বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন দূতাবাস থেকে কর্মী কমানো হবে বলে জানিয়েছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। এ বিষয়ে জানাশোনা আছে—এমন তিনটি সূত্র গতকাল বৃহস্পতিবার রয়টার্সকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকদের বহরকে ঢেলে সাজানোর যে প্রচেষ্টা মার্কিন প্রেসিডেন্ট হাতে নিয়েছেন, এটি তারই অংশ বলে মনে করা হচ্ছে।

সূত্র জানিয়েছে, কিছু দূতাবাসে মার্কিন কর্মী এবং স্থানীয়ভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীদের ১০ শতাংশ হারে কমানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আজ শুক্রবার নাগাদ দূতাবাসের কর্মীদের একটি তালিকা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরে পাঠানোর কথা রয়েছে। এরপর পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব আমেরিকান ডিপ্লোমেসির তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন দেশে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসগুলোয় মার্কিন কূটনীতিক ও স্থানীয় কর্মীদের নিয়োগ দেওয়া হয়। দূতাবাসগুলো যে দেশে অবস্থিত, সেই দেশ থেকেই বেশির ভাগ কর্মী নেওয়া হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শ্রম ব্যুরোয় বিগত সপ্তাহগুলোতে প্রায় ৬০টি কনট্রাক্টরের (চুক্তিভিত্তিক কর্মী) চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। দপ্তরের অন্য ব্যুরোগুলোতেও এ ধরনের আরও কাটছাঁটের সম্ভাবনা রয়েছে।  

কর্মী কমানোর বিষয়ে পরিকল্পনা শুরু করতে দূতাবাসগুলোকে নির্দেশ দেওয়ার খবর প্রথম প্রকাশ করে সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজ। এ বিষয়ে এক বিবৃতিতে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিগত বিষয়গুলো নিয়ে মন্তব্য করে না তারা।

এমন সময় দূতাবাসের কর্মী কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, যখন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকদের বহর ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করছেন ট্রাম্প। গত বুধবার এ–সংক্রান্ত একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন তিনি। তাতে ট্রাম্পের পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক এজেন্ডা ‘বিশ্বস্ততার সঙ্গে এবং কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন’ নিশ্চিত করার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকে পররাষ্ট্র পরিষেবা নতুন করে সাজানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গত ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের পরই যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ব্যয় কমানোর ওপর নজর দিয়েছেন ট্রাম্প। ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির সঙ্গে তাল মেলানোর জন্য মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির বেশির ভাগ বিদেশি সহায়তা স্থগিত করেছেন তিনি। এই পদক্ষেপের পেছনে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইলন মাস্কের ইশারা রয়েছে। ক্ষমতায় বসার পর যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি দক্ষতা বিভাগের (ডিওজিই) দায়িত্ব পেয়েছেন মাস্ক। এই বিভাগের মাধ্যমে সরকারি ব্যয় সংকোচনের লক্ষ্যে কাজ করছেন তিনি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কম ন র

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ