প্রত্যাশিত স্বাস্থ্যসেবা মিলছে না
Published: 15th, February 2025 GMT
গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন ও কার্ডিয়াক বিভাগে চিকিৎসক নেই। ফলে মিলছে না প্রত্যাশিত সেবা। হাসপাতালটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা যন্ত্র, উপকরণ, লোকবল সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত।
জানা যায়, আড়াইশ শয্যার এ হাসপাতালটি স্বাস্থ্যসেবায় প্রায় ১২ লাখ জেলাবাসীর একমাত্র ভরসার স্থল। এ হাসপাতাল থেকে বাগেরহাট, নড়াইল, পিরোজপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, খুলনা ও বরিশাল জেলার মানুষ চিকিৎসাসেবা নেন। হাসপাতালটিতে মোট ১৩টি বিভাগ চালু রয়েছে। এর মধ্যে মেডিসিন ও কার্ডিয়াক বিভাগে চিকিৎসক নেই। মেডিকেল অফিসার দিয়ে কোনো রকমে চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে এ দুই বিভাগ। প্রতিদিন বহির্বিভাগ থেকে গড়ে এক হাজার একশ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে মেডিসিন ও কার্ডিয়াক রোগী সাড়ে চারশ। আন্তঃবিভাগে ভর্তি থাকছেন প্রায় তিনশ রোগী।
সম্প্রতি হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের স্যানিটেশন ব্যবস্থা নাজুক। রোগীদের ৩ টাকা লিটার দরে হাসপাতাল চত্বরে স্থাপিত ফিল্টার থেকে সুপেয় পানি কিনে খেতে হচ্ছে। রোগীর ওয়ার্ডগুলো দুর্গন্ধময়। মেডিসিন ও কার্ডিয়াক বিভাগে ঝুঁকি নেই এমন রোগী ভর্তি রাখা হয়েছে। এমআরআই বিভাগ ২০১৯ সালের মার্চ মাস থেকে বন্ধ। সিটিস্ক্যান কাজ করছে না ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে। ফিল্মের অভাবে হচ্ছে না এক্স-রে। এখানে গাইনি, সার্জারি, অর্থোসার্জারিসহ বিভিন্ন ধরনের অপারেশন চালু রয়েছে। খাবারের মান নিয়েও রয়েছে অল্পবিস্তর অভিযোগ। ল্যাবে অতি প্রায়োজনীয় সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালু রয়েছে।
ভর্তি রোগী আলী আজমের স্বজন রহমত আলী বলেন, এখানে স্যানিটেশন ব্যবস্থা নাজুক। খাবার পানি বাইরে থেকে কিনতে হয়। খাবারের মান তেমন ভালো নয়। ওয়ার্ডে দুর্গন্ধ।
চিকিৎসা নিতে আসা বাগেরহাট জেলার গাওলা গ্রামের সাকিব হোসেন মোল্লা বলেন, হাসপাতালে মেডিসিন ও কার্ডিয়াক বিভাগ থেকে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না। এ বিভাগে চিকিৎসক দিলে হাসপাতাল ভালো চলবে। কারণ, হাসপাতালে মেডিসিন ও কার্ডিয়াক রোগী বেশি হয়। এমআরআই, সিটিস্ক্যান ও এক্স-রে চালু করলে তারা স্বল্প খরচে এ সেবা পাবেন।
নড়াইল জেলার নড়াগাতী থানার দেবদুন গ্রামের রোখসানা আক্তার বলেন, চিকিৎসার জন্য তারা এ হাসপাতালের ওপর ভরসা করেন। বিভিন্ন সমস্যার কারণে এখানে এসে সেবা পান না। তাই দ্রুত হাসপাতালের সব সমস্যা সমাধানের দাবি জানান তিনি।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবস থ চ ক ৎসক সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
জরায়ুর ফাইব্রয়েড কতটা ভয়ের
প্রতিবছর জুলাই মাস বিশ্বব্যাপী ‘জরায়ুর ফাইব্রয়েড সচেতনতা মাস’ হিসেবে পালিত হয়। এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য নারীদের মধ্যে জরায়ুর ফাইব্রয়েড বা টিউমার নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো, এর সঠিক চিকিৎসা ও পরামর্শের সুযোগ নিশ্চিত করা এবং সুস্থ জীবনযাত্রার গুরুত্ব তুলে ধরা।
ফাইব্রয়েড হলো জরায়ুর একধরনের নন ক্যানসারাস টিউমার বা মাংসপিণ্ড, যা প্রজননক্ষম নারীদের হতে পারে। লেইওমায়োমা বা মায়োমা নামেও এটি পরিচিত। জরায়ুতে নানা ধরনের টিউমারের মধ্যে বেশি দেখা যায় ফাইব্রয়েড। সাধারণত ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে এ সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি নিরীহ হয়। তবে সঠিক সময়ে এর চিকিৎসা না করলে জীবনমানের ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলে।
লক্ষণ বা উপসর্গ
এই টিউমার লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াও থাকতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অন্য কোনো সমস্যায় পেটের আলট্রাসাউন্ড করতে গিয়ে ধরা পড়ে। তবে যেসব লক্ষণ দেখা যেতে পারে—
অতিরিক্ত ও দীর্ঘ সময় ধরে ঋতুস্রাব।
তলপেটে চাপ বা ব্যথা। শরীর ফুলে যাওয়া।
ঘন ঘন প্রস্রাব বা মূত্রনালির সমস্যা।
সহবাসের সময় ব্যথা অনুভব করা।
গর্ভধারণে সমস্যা বা বন্ধ্যত্ব।
বয়স ও বংশগতির প্রভাব।
ওজনাধিক্য, হরমোন পরিবর্তন ইত্যাদি।
নির্ণয় ও চিকিৎসা
আলট্রাসাউন্ড, পেলভিক ইমেজিং, এমআরআই বা জরুরি ক্ষেত্রে হাইফু বা হিস্টেরস্কোপি ব্যবহারের মাধ্যমে জরায়ুতে ফাইব্রয়েড শনাক্ত করা যায়।
টিউমার ছোট হলে বা উপসর্গ না থাকলে ওষুধ ও পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। গুরুতর ক্ষেত্রে মায়োমেকটমি, ইউটেরাইন আর্টারি এম্বোলাইজেশন, এমআরআই গাইডেড ফোকাসড আলট্রাসাউন্ড বা জরায়ু অপসারণ করা হয়। চিকিৎসার ধরন বাছাইয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
কেন সচেতনতা জরুরি
ফাইব্রয়েড খুবই পরিচিত একটি সমস্যা। কিন্তু অনেক নারী উপসর্গ পেয়েও সময়মতো এর চিকিৎসা নেন না। এতে করে দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা হতে পারে। মাসিকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, ক্ষুধা, ক্লান্তি, বন্ধ্যত্ব নিয়ে উদ্বেগ, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা—এসব ঝুঁকি মোকাবিলায় মানসিক সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে।
এই টিউমার ডিজেনারেটিভ, ইনফেকশন অথবা সারকোমেটাজে পরিবর্তিত হয়ে থাকে। এর মধ্যে সারকোমেটাজ বা জরায়ু ক্যানসারে রূপ নেয় মাত্র শূন্য দশমিক ১ শতাংশ ক্ষেত্রে। তাই ক্যানসার ভেবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
ফাইব্রয়েড নিয়ে গবেষণা এখনো সীমিত। এর জন্য প্রয়োজন সচেতনতা ও সময়মতো চিকিৎসা। ফাইব্রয়েড হলে সন্তান হবে না, এমন ধারণাও অমূলক। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগনির্ণয় ও চিকিৎসার মাধ্যমে অনেক জটিলতা এড়ানো যায়। এ জন্য স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
ডা. শারমিন আব্বাসি, স্ত্রীরোগ ও বন্ধ্যত্ববিশেষজ্ঞ