যে কোনো উৎসব আয়োজনে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে নতুন গান প্রকাশ করে থাকেন নন্দিত কণ্ঠশিল্পী ফাহমিদা নবী। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি প্রকাশ করেছেন তাঁর গাওয়া গান ‘সেদিনও মুখর ছিল শব্দহীন কথারা’। এটি লিখেছেন ফারজানা রহমান। সুর করেছেন শিল্পী নিজেই। আর সংগীতায়োজন করেছেন সজীব দাস। গানটি প্রসঙ্গে ফাহমিদা নবী বলেন, ‘গানের কথা অসাধারণ। ভালোবাসা দিবসে সাধারণত শ্রোতারা যে ধরনের গান শুনতে চান, এটি তেমনই। সংগীতায়োজনও দারুণ হয়েছে। গানটি প্রকাশের পর বেশ সাড়াও মিলছে’।
এর আগে তিনি প্রকাশ করেছেন ‘কাছের মানুষ দূরে যায়, দূরের মানুষ আসে কাছে’ শিরোনামে একটি গান। এটি লিখেছেন ইলা মজিদ। এ গানটিরও সুর সংগীতায়োজন করেছেন সজীব দাস।
এদিকে এবারের বইমেলায় প্রথমবার ফাহমিদা নবীর লেখা কোনো গ্রন্থ প্রকাশ পেল। বিগত বেশ কয়েক বছর যাবত ফাহমিদা নবী তাঁর নিজের ফেসবুকে নানান বিষয় নিয়ে তাঁর নিজের অনুভূতি, অনুভব নিয়মিত লিখে আসছেন। তাঁর লেখা কথাগুলো নানান সময় সমাজের নানান সমস্যা সমাধানেরও দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করে। যে কারণে অনেকেই তাঁকে নানা সময়ে অনুরোধ করেন এ লেখাগুলো বই আকারে যেন প্রকাশ করা হয়, যাতে চাইলেও কেউ সেই বইটি সংরক্ষণে রাখতে পারেন। ভক্ত, পাঠকদের কথা বিবেচনা করেই ফাহমিদা নবী এবারের বইমেলায় প্রকাশ করেছেন তাঁর বই ‘ফাহমিদা নবীর ডায়েরি’।
প্রথমবার বই প্রকাশ করে ভীষণ উচ্ছ্বসিত এ কণ্ঠশিল্পী। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বইটি প্রকাশের পর আমার ভক্ত-শ্রোতাদের কাছ থেকে খুব সাড়া পাচ্ছি। সবার অনুরোধে এ বইটি হঠাৎ করেই প্রকাশ হয়ে গেল। আমি এমনভাবে অনুপ্রাণিত হলাম যে, হয়তো আগামীতে বই প্রকাশের এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।’
জীবনের অনেক অভিজ্ঞতাই লেখার মাধ্যমে তুলে ধরেছেন বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গানের গভীরতায় জীবনবোধ, আর চারপাশের যাপিত জীবন কোনোটাই জীবনদর্শনের বাইরে নয়। তাই যা দেখি, তা-ই নিজের মতো করে লিখি, ভাবনাগুলো নিয়ে ইতিবাচক সমাধানের পথ খুঁজি, আর লিখে ফেলি উপলব্ধি। চলতি পথে জীবনের অনেক অভিজ্ঞতা, উপলব্ধি অনুভব ও অনুধাবনের মাধ্যমে তুলেছি বইয়ে। বইটি প্রকাশ হয়েছে শব্দশিল্প প্রকাশনী থেকে। এর প্রচ্ছদ করেছেন চারু পিন্টু।
ফাহমিদা নবী আরও জানান ২০০৩ থেকে ২০১৪ সময়কাল পর্যন্ত তিনি ‘আনন্দভূবন’, ‘আনন্দধারা’ ও ‘বিচিত্রা’য় ৫-৬টি গল্প লিখেছেন। সে গল্পগুলোও বই আকারে প্রকাশের ইচ্ছা রয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
বক্সিং রিংয়ে চ্যাম্পিয়ন জিনাতই, বোনকে উৎসাহ দিতে গ্যালারিতে আফঈদা
কদিন ধরে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের আড্ডায় ঘুরেফিরে একটাই নাম জিনাত ফেরদৌস। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এই বক্সার প্রথমবারের মতো পা রেখেছেন জাতীয় বক্সিং রিংয়ে। আর প্রথমবারই নিজের জাত চেনালেন।
আজ বিকেলে পল্টনের মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়ামে ৫২ কেজি ওজন শ্রেণির ফাইনালে নেমে প্রতিপক্ষ আফরা খন্দকারকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নের মুকুট মাথায় তুলেছেন জিনাত। প্রতিযোগিতার আগেই যাঁর আগমন ঘিরে কৌতূহল ছিল তুঙ্গে, সেই জিনাত রিংয়ে নামতেই যেন বুঝিয়ে দিলেন, অন্যদের চেয়ে কেন তিনি এগিয়ে।
তিন রাউন্ডের লড়াইয়ে শুরু থেকেই জিনাত ছিলেন আক্রমণাত্মক। পাঞ্চে ছিল গতি, রক্ষণে ছিল আত্মবিশ্বাস। অন্যদিকে আফরা খন্দকার চেষ্টা করেছেন রক্ষণ সামলে লড়াইয়ে টিকে থাকতে। খান কয়েক মোক্ষম ঘুষিতে কিছুটা নড়বড়ে হলেও শেষ পর্যন্ত দমে যাননি আফরা।
বরং জিনাতের ঘন ঘন আক্রমণের ফাঁক গলে এক-আধটু পাল্টা আঘাত করতেও পেরেছেন। তবে এই পর্যায়ের এক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত হয়ে পড়ে তাঁর জন্য অনেকটাই চাপের। তবু আফরা লড়ে গেছেন। আর জিনাতের আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি এ লড়াইকে করে তুলেছিল দেখার মতো।
গ্যালারিতে বসে খেলা দেখছিলেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক ও আফরার বড় বোন আফঈদা খন্দকার। উৎসাহ দিচ্ছিলেন ছোট বোনকে। পাশে ছিলেন মা–বাবাও। তবে পরিবারের ষোলো আনা সমর্থনও জিনাতকে হারানোর জন্য যথেষ্ঠ হয়নি।
ম্যাচ শেষে আফরা বললেন, ‘তিনি একজন ভালো খেলোয়াড়। তাঁর বিপক্ষে খেলা আমার জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে তাঁর আক্রমণাত্মক স্কিলটা দুর্দান্ত। ম্যাচ শেষে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, গুড ফাইট।’
বিজয়ী জিনাত পরে কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, ‘আমি সবাইকে বলতে চাই, বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েরা খেলতে চায়। তারা যদি সুযোগ-সুবিধা পায়, অনেক ভালো করবে। ওদের স্কিল আছে।’
সেমিফাইনালে আছিয়া না ফাইনালে আফরা—কোন লড়াইটা বেশি কঠিন ছিল? জিনাতের জবাব, ‘আমি আমার খেলাটা খেলেছি এবং জিতেছি। দুজনই আলাদা ধাঁচের প্রতিপক্ষ।’
জিনাত বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক পদক জয়ের আকাঙ্ক্ষার কথা আজও বলেছেন। আগামী এশিয়ান গেমসে সুযোগ পেলে পদক জিতবেন কি না, প্রশ্নের ছোট্ট উত্তর, ‘ইনশা আল্লাহ।’
আফরা-জিনাত ফাইনাল ম্যাচটা যেন ছিল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বক্সারের লড়াই নয়, এর বাইরেও চলছিল আরেক নাটক। ফাইনালের কয়েক ঘণ্টা আগেই বক্সিং রিংয়ে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য। আনসারের বক্সার জাহিদুল হক রেফারির রায় নিয়ে ক্ষোভ জানাতে রিংয়ে বসে পড়েন প্রতিবাদ হিসেবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বক্সার জনি ভদ্রর ঘুষিতে কপালে চোট পান জাহিদুল। চিকিৎসাও নেন। একপর্যায়ে রিংয়ের মাঝখানে বসেই অভিনব প্রতিবাদ জানান।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ আনসার দল বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশনের সভাপতির কাছে অভিযোগ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিযোগিতা থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের হুমকি দেয়। একপর্যায়ে আনসারের প্রতিনিধিরা রিং ছেড়ে চলে যান। মুহূর্তেই ঘনীভূত হয়ে ওঠে অনিশ্চয়তা, আফরা-জিনাত ফাইনালটি আদৌ হবে তো? কারণ, আফরা বাংলাদেশ আনসারের প্রতিযোগী। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আনসার ফিরে আসে এবং প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
এ বিষয়ে বক্সিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুস কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফাইটে হারলে যা হয়। হারলেই বলে অন্যায় হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত রিংয়ে ফিরে এসেছে, খেলেছে, এটা ভালো।’
ম্যাচ শুরুর ঠিক আগে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের একটি প্রতিনিধিদল গ্যালারিতে এসে জিনাতকে শুভেচ্ছা জানায়, তাঁকে উপহারও দেয় তারা। গ্যালারিতে বাড়তি উত্তেজনা আর গুরুত্ব যোগ করে ফাইনাল ম্যাচকে ঘিরে। আর দেশের সংবাদমাধ্যমের ব্যাপক উপস্থিতি তো ছিলই ম্যাচটা ঘিরে।