লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে হঠাৎ করে পানি বাড়তে শুরু করেছে। এই পানি এসেছে উজান অর্থাৎ ভারতের দিক থেকে। শুষ্ক মৌসুমে এবং তিস্তা নদী বাঁচাতে তীরবর্তী স্থানে বিএনপির উদ্যোগে ৪৮ ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচির দুদিন আগে তিস্তার এমন পানি বৃদ্ধির বিষয়টি স্থানীয় লোকজনকে অবাক করেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানির স্তর (ওয়াটার লেভেল) ছিল ৪৯ দশমিক ৭৫ মিটার। এরপর হঠাৎ করে গত শনিবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সেখানে তিস্তার পানি ক্রমাগতভাবে বাড়তে থাকে। শনিবার সন্ধ্যা ছয়টায় সেখানে পানির স্তর ছিল ৫০ দশমিক ১০ মিটার। পরদিন অর্থাৎ আজ রোববার সকাল নয়টায় একই পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ ছিল ৫০ দশমিক ১৬ মিটার। তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানির বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ১৫ মিটার।

তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টের পানির পরিমাপক (গেজ রিডার) নুরুল ইসলাম আজ সকাল ১০টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, শনিবার সকাল থেকে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি উচ্চতা একটু একটু করে বেড়ে যাওয়ার জন্য ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাটের মধ্যে তিনটি জলকপাট সাড়ে ৬ ফুট খোলা হয়েছে। এখনো তাই আছে।

ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড দপ্তরের ডালিয়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গত এক সপ্তাহে তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ গড়ে ২৮০০ কিউসেক ছিল। ১২ ফেব্রুয়ারিতে ১৮৫৪ কিউসেক, ১৩ ফেব্রুয়ারিতে ২০০০ কিউসেক, ১৫ ফেব্রুয়ারিতে ৩৬০০ কিউসেক ১৬ ফেব্রুয়ারিতে ৩৪০০ কিউসেক আছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শুষ্ক মৌসুমে পানিপ্রবাহের এ তারতম্য বা সামান্য বাড়া-কমা স্বাভাবিক। তিনি আর কিছু বলতে রাজি হননি।

এদিকে লালমনিরহাটের তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের ব্যানারে আগামী সোমবার ও মঙ্গলবার তিস্তাপারের পাঁচটি জেলার ১১টি পয়েন্টে ৪৮ ঘণ্টার লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালনের দুদিন নদীর পানিপ্রবাহ একটু একটু করে বেড়ে যাওয়ার কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়।

এলাকাবাসীর দাবি, উজানে ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে ভারত একতরফা তিস্তা নদীর পানি প্রত্যাহার করায় ভাটি এলাকা পানিশূন্য হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে এমন চিত্র দেখে আসছিলেন এলাকার মানুষ। পানির ন্যায্য হিস্যা এবং মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে সোমবার থেকে ৪৮ ঘণ্টা তিস্তা অববাহিকায় অবস্থান কর্মসূচির ডাকে ভারত পানি ছাড়ায় তিস্তায় হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

লালমনিরহাটের তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক সাবেক উপমন্ত্রী আসাদুল হাবিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে তিস্তাপারের পাঁচটি জেলার সর্বস্তরের জনগণ আগামী সোমবার ও মঙ্গলবার এ দুদিন তিস্তাপারে ৪৮ ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করবেন। তাঁরা তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিকে সারা বিশ্বের সামনে তুলে ধরার জন্য আগ্রহী। এ জন্য নানান কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্য নেতারা এ অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য দেবেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

মুশফিকের প্রেমকাহিনির মঞ্চে ম্যাথুসের বিদায়ী সুর

* শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২৬ টেস্টে বাংলাদেশের একটাই জয়। সেটি আবার শ্রীলঙ্কাতে। সেই জয় বাংলাদেশের শততম টেস্টে বলে আপনার তা খুব ভালোমতোই মনে থাকার কথা।

* টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ৬০০ ছাড়ানো একমাত্র স্কোরটি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। সেটিও শ্রীলঙ্কাতে।

* টেস্টে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। হ্যাঁ, হ্যাঁ, সেটিও শ্রীলঙ্কাতেই।

শেষ দুটি আবার একে অন্যের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। দুটি একই টেস্টে। ২০১৩ সালে যে টেস্টে বাংলাদেশের ৬৩৮, সেটিতেই মুশফিকুর রহিমের ডাবল সেঞ্চুরি। টানা ১২ টেস্টে হারার পর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ড্র-ও।

এই পুরোনো প্যাচাল খুব বেশি অপ্রাসঙ্গিক লাগবে না, যখন জানবেন ওই টেস্টটা হয়েছিল গল ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে। পশ্চাৎপটে অতিকায় গল ফোর্টের পাথুরে কাঠামো আর দুই পাশে সাগর মিলিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর স্টেডিয়ামের একটি। ২০০৪ সালে সুনামিতে লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়ার পর পুনর্জন্ম নেওয়া গলের সেই মাঠেই আজ শুরু বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা প্রথম টেস্ট। শুরু আসলে তিন ধরনের ক্রিকেটেই একে অন্যের নাড়ি-নক্ষত্র বুঝে নেওয়ার লড়াই। যাতে টেস্ট আছে, ওয়ানডে আছে, আছে টি-টোয়েন্টিও। দুই টেস্টের পর সাদা বলের সিরিজে তিনটি করে ম্যাচ।

আরও পড়ুনআমিনুল ইসলাম বুলবুলকে চিনতে হলে এই লেখাটা পড়তে হবে০২ জুন ২০২৫

দুই দল পরস্পরের খুব চেনা। বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ২৬টি টেস্ট খেলেছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ঘন ঘন দেখা হলে হৃদ্যতা যেমন হয়, তেমনি রেষারেষিও। বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। গত কয়েক বছরে এই দুই দল মুখোমুখি হলেই মাঠে বা মাঠের বাইরে উত্তেজনার ফুলকি ছুটেছে। ‘টাইমড আউট’ হয়তো সেটির এক নম্বরে, এর বাইরেও নানা কিছু মিলে লঙ্কা-বাংলা এখন গনগনে এক দ্বৈরথের নাম।

গত চার বছর দুই দলের মধ্যে চতুর্থ টেস্ট সিরিজ। দুই দলের জন্যই রণকৌশল ঠিক করা তাই খুব সহজ হওয়ার কথা। বাংলাদেশ দলের জন্য হয়তো তা থাকছে না শ্রীলঙ্কা দলে নতুনের সমারোহে। ১৮ জনের দলের এক–তৃতীয়াংশই এখনো টেস্ট খেলার অপেক্ষায়। বাংলাদেশ দলেও কিছু পরিবর্তন আছে, তবে তা ধর্তব্যের মধ্যে নয়।

টেস্টের প্রস্তুতিতে গলে অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ দল

সম্পর্কিত নিবন্ধ