ভুট্টাখেতের কয়েকটি ভাঙা গাছের পাশে পড়ে আছে একটি রক্তমাখা লাঠি আর মুঠোফোন। অদূরে পাকা সড়কের পাশে পাওয়া যায় রক্তমাখা নাইলনের দড়ি। আর সড়কটির কিছু অংশে ছড়িয়ে আছে ছোপ ছোট রক্তের দাগ। আর ভুট্টাখেতের আলপথের পাশে পড়ে আছে দুই বোতল পেট্রল। এ দৃশ্য দেখতে সেখানে ভিড় করে স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা ধারণা করছেন, ঘটনাস্থলে কাউকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা পর লাশ গুম করা হয়েছে।

দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকা কাটলা ইউনিয়নের পলি খিয়ারমামুদপুর গ্রামে আজ শনিবার সকাল নয়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। কাটলা-পাঠানচড়া পাকা সড়কসংলগ্ন একটি ভুট্টাখেত থেকে দুপুর ১২টার দিকে এসব আলামত উদ্ধার করেছে পুলিশ। এর আগে সেখানে ভিড় জমায় শত শত নারী-পুরুষ ও শিশুরা।

স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে খবর পেয়ে দুপুর ১২টার দিকে বিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমতাজুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা বাঁশের লাঠি, ভুট্টাখেতে পড়ে থাকা রক্তের নমুনা, একটি বোতাম, সিমসহ মুঠোফোন এবং পাকা সড়কের পাশ থেকে রক্তমাখা নাইলন দড়িটি জব্দ করা হয়।

উত্তর দাউদপুর (ব্যাপারীপাড়া) গ্রামের বাসিন্দা আক্তারুল ইসলাম জানান, আজ সকালে তাঁরা কয়েকজন মিলে জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে যান। ওই সময় জমিটির পাশের ভুট্টাখেতে কয়েকটি গাছ ভাঙা অবস্থায় দেখতে পান। কৌতূহলবশত এগিয়ে গিয়ে সেখানে এসব রক্তমাখা আলামত খুঁজে পান তাঁরা। পরে ঘটনাটি জানাজানি হলে স্থানীয় বাসিন্দারা সেখানে ছুটে আসেন।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা সামনে দক্ষিণ মাধুপুর জামে মসজিদের উদ্যোগে গতকাল রাতে ‘ইসলামি মাহফিলের’ আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে মাহফিল চলাকালে অদূরের দক্ষিণ মাধুপুর নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায় মুঠোফোনে ‘ফ্রি ফায়ার’ খেলাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় কয়েকজন যুবকের মধ্যে হাতাহাতি হয়। আর এ হাতাহাতিকে কেন্দ্র করে গভীর রাতে ওই ভুট্টাখেতে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে তাঁদের ধারণা। অনেকেই দাবি করেন, কাউকে সেখানে হত্যার পর লাশটি গুম করা হয়েছে।

হাতাহাতির ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বাসিন্দা সৈকত জানান, গতকাল দুটি পক্ষের মধ্যে ঝামেলা হয়েছিল। তবে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির মীমাংসাও করা হয়েছিল।

ওসি মমতাজুল হক বলেন, সংগৃহীত আলামত দেখে এটিকে পরিকল্পিত হত্যা বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনাটির তদন্ত চলছে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলায় কথা বললেই বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে বিএসএফ

বাংলায় কথা বললেই পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের বাংলাদেশে জোর করে পাঠিয়ে দিচ্ছে বিএসএফ ও দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকার। আজ সোমবার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভার অধিবেশনে সীমান্ত সুরক্ষা ও পুশ ব্যাক বিষয়ে বিধায়কদের আনা প্রশ্নের উত্তরে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 

সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলার বাসিন্দা মেহবুব শেখকে (৩৬) ঠেলে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে বিএসএফের উত্তরবঙ্গের শাখা। ওই ব্যক্তি মহারাষ্ট্রের ঠাণেতে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। গত ১১ জুন তাকে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী হিসেবে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। 

মেহবুবের ভাই মুজিবুর রহমান জানান, তার বড় ভাইকে গত শুক্রবার ভোর রাতে শিলিগুড়ির বিএসএফ বাংলাদেশে ‘পুশ ব্যাক’ করেছে। তিনি আরও জানান, পশ্চিমবঙ্গ পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ পর্যদের সভাপতি সামিরুল ইসলাম ওই শ্রমিকের দুর্দশার বিষয়টি জানার পর মহারাষ্ট্র পুলিশের যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় নথিপত্র পাঠান। তার মধ্যে মেহবুবের আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত বিবরণ ও পঞ্চায়েতের সার্টিফিকেট রয়েছে। তবে মহারাষ্ট্র পুলিশ ওই সব নথিপত্রকে গুরুত্ব দেয়নি। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের পক্ষেও মহারাষ্ট্র পুলিশকে মেহবুবের ভারতীয় নাগরিকত্ব নিশ্চিত করে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছিল ঠাণেতে। তাতেও কাজ হয়নি।

মেহবুবের ভাই গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তারা মুম্বাইয়ের ঠাণেতে গেলে মহারাষ্ট্র পুলিশ বলেছে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে আটক মেহবুবসহ আরও কয়েকজনকে তারা শিলগুড়িতে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করে। শিলিগুড়ির বিএসএফের ইউনিটে তাদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। পরে তারা জানতে পারেন, গত শুক্রবার ভোরে মেহবুবসহ আটক সবাইকে ‘পুশ ব্যাক’ করা হয়েছে। যদিও সরকারিভাবে বিএসএফ এবং মহারাষ্ট্র পুলিশ এই বিষয়ে কিছু জানায়নি। গত এক দেড় মাস ধরে বিএসএফের পুশ ব্যাক চললেও এই বাহিনী সরকারিভাবে কিছু জানাচ্ছে না। অন্যদিকে, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি একাধিকবার সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেছে, বিএসএফ এমন অনেককে ঠেলে পাঠাচ্ছে যাদের কাছে ভারতীয় হিসেবে নথিপত্র আছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ