সম্প্রতি শেষ হওয়া বিপিএলে দুর্বার রাজশাহীর ক্রিকেটাররা ঠিক মতো পারিশ্রমিক পাননি। একাধিকবার ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকের দেওয়া চেক বাউন্স করেছে। একাধিকবার কথা দিয়েও পারিশ্রমিক শোধ করেনি দুর্বার রাজশাহী কর্তৃপক্ষ। 

এবার ডিপিএলে (ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ) বকেয়া পারিশ্রমিক না পাওয়ার অভিযোগ আনলেন জাতীয় দলের হয়ে টি-২০ খেলা মুনিম শাহরিয়ার। দুয়ারে কড়া নাড়ছে নতুন ডিপিএলের মৌসুম। অথচ গত (২০২৩-২৪) মৌসুমে পার্টেক্স স্পোর্টিং ক্লাবে খেলে ৫০ শতাংশ পারিশ্রমিক এখনো পাননি টপ অর্ডার এই ব্যাটার। 

মুনিম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্ট দিয়ে এই অভিযোগ করেছেন। তার দাবি, ১২-১৩ তার তাকে পাওয়া পারিশ্রমিক দিয়ে দেওয়া হবে এমন আশ্বাস দেওয়া হলেও তিনি পারিশ্রমিক পাননি। বরং পাওয়া টাকা চাওয়ায় তাকে হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে।

স্থানীয় ক্রিকেটারদের আয়ের মূল উৎস এই ডিপিএল। বিদেশি ক্রিকেটারদের আধিক্য থাকায় অনেক সময় স্থানীয় ক্রিকেটাররা বিপিএলে খেলার সুযোগ পান না। জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যস্ত থাকায় ডিপিএলে স্থানীয় ক্রিকেটারদের কদর বাড়ে। ভালো পারিশ্রমিক পাওয়ায় ডিপিএলের দিকে তাকিয়ে থাকেন অনেক ক্রিকেটার। 

ঘরোয়া এই ক্রিকেটে পারিশ্রমিক নিয়ে কোন জটিলতা তৈরি হলে ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্রোপলিসের (সিসিডিএম) কাছে যান ক্রিকেটাররা। কিন্তু মুনিম অভিযোগ করেছেন, ক্রিকেটারদের এই সংগঠনের বড় পদে আছেন পার্টেক্স ক্রিকেট ক্লাবের প্রতিনিধি সাজ্জাদ। তিনি পারিশ্রমিক নিয়ে অভিযোগ করে উল্টো মানহানির শিকার হচ্ছেন। 

মুনিম দাবি করেছেন, তাকে পারিশ্রমিক না দেওয়ার পেছনে কিছু যুক্তি দাঁড় করিয়েছে পার্টেক্স ক্লাব। এর মধ্যে অন্যতম হলো- মুনিম জোর করে পার্টেক্স ক্লাবের দলে ঢুকেছেন। অন্যটি হলো- তার পারফরম্যান্স ভালো ছিল না। কিন্তু ডিপিএলের দলবদল পদ্ধতিতে জোর করে দলে ঢোকা সম্ভব নয়। আবার পারফরম্যান্স ভালো-খারাপের ওপর পারিশ্রমিক নির্ভর করবে এমন কোন শর্তও চুক্তিপত্রে থাকে না। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ড প এল ড প এল

এছাড়াও পড়ুন:

স্বপ্নের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে জুয়েল, অর্থাভাবে অনিশ্চিত ভুটান যাত্রা

ভুটান প্রিমিয়ার লিগের পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ক্লাব পারো এফসিতে খেলার সুযোগ পেয়েছেন নীলফামারীর ডোমার উপজেলার বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের নওদাবস গ্রামের তরুণ ফুটবলার মো. জুয়েল রানা। কিন্তু অর্থাভাবে অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে তার স্বপ্নপূরণের যাত্রা।

শৈশব থেকেই ফুটবলের প্রতি ছিল জুয়েলের গভীর ভালোবাসা। স্থানীয় পর্যায়ের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের মাধ্যমে নিজেকে চিনিয়েছেন জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়েও। খেলেছেন ঢাকা সিটি কাপ, মেয়র কাপ, এমনকি বসুন্ধরা অনূর্ধ্ব-১৮ দলের হয়ে। সেই ধারাবাহিকতায় ডাক পান ভুটানের পেশাদার ফুটবল লিগের ট্রায়াল ক্যাম্পে, যেখানে ৫০ জনের মধ্যে বাংলাদেশের মাত্র তিনজন নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের একজন জুয়েল। বর্তমানে জুয়েল ইন্টারন্যাশনাল গ্র্যামার স্কুল, রংপুর-এর নবম শ্রেণির বাংলা ভার্সনের শিক্ষার্থী।

আরো পড়ুন:

১০ গোলের রোমাঞ্চকর ম্যাচে সিউলকে বিধ্বস্ত করল বার্সেলোনা

রোনালদোর অদম্য ক্ষুধা, দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে জেতালেন আল-নাসরকে

নভেম্বর মাসের শেষের দিকে হতে যাওয়া লিগে অংশ নিতে হলে এর আগেই পাসপোর্ট, বিমানের টিকিট ও খেলার কিটসহ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে। কিন্তু এখানেই সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থ।

জুয়েলের বাবা একজন দিনমজুর ও ভ্যানচালক। এমন আর্থিক অবস্থায় এত ব্যয়ভার বহন করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

জুয়েল রানা বলেন, “আমি ডোমার হাইস্কুল মাঠে খেলা শুরু করি, ডোমার ফুটবল একাডেমির কোচ সুজন ভাইয়ের কাছেই প্রথম হাতে খড়ি। এরপর উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় পর্যায়ে এবং বসুন্ধরা অনূর্ধ্ব-১৮ দলের হয়ে খেলি। ভুটান থেকে পারো এফসির প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসে। তাদের নেয়া ট্রায়ালে ৫০ জনের মধ্যে ৫ জন নির্বাচিত হই, পরে মেডিকেল টেস্টের পর আমিসহ ৩ জন সুযোগ পাই। লিগ শুরু হওয়ার এক মাস আগেই যেতে হবে। কিন্তু এখন অর্থের কারণে যাওয়া হবে কি না, সেটা অনিশ্চিত। পাসপোর্ট, বিমানের টিকিট, কিটস সবকিছুতেই টাকা দরকার। আমি শুধু চাই কেউ পাশে দাঁড়াক। আমি দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে চাই।”

জুয়েলের মা রশিদা বেগম বলেন, “ছেলেটা অনেক কষ্ট করে আজ এই পর্যন্ত এসেছে। এখন যদি শুধু টাকার অভাবে তার স্বপ্ন থেমে যায়, সেটা আমাদের সহ্য হবে না।”

জুয়েলের বাবা জয়নুল ইসলাম বলেন, “আমি দিনমজুর মানুষ, ছেলের স্বপ্নপূরণে কিছুই করতে পারছি না। এই কষ্ট ভাষায় বোঝানো যায় না। সরকার কিংবা কেউ যদি সাহায্য করত, আমার ছেলে বিদেশে গিয়ে খেলতে পারত।”

এলাকাবাসীরাও জুয়েলের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেন, “জুয়েল অনেক ভালো খেলে, সে আমাদের গর্ব। কিন্তু তার পরিবার অত্যন্ত অসচ্ছল। সরকার বা সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে সে একদিন দেশের নাম উজ্জ্বল করবে।”

ডোমার ফুটবল একাডেমির কোচ মো. সাদিকুর রহমান সুজন বলেন, “জুয়েল আমাদের একাডেমির অন্যতম প্রতিভাবান খেলোয়াড়। সে তার পরিশ্রমে অনেক দূর এগিয়েছে। সে ভুটানে খেলার সুযোগ পেয়েছে, কিন্তু এখন শুধু অর্থের অভাবে তার যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে গেছে। তার বাবা একজন ভ্যানচালক—এই খরচ বহন তার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি অনুরোধ করব সরকার বা সমাজের বিত্তবানরা যেন জুয়েলের পাশে দাঁড়ায়।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শায়লা সাঈদ তন্বী বলেন, “আমরা জুয়েলকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার চেষ্টা করব। আপনারাও সকলে জুয়েলের পাশে দাঁড়ান, সে যেন দেশের গর্ব হয়ে ওঠে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।”

একজন উদীয়মান প্রতিভাবান ফুটবলারের স্বপ্ন যেন শুধু আর্থিক সংকটে থেমে না যায়। এই লক্ষ্যেই জুয়েলের পরিবার সমাজের দানশীল, খেলাপ্রেমী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি সহযোগিতার আবেদন জানিয়েছেন।

ঢাকা/সিথুন/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • স্বপ্নের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে জুয়েল, অর্থাভাবে অনিশ্চিত ভুটান যাত্রা
  • রোনালদোর অদম্য ক্ষুধা, দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে জেতালেন আল-নাসরকে