দীর্ঘদিন থেকে মহাকাশ পর্যটন নিয়ে কাজ করছে মার্কিন প্রতিষ্ঠান ভার্জিন গ্যালাক্টিক, ব্লু অরিজিনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এরই মধ্যে একাধিকবার পর্যটক নিয়ে স্বল্প সময়ের মধ্যে মহাকাশ থেকে ঘুরেও এসেছে প্রতিষ্ঠানগুলোর মহাকাশযান। কিন্তু মহাকাশে পর্যটকদের উপস্থিতি বিজ্ঞানীদের কাজে বাধা তৈরি করতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ মার্টিন এলভিস বলেন, চাঁদের দূরবর্তী অঞ্চল জ্যোতির্বিদ্যার গবেষণার জন্য অনন্য। এই এলাকায় বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান আমাদের সৌরজগৎ, পৃথিবীর বাইরে প্রাণের সম্ভাবনা ও মহাবিশ্বের বিবর্তন সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দেয়। কিন্তু এসব অঞ্চল রক্ষা করার জন্য কোনো আন্তর্জাতিক আইন নেই। এখন সবাই এসব এলাকায় অভিযান পরিচালনা করছে বলে ভবিষ্যতের গবেষণার সুযোগ নষ্ট হতে পারে।

গত ১২ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে অনুষ্ঠিত আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্স সম্মেলনে মার্টিন এলভিস জানান, চাঁদে মানুষের উপস্থিতি দুর্দান্ত সব তথ্য জানতে সহায়তা করবে। তখন আজকের সেরা টেলিস্কোপকে খেলনার মতো মনে হবে। যদিও মানুষের এসব কার্যক্রমের কারণে সেখানকার পরিবেশ নষ্ট হতে পারে। বৈজ্ঞানিক অভিযান ও কাজের মধ্যে ভারসাম্য করতে হবে। এই মুহূর্তে কোনো ভারসাম্য নেই।

আরও পড়ুনমহাকাশ ঘুরে এলেন ৬ পর্যটক৩০ আগস্ট ২০২৪

বর্তমানে চাঁদের আশপাশে বিভিন্ন ধরনের বৈজ্ঞানিক ও অবৈজ্ঞানিক মিশন পরিচালনা করা হচ্ছে। এর ফলে মহাকাশে থাকা গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন তথ্য হারিয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানিরা। শুধু তা–ই নয়, মহাকাশ পর্যটনের কারণে বৈজ্ঞানিক গবেষণাও ঝুঁকিতে পড়তে পারে। আর তাই আগামী দশকের মধ্যে একটি আন্তর্জাতিক চুক্তির মাধ্যমে চাঁদে শুধু বৈজ্ঞানিক কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে বলে জানিয়েছেন মার্টিন এলভিস।

সূত্র: ডেইলি মেইল

আরও পড়ুনপ্রথমবারের মতো মহাশূন্যে হাঁটার সুযোগ পাচ্ছেন চার বেসরকারি ব্যক্তি২৫ আগস্ট ২০২৪.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে গুরুত্ব আরোপ

কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কার্যত সামরিক সংঘাতে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। এ পরস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে ফোন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। বুধবার দুজনকে করা এ ফোন কলে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া উত্তেজনা কমানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এছাড়া দুই 

ফোনালাপের বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে দেওয়া পৃথক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় মার্কো রুবিও বলেন, তিনি পেহেলগাম হামলায় নিহতদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। 

তবে তিনি আরও বলেন, ভারত যেন পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করার আগে সতর্ক থাকে, কারণ এখনও পর্যন্ত ভারত এই হামলায় পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার কোনও প্রমাণ প্রকাশ করেনি।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক বিবৃতিতে বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণহানির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনা কমাতে এবং শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে ভারতকে পাকিস্তানের সঙ্গে কাজ করার জন্য বলেছেন।

পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে ফোনালাপে রুবিও- ২২ এপ্রিল ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পর্যটন কেন্দ্র পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।

তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, রুবিও এই অযৌক্তিক হামলার তদন্তে পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ বলেন, ভারতের উস্কানিমূলক আচরণ শুধু উত্তেজনাই বাড়াচ্ছে এবং পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টাকে বিভ্রান্ত করছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা ভারতের ওপর দায়িত্বশীল আচরণ ও ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে চাপ প্রয়োগ করে।

এর আগে গত ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে কাশ্মীরের পেহেলগাম জেলার বৈসরণ তৃণভূমিতে বন্দুকধারীদের হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হন, যাদের প্রায় সবাই পর্যটক। হামলার দায় স্বীকার করে রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট নামে একটি সংগঠন। এটিকে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়্যেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে মনে করা হয়।

এ ঘটনায় আরও বেশ কয়েকজনকে আহত হন। যাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তারা সবাই পুরুষ। বস্তুত, ২২ এপ্রিলের হামলা ছিল ২০১৯ সালের পুলোয়ামা হামলার পর জম্মু ও কাশ্মীরে সবচেয়ে বড় প্রাণঘাতী হামলা। বর্তমানে এ ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

পেহেলগামের ভয়াবহ ওই হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত। জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত ও ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান।

তাছাড়া, হামলার পরে দুই দেশই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের ভিসা বাতিল করে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। সূত্র-এএফপি 

সম্পর্কিত নিবন্ধ