তিস্তার পানিবন্টন চুক্তি ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে ৪৮ ঘণ্টার কর্মসূচি শুরু হয়েছে। 

সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টার দিকে তিস্তা নদী রক্ষায় রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলার ১১টি স্থানে এই অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। এর আগে, আজ সকাল ৮টা থেকে আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে আসতে শুরু করেন তিস্তার পাড়ে।

সরেজমিনে নীলফামারীর তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে দেখা যায়, কর্মসূচিকে ঘিরে বড় বড় প্যান্ডেল করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি সমাবেশের ও অন্যটি সাংস্কৃতিক পরিবেশনার জন্য মঞ্চ। রাত্রিযাপনের জন্য অসংখ্য তাবু স্থাপন করা রয়েছে। আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য রাতে হাজারো মশাল জ্বালানো হবে সমাবেশ স্থলে।

আরো পড়ুন:

৯ দাবিতে নওগাঁয় এসপি অফিসের সামনে শিক্ষার্থীদের অবস্থান

১৪৪ ধারা জারি করায় অন্যস্থানে বিএনপির সমাবেশ

আয়োজকরা জানান, ২০০৪ সাল থেকে ভারত একতরফাভাবে তিস্তার পানি প্রত্যাহার করায় উত্তরাঞ্চল মরুকরণের মুখে পড়েছে। অপরদিকে, ২৪০ বছরের পুরনো তিস্তা শাসন না করায় নদীর পেট ভরাট হয়ে গেছে। ফলে শুষ্ক মৌসুমে ধূ-ধূ প্রান্তর আর বর্ষায় ভয়াবহ বন্যা ও ভাঙনে ক্ষতির মুখে পড়ছেন তিস্তাপাড়ের মানুষ।

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, “তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে এরইমধ্যে কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। তিস্তার পানির ন্যায্য হিসাব আদায় ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আমাদের এই আন্দোলন। ৪৮ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচিতে কয়েক লাখ মানুষ তিস্তাপাড়ে সমবেত হবে।”

তিনি আরো বলেন, “তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং তিস্তা পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় সম্মিলিতভাবে করতে হবে।” 

ঢাকা/সিথুন/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

শরীয়তপুর শিল্পকলা একাডেমি: যেখানে ‘শিল্প-বাণিজ্য’ আছে, ‘কলা’ নেই

শরীয়তপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমির কার্যক্রম বন্ধ আছ এক বছরের বেশি সময় ধরে। একাডেমির মাঠে এক মাস ধরে চলছে শিল্প ও বাণিজ্য মেলা।

জেলা শিল্পকলা একাডেমি সূত্র জানায়, জেলা শহরের তুলাসার মৌজায় ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কের পাশে জেলা শিল্পকলা একাডেমির অবস্থান। তিন কক্ষের একটি টিনশেডের আধা পাকা ঘরে ১৯৮০ সালে একাডেমির কার্যক্রম শুরু হয়। ৪৫ বছর ধরে সেই ঘরেই একাডেমির কার্যক্রম চলছে।

শিল্পকলা একাডেমিতে সংগীত, নৃত্য, নাটক, আবৃত্তি, চারুকলা ও তালযন্ত্র বিভাগ আছে। বিভাগগুলোতে শিশু-কিশোরেরা প্রশিক্ষণ নেয়। এ বছর সংগীত ও নৃত্য বিভাগে ৬৮ জন ভর্তির তথ্য আছে। অন্য বিভাগগুলোতে কতজন ভর্তি হয়েছে, সে তথ্য তাদের কাছে নেই। আগের বছরগুলোতে কোন বিভাগে কত শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিল, সে–সংক্রান্ত কোনো তথ্য শিল্পকলা একাডেমির কর্মকর্তার কাছে নেই।

জেলা কালচারাল অফিসার মোহাম্মদ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি জানুয়ারি মাসে শরীয়তপুরে যোগ দিয়েছেন। এর পর থেকে শিল্পকলার কার্যক্রম শুরু করার চেষ্টা করছেন। প্রশিক্ষণ বিভাগগুলোতে প্রশিক্ষক নিয়োগের কার্যক্রম চলছে। গত মে মাসে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল, ১৪ আগস্ট নিয়োগ পরীক্ষা হয়েছে। সেখানে সব বিভাগের প্রশিক্ষক পাওয়া যায়নি। সংগীত, চারুকলা ও তালযন্ত্রের (তবলা) প্রশিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আর নৃত্য, নাটক ও আবৃত্তির প্রশিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি আবার দেওয়া হবে।

কয়েকজন অভিভাবকের ভাষ্য, গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর জেলা শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষকদের নিয়োগ বাতিল করা হয়। এর পর থেকে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। শিল্পকলা মাঠে শিল্প ও বাণিজ্য মেলা আয়োজন করার জন্য নিউ স্টাইল মার্কেটিং নামের একটি প্রতিষ্ঠান জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করে। শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক গত ১২ আগস্ট ওই প্রতিষ্ঠানকে এক মাসের জন্য সেখানে মেলার আয়োজন করার অনুমতি দেন। বর্তমানে শিল্পকলা একাডেমি মাঠের ওই মেলায় বিভিন্ন পণ্যের ৫৫টি দোকান বসানো হয়েছে।

জেলা শিল্পকলা একাডেমির আশপাশে আছে ১০০ শয্যার সদর হাসপাতাল, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, জেলা মহিলা সংস্থার কার্যালয়, শিশু একাডেমি, শিশুদের বিনোদনের শরীয়তপুর পার্ক ও সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। মেলার কারণে ওই এলাকায় এবং সদর হাসপাতালের সামনে সার্বক্ষণিক যানজট লেগে থাকে।

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হাবীবুর রহমান বলেন, ‘জেলা হাসপাতালের সামনে এমন একটি মেলার অনুমতি কীভাবে দেওয়া হয়েছে, তা আমার বোধগম্য নয়। ওই মেলার কারণে হাসপাতালের প্রবেশমুখে সার্বক্ষণিক যানজট লেগে থাকে।’

শরীয়তপুরের কবি ও সাহিত্যিক শ্যামসুন্দর দেবনাথ বলেন, ‘একটি জেলার সরকারি পর্যায়ে সংস্কৃতিচর্চার কেন্দ্র হচ্ছে শিল্পকলা। তা কীভাবে এক বছর ধরে বন্ধ থাকতে পারে, আমাদের বোধগম্য নয়। এই প্রজন্মের কিশোর ও তরুণদের শিল্প ও সংস্কৃতির প্রতি এমনিতেই আগ্রহ কম। তার ওপরে সংস্কৃতির প্রশিক্ষণকেন্দ্র বন্ধ রাখা মোটেও ভালো লক্ষণ নয়।’

সার্বিক বিষয়ে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক হাসিনা বেগম বলেন, শিল্পকলা একাডেমির মাঠে এক মাসের জন্য মেলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অনুমতি দেওয়ার আগে তিনি জানতেন না, স্থানটি হাসপাতালের সামনে। আর নানা কারণে শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষক নিয়োগে দেরি হচ্ছে। নিয়োগপ্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। শিগগিরই শিল্পকলার কার্যক্রম চালু করা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ