওয়ানডে সিরিজ জিতেনি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুইবার ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একবার করে সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ। এ বছর এটিই বাংলাদেশের শেষ ওয়ানডে সিরিজ। বছরের শেষটা দল রাঙাতে পারে কিনা সেটাই দেখার।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের লড়াইটা ঘুরে দাঁড়ানোর। তারা এরই মধ‌্যে স্পিনে শক্তি বাড়িয়েছে। চোটের কারণে ছিটকে গেছেন শামার জোসেফ ও জেডিয়াহ ব্লেডস। কিন্তু বদলি হিসেবে এক পেসারের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে এক স্পিনারকে। আকিল হোসেন ও র‌্যামন সিমন্ডস দলে এসেছেন।

দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশ জয় ভিন্ন কোনো কিছু চিন্তা করছে না। দলের স্পিনার খারি পিয়েরে বলেছেন, ‘‘আমাদের জেতার জন্য যা যা করা দরকার, আমরা তা-ই করব। আমরা পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন এবং পরের দুটি ম্যাচ জেতার জন্য মাঠে নামব। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো, সঠিক জায়গায় বল করে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের চাপে রাখা।’’

দুই দলের ম‌্যাচ বাংলাদেশ সময় শুরু হবে দুপুর দেড়টায়।

ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

শেখ হাসিনার ‘মেটিকুলাস প্ল্যান’ ছিল: ট্রাইব্যুনাল

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ‘মেটিকুলাস প্ল্যান’ ছিল বলে উল্লেখ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১। ট্রাইব্যুনাল আরও বলেছেন, ওই সময় সবকিছুই শেখ হাসিনার নিয়ন্ত্রণে ছিল।

গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলায় সোমবার আসামিপক্ষের আইনজীবীর যুক্তিতর্কের একপর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল এসব কথা বলেন।

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১–এ এই মামলার বিচার চলছে। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

এদিন প্রথম দিনের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. আমির হোসেন। তিনি এ মামলার পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী।

যুক্তিতর্কের একপর্যায়ে আইনজীবী আমির হোসেন বলেন, ছাত্রদের এই আন্দোলন (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন) ছিল একধরনের ভুল প্রক্রিয়ায় করা। শেখ হাসিনা কোটা পদ্ধতি বিলোপ করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে অন্য একজন হাইকোর্ট বিভাগে রিট করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল হয়। বিচার বিভাগের ওপর নির্বাহী বিভাগ কোনো প্রভাব ফেলতে পারে না।

জবাবে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘…আপনি যদি অ্যাকটিভলি পার্টিসিপেট না করেন, ডিসপোজালের কোনো ব্যবস্থা না করেন, কোর্টকে যদি কো–অপারেট না করেন, সেটাই তো ইনফ্লুয়েন্স (প্রভাব)।…একপর্যায়ে দেখা গেল এক দিনের মধ্যে, দুই দিনের মধ্যে আপনি ফিক্সড করলেন ফর হিয়ারিং (শুনানির দিন ধার্য)।…ইউ হ্যাড আ মেটিকুলাস প্ল্যান এবং এভরিথিং ওয়াজ…আন্ডার ইউর কন্ট্রোল (আপনার একটি ম্যাটিকুলাস প্ল্যান ছিল এবং সবকিছুই আপনার নিয়ন্ত্রণে ছিল)।’

জবাবে আইনজীবী আমির হোসেন বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) যে হস্তক্ষেপ করেছেন, এ রকম কোনো ডকুমেন্ট আছে? ট্রাইব্যুনাল যেটা বলেছেন, সেটা অনুমানভিত্তিক।

তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করেননি, সেটা বলেন।

পরে ট্রাইব্যুনাল আরও বলেন, সব উপাদান সরকারের হাতে আছে। এই যে তাঁরা এখন মামলা করছেন, প্রসিকিউশন পক্ষ যদি কাজ না করে, তাহলে তাঁরা আদৌ কাজ করতে পারবেন না। সুতরাং সব উপাদান সরকারের হাতে থাকে।

এমন অবস্থায় আইনজীবী প্রশ্ন করেন, তাহলে কি তিনি ধরে নেবেন, এই বিচার রাষ্ট্র যা চাবে তা–ই হবে? জবাবে ট্রাইব্যুনাল বলেন, রাষ্ট্র যা চাবে তা করতে হবে না। রাষ্ট্রের হাতে সুইচগুলো আছে। অনেকগুলো সুইচ আছে। যেগুলো টিপ দিয়ে বন্ধ করে ফেলা যায়। আপনি কি একমত?

উত্তরে আইনজীবী বলেন, তাহলে তাঁরা ধরে নিতে পারেন, বর্তমান সরকার বা রাষ্ট্র সেই সুইচগুলো ব্যবহার করলেও করতে পারেন?

তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘পারে, উই উইল নট কেয়ার (আমরা পরোয়া করব না)। রাষ্ট্র যদি তাঁর নিরাপত্তা বন্ধ করে দেয়, তিনি ট্রাইব্যুনালে আসতে পারবেন না। তাহলে তিনি কীভাবে কাজ করবেন। রাষ্ট্র যদি বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়, তাহলে কীভাবে কাজ করবেন। রাষ্ট্র আসামিপক্ষের আইনজীবীকে আটকে রাখলে তিনি আসতে পারবেন না। রাষ্ট্রের হাতে ব্যবস্থা আছে। সব ব্যবস্থা করে দেওয়ার পরে রায়ের প্রশ্ন যখন আসবে, দ্যান উই উইল নট কেয়ার গভর্নমেন্ট।’

মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গ

প্রসিকিউশনের লক্ষ্যভিত্তিক নিপীড়নের বক্তব্য সঠিক নয় উল্লেখ করে যুক্তিতর্কে আইনজীবী আমির হোসেন বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কথিত মতে সম্ভবত দেড় হাজার আন্দোলনকারী ছাত্র–জনতা নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে সংগঠক আবু সাঈদ (বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী) ছাড়া আর কেউ মৃত্যুবরণ করেননি। লক্ষ্যভিত্তিক নিপীড়ন যদি হতো, তাহলে শেখ হাসিনা কর্মী বাহিনী ও পুলিশ বাহিনী দিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলম, নাহিদ ইসলামসহ অন্য যাঁরা নেতৃস্থানীয় ছিলেন, তাদের মেরে ফেলতে পারতেন, কিন্তু মারেননি। অর্থাৎ লক্ষ্যভিত্তিক নিপীড়নের বক্তব্য সঠিক নয়।

তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, টার্গেটেড (লক্ষ্যভিত্তিক) মানে সবাইকে মেরে ফেলবে, এটা বোঝায় না। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের শীর্ষ নেতা (শেখ মুজিবুর রহমান) তো পাকিস্তানিদের পকেটে ছিলেন। তাঁকে মেরেছে? আ স ম আবদুর রবকে মেরেছে? আরও যাঁরা নেতা ছিলেন, সবাইকে মেরেছে? কোনো নেতা মরেননি। যারা টার্গেট করে, তাদের স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) থাকে। কাকে মারবে, কতটুকু মারবে, কোথায় মারবে, কখন মারবে। স্বাধীনতাযুদ্ধে কোনো নেতা মারা যাননি।

উত্তরে আইনজীবী বলেন, ১৯৭১ সালে নেতারা সব ভারতে ছিলেন। তাঁরা মারা যাবেন কোত্থেকে?

সম্পর্কিত নিবন্ধ