প্রতিবছর দুই ঈদকে কেন্দ্র করে সিনেমা মুক্তি দেওয়ার একটা হিড়িক পড়ে; গত কয়েকবছর ধরেই এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে চলচ্চিত্র জগতে। গেল বছর ঈদুল ফিতরে মুক্তি পায় ১২টি সিনেমা। এতো ছবির ভিড়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায় দর্শক। দেশে প্রেক্ষাগৃহ সংকটের মধ্যে একসঙ্গে এত বেশি সিনেমা মুক্তির বিষয়টি ভালো চোখে দেখছেন না চিত্রনায়ক নিরব।

তিনি বলেন, ‘ঈদে যদি ১০০টি সিনেমাও মুক্তি পায় মানুষ কিন্তু সর্বোচ্চ তিনটি সিনেমা দেখে। কিছু পরিচালক ও প্রযোজক আছেন যারা জোর করে ঈদের সময় সিনেমা মুক্তি দিয়ে থাকেন। এতে করে দর্শক দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যান। শেষ পর্যন্ত দুই একটা বাদে সব সিনেমা ক্ষতি হয়। আমার মনে হয়, এই জায়গা সবার বেরিয়ে আসা উচিৎ। তাতে সবারই ভালো হবে।’

সম্প্রতি নতুন সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন নিরব। ‘গোলাপ’ নামের সিনেমাটি বানাবেন সামসুল হুদা। এ সিনেমায় প্রথমবার নিরবের সঙ্গে জুটি হতে যাচ্ছেন চিত্রনায়িকা পরীমণি। 

পরীমণির সঙ্গে প্রথম কাজের বিষয়ে সমকালকে নিরব বলেন, ‘পরীমণির সঙ্গে এটা আমার প্রথম কাজ। সিনেমার জন্য আমার ছবি প্রকাশ হওয়ার পর দেখলাম দর্শক আমাদের সাদরে গ্রহণ করছেন। পরীমণি ওয়ের সিরিজসহ যে কয়েকটি কাজ দেখেছি আমার কাছে দারুণ লেগেছে। আমার মনে হয়, এ সিনেমায় ডানা ও গোলাপ চরিত্রের যে রসায়ন সেটা দর্শক পছন্দ করবে।’

এর আগে বেশ কয়েকটি সিনেমায় অ্যাকশন হিরোর অবতারে পাওয়া গেছে নীরবকে। তবে গোলাপ সিনেমায় অ্যাকশন, রোমান্স ও থ্রিলার মিলে পর্দায় হাজির হবেন তিনি।

নিরব জানান, “এর আগে অ্যাকশনধর্মী সিনেমা করেছি। আমার সর্বশেষ ‘ক্যাসিনো’ সিনেমায় অ্যাকশন-থ্রিলার ছিল। এর আগের সিনেমা ‘আব্বাস’ ছিল পুরান ঢাকার একটা দারুণ গল্প। কিছুটা সেই জনরা থেকেই ‘গোলাপ’ নির্মাণ হচ্ছে। বলা যায়, ‘গোলাপ’ সিনেমাটি রাজনৈতিকধর্মী সিনেমা সঙ্গে থ্রিলার বিষয়টিও আছে।” 

নিরবের কথায়, ‘ফুলের নামের হলেও এটা একাটা চরিত্রের নাম। সাধারণ একটা ছেলে যার নাম গোলাম মিয়া। তার চরিত্রের কারণেই সিনেমার নাম গোলাম। তবে এখানে ফুলের সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে

সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।

এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।

এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’

আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ