তিস্তা নদী ঘিরে বিএনপির কর্মসূচির আগে শুষ্ক মৌসুমেও বাড়ছে পানি
Published: 16th, February 2025 GMT
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে হঠাৎ করে পানি বাড়তে শুরু করেছে। এই পানি এসেছে উজান অর্থাৎ ভারতের দিক থেকে। শুষ্ক মৌসুমে এবং তিস্তা নদী বাঁচাতে তীরবর্তী স্থানে বিএনপির উদ্যোগে ৪৮ ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচির দুদিন আগে তিস্তার এমন পানি বৃদ্ধির বিষয়টি স্থানীয় লোকজনকে অবাক করেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানির স্তর (ওয়াটার লেভেল) ছিল ৪৯ দশমিক ৭৫ মিটার। এরপর হঠাৎ করে গত শনিবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সেখানে তিস্তার পানি ক্রমাগতভাবে বাড়তে থাকে। শনিবার সন্ধ্যা ছয়টায় সেখানে পানির স্তর ছিল ৫০ দশমিক ১০ মিটার। পরদিন অর্থাৎ আজ রোববার সকাল নয়টায় একই পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ ছিল ৫০ দশমিক ১৬ মিটার। তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানির বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ১৫ মিটার।
তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টের পানির পরিমাপক (গেজ রিডার) নুরুল ইসলাম আজ সকাল ১০টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, শনিবার সকাল থেকে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি উচ্চতা একটু একটু করে বেড়ে যাওয়ার জন্য ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাটের মধ্যে তিনটি জলকপাট সাড়ে ৬ ফুট খোলা হয়েছে। এখনো তাই আছে।
ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড দপ্তরের ডালিয়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গত এক সপ্তাহে তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ গড়ে ২৮০০ কিউসেক ছিল। ১২ ফেব্রুয়ারিতে ১৮৫৪ কিউসেক, ১৩ ফেব্রুয়ারিতে ২০০০ কিউসেক, ১৫ ফেব্রুয়ারিতে ৩৬০০ কিউসেক ১৬ ফেব্রুয়ারিতে ৩৪০০ কিউসেক আছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শুষ্ক মৌসুমে পানিপ্রবাহের এ তারতম্য বা সামান্য বাড়া-কমা স্বাভাবিক। তিনি আর কিছু বলতে রাজি হননি।
এদিকে লালমনিরহাটের তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের ব্যানারে আগামী সোমবার ও মঙ্গলবার তিস্তাপারের পাঁচটি জেলার ১১টি পয়েন্টে ৪৮ ঘণ্টার লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালনের দুদিন নদীর পানিপ্রবাহ একটু একটু করে বেড়ে যাওয়ার কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়।
এলাকাবাসীর দাবি, উজানে ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে ভারত একতরফা তিস্তা নদীর পানি প্রত্যাহার করায় ভাটি এলাকা পানিশূন্য হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে এমন চিত্র দেখে আসছিলেন এলাকার মানুষ। পানির ন্যায্য হিস্যা এবং মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে সোমবার থেকে ৪৮ ঘণ্টা তিস্তা অববাহিকায় অবস্থান কর্মসূচির ডাকে ভারত পানি ছাড়ায় তিস্তায় হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
লালমনিরহাটের তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক সাবেক উপমন্ত্রী আসাদুল হাবিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে তিস্তাপারের পাঁচটি জেলার সর্বস্তরের জনগণ আগামী সোমবার ও মঙ্গলবার এ দুদিন তিস্তাপারে ৪৮ ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করবেন। তাঁরা তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিকে সারা বিশ্বের সামনে তুলে ধরার জন্য আগ্রহী। এ জন্য নানান কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্য নেতারা এ অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য দেবেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিভাগীয় কর্মকর্তাকে নিতে ৫ কিমি দূর থেকে ফিরে এলো ট্রেন
বিভাগীয় কর্মকর্তাকে নিতে ছেড়ে যাওয়া ট্রেন ঠাকুরগাঁও রোড স্টেশনে ফিরে আসে। আচমকা ট্রেন ফিরিয়ে আনার পর ‘নরমাল ট্রেন’ বলে সেই ট্রেনে যাত্রা করতে অস্বীকৃতি জানান সেই কর্মকর্তা। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন যাত্রীরা। যাত্রীদের রোষাণলে পড়ে অবশেষে সেই ট্রেনেই যাত্রা করতে বাধ্য হয় এই রেল কর্মকর্তা।
সোমবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে ঠাকুরগাঁও রোড রেল স্টেশনে এমন ঘটনা ঘটে। ট্রেনটি পঞ্চগড় থেকে ছেড়ে পার্বতীপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করছিল। ঘটনায় জড়িত কর্মকর্তা আবু হেনা মোস্তফা আলম লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে আছেন।
ট্রেনের যাত্রী আমাজ হোসেন জানান, বিকেল ৪.২৬ মিনিটে ঠাকুরগাঁও রেল স্টেশন থেকে ছেড়ে যায় পার্বতীপুরগামী কাঞ্চন সেমি আন্তঃনগর ট্রেনটি। প্রায় ৫ কিলোমিটার যাওয়ার পর হঠাৎ ট্রেনটি পিছনদিকে ফিরে যেতে থাকে। এ ঘটনায় ট্রেনের ভিতরে থাকা যাত্রীদের মাঝে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
এক পর্যায়ে ট্রেনটি ঠাকুরগাঁও রোড রেল স্টেশনে ফিরে এলে যাত্রীরা জানতে পারেন এক বিভাগীয় কর্মকর্তা ট্রেনে যাত্রা করার উদ্দেশ্যে ট্রেনটি ফিরিয়ে এনেছেন। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে যাত্রীরা।
তবে ট্রেন ফিরিয়ে আনার পরে সেই ট্রেনে যাত্রা করতে অস্বীকৃতি জানান ওই কর্মকর্তা। এতে আরো ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন ট্রেনের যাত্রীরা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্টেশন এলাকাজুড়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। যাত্রীরা বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে জনসাধারণের রোষাণলে পরে ট্রেনে উঠতে বাধ্য হন ওই রেল কর্মকর্তা।
ঠাকুরগাঁও রেলস্টেশনের সহকারী স্টেশন মাষ্টার মোস্তাফিজুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “ঠাকুরগাঁও রেল স্টেশন পরিদর্শনে আসেন লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক আবু হেনা মোস্তফা আলম। ঠাকুরগাঁও থেকে তার দিনাজপুরে যাওয়ার কথা ছিল। তবে আগে থেকে সে বিষয়ে আমাদেরকে জানাননি। লালমনিরহাট অফিসের নির্দেশে ট্রেনটি আবারো স্টেশনে ফিরে আসে। ফিরিয়ে আনার পরে লোকাল ট্রেন হওয়ায় তার ট্রেনটি পছন্দ হয়নি। তাই তিনি পরবর্তী ট্রেনে যাত্রা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু যাত্রীদের ক্ষোভের কারণে তিনি সেই ট্রেনেই যাত্রা করেন।”
এই বিষয়ে কথা বলতে একাধিকবার লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক আবু হেনা মোস্তফা আলমের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
ঢাকা/হিমেল/এস